ঠাস করে ত্রিশ তম মশাটা মারলো অর্ণব। মশাটার দিকে ঘৃণার দৃষ্টি দিতে দিতে তা ছুড়ে ফেলে দিলো সে। এত রাতে না ঘুমিয়ে মশারীর বাইরে এত মশকীদের খাদ্যের জোগান সে এমনে এমনে দিচ্ছে না। সে রাইমার জন্য অনলাইনে বসে আছে। এই মেয়েটা তাকে মহা যন্ত্রণা দিচ্ছে আজকাল।
“শালার জীবন, এতো ফ্যাসাদ আর ভালো লাগে না”। সিগারেটের রিং বাতাসে ছাড়তে ছাড়তে এগুলো বিড় বিড় করে বলছে অর্ণব।
মেয়েটা তাকে নানান উপদেশ দিয়ে যাচ্ছে। কেনো সে ক্লাসে যাচ্ছে না, বারান্দায় টো টো করে বেড়াচ্ছে, কেনো রাত বিরাতে রাস্তাঘাটে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে। আরো হেনো তেনো। কেনো ভুস ভুস করে সিগারেটের ধোয়া ছাড়ছে। এই মেয়েকে কেনো তার কৈফিয়ত দিতে হবে আশ্চর্য…তার উপর সে কেনো এতো রাত পর্যন্ত এই মেয়ের কথা ঝিম মেরে শুনছে। সব কেনোর উত্তর হয় না… এই কেনোর ও উত্তর নাই। উত্তর অবশ্য আছে ছোটখাটো একটা। এখন না শুনলে এই মেয়ে তাকে সামনা সামনি জ্বালাবে। মেয়েটার লজ্জাবোধ কিছুটা কম আছে। তাকে আকার ইংগিতে অনেক বুঝানো হয়ে গেছে যে সে এইসব পছন্দ করছে না, কেটে পড়তে বলছে। কিন্তু সে ঠিক ই সুপার গ্লুর মতো লেগে আছে। রাইমা মেয়েটা যথেষ্ঠ বুদ্ধিমতি। সে যে কিছু বুঝছে না তা অর্ণব বিশ্বাস করতে নারাজ। কিন্তু এটাও বুঝা যাচ্ছে না যে মেয়েটা তার প্রেমে পড়েছে নাকি পড়ে নাই? মেয়েটার মাঝে মাদার তেরেসা টাইপের অভ্যাস আছে। প্রায়ই সে গম্ভীরভাবে অনেকের সমস্যা শুনে এরপর তা সমাধানে দৌড়াদৌড়ি করে। বেচাড়া অর্ণব ও এর মাঝে একজন। কেনো যে একবার মনের ভুলে ওর কাছে কিছু শেয়ার করেছিলো এখন তাকে প্রতিদিন পস্তাতে হচ্ছে।
“দেখো রাইমা তোমার কি আরো কথা আছে?”
–“ কেনো?”
“তুমি কি জানো তুমি আমাকে রাইট নাও মহা যন্ত্রনা দিচ্ছো। আমার একজনকে ফোন দিতে হবে”।
–“এতো রাতে কাকে ফোন দিবা আবার?”
“সেটা তোমার না জানলেও চলবে”।
–“চৈতিকে?”
“হতে পারে। নাও হতে পারে।“
–“তোমাকে আমি এতক্ষোন কি বললাম? থাক”।
রাইমা অফলাইন হয়ে গেলো। অর্ণব বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। চৈতিকে ফোন দিবে না। চৈতির সাথে তার কয় মাস কথা হয় না। হবেও না। ওর কথা মনেও পড়ে না। কিন্তু রাইমার হাত থেকে বাঁচতে এর থেকে ভালো কোনো উপায় নাই। যদি অর্ণব ইচ্ছে করেও অফলাইন হয়ে যায় তাহলে সে ফোন দিবে নয়তো মেসেজ। চৈতির সাথে এককালে কিছু ঝামেলা হয়েছিলো তার কিছু রাইমাকে বলে অর্ণবের ভাষায় সে এখন বিশাল ফ্যাসাদ করে ফেলেছে। মাদার তেরেসা রাইমা এখন তার খেয়াল রাখতে রাখতে জীবন ফ্যাসাদময় বানিয়ে ফেলেছে।.
.
রাইমার সাথে আবার যেদিন দেখা হলো তখন অর্ণব রাস্তার পাশে বসার বেঞ্চে এক পা তুলে বসে বসে বাদাম খাচ্ছিলো। রাইমা এসে ধপ করে পাশে এসে বসে বললো, “আরে অনু এইখানে?”
বলে রাখা ভালো রাইমা অর্ণবকে অনু বলে ডাকে। এই ব্যাপারটাতেও অর্ণব কিঞ্ছিত বিরক্ত। কিন্তু রাইমা নামক মেয়েটাকে কিছু বলে কোনোদিন কোনো লাভ হয় না। লজ্জাবোধ আসলেই কম। তাই রাইমা ওকে একলা পেলে তখন অনু বলে ডাকে।
অর্ণব বাদামের খোসাগুলো ইচ্ছে করে রাইমার দিকে ফু দিয়ে উড়িয়ে দিতে দিতে বললো, “এমনেই!”
রাইমা এসবে ভ্রুক্ষেপ না করে খোসাগুলো ফেলতে ফেলতে বললো,
“ক্লাসে যাও নাই?”
–“কি জানি ! জানি না। হয়তো আবার হয়তো না। ”
“এইটা কি রকম উত্তর!”
–“তোমার প্রশ্নটা আমার ভাল্লাগে নাই তাই এই উত্তর!”
“হুম!”
স্পষ্টতই এখানে অর্ণব তাকে ছোটখাটো একটা অপমান করলো। কিন্তু তাও রাইমা ঠিক ই তার পাশে বসে পা দুলাচ্ছে।
ভদ্রতার জন্য এবার অর্ণব বললো, “তুমি কি করো?”
–“তেমন কিছু না। একজনের জন্য অপেক্ষা করতেছি।“
“তোমার তো এই সময়ে ক্লাস থাকে তাই না?”
–“হ্যা থাকে। কিন্তু ওর টাকাটা এখনই লাগবে। বিশাল সমস্যায় আছে। কি করবো বলো?”, বলে করুণ মুখে অর্ণবের দিকে তাঁকালো।
“তুমি কি জানো তোমার মাঝে মাদার তেরেসা টাইপের অভ্যাস তীব্রভাবে বিরাজমান।“
–“আচ্ছা যাই। ও এসে গেছে”।
দূরে দেখলো একটা চশমা পড়া ভীত ভীত চেহাড়ার ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। রাইমা গিয়ে ঐ ছেলেকে টানতে টানতে ক্যান্টিনে নিয়ে গেলো। বুঝাই যাচ্ছে খাওয়াবে পড়াবে বুঝাবে এরপর টাকা দিয়ে পাঠাবে। এই টাকা আর ফিরত ও নিবে না। টিউশনির টাকা গুলো সব এভাবেই যায় তার।
আরো কিছুক্ষোন অর্ণব এভাবে বসে ছিলো। দুপুর শেষ হয়ে আসছে। তখন মতি মিয়া তার চা –সিগারেটের জিনিস পত্র নিয়ে আসলো। অর্ণবকে দেখে গ্যাট মেরে বসে গেলো, “ ও ভাইজান। আইজ খাইবেন না চা?”
“না মতি মিয়া”।
–“তাইলে সিগারেট নেন একটা। নয়তো বিশকুট খান একটা।“
অর্ণবের আসলে এখন চা খেতে খুব ইচ্ছে করছে কিন্তু পারছে না। কারন টের পেলো বাসায় যাওয়ার ভাড়া ছাড়া আর টাকাই নাই। অবশ্য মতি মিয়া তাকে এমনেই দিবে। কিন্তু এখন তো আর অর্ণব জুনিয়র ছাত্র না। সিনিয়র হয়ে গেছে ভার্সিটিতে । এখনো বাকির খাতায় নাম লেখতে তার কিছুটা লজ্জাবোধ হয় বৈকি। ভুল হয়ে গেলো। রাইমার কাছে ১০টা টাকা ধার নেয়া উচিত ছিলো। এটা মাথায় আসার সাথে সাথেই আবার ওর মহা বিরক্ত লাগছে। আশ্চর্য ওর কথাই কেনো মাথায় আসলো। আরো তো কতজনের সাথেই দেখা হলো।
আসলেই মেয়েটা মহা যন্ত্রনা দিচ্ছে।
.
.
.
একদিন দুপুরবেলা অর্ণব একলা একলা ফুটপাথ দিয়ে হাটছে। হঠাত রাইমা কোথা থেকে এসে ওর পাশে এসে দাঁড়ালো।
“এই অণু এই!”
অর্ণব কিছু জবাব না দিয়ে হালকা মাথা নাড়ালো।
“ অণু আমি আজকে খিচুড়ি খাবো। আমার সাথে খাইতে যাবা?”
অর্ণব ঘাড় উচু করে এবার রাইমাকে বুঝার চেষ্টা করছে। কালকে রাতে চ্যাটে সে বলেছিলো যে বাসায় রুমমেট কয়দিন ধরে বাড়ি গেছে,বুয়াও আসে নাই। পকেটেও টাকা নাই তার উপর আলসেমী করে খায় নি। এখন এই মেয়ে কি আমাকে এইজন্য খাওয়াবে। সরাসরি বলছেও না। মহা জ্বালা দেখি।
“যাবা না অণু? ক্ষিদা পাইছে অনেক”।
–“আচ্ছা চলো।“
অতি তৃপ্তি সহকারে খিচুড়ি খেতে খেতে অর্ণব টের পেলো ভালোই ক্ষুধা পেয়েছিলো। মেয়েটা অসম্ভব ভালো। এতো ভালো মানুষের আশে পাশে বসে থাকতে অর্ণবের কিছুটা ভয় হয়। সে হচ্ছে খারাপ কিসিমের ছেলে। এতো ভালো সহ্য করার ক্ষমতা কি তার আছে?
“তুমি তো দেখি কিছুই খেলে না”, অর্ণব বললো রাইমা কে।
–“ক্ষিধা চলে গেছে তো”।
অর্ণবের মহা রাগ লাগছে এখন।
“তুমি এতো ভালো ক্যান রাইমা?”
–“আমি? কই? না তো!”
“এই যে মাদার তেরেসা হয়ে ঘুরে বেড়াও। আমার মতো ফালতু ছেলেদের খবর রাখো। খাওয়াও। এতো ভালো ক্যান?”
–“তাই না? এর পিছনে একটা কারণ আছে। তোমাকে আরেকদিন বলবো ক্যামন?”
তখন ওর আবার আরেকটা ফোন আসলো। ফোন রেখেই করুণ চেহাড়া নিয়ে বললো যে, “অণু আমি একটু যাই ? রোকনের মনে হয় আবার ঐ মেয়ের সাথে কোনো সমস্যা হয়েছে। আমি যে কি করবো। উফ!!”
অর্ণব শান্তভাবে বললো, “তুমি এই নিয়ে কিন্তু একটা ঝামেলাতে পড়বে বলে দিলাম রাইমা”।
একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রাইমা বললো, “কিছু করার নাই অণু। আমার খারাপ লাগে। গেলাম কেমন?”
এই প্রথম ওর মুখে অণু ডাকটা শুনে অর্নবের মেয়েটার জন্য খুব মায়া লাগলো।
এটা বুঝার সাথে সাথেই আবার বিরক্ত হলো। মহা যন্ত্রনা। এই মেয়ে তো মহা যন্ত্রনা দিচ্ছে।
………………………….
“অণু এই অণু!”
অর্ণব দেখলো রাইমা ডিপার্টমেন্টের বারান্দা থেকে ওকে ডাকছে।
নীচে নেমে এসে বললো, “কেমন আছো অণু?”
মাথা নেড়ে অর্ণব বললো, “এই তো ভালো”।
“ খুশী হলাম!
তোমার খবর আমি এই কয়দিন রাখতে পারি নি। সরি। ফাইনাল পরীক্ষা ছিলো তো। এরপর আরো কিছু ব্যাপার ছিলো”।
“অ! ভালোই ছিলাম। তুমি আমার এতো খবরাখবর নিয়ে মহা যন্ত্রণা দেও রাইমা। তুমিও জানো। আমিও জানি। কথাগুলো যে মজা করে বলছি না তাও জানো। এত বার বলার পর তাও তোমার কোনো উন্নতি হলো না। তোমাকে আসলেই আমি বুঝতে পারি না”।
রাইমা এরপর মাথা নাড়াতে নাড়াতে বললো, “ আমি যাদের পছন্দ করি তারা আমাকে যত অপমান করুক আমি কিছু মনে করি না। আসলে আমি তাদের অপমান করার সুযোগ করে দেই এবং কথাগুলো আমি মজা করে বলছি না, তুমিও নিশ্চয়ই বুঝতে পারছো”।
রাইমার উত্তরে অর্ণব একটু চুপ হয়ে যায়।
“ তোমার সাথে অনলাইনে কথা হবে কেমন? এখন ক্লাস আছে। যাই? “
বলে দৌড়ে ডিপার্টমেন্টে চলে গেলো।
অর্ণবের এখন একটু একটু খারাপ লাগছে। ব্যাপারটা এভাবে না বললেও পারতো। মেয়েটা কষ্ট ও পেতে পারে। ধুর। মেয়েটা আসলেই মহা যন্ত্রণা দিচ্ছে।
.
.
.
রাতে ঘুমোতে যাবে ঠিক তখনই অর্ণবের ফোন টা বেজে উঠলো। নাম্বারটা দেখে অর্ণবের হাতটা কেপে উঠলো। চৈতি ফোন করেছে। ও কেনো ফোন করলো। কেনো করলো। ভাবতে ভাবতেই ফোন টা চুপ হয়ে গেলো। অর্ণব কি করবে ভাবতে ভাবতেই একটু পর ই আবার কল আসলো। এইবার ধরে ফেললো।
চৈতি বললো, “ কি খবর?”
“এই তো ভালোই”।
“হু তা তো জানি ই ই ই। রাইমার সাথে ডেটিং কেমন যাচ্ছে?”
“ এসব কি বলছো তুমি?”
“না মানে জিজ্ঞাসা করলাম আর কি!”
“দেখো এককালে তুমি আর আমি ভালো বন্ধুর চেয়ে অনেক ভালো কিছু একটা হয়তো ছিলাম। কিন্তু তুমি সম্পর্কের কোনো রকম সম্মান দেও নাই। তুমি পিছনে পিছনে বলে বেড়াইছো যে অর্ণবকে তুমি নাকে দড়ি দিয়ে ঘুড়াবা। এই করবা সেই করবা। তুমি কখনোই আমাকে বন্ধু ও ভাবো নাই। সব তোমার অহংকার। এতো দেমাগ ভালো না মেয়ে। তোমার রূপ তুমি ধুয়ে পানি খাইয়ো। তোমার সাথে এসব নিয়ে হাজার বার কথা হয়ে গেছে। আমি চলে আসছি সবকিছু থেকে। সেখানে অন্য কারো দোষ নাই। তুমি শুধু শুধু আরেকটা মেয়েকে টেনে আনছো কেনো?”
ফোনটা কেটে দিলো অর্ণব। নাহ ওর চৈতিকে নিয়ে এখন কিছুই মনে হয় না। না ঘৃণা, না ভালোবাসা, না করুনা কিচ্ছু না।
রাইমাকে টেনে আনাতে অর্ণবের খুব রাগ হচ্ছে।
.
.
.
একটু আগে অর্ণবের সাথে তার বাবার বেশ কথা কাটাকাটি হয়ে গেছে ফোনে। রাগে হাতের মোবাইল টা ছুড়েই ফেলছিলো তখনি আবার আরেকটা ফোন। রাইমা কলিং।
প্রথম বার কেটে দিলো।
আবার কল আসলো। আবার কেটে দিলো। এরপর আবার আবার……
কাটতে গিয়েও কাটলো না। ধরেই বললো, সমস্যা কি হ্যা? এতো জ্বালাচ্ছো কেন? দূরে যাইতে পারো না? অসহ্য অসহ্য।
ফোনের ওপাশ থেকে চুপ।
একটু পর বললো, “ মন খারাপ অণু? আমি কাছেই আছি। আসবে? দেখা করি!”
অর্ণব আর না করতে পারলো না। বের হয়ে গেলো ঘর থেকে।
বের হয়ে একটু আগাতেই দেখলো রাইমা ফুটপাথে বসে আছে।
অর্ণবকে দেখে বললো, “এতো রাগ কেনো? কি হয়েছে?”
অর্ণব বিরক্ত হয়ে বললো, “তোমার শোনা লাগবে না”।
“হুম। তুমি আমাকে একবার জিজ্ঞেস করেছিলে না, আমি কেনো সবার এই সেই করে দেই। সমস্যা শুনি। আমাকে মাদার তেরেসা ডাকো। তোমাকে বলেছিলাম কারণ আছে। কারণ টা হলো, ছোটবেলায় আমার যখন প্রচন্ড মন খারাপ থাকে, তখন আমি কাউকে শেয়ার করার মতো খুঁজে পেতাম না। আমি জানি কাউকে শেয়ার করলে নয়তো কেউ মনোযোগ দিয়ে শুনলে কি পরিমান শান্তি পায় মানুষ। আমি তাই শুনি। আমার তখন অনেক ভালো লাগে। অনেক অনেক। বলে বুঝাতে পারবো না। আমার মতো কষ্ট আমি কাউকে পাইতে দিতে চাই না। নিজের ভালো লাগানোর জন্যই আমি ওদের কথা শুনি, দৌড়াদৌড়ি করি। আমি মাদার তেরেসা না অণু। আমি অনেক স্বার্থপর। আমি নিজের ভালো লাগা ছাড়া কিচ্ছু বুঝি না। যাই হোক, মন খারাপ কেনো অণু? বলবা না? আমার ভালো লাগবে”।
সব শুনে ও বললো, “তোমার বাবা তোমাকে একটু ভুল বুঝছে। তুমিও ভুল বুঝছো। সুন্দর করে বুঝিয়ে বলো। বাবা মা কে কষ্ট দিও না অণু”।
“থাক বাদ দেও। তুমি এখন এই এলাকাতে কি করো?”
“কিছু না। আজকে হাঁটতে ইচ্ছে করছিলো। তাই হাঁটতে হাঁটতে চলে আসলাম। তাই ফোন দিচ্ছিলাম”।
“আর কিছু না তো?”
“ নাহ নাহ !”
এরপর উঠে দাঁড়ালো। অর্ণব বললো, “ এগিয়ে দেবো?”
“নাহ !! আমি কি বাচ্চা নাকি। ঠিক যেতে পারবো। হা হা হা !”
মেয়েটাকে মাথা নীচু করে হেঁটে যেতে দেখে অর্ণবের আবার প্রচন্ড মায়া লাগছে মেয়েটার জন্য।
ভালোই ফ্যাসাদ লেগে গেলো। মেয়েটা কেমনে কেমনে জানি বার বার এই ফালতু জীবনে তার উপস্থিতি জানিয়ে দিয়ে যায়। অর্ণব কিছুই করতে পারছে না। মেয়েটা আসলেই মহা যন্ত্রনা দিচ্ছে।
…….
কয়দিন ধরে রাইমার কোনো খবর নাই। অর্ণবকে বেশ কিছুদিন কেও যন্ত্রনা দিচ্ছে না।
অর্ণব অনেক দিন অণু অণু ডাকটা শুনে না। কেনো জানি খারাপ লাগছে খুব। এই মেয়ে তো তাকে যন্ত্রনা না দিয়েও যন্ত্রনা দিচ্ছে !
ফোন দিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না। অনলাইনে আসে না। বাসা ও ভালো করে চিনে না অর্ণব। সহজেই চোখের সামনে ওকে দেখা যায় তো তাই এতদিন বাসা চিনে রাখার কোনো আগ্রহ ও কোনোদিন জাগে নি। কয়দিন ডিপার্টমেন্টের সামনে গিয়েও ওকে দেখে নি।
এবার ডিপার্টমেন্টে গিয়ে ওর অন্য ফ্রেন্ডদের জিজ্ঞাসা করতে হবে, এইটা ভাবতে ভাবতে ঘুমোতে গেলো। সকালেই রাইমার ডিপার্টমেন্টে গেলো অন্তু। বাহ গিয়েই দেখলো রাইমা কার সাথে জানি কথা বলছে।
“আরে অণু তুমি? কেমন আছো? এখানে যে হঠাত?”
–“ ভালোই আছি। অনেক দিন যন্ত্রণা দেও না তাই তোমাকে খুঁজতে আসলাম!”
–“হা হা হা”।
“সত্যি !!”
–“ হুম! বিশ্বাস করলাম। একটু দাঁড়াবা? আমি একটু আসতেছি”।
একটু পর ই ডিপার্টমেন্ট থেকে ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে আসলো রাইমা।
কি জিজ্ঞাসা করবে কি জিজ্ঞাসা করবে তা ভাবতে ভাবতে অর্ণব জিজ্ঞেস করে বসলো, “রেজাল্ট দিছে?”
–“হু!”
“হুম!”
–“ পাস করে গেছি!! মজা !!”
“বাহ !”
–“ ভাবছিলাম এইবার ফেল করবো। বুঝলা দুইটা সাবজেক্টে ক্র্যাশ চলে আসছে। তবু ও পরের ইয়ারে যাইতে পারার মতো সিজিপিএ এসে গেছে। যাক!”
“ কি বলো এইগুলা? ক্র্যাশ? তুমি তো ক্র্যাশ করার মতো মেয়ে না”।
— “ হু ! মিথ্যা বলবো ক্যান?”
“ কি হইছে?”
–“কিছু না !”
“আসলেই?”
–“হুম! বাবার সাথে সমস্যা মিটছে?”
“হু!”
–“গুড!”
.
.
আবার দুইজন নীরবে হাটছে। একটু পর রাইমা নিজে নিজেই বলতে শুরু করলো,
“জানো এই ফাইনালের সময় না আব্বুর খুব অসুখ হলো। খুব দৌড়াদৌড়ি হইছে। পরীক্ষার আগের দিন হসপিটালে এডমিট হতে হলো আব্বুর । পড়তে পারি নাই। ক্র্যাশ চলে আসলো। দূঃখ নাই যদিও এ নিয়ে”।
“ হুম !”
.
.
আবার একটু পর বললো,
“ জানো অণু অইদিন তোমার বাসার ঐদিকে গেলাম না? সেদিন আবার আব্বুর অসুখ বেড়েছিলো। কাউকে চিনতে পারে না। আমাকে আগে পারতো। সেদিন তাও পারছিলো না। কি যে খারাপ লাগছিলো তখন অণু। একলা একলা হাঁটতে বের হয়ে গেছিলাম হসপিটাল থেকে”।
অর্ণব উত্তরে কি বলবে বুঝতে পারছে না। মেয়েটাকে বলতে দিচ্ছে। ওর ভিতরের কথা গুলো বলা দরকার।
“হুম!”
.
.
“জানো অণু, কদিন আগে আব্বুটা সবাইকে ছেড়ে চলে গেলো। এত কষ্ট অণু। এত কষ্ট। হারিয়ে গেছিলাম ইচ্ছে করে তাই”।
“এতো কথা বলছি বলে বিরক্ত হচ্ছো? রাগ করো না কেমন? আমি খুব খারাপ তাই না? আমাকে ছেড়ে আগে আম্মু পরে আব্বু সবাই চলে গেলো !”
মেয়েটার জন্য প্রচন্ড মায়া হচ্ছে অর্ণবের। প্রচন্ড।
“আমার কথা কেউ মনোযোগ দিয়ে শুনে না অণু। আগে আব্বু শুনতো। খুব খালি খালি লাগে এ কয়দিন। ক্লাসের কাউকে বলতেও ইচ্ছে করে না নিজের কথা। আব্বুর কথা শুধু ১-২ জনকে বলেছিলাম। কেউ জানতেও চায় না। সবাই শুধু বলতে চায়”।
“ অণু তুমি কি জানো আমি তোমাকে অনেক বেশি পরিমাণে পছন্দ করি। অসম্ভব রকমের ভালো লাগার আগের মতো!!”
অর্ণব চমকে উঠলো।
“থাক তোমার কিছু বলা লাগবে না। আজকে চলে যাই? কষ্ট হচ্ছে!”
অর্ণব অনেক জোর করেও রাইমাকে বাসা পর্যন্ত এগিয়ে দিতে পারলো না। বাস পর্যন্ত এগিয়ে দিলো।
এ কয়দিন সারা সকাল,সারা দুপুর, সারা বিকেল, সারা সন্ধ্যা, রাত অর্ণবের মাথায় শুধু রাইমার কথাগুলো ঘুর ঘুর করে।
“অসম্ভব রকমের ভালো লাগা”।
নাহ মেয়েটা ভালোই যন্ত্রণা দিচ্ছে। যন্ত্রণার অবসান ঘটাতে হবে তা ভাবতে ভাবতে অবশেষে কল করেই বসলো।
রাইমা ফোন ধরেছে। কিন্তু চুপ। অর্ণব ও কথা বলে না।
কিছুক্ষন পর রাইমা বলে উঠলো, “ হ্যা অণু?”
“হুম। আমি অণু। জানো এ নামে তুমি ছাড়া কেউ ডাকে না”।
–“হুম জানি”।
“ আরো জানো…… তুমি আমাকে মহা যন্ত্রণা দেও?”
–“হুম তাও জানি!”
“ আরো জানো……এতো তীব্র ভালোবাসা ফেলে দেয়ার ক্ষমতা আমাকে স্রষ্টা দেয় নাই”।
.
.
.
“কথা বলো রাইমা !! কিছু বলবা না? আমাকে আরো যন্ত্রণা দিবা?”
–“ বুঝলা অণু !!!”
“হ্যা? কি?”
–“ ঠিক করেছি তোমাকে সারাজীবনই মহা যন্ত্রণা দিয়ে যাবো। পারবা সহ্য করতে ?”
“ তোমার অণু ঠিক পারবে। দেখে নিও”।
.
.
রাইমা এখনো যন্ত্রণা দিয়েই যাচ্ছে। অর্ণব ও বলে যাচ্ছে “ মেয়েটা মহা যন্ত্রণা দিচ্ছে !!”
সব রাইমা-অর্ণব রা ভালো থাকুক।
লিখাঃ Starry Night