ফেসবুকে মা

9034
0

বাবার ফেসবুক আইডির ঝামেলা পোহাতে না পোহাতে মা ও আইডি খুলে বসেছেন। সে কি বিপত্তি! আগে চা খেতে বসে খানিকটা আলাপ করা যেত, এখন চেয়ে চেয়ে বাবা-মা দুজনের ফোন টেপা দেখি। একটা সময় যারা আমাকে ফোনের মধ্যে কি দেখিস এত বলে ঝাড়তেন, এখন তারাই ফোনের মধ্যে যেন ঢুকে পড়বেন। এদিকে মা প্রোফাইলে দিয়ে রেখেছেন পুতুলের ছবি, আমি মাকে গিয়ে বললাম, “পুতুলের ছবি দিয়ে রেখেছেন কেন? সেই বয়স আছে আপনার?”
“তো কিসের ছবি দেব?”
“ফুলের ছবি দিতে পারেন, প্রকৃতির ছবি দিতে পারেন।”
“তুই কি বুড়া পাইছিস আমারে? ওসব দিব না আমি। কত বয়স হইছে আমার, আমার বয়স কারিনা কাপুরের থেকে বেশি হল দু-তিন বছর বড় হবে, যে বছর আমার বিয়ে হল, ঐ বছরেই কারিনা সিনেমায় এল।”

মায়েদের সাথে তর্ক করা স্রেফ সময়ের অপচয়। তাই চুপচাপ মায়ের প্রোফাইল পিকচার লাইক করে দিলাম। এদিকে মা প্রতি পাঁচ মিনিট অন্তর অন্তর রান্নার পোস্ট শেয়ার দিয়ে টাইমলাইন ভরিয়ে ফেলেছেন। এবং সেগুলো অনেকসময় ই বিদঘুটে। কেকা ফেরদৌসি কে নিয়ে যেখানে এত ট্রল হচ্ছে সেখানে মামা সেই কেকা ফেরদৌসির অসংখ্য রান্নার ভিডিও শেয়ার দিয়ে বসে আছেন। আমার বন্ধুরা আমাকে মেনশন দিচ্ছে, দলে দলে হাহা রিয়েক্ট দিচ্ছে, আবার আমার কোন সাড়া না পেয়ে ইনবক্স ও করছে।

এদিকে মেসেজ বক্স আর টাইমলাইন বুঝতে না পারার সমস্যা টা মায়ের ও হচ্ছে। তিনি প্রায়ই পাশের বাসার আন্টিকে টাইমলাইনে লিখে ফেলছেন, এবং সেই আন্টিও সম্ভবত একই রোগে আক্রান্ত বলে টাইমলাইনের পোস্টেই যাবতীয় আলাপ সেরে ফেলছেন। সেদিন তো ঘটল এক বিপত্তি, মা আর পাশের বাসার কুলসুম আন্টি, নিচের বাসার নিলুফা আন্টিকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে ফেললেন। নীলুফা আন্টি সেটা দেখে তো রেগে আগুন। তিনি সরাসরি কিছু বললেন না, নিজের টাইমলাইনে স্ট্যাটাস দিলেন “নিন্দুকদেরকে তুমি আমার পক্ষ থেকে জবাব দিয়ে দাও আল্লাহ!” মজার বিষয় হচ্ছে মা আর কুলসুম আন্টি দুজনেই গিয়ে সেখানে আমিন লিখে কমেন্ট করলেন। কুলসুম আন্টি এতটাই পল্টিবাজ যে তিনি নীলুফা আন্টির টাইমলাইনে লিখলেন, “আর বলবেন না ভাবি, আজকে দুই তলার ভাবি(আমার মা) আপনারে নিয়ে যা বলল…” এদিকে এটা দেখে মা খুব আপসেট হয়ে গেলেন। তিনি রান্নার ভিডিও শেয়ার দেয়া বন্ধ করে আবেগঘন একটি লাইন লিখলেন, “এ পৃথিবীতে কাউকেই বিশ্বাস করা ঠিকনা, সবাই বহুরুপী” সেখানে কুলসুম আন্টি লাভ রিয়েক্ট দিয়ে কমেন্ট করলেন, “ঠিক বলেছেন ভাবি!” মা এংরি রিয়েক্ট দিয়ে চুপ রইলেন, কিছু বললেন না।

এসব ঝগড়ার পাশাপাশি ও মায়ের ফেসবুকে আরো যথেষ্ট এক্টিভিটি লক্ষ্য করা যায়। এর মধ্যে অনেক কিছুই বাবা কতৃক প্রভাবিত। মা বাবার প্রোফাইলে ঘুরে বেড়ান, কোন মহিলা তার পোস্ট লাইক করছে কিনা। সেদিন তো দেখলাম বাবার পোস্টে মায়ের কমেন্ট, “সেলিনা এটা কে আবার?” এর কিছুক্ষণ পর দেখি বাবা আর মায়ের বাস্তবে ঝগড়া হচ্ছে। এবং এই ঝগড়ার ফলশ্রুতিতে মায়ের রান্না স্ট্রাইক। অর্থাৎ রান্না করবেন না। কিন্তু ফেসবুকে মা ননস্টপ রান্নার ভিডিও শেয়ার দিয়ে চলেছেন। দেখলাম একটা শেয়ার করা ভিডিও তে বাবা কমেন্ট করেছেন, “ভিডিও দেখে কি লাভ? রান্না তো করবেনা” মা এংরি রিয়েক্ট দিলেন, আমি লাভ রিয়েক্ট দিলাম।

মা কিছুদিন আগে রিলেশনশীপ স্ট্যাটাস আপডেট করতে শিখেছেন। সেদিন স্ট্যাটাস দিলেন “গট ম্যারিড” কিন্তু ভুল করে ডেট দিয়ে দিলেন সেদিনের। বিস্ময়সূচক কমেন্টে ভরে গেল, সবাই অবাক হয়ে কমেন্ট করতে লাগল। অনেকে আমাকে ইনবক্সে জিজ্ঞেস করতে লাগল, আমি প্রচণ্ড বিরক্ত বোধ করলাম, পরে মাকে শিখিয়ে দিলাম কি করে আপডেট দিতে হয়। সেদিন মা আপডেট দিলেন, গট ম্যারিড উইথ “বাবার নাম”। আমি লাভ রিয়েক্ট দিলাম। বাবা সেখানে একটা লাভ ইমোজি কমেন্ট করলেন, মা লাভ রিয়েক্ট দিলেন।

ভেবেছিলাম এটুকুই শেষ! কিন্তু এটা যে কেবল শুরু কল্পনাও করতে পারিনি। এখন রোজ বাবা-মা একজন আরেকজন কে ট্যাগ করে প্রেমের স্ট্যাটাস দেয়। বাবা মাকে নিয়ে কবিতা লিখে মাকে ট্যাগ করে দেয়, রেডিওমুন্নার প্রেমের পোস্ট শেয়ার করে মাকে ট্যাগ দেয়। মা ও লাভ রিয়েক্ট দিয়ে পাশে থাকে। ফোন হাতে নিয়ে বাবার রোমান্টিক পোস্টে লাভ ইমোজি কমেন্ট করে আর স্ক্রিন থেকে মুখ উঠিয়ে কর্কশ স্বরে বাবাকে বলে “মূলা নিয়ে আসেন যান” বাবার রোমান্টিক হাসি ফ্যাকাশে হয়ে যায়। নতুন করে আরো রোমান্স দিয়ে লিখা আরেকটা পোস্ট ব্যাকস্পেস দিয়ে মুছে দেন, ছেঁড়া বাজারের ব্যাগ নিয়ে মূলা কিনতে বেরিয়ে যান। লেখাঃ আসিফ মাহমুদ।