অদ্ভুত এক আইডি থেকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট এসেছে। ‘আলোহীন ল্যামপোস্ট’ সত্যিই খুব অদ্ভুত নাম। একটা
অকাজো লাম্পপোস্ট এর ছবি ও দেয়া আছে। ফেইক আইডি ভেবে একসেপ্ট করলাম না। সময় তার নিয়ম মত চলে। এক সময় অনেক রিকুয়েস্টের ভিড়ে হারিয়ে গেল সেই অদ্ভুত আইডি আলোহীন ল্যাম্পপোস্ট। আমারও এ কাজ সে কাজে পড়ে আর খেয়াল করা হয় নাই। ফেইক আাইডি ভাবার কারনে হয়তো খেয়াল করা হয়নি। হটাৎ করে একদিন ম্যাসেজ আসলো অদ্ভুত আইডি থেকে –
আমি দুঃখ ভুলে বসন্তের ফুল পেতে চাই।
এই ধরনের ম্যাসেজ পেয়ে ভাবতে লাগলাম। রিপ্লাই করলাম-বসন্তের দিন চলে যাচ্ছে, ফুল কি পেয়েছেন?
পায়নি এখনও তবে পেয়ে যাবো -রিপ্লাই আসলো আইডি টা থেকে।
এভাবে চলতে থাকলো রিপ্লাই রিপ্লাই খেলা। বড্ড গুছিয়ে কথা বলে মেয়েটি। অহ বলতেই তো ভুলে গেছি সেই অদ্ভুত আইডির মালকিন একটা মেয়ে। নাম নীলাঞ্জনা। এতটুকু বলেছে আমাকে, সত্য মিথ্যা যাচাই করি নি। রবীন্দ্রনাথ বলে গেছেন -‘মানুষের উপর বিশ্বাস হারানো পাপ’। তাই বিশ্বাস করেছি নীলাঞ্জনা কে। খুব সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে কথা বলে মেয়েটি। এভাবে কথা বললে শুধু শুনতে মন চাই। মুঠোফোনে কথা হয় নীলাঞ্জনার সাথে। নীলাঞ্জনাকে দেখার সুযোগ হয়নি এখনও। সম্পর্ক ধীরে ধীরে বন্ধুত্বে রূপ নেয়। আপনি ছেড়ে তুমিতে চলে আসে। মুঠোফোনে কথা হয় নিয়মিত। মেয়েটির কন্ঠ! কি বলবো অপূর্ব। মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনি তার কন্ঠ। তার কন্ঠ শুনে হারিয়ে যেতাম, ডুবে যেতাম কথার ভিতর। দিন দিন সম্পর্ক গভীর হতে থাকে আমাদের। আমি নিজেই দূর্বল হয়ে পড়ছি নীলাঞ্জনার উপর।তার সাথে নিয়মিত কথা বলা, খোঁজ খবর রাখা, খুটিনাটি চলছে। তার সাথে কথা না বললে আমার যেন ভালোই লাগে না। প্রসঙ্গক্রমে একদিন আমি দেখা করার কথা তুললাম।
– আচ্ছা নীলাঞ্জনা আমরা কি দেখা করতে পারি না?
– প্রকৃতির সময় হলে আমাদের দেখা হবে -বলল নীলাঞ্জনা।
নিজের অজান্তেই নীলাঞ্জনা মেয়েটির প্রতি দূর্বল হয়ে যাচ্ছি। না দেখে নীলাঞ্জনার প্রতি দূর্বল হওয়ার কারণ খুজি বোকার মত।
অবশেষে দেখা হলো দুজনের। নীল রং এর একটা সুতির জামা পরে এসেছে নীলাঞ্জনা। নীলাঞ্জনা দেখতে অদ্ভুত সুন্দর নয়। যে কেউ দেখলে ক্রাশ খাবে এমন চেহারা না নীলাঞ্জনার। তার গাত্র বর্ণ কালো। কিন্তু সত্যি বলতে এই নীলাঞ্জনার প্রতি দূর্বল হয়ে গেছিলাম আমি। সে কালো হোক আর যায় হোক আমি তাকে পছন্দ করি। চেহারা দিয়ে কি আর ভালবাসা হয়। পছন্দ করি কথা টা বলা হয়নি নীলাঞ্জনাকে।
– কি বলছিলাম না আমাকে দেখলে পছন্দ হবে না -বলল নীলাঞ্জনা।
– কে বলেছে পছন্দ হয়নি? (আমি তো তোমাকে না দেখে পছন্দ করেছি মনে মনে বললাম।)
– সামনে আছি তাই হয়তো ভদ্রতার খাতিরে বলছো না বলল নীলাঞ্জনা।
নীলাঞ্জনার দীঘল কালো চুলের ভিতর হারিয়ে যেতে মন চাচ্ছে। মানুষের চুল এত সুন্দর হয়। এরকম মসৃণ চুল আগে দেখিনি। তার চোখের কথা কি বলবো, আমি কেন হাজারো তরুণ ডুবে যাবে তার চোখের দিকে তাকালে। এক কথায় অবিশ্বাস্য সুন্দর চোখের অধিকারীনি এই মেয়ে। গাত্রবর্ণ কালো বটে কিন্তু তার চেহারায় যে মায়াবী ভাব আছে তা সচরাচর দেখা যায় না। এই কালো মেয়ের প্রেমে পড়ে গেছি, হ্যাঁ সত্যিই প্রেমে পড়ে গেছি। অসীম প্রেম। এমন মেয়ে কে পেলে সারাজীবন ভালবেসে কাটিয়ে দেওয়া যায়, সমস্ত দুঃখ ভুলে থাকা যায়। নিজের অজান্তে ভালবেসে ফেলেছি। এখন ভুলে থাকতে পারবো না নীলাঞ্জনাকে। সারাটি জীবন এই মেয়েটির সাথে কাটাতে খুব ইচ্ছা করছে। তার হাতে হাত রেখে সবুজ ঘাসের উপর হাটতে ইচ্ছা করছে। খুব খুব ইচ্ছা করছে নীলাঞ্জনার কাধে মাথা রেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে। ইচ্ছাগুলো কি অপূর্ণ রয়ে যাবে? আমি কি নীলাঞ্জনাকে আমার একান্ত একজন করে পাবো না? একা একাই ভাবছি এসব কথা। আমার পাশে বসে আছে নীলাঞ্জনা।
– জানো আমার খুব শখ আমার কল্পনার রাজকুমারের সাথে বৃষ্টিতে ভিজবো। আমাদের কাছে ছাতা থাকবে তারপর ও আমরা বৃষ্টিতে ভিজে একাকার হব। দারুন হবে তাই না বলো? -নীলাঞ্জনা বলল।
-আচ্ছা তোমার কল্পনার রাজকুমার কে কখনও দেখেছো? জিঞ্জেস করলাম নীলাঞ্জনাকে।
হ্যাঁ দেখেছি তো। খুব সুন্দর করে কবিতা শোনায় আমাকে। আমি তার কবিতা শুনে হাসি।
আমার মনটা খারাপ হয়ে গেল নীলাঞ্জনার কথা শুনে, তাহলে কি আমার সব স্বপ্ন, সব কল্পনা অঙ্কুরে বিনাশ হয়ে যাবে? না, ভালবাসার কথা নীলাঞ্জনাকে বলতেই হবে। আজই বলতে হবে। আর আজ যদি না বলতে পারি তাহলে নিজের কাছে অপরাধী হয়ে যাব। নীলাঞ্জনা তোমাকে কিছু কথা বলতে চাই –
হ্যাঁ বলো কি বলবা।
রাগ করতে পারবে না আর আমার বলা শেষ না পর্যন্ত কোন কথা বলতে পারবা না –
আচ্ছা ঠিক আছে বলবো না -নীলাঞ্জনা বলল।
-আমি কি তোমার একটি হাত ধরতে পারি?
হ্যাঁ পারো বলল নীলাঞ্জনা।
নীলাঞ্জনার হাত ধরে বলতে শুরু করলাম -আমার অনেক টাকা না থাকতে পারে কিন্তু আমার একটা মন আছে যার কাছে সমস্ত পৃথিবীর ধন-দৌলত তুচ্ছ। পাঁচ তারকা হোটেলে নিয়ে খাওয়াতে পারবো না তবে কথা দিচ্ছি খোলা আকাশের নিচে অগনিত তারার হোটেলে খাওয়াতে পারবো। কাজের ব্যস্ততায় হয়তো তোমাকে সময় দিতে পারবো না কিন্তু কথা দিচ্ছি ছুটির দিনে তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবো। শত ব্যস্ততার মধ্যেও মুঠোফোনে বলবো ভালবাসার কথা। হয়তো সুখি করতে পারবো না তবে কথা দিচ্ছি দুঃখকে তোমার ধারে কাছে আসতে দিব না। আর হ্যাঁ বৃষ্টি হলে তোমাকে নিয়ে ভিজতে ভুল হবে না। এতটা ভালবাসায় মুড়িয়ে রাখবো তোমায় যা সমস্ত পৃথিবীর কাছে নগন্য।
আমি কি তোমার কল্পনার রাজকুমার হতে পারি?
আমার কথা শেষ। নীলাঞ্জনার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখি কাঁদছে। চোখের পানি নিজ হাতে মুছে দিয়ে বললাম -পাগলী চোখের পানি মুছে দেওয়ার জন্য রাজকুমার আছি তো পাশে। চলো সবুজ ঘাসের উপর দিয়ে হেঁটে হেঁটে দুর অজানায় চলে যায়। নীলাঞ্জনা একটা ভুবন ভোলানো হাসি দিয়ে আমার হাত ধরল আর বলল -ছাড়বে না হাত মুঠোয় যা ধরেছো।
– হাসানুল বান্না হিমু