–মা কই?
–ও ঘরে।
–কি করে?
–নগ্ন হয়ে বসে আচার খাচ্ছে। গায়ে জামাকাপড় কিছু নাই। তুই কিছু খাবি?
–আমি গিয়ে দেখে আসি।
–কিছু করতে হবেনা। নিজের ঘরে গিয়ে চুপচাপ শুয়ে থাক।”
রঞ্জিতা নিজের ঘরে গেলোনা। মায়ের ঘরের জানলা দিয়ে উকি দিলো। মায়ের পরনে কিছু নেই। অদ্ভুতভাবে বসে আচার খাচ্ছে। গালে আর গলায় আচার মাখানো। বিশ্রি দেখাচ্ছে। রঞ্জিতা ম্লান স্বরে বললো,
“মা, আসবো?”
“কে?”
“আমি,রঞ্জু। আসবো।”
“আয়।”
রঞ্জিতা আস্তে আস্তে ঢুকে। ভেতরটা কেমন ভাপসা ভাপসা। মাকে এখন মা লাগছেনা। মাকে এখন পাগলের মতো লাগছে। একজন পাগল।
“খাবি আচার?”
“না,তুমি খাও।”
“আরে খা একটু। মজা।”
“জলপাইর আচার। পাইলা কই মা?”
“ওইযে একটা মেয়ে থাকেনা, ও দিলো জানিস? তুই ওরে বলবি আমার মা তোমার জন্য সবসময় দোয়া করে। কি রঞ্জু,বলবি?”
“অবশ্যই বলবো। তুমি জামা খুলেছো কেনো বলো তো?”
“গা জ্বালা করে। অসহ্য লাগে। সুতা সহ্য হয়না, অস্থির অস্থির লাগে খালি।”
“থাক মা, জল খাবে?”
“জল? জল কি জিনিস? জল কি বল তো? জল জল জল।”
মা রঞ্জিতার কাধে মাথা রাখলেন। আচার ওয়ালা হাত দিয়ে রঞ্জিতার সাদা ওড়নাটা ধরলেন। ওড়নায় তেল লেগে গেলো। রঞ্জিতা হাসলো।
“আমি মরলে তোরা খুশি হবি, নারে রঞ্জু? তোর বাপ খুশি হইবো, তুই খুশি হবি, সবাই খুশি আর খুশি।”
“এই মা, এসব কি বলো? আপাকে ডাকি, আপা, এই বকুল আপা।”
বকুল আপা আসার আগেই মা মারা গেলেন। রঞ্জুর কাধে মাথা রেখে মারা গেলেন। রঞ্জিতা স্তব্ধ হয়ে বসে রইলো। তার পাগল মা ওদেরকে খুশি করে মরে গিয়েছেন। রঞ্জিতার খারাপ লাগে শেষমেষ। আপাকে মা সবচাইতে বেশি পছন্দ করতো। অথচ অসুস্থ হয়ে আপাকেই ভুললো। অদ্ভুত!
বকুলের কাধে মাথা রেখে উদাসীন চোখে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে রঞ্জিতা। দু দুটো বছর হলো মা নাই। এখনো মনে হয় মা বলছেন, “তুই ওরে বলবি আমার মা তোমার জন্য সবসময় দোয়া করে।”
বড় অদ্ভুত পৃথিবী। বড় অদ্ভুত এই জীবন!
লিখেছেনঃ রামিযাহ ওয়াসীত