২০২০ সাল। প্রচণ্ড রকমের ভীতিকর আর আতঙ্কিত এক বছরের নাম। কেননা, করোনা মহামারীতে গোটা বিশ্ব ছিল আতংকে। থমকে গিয়েছিল পুরো পৃথিবী। জনারণ্য জায়গাগুলোও শূন্যতায় পর্যবসিত হয়েছিল লকডাউনের কারণে। উন্নত চিকিৎসা বিজ্ঞানও স্রেফ প্রকৃতির হাতের খেলনা বনে গিয়েছিল যেন। আর মৃত্যু যেন নিজের দম্ভ প্রকাশে প্রতিদিন কেড়ে নিচ্ছিল হাজার হাজার প্রাণ। এমন একটা ভীতিকর বছর যেন আবার ফিরে না আসে সেই প্রার্থণাই বিশ্ববাসীর।
করোনা বাদেও বিশ্বব্যাপী আরো অনেক ঘটনাই ঘটে গেছে; যার কিছু হয়তো আমাদের মনে আছে, আর কিছু হয়তো আমরা বেমালুল ভুলে বসে আছি। কিন্তু সেসব ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয়ার জন্য রয়েছে ফটোগ্রাফারদের দল; যারা স্মৃতি বা মুহূর্ত আঁটকে রাখে ফ্রেমবন্দী করে। প্রতি বছরই বিশ্বখ্যাত পত্রিকাগুলো বছরের শেষে সেরা ছবিগুলো নিয়ে ফিচার প্রকাশ করে থাকে। তাই, আজকের আয়োজনে থাকছে ২০২০ সালের সেরা সব ছবিগুলো আর সেগুলোর পেছনের ইতিহাস।
জানুয়ারি, ২০২০
বালুঝড়ের সঙ্গে বৃষ্টিঝড় মিলে শহরের দিকেই এগিয়ে আসছে। উল্লেখ্য যে, সাউথ ওয়েলসে বালুঝড় অনেকটাই নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার।
পঙ্গপালের ঝাঁকের মধ্যে পড়ে যাওয়া এক ব্যক্তির ছবি এটা। বছরের শুরুতেই পঙ্গপালের ঝাঁক আঘাত হেনেছিল পূর্ব আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের বেশ অনেকটা অঞ্চল জুড়ে। গত সত্তর বছরের মধ্যেই এটাই ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ পঙ্গপালের ঝাঁক।
কয়েক বছরের টানা সংঘাতের পর, লিবিয়ার দলগুলো যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছিল। যদিও এই ঘোষণা কেবলই সংক্ষিপ্ত একটা সময়ের জন্যই দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বেনগাজির এই সড়কটাই বলে দেয় লিবিয়া কতটা বিধ্বস্ত একটা সময় পার করেছে।
চীনের উহান নগরীতে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাড়তে শুরু করে নতুন বছরের ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। চীন সরকার মাত্র ১০ দিনের মধ্যে অস্থায়ী এক হাসপাতাল তৈরি করে বিশ্বের কাছে স্বাস্থ্য সুরক্ষার এক নজির স্থাপন করে। সেই হাসপাতাল তৈরির কার্যক্রমেরই একটি দৃশ্য।
ফেব্রুয়ারি, ২০২০
স্টেপলস সেন্টার, যেখানে বাস্কেটবল তারকা কোডি ব্রায়ান্ট তার ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময়ই খেলেছেন। সেই স্টেপলস সেন্টারেই কোডি ব্রায়ান্ট আর তার মেয়ে জিয়ানা, এর স্মরণে একটা উন্মুক্ত অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। বাবা আর মেয়ে একটা হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিল।
এক কনভেনশন সেন্টারকে অস্থায়ী হাসপাতালে রূপান্তরিত করতে হয়েছিল করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে। সেই অস্থায়ী হাসপাতালেই একজন কর্মীকে দেখা যাচ্ছে।
শহরের পুরাতন বাজারের কাছে নতুন বাধ বানানোর জন্য পুরাতন বাধ ভেঙ্গে ফেলা হয়। ফলে টাইগ্রিস নদীর প্লাবনে প্রায় ৭০,০০০ মানুষ বাস্তুহারা হয়।
মার্চ, ২০২০
করোনার প্রকোপ বাড়লে বিশ্বব্যাপী লকডাউন দেয়া হয় সরকারি তরফ থেকে। লকডাউনের ফলে রাস্তাঘাট হয়ে পড়ে জনশূন্য। ফলশ্রুতিতে বনের প্রাণীরা লোকালয়ে চলে আসতে শুরু করে খাদ্যের সন্ধানে। সেইরকমই ওয়েলসের সড়ক জুড়ে একদল ছাগল আধিপত্য বিস্তার করার একটি স্থিরচিত্র এটি।
তালেবান নিয়ন্ত্রিত এলাকার মধ্য দিয়ে দুটি বাচ্চা ছেলে হেঁটে যাচ্ছে। ফেব্রুয়ারি মাসেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তালেবান নেতাদের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। যার মধ্য দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘতম যুদ্ধের অবসান হয়।
সিটি কর্পোরেশনের এক কর্মী সবজির বাজারে ধোঁয়া দিচ্ছেন। করোনার প্রকোপ বাড়লে ভারতীয় সরকার দ্রুত লকডাউন ঘোষণা করে। এটি ছিল লকডাউনের দ্বিতীয় দিনের চিত্র।
করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়লেও ব্রাজিলিয়ান সরকার খুব একটা গুরুত্ব দেননি শুরুতে। বরং এটিকে ফ্যান্টাসি বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। নাগরিকরা এই কথার নীরব প্রতিবাদ করেছিল নিজেদের অবস্থান থেকেই। তারই একটি স্থিরচিত্র। জানালা গলে গৃহবন্দী ব্যস্ত জীবনযাপন।
এপ্রিল, ২০২০
নিউইয়র্কের হার্টল্যান্ডের পরিত্যক্ত ভূমিতে করোনার কারণে নিহত মানুষদের গণকবর দেয়ার একটি স্থিরচিত্র। এই পরিত্যক্ত ভূমিটি বিগত দেড়শো বছর যাবত দরিদ্র এবং অজ্ঞাত মানুষদের শেষ আশ্রয়স্থল বলে বিবেচিত হচ্ছে।
ব্রুকলিন হাসপাতালের এক ফ্রিজার ভ্যানের ভেতরকার দৃশ্য। করোনার এক ধাক্কায় প্রায় ২০,০০০ মানুষ মারা গিয়েছিল এই প্রদেশটিতে।
গাজার বেত লাহিয়ায় এক মা রান্না করতে গিয়ে তার বাচ্চাদের বাঁধাকপির পাতা দিয়ে মাস্ক বানিয়ে বিনোদন দিচ্ছেন।
মে, ২০২০
জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু হলে সমগ্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। ছবিটি একটি পুলিশ স্টেশনের সামনে থেকে তোলা। আগের রাতে বিক্ষোভকারীরা পুলিশ স্টেশনের বিভিন্ন জিনিস যা সড়কের উপর ছিল সেগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
সিরিয়ার আল আতারিবে পবিত্র রমজান মাসের ইফতার আয়োজন নিয়ে বসেছে সিরিয়ান মুসলিমরা। সামরিক অভিযানে তাদের এলাকা বিধ্বস্ত হলেও সেখানে বসেই তৃপ্তি নিয়ে রোজা ভাঙছেন সিরিয়ানরা।
কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে স্পেসএক্সের ফ্যালকন নাইন দুজন মহাকাশচারী নিয়ে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলো।
জুন, ২০২০
করোনার কারণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাটা অত্যন্ত জরুরী; হোক তা আপনজন। তবে প্রিয়জনকে একবার জড়িয়ে ধরার আনন্দ থেকে বঞ্চিত হতে দেননি মেডিকেল কর্মীরা। সাও পাওলোর একটা হাসপাতালে এক রোগী তার ভাবীকে জড়িয়ে ধরেছে সেফটি পর্দার মধ্য দিয়ে।
হাজার হাজার মানুষ সড়কে নেমে এসেছিল জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুতে। তার মৃত্যু নিয়েই মানুষ প্রতিবাদ আর বিক্ষোভে নেমেছিল। জাতিগত অবিচার এবং পুলিশি বর্বরতার নিন্দা জানিয়ে এরকমই বিক্ষোভ কর্মসূচী গ্রহন করেছিল তারা।
অগাস্ট, ২০২০
লেবাননের বৈরুতে পরপর দুটি বিস্ফোরণ করে। যার মধ্যে একটি ছিল ভয়াবহ। ১৯০ জন মানুষ মারা যায় এতে এবং আহত হয় প্রায় ৬ হাজার মানুষ। বন্দরে থাকা ২৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের বিস্ফোরণ ছিল এটা।
সেপ্টেম্বর, ২০২০
স্থিরচিত্রটির রোগীর নাম ফ্রান্সিসকো। করোনার কারণে টানা কয়েক সপ্তাহ হাসপাতালে কাটানোর পর তিনি শঙ্কামুক্ত হন। সাধারণ জীবনে ফিরে যাবার জন্য তাকে মেডিকেল কর্মীরা সমুদ্র দেখে শান্ত হবার জন্য হাসপাতালের বাইরে নিয়ে আসেন।
দাবানলের কারণে পুরে ছাই হয়ে যাওয়া এক বনভূমিতেই খাদ্যের সন্ধানে ফিরে এসেছে একটি হরিণ।
অক্টোবর, ২০২০
প্রবল লকডাউন থাকা সত্ত্বেও থাইল্যান্ডের ব্যাংককে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছিল ব্যাপকভাবে। সেই বিক্ষোভকারীদের একজনই দাঙ্গা পুলিশদের ঠেলে দূরে সরিয়ে দেবার চেষ্টায় মত্ত।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে সুজান ব্রীনান ২,২০,০০০ সাদা পতাকা লাগিয়ে করোনায় মৃত মানুষদের জন্য শোক প্রকাশ করেন।
এক মা অপুষ্টিতে ভুগা তার এক সন্তানকে সিরিঞ্জের সাহায্যে খাবার দিচ্ছেন। ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধে লক্ষাধিক মানুষ খাদ্য সংকটে পড়েন।
নভেম্বর, ২০২০
করোনার কারণে বছরটা এমনিই বিভীষিকাময় হয়ে উঠেছিল। অথচ হারানোর যেন তখন অনেক কিছু বাকি ছিল। বিশ্বের সর্বকালের সেরা ফুটবলারদের একজন আর্জেন্টিনার ডিয়েগো ম্যারাডোনার মৃত্যু বিশ্বকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল। ২৫ নভেম্বর এই ফুটবলারের মৃত্যুতে আর্জেন্টিনার বুয়েন্স আয়ার্সে এক সমর্থক ম্যারাডোনার গ্রাফিতিতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছেন।
করোনা পরীক্ষা জন্য মিলার সেন্টারের কার পার্কিংয়ে এভাবেই সামাজিক দূরত্ব বজায় লাইন ধরে গাড়িগুলো প্রবেশ করেছিল।
ডিসেম্বর, ২০২০
পুরো বছরটা জুড়ে করোনার আতংক থাকলেও শেষটাতে এসে ভ্যাকসিন নির্মাণ সেই ভয়টাকে অনেকটাই মিইয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিল। ফাইজার এবং বায়োএনটেকের যৌথ নির্মিত ভ্যাকসিন নেন যুক্তরাজ্যের মার্গারেট কেনান। তাকেই মেডিকেল কর্মীরা শুভেচ্ছা জানাচ্ছে হাসপাতালে।
Feature Image: Kyle Grillot/EPA-EFE/Shutterstock
তথ্যসূত্রসমূহ:
01. 2020: The year in pictures.
02. 2020 in Photos.
03. Time’s 100 photos of 2020.
04. The best photo of 2020.