মায়াজালে ঘেরা ইন্টারনেটের রহস্যময় অন্ধকার জগৎ

4437
0

বিশেষ নোট : এই তথ্য ব্যবহার করে আপনি যদি কোন প্রকার ক্ষতির সম্মুখীন হন, তাহলে তার দায়ভার শুধুই আপনার। আমি নিজেকে একজন Techno-Libertarian মনে করি এবং মনে প্রাণে বিশ্বাস করি যে অনলাইনের প্রতিটি তথ্য জানার নিরুঙ্কুশ স্বাধীনতা প্রতিটি ইউজারের রয়েছে। তাই এই তথ্য শেয়ার করছি। যেটা করবেন নিজ দায়িত্বে করবেন।  আমরা আপনার কোন প্রকার ক্ষতির জন্য দায়ী থাকব না।

হলিউডি ছবির ওই দৃশ্যের কথা মনে আছে যেখানে গডফাদার তার পোষা খুনীর সাথে কখনো মখোমুখি সাক্ষাত না করে এক অতি গোপন নেটওয়ার্কের মধ্য দিয়ে হুকুম দিয়ে যান, অথবা কি মনে পড়ে আঞ্জেলিনা জুলি অভিনীত ‘Hacker’ ছবিটির কথা যেখানে অপরাধীরা এক নাম না জানা নেটওয়ার্কের ভেতর নানা অপরাধ করত—যেখানে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী নাক গলাতে পারত না?

আপাতদৃষ্টিতে রূপালী পর্দার এসব সাইফাই মুভিগুলোকে শুধুই কেচ্ছা মনে হলেও এইসব মুভির অজানা নেটওয়ার্কের মতই আমাদের অতিচেনা ইন্টারনেটের আছে এক অন্ধকারজগত…

তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষের সাথে সাথে প্রসার পেয়েছে ইন্টারনেট, আর তা আজ মহাসমুদ্রের ন্যায় বিশাল এক ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এর সাথে তাল মিলিয়ে সক্ষমতা বেড়েছে সার্চ ইঞ্জিনগুলোর। বিশেষ করে Google এর নাম বলতেই হবে, যা এখন বিশ্বব্যাপী অন্যতম এক বিশ্বস্ত ব্র্যান্ডে পরিণিত হয়েছে। একটি নেট সেশনের কথা কি আমরা চিন্তা করতে পারি গুগলকে ছাড়া? অসম্ভব!

কিন্তু এই Google এর সক্ষমতা কতটুকু?

জেনে অবাক হয়ে যাবেন যে আপনি যখন কোন বিষয়ে সার্চ দেন আর গুগল তার লক্ষ লক্ষ ফলাফল আপনার সামনে হাজির করে তা ইন্টারনেটে থাকা মোট তথ্যের মাত্র ১০ শতাংশ থেকে প্রাপ্ত! অর্থাৎ গুগল অনলাইনের মোট তথ্যের ৯০ শতাংশ জানে না! এলেমে থাকা মাত্র ১০ শতাংশের মধ্যেই সার্চ দিয়েই সে তার ফলাফলকে গ্রাহকের সামনে হাজির করে। বাকি ৯০ শতাংশ চিরকালই আপনার অজানা থেকে যাবে।

এক জরিপে জানা গেছে দৃশ্যমান ওয়েবে যে পরিমাণ ডেটা সংরক্ষিত আছে তার চেয়ে ৫০০ গুণ বেশী ডেটা সংরক্ষিত আছে অদৃশ্য ওয়েবে। প্রকৃতপক্ষে এই দৃশ্যমান নেট হল মহাসাগরে ভেসে থাকা এক খন্ড হিমবাহ আর ডীপ ওয়েব হল মহাসাগর খোদ নিজে!

এই অজানা ব্ল্যাক ওয়েবেই আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়

ব্ল্যাক ওয়েবেকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা যায়, আর তা হলঃ

1. The Deep Web

2. The Dark Web

ডীপ ওয়েব হল ইন্টারনেটের ওই সমস্ত অংশ যেগুলো সার্চ ইঞ্জিন খুঁজে পায় না কিন্তু আপনি যদি এগুলোর ঠিকানা জানেন তাহলে আপনি এই অংশে যেতে পারবেন।

আর ডার্ক ওয়েব হল ইন্টারনেটের ওই অংশ যেখানে কনভেনশনাল উপায়ে আপনি ঢুকতে পারবেন না, প্রচলিত ব্রাউজারগুলো সেখানে প্রবেশ করতে পারে না। সেখানে প্রবেশ করতে গেলে আপনাকে বিশেষ সফটওয়্যার এর সহায়তা নিতে হবে।

ইন্টারনেটের এই অংশের উৎপত্তি কিভাবে হল? একদম সঠিক করে বলা অসম্ভব।

প্রকৃতপক্ষে আপনি বা আমি কেউই ইন্টারনেটে একা নই! আপনার প্রতিটি পদক্ষেপ, প্রতিটি ডাউনলোড নজরে রাখছে আপনার ইন্টারনেট সার্ভিস প্রভাইডার। তাদের কাছে আপনার পুরো লগ থাকে আর যেকোন প্রয়োজনে তারা তা সরবরাহ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। তার মানে হল আপনার চলাচলের কোন স্বাধীনতা নেই!!!

নানা সময়ে বিশ্ব ইন্টারনেটের নানা গ্রুপ এমন একটি ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছে যেখানে তারা খুব গোপনে তাদের কর্মকান্ড পরিচালনা করতে পারবে। সামরিকবাহিনী, বিপ্লবী, হ্যাকার, এমনকিই খোদ প্রশাসনই এমন এক ব্যবস্থা চেয়েছে যেখানে গোয়েন্দারা খুব গোপনে নিজেদের ভেতর তথ্য আদান প্রদান করতে পারবে অথবা চুরি যাওয়া তথ্য ফিরে পেতে দর কষাকষি করতে পারবেন অপরাধীদের সাথে। তাছাড়া বিশ্বের অনেকদেশ আছে যেখানকার অনলাইন সেন্সরশিপ খুবই কড়া, ফলাফলস্বরুপ ভিন্নমতালম্বিদের এমন এক ব্যবস্থার কথা চিন্তা করতে হয়েছে যেখানে সরকার তদারকি করতে পারবে না। আর এভাবেই উৎপত্তি হয়েছে এই অজানা অংশের। সাথে সাথে এটা প্রলুব্ধ করেছে ওই সমস্ত অপরাধীদের যারা ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে মূল নেটে আলোচনা করতে সাহস পায় না।

এখন প্রশ্ন হল ডীপ ওয়েবে কেন সার্চ ইঞ্জিন সার্চ করতে পারে না?

এর কারণ হল সার্চ ইঞ্জিনগুলো তাদের সার্চ তদারকি করে এক ধরনের ভার্চুয়াল রোবট তথা Crawler দিয়ে। এই Crawler গুলো ওয়েবসাইটের HTML tag দেখে ওয়েবসাইটগুলোকে লিপিবদ্ধ করে। তাছাড়া কিছু কিছু সাইট থেকে সার্চ ইঞ্জিনে লিপিবদ্ধ হওয়ার জন্য রিকোয়েস্ট যায়। এখন যে সমস্ত সাইট এডমিন চান না যে তাদের সাইটটি সার্চ ইঞ্জিন খুঁজে না পাক, তারা Robot Exclusion Protocol ব্যবহার করেন যা Crawler গুলোকে সাইটগুলো খুঁজে পাওয়া বা লিপিবদ্ধ করা থেকে বিরত রাখে। কিছু সাইট আছে ডাইনামিক অর্থাৎ নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ সাপেক্ষে এই ধরণের সাইটের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া সম্ভব, আর Crawler এর পক্ষে এই সব করা সম্ভব হয় না। কিছু সাইট আছে যেগুলোতে অন্য সাইট থেকে লিংক নেই। এগুলো বিচ্ছিন্ন সাইট, এগুলোও সার্চে আসে না। তাছাড়া বলতে গেলে সার্চ ইঞ্জিন টেকনোলজি এখনো তার আঁতুড় ঘর ছাড়তে পারে নি। সার্চ ইঞ্জিনগুলো Text বাদে অন্য ফরম্যাটে থাকা(যেমন ফ্ল্যাশ ফরম্যাট) ওয়েবপ্যাজ খুঁজে পায় না!

এই ডীপ ওয়েবে থাকা তথ্যগুলো সারফেস ওয়েবের তথ্য থেকে মানে গুনে এগিয়ে। এগুলো খুবই সুসজ্জিত এবং প্রাসঙ্গিক। তাহলে বুঝুন সার্চ ইঞ্জিনগুলো কি করছে!!!

এবার আসি সবচেয়ে মজার অংশে তথা ডার্ক ওয়েবে…

আপনার প্রচলিত ওয়েব ব্রাউজার দিয়ে এই সমস্ত সাইটে ঢুকতে পারবেন না। এরা ইন্টারনেটের সমস্ত প্রথার বাইরে অবস্থান করে, গ্রাহ্য করে না কোন নিয়মকানুন। আর এদের ঠিকানাও থাকে এতটাই উদ্ভট (যেমন sdjsdhsjhsuyumnsdxkxcoioiydsu67686hsjdhjd.onion) যে সাধারণ মানুষের পক্ষে এগুলো মনে রাখা ভীষণ কঠিন। এই অংশটিই ইন্টারনেটের প্রকৃত অদৃশ্য অংশ। বিশেষ কিছু জ্ঞান (যেমন প্রোগ্রামিং, নেটওয়ার্কিং, প্রক্সি) না থাকলে আপনি এই নেটওর্য়াকে প্রবেশ করতে পারবেন না। এই অংশের আরেকটি বিশেষত্ব হল এরা ওর্য়াল্ড ওয়াইড ওয়েবের সাইটগুলোর মত টপ লেভেল ডোমেইন (যেমন .com) ব্যবহার না করে “Pseudo Top Level Domain” ব্যবহার করে যা কিনা মূল ওর্য়াল্ড ওয়াইড ওয়েবে না থেকে দ্বিতীয় আরেকটি নেটওর্য়াকের অধীনে থাকে। এ ধরণের ডোমেইনের ভেতর আছে Bitnet, Onion, Freenet প্রভৃতি।

এই দুনিয়াটি সবচেয়ে আলাদা! আপনই জীবনে যা কখনো কল্পনা করেন নি তাই পাবেন এখানে। হয়তো কখনো কল্পনা করেন নি যে সাইটে পাসওর্য়াড বাদে ঢুকা সম্ভব, দেখবেন তাই এখানে অহরহ হচ্ছে। এমন বিষয় পাবেন যা আপনার মাথাও গুলিয়ে দিতে পারে। উইকিলিকস ঘোষণা করেছে যে এ বছর তারা আরো নতুন ডেটা প্রকাশ করবে, কিন্তু আপনিই হয়তো বিস্ময়ভরে দেখতে পারবেন উইকিলিকস এর এই সমস্ত ডেটা এই ডার্ক ওয়েবে আছে বেশ কিছু বছর আগে থেকেই। যেকোন বইয়ের একদম লেটেস্ট এডিশন যা কিনা সারফেস ওয়েবে কপিরাইট ল’এর কারণে নেই তা দেখবেন এখানে দেদারসে আদান প্রদান হচ্ছে।

আরো আছে বিকৃতরুচির বিনোদোন! শিশু পর্ণোগ্রাফি থেকে শুরু করে নানা ধরনের Genital Mutilation এর ভিডিও যা কিনা সারফেস ওয়েবে নেই, তা এখানকার হট টপিকস।

এমন কিছু সাইট আছে যেখানে মার্জুয়ানা, হিরোইন থেকে শুরু করে সব ধরণের মাদক হোম ডেলিভারী দেয়া হয়। ডার্কনেটের মূল ব্যবহারকারী মূলত মাদকাসক্তরাই।

আবার কিছু সাইট আছে যেখানে কট্টরপন্থী গ্রুপগুলো শিক্ষা দিচ্ছে কিভাবে গোলা বারুদ বানাতে হয়, কিছু সাইটেতো রেডিমেড অস্ত্রই বিক্রি হয়। একে ৪৭ থেকে শুরু করে রকেট লাঞ্চার, মর্টারের মত অস্ত্রও কিনতে পাওয়া যায়।

আরব-বসন্তের সময় বিপ্লবকারীরা এই ডার্কওয়েবে যোগাযোগও করত। ডার্কওয়েবে নানা ধরণের মেইল সার্ভিস, চ্যাট সার্ভিস আছে যেখানে পরিচয় গোপন রেখে আপনি অনেক কিছুই করতে পারবেন।

বিস্ময় আরো আছে! বেশ কিছু দিন আগে আমি এমন এক আন্ডারগ্রাউন্ড সাইটে ঢুকি যেখানে টাকার বিনিমিয়ে কিলার ভাড়া পাওয়া যায়!!! কি ভয়ংকর, বিশ্বাস হচ্ছে না? আমারও তখন হয় নি। এমনই এক সাইটে ঢুকে দেখি কিলার তার নিজের সর্ম্পকে এভাবে বর্ণনা দিচ্ছেঃ

“আমাকে তুমি স্ল্যাট নামে ডাকতে পার। আমি তোমার শত্রুকে প্রফেশনাল ওয়েতে শেষ করে দিতে পারব। আমি তার সাথে তোমার সমস্যা জানতে আগ্রহী নই। তুমি শুধু আমাকে টাকা দিবে আর আমি তাকে শেষ করে দিব। টার্গেটের বয়স কমপক্ষে ১৮ হতে হবে,
টার্গেট পুরুষ না মেয়ে তাতে আমার কিছু আসে যায় না
আমি গর্ভবতী মহিলাকে টার্গেট হিসেবে নেই না
আমি টার্গেটকে অত্যাচার করি না
টার্গেট যদি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব অথবা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য হন তাহলে বাড়তি চার্জ লাগবে
আর বাড়তি চার্জের বিনিময়ে আমি পুরো ঘটনাকে আত্মহত্যা বা দুর্ঘটনার মত করে সাজাতে পারব
ডাউনপেমেন্টের চার সপ্তাহের মধ্যে কাজ হয়ে যাবে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের টার্গেটের জন্য বাড়তি ৫০০০ ডলার ট্রাভেল চার্জ লাগবে
কাজ হয়ে গেল আমি তোমাকে টার্গেটের ছবি তুলে পাঠাব”

মোটকথা আপনি এমনই এক ব্ল্যাক ফরেস্টে প্রবেশ করবেন যেখানে আপনাকে প্রতিটি পদক্ষেপ ফেলার আগে দুবার ভেবে নিতে হবে। সারফেস ওয়েবে যেসব হ্যাকিং টেকনিক দেখতে পান তা হল এই ডার্ক ওয়েব থেকে লীক হওয়া ১% তথ্যের অংশ বিশেষ। এখানকার হ্যাকাররা খুবই ভয়ংকর এবং প্রোগামিং এ তাদের কোন জুড়ি নেই, সাবধান আপনার মেইলই হ্যাক হয়ে যেতে পারে। তাছাড়া সরকারের এজেন্টগুলোতো আছেই।

কিন্তু প্রশ্ন হল এই সব নেটওর্য়াক আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো নাকে ডকা দিয়ে কিভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে???

এটা বুঝতে হলে আমাদের এইরকম একটি নেটওর্য়াক নিয়ে একটু চিন্তা করতে হবে…

ডার্কওয়েবে ব্যবহৃত নেটওর্য়াকের মধ্যে সারফেস ওয়েবে বেশ জনপ্রিয় হয়ে পড়েছে এমন এক নেটওর্য়াক হল অনিয়ন নেটওর্য়াক। অনিয়নের Pseudo-top-level-domain হল .onion। আর এর সাইটগুলোর ঠিকানা ভূতুড়ে! মূলত মার্কিন নেভির জন্য তৈরী করা হলেও এই নেটওর্য়াক আজ বিশ্বব্যাপী ছদ্মবেশী নেট ব্যবহারকারীদের প্রথম পছন্দ। অনিয়নে আপনার ব্রাউজার দিয়ে ঢুকতে পারবেন না, এজন্য আপনাকে ডাউনলোড করতে হবে Tor ব্রাউজার।

টর আপনার পরিচয়কে লুকিয়ে ফেলবে আর এর ফলে কারো পক্ষে আপনার অবস্থান শনাক্ত করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। আপনি যখন টর দিয়ে কোন সাইটে ঢুকতে যাবেন তখন টর আপনার এই রিকোয়েস্ট কঠিন এনক্রিপশনের মধ্য দিয়ে অনিয়ন প্রক্সিতে পাঠাবে। অনিয়ন প্রক্সিতে আপনার পাঠানো ডেটা আর ডেটা থাকে না, সেটা দুর্বোধ্য এক স্ক্রিপ্টে পরিণত হয়।

এবার অনিয়ন প্রক্সি এই ডেটা নিয়ে মূল ইন্টারনেটমূখো হবে যেখানে স্বেচ্ছাশ্রম দেয়া সদস্যদের অনিয়ন রাঊটারগুলো অপেক্ষা করছে। অনিয়ন রাউটারে প্রবেশের আগে অনিয়ন নেটর্য়াকের প্রবেশপথে এই ডেটা আবার এনক্রিপশনের ভেতর দিয়ে যায়। নেটওর্য়াক থেকে বের হওয়ার সময় আরো একবার এনক্রিপশনের ভেতর দিয়ে যায়। পথিমধ্যে অনিয়নের বেশ কিছু রাউটারের ভেতর দিয়ে এনক্রিপশন হয় যেখানে এক এক রাউটারে এনক্রিপশন আউটপুট এক এক রকম এবং কোন রাউটারই জানে না যে ডেটা কোন রাউটার থেকে আসছে। সবশেষে ডেটা যখন প্রাপকের হাতে গিয়ে পৌছায় তা তখন ডিএনক্রিপশন প্রসেসের মাধ্যমে আদি অবস্থানে ফিরে আসে। এই রকম অনেকগুলো লেয়ার বা খোসা থাকার কারণেই এই নেটওর্য়াকের নাম অনিয়ন নেটওর্য়াক।

এখন এই ডেটা চালাচালির সময় কেউ যদি এই ডেটা চুরি করতে সক্ষমও হয় তার পক্ষে এটা বের করা সম্ভব হবে না যে এটার প্রেরক কে বা প্রাপকই বা কে! কেননা অনিয়ন রাউটারগুলো নিজেরাই এটা জানে না। তবে হ্যা, কেউ যদি দুই প্রান্তেই নজরদারী করতে পারে তাহলে সে বুঝতে পারবে Sender-Receiver এর লোকেশন কোথায়।

এই ধরণের দুর্বোধ্য সিস্টেমের কারণেই এই সমস্ত নেটওর্য়াক সব সময়ই আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। অনিয়ন নেটওর্য়াকে থাকা ব্ল্যাক মার্কেটগুলোর ভেতর সবচেয়ে জনপ্রিয় হল Silkroad, ফোর্বসের হিসেবে এখানে গত বছর ২২ মিলিয়ন ডলারের বেচা-কেনা হয়েছিল। আর এখানে প্রচলিত মুদ্রায় বেচাকেনা হয় না, বেচাকেনা হয় Bitcoin নামক একধরণের ভার্চুয়াল মুদ্রাতে। মাইক্রোসফট, অ্যাপেলের প্রোডাক্ট এখানে ৮০% পর্যন্ত ডিস্কাউন্টে পাওয়া যায়।

এতসব অনিয়মের ভেতরেও এই ধরণের ব্যবস্থাকে সমর্থন করি, কেন? একটি উন্মুক্ত প্লাটফোর্ম থাকা আসলেই প্রয়োজন। যে শিশু পর্ণোগ্রাফি তৈরি করে সে এই নেটওর্য়াক বন্ধ করলে আরেকভাবে তার কাজ করবে। আর তাছাড়া চিরকালই সাইবার সন্ত্রাসীরা আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো থেকে একধাপ এগিয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ বলতে পারি Internet Protocol ^ 6 বের হলেও সারফেস ওয়েবে এখনো পড়ে আছে সেই মান্ধতার আমলের Internet Protocol ^ 4 এ। অথচ আন্ডারগ্রাউন্ডের মোটামুটি সব সাইটই IP^6 ব্যবহার করছে।

যেহেতু ইন্টারনেটেরও মানুষের বাকি সব সৃষ্টির মত খারাপদিক আছে তাই এটার সাথেই মানিয়ে নিয়ে চলতে হবে। আর অবশ্যি বলব যে জীবনে একবার হলেও ডার্ক ওয়েবে ঘুরে আসুন, তা না হলে বরফখন্ডে আশ্রিত শীলের মত মহাসাগরের স্বাদ মিস করবেন।

তবে হ্যা, বেশী দূর যাবেন না। মনে রাখবনে, সরকারের অঢেল টাকা আছে, তাই তারা চাইলেই ডার্ক ওয়েবের মেধাবী হাজারো হ্যাকারকে ভাড়া করতে পারবে আপনারমত লোকদের ডার্ক ওয়েবে চোখে চোখে রাখতে।

কিছু টিপসঃ

– অবশ্যই ডার্ক ওয়েবে ঢোকার আগে জাভাস্ক্রিপ্ট, ফ্ল্যাশ, শকওয়েভ বন্ধ করে নিবেন। এগুলো আপনার Anonymity খুব সহজেই ভেস্তে দিতে পারে।

– পেইড প্রক্সি সার্ভিস ব্যবহার করুন। এগুলো মিলিটারি এজেন্সিগুলো ব্যবহার করে এবং এদের সার্ভিসও দারূণ।

– আপনার ডেস্টিনেশন Website যদি  কোনভাবে হ্যাক হয় তাহলে আপনার পরিচয় বেরিয়ে যাবার একটি সম্ভাবনা রয়েছে। কখনো ডার্ক ওয়েবে কোন কাজে আপনার আসল ডেটা ব্যবহার করবেন না।

মনে রাখবেন, সারফেস ওয়েবের মত ডার্ক ওয়েবেও আপনি একা নন, এখানেও দেয়ালের কান আছে…. সূত্রঃ টেকটিউনস।