প্রতিশোধ

1789
0
Protishod

হৃদিতার এখন স্পষ্ট মনে হচ্ছে সে সাবিতের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে মোটেও ঠিক করেনি। সাবিত তার মনের থেকে বেশি ভালোবাসে তার শরীরকে। সে হৃদিতার চোখের দিকে যতটা না তাকায় তার থেকে বেশি তাকায় হৃদিতার বুকের দিকে। হৃদিতার অস্বস্তি ফিল হয়, তবু মেনে নেয়। একটা মেয়েকে চারপাশের অনেক কিছু মেনে নিতে হয়, মেনে নিয়েই আগাতে হয়।

মাত্র দুই মাসের সম্পর্কে সাবিত হুট করেই যে দাবিটা করলো ভাবতেই ঘৃণায় গা ঘিনঘিন করছে হৃদিতার। সাবিত হৃদিতাকে অনেকভাবেই বোঝানোর চেষ্টা করেছে, “দেখো, প্রেমের সম্পর্কে এসব এখন একদমই দুধ-ভাত। আর সমস্যা কী, কয়েক মাস পরে তো বিয়ে করেই নিচ্ছি। প্লিজ, লেট আস ইন ইনজয় আওয়ার-সেলভ।”

হুড তোলা রিকশায় বাসায় ফিরতে ফিরতে হৃদিতা ভাবছে তার এখন কী করা উচিত! নিজের উপরই ক্ষোভ হচ্ছে হৃদিতার। কেন এমন একটা রিলেশনে জড়ালো সে, কেন সাবিতকে নিয়ে সে এত স্বপ্ন দেখলো?

মাঝপথে এসে সাবিতকে ছেড়ে দেয়ার চিন্তাও সে করত পারে না। ভীষণ দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল হৃদিতা। হৃদিতার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে শুরু করলো।

মন থেকে ভালোবাসলে, ভালোবাসার মত করে ভালোবাসলে একজন খুনিকেও ভুলে যাওয়া অনেক কষ্টের হয়। আর সাবিত তো সেখানে কেবলমাত্র প্রস্তাব করেছে তাকে। আচ্ছা, তাই বলে কি মাত্র দুমাসের সম্পর্কে সাবিতের সঙ্গে শুতে হবে তাকে?

হৃদিতা আবার উল্টো করে ভাবে কেন সে একটা সম্পর্ককে সময়-দিন-ঘন্টা দিয়ে বিচার করছে? সম্পর্কের গভীরতা কি সময় দিয়ে মাপতে হয়? তাহলে ১০/১৫ বছরের সম্পর্কগুলো এত সহজে ভেঙ্গে যাচ্ছে কেন? হুট করেই সম্পর্কে জড়িয়ে যাওয়া হয়তো সহজ হয় কিন্তু বের হওয়া ভীষণ কঠিন।

হৃদিতা বাড়িতে ফিরেই সাবিতকে ফোন দিলো। সাবিত রিসিভ করার সাথে সাথেই হৃদিতা বললো, “দেখো সাবিত, তোমার প্রেমের বাজারে এইসব হয়তো ভীষণ সহজলভ্য, কিন্তু বিশ্বাস করো আমি এতটা সস্তা হয়ে যাইনি। সহজ কথা, আই রেসপেক্ট মাইসেল্ফ।”

সাবিত ফোনের ওপাশ থেকে সব শুনে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। এরপর বলা শুরু করলো, “অল রাইট হৃদিতা। একটা সম্পর্ককে বাঁচিয়ে রাখে বিশ্বাস, আমাদের মধ্যে যখন এই বিশ্বাসটা নেই তখন সম্পর্ক থাকার কোন মানেই হয় না। ভালো থেকো হৃদিতা।”

তারপর সাবিত ফোনটা কেটে দেয়। হৃদিতাও আর কল দেয়নি সাবিতকে।

দুদিন কেটে গেল। সাবিতের কোন ফোন বা টেক্সট পায়নি হৃদিতা। হৃদিতা ভীষণ অস্থির হয়ে পরেছে সাবিতের জন্য। এ দুদিনেই হৃদিতা বুঝে গেছে সে সাবিতকে কতটা গভীরভাবে ভালোবাসে।

হৃদিতা আবার উল্টো করে ভাবতে শুরু করে, সে যদি সাবিতকে এতই ভালোবাসে তাহলে কেন তাকে বিশ্বাস করতে পারছে না? চারপাশের হাজারটা অসৎ মানুষের ভিড়েও তো অনেক সৎ মানুষ থাকে। এই বিশ্বাসহীনতার যুগেও তো কাউকে না হোক বিশ্বাস করতে হয়। হৃদিতা আবার ভাবতে শুরু করে। সে নতুন করে সিদ্ধান্ত নেয়, তার উচিত সাবিতের উপর বিশ্বাস রাখা। সে প্রয়োজনে সাবিতের উপর বিশ্বাস রেখেই ঠকতে চায়।

হৃদিতা সাবিতকে টেক্সট পাঠায়…. ”Ok…I’m Ready. Call me back!”

হৃদিতার মেসেজ পাওয়া মাত্রই সাবিত কল ব্যাক করে। হৃদিতা উদ্বিগ্ন গলায় বলে “আমার খুব কাছের এক বান্ধবী ফ্লাটে একা থাকে। দ্যাট উইল বি ভেরি সেফ ফর আস। কাল বিকেলে তৈরী থেকো। আর হ্যাঁ, আশা করি তুমি আমার এই আস্থা এবং বিশ্বাসের মূল্য দিবে। সাবিত, তুমি অন্তত আমার সাথে চিট করবে না, এই বিশ্বাসের উপর জুয়া খেললাম। এই জুয়ায় হারলে পৃথিবীতে বেঁচে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব হবে না ”

পরদিন বিকেল! এগিয়ে চলছে সাবিত-হৃদিতার হুড তোলা রিকশা। সাবিত ভীষণ এক্সাইটেড আর হৃদিতা ভীষণ নার্ভাস। খুব অস্বস্তি হচ্ছে হৃদিতার।

ফ্ল্যাটের তালা খুলতে উদ্যত হৃদিতার চোখ পড়লো তার রোলেক্স ব্রান্ডের চওড়া বেল্টের হাত ঘড়ির দিকে। চিক চিক করছে সোনালী কালারটা। ঘড়িতে তখন ৪টা বেজে ২০ মিনিট।

৫টা ৪০ মিনিট। হৃদিতার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। এখন সে ভীষণ ক্লান্ত অনুভব করছে।

পাশে রাখা ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করলো হৃদিতা। একটা সিগারেট বের করে দুঠোঁটের মাঝখানে রাখলো সে। সিগারেটে কেমন যেন একটা কেরোসিন কেরোসিন গন্ধ লেগে আছে।

সোফার পাশে উল্টো হয়ে পড়ে আছে হৃদিতার হাই হিল। তার পাশে পড়ে আছে গোল্ডেন গ্রেইন অ্যালকোহলের দুটা খালি বোতল। সেখান থেকে হাত চারেক দূরে আরেক সোফার আড়ালে পড়ে আছে কতকগুলো চেতনানাশক ট্যাবলেটের খোসা। আর একদম সামনে কেরোসিনের আগুনে দাউদাউ করে জ্বলছে সাবিতের মৃতদেহ।

হৃদিতা সোফায় শুয়ে আছে। সিগারেটে একটা টান দিয়ে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে সে তানহাকে কল করলো…….”সাবিত আর কিছুক্ষণের মধ্যেই ভস্ম হয়ে যাবে। আমি চাই পুরোপুরি ভস্ম হবার আগেই তুমি চুক্তির বাকী টাকাটা আমার একাউন্টে যোগ করবে।”

ও হ্যাঁ, যেটা বলা হয়নি তানহা হচ্ছে সাবিতের এক বছর আগে এক্স হওয়া গার্লফ্রেন্ড। সাবিত তানহাকে মেনে নেয়া তো দূরে থাক, তানহার গর্ভের চার মাসের সন্তানকেও সে স্বীকা্র করেনি। উল্টো খুন করেছে তাকে।

আর হৃদিতা একজন প্রফেশনাল কিলার।

লেখাঃ আবু আল সাঈদ