বিশ্বের বৃহত্তম ৫টি পাখি

354
0

প্রকৃতি বড়ই বৈচিত্র্যময়। প্রকৃতির নানান বিস্ময়কর সৃষ্টি যেন কল্পনাকেও হার মানায়। প্রকৃতির মনোমুগ্ধকর যত সৃষ্টি রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো পাখি। পাখির রূপে মুগ্ধ হয় না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া হয়তো দুষ্কর কারণ, পাখি প্রাণীজগতের অন্যতম বৈচিত্র্যময় এবং আকর্ষণীয় সৃষ্টি। পৃথিবীতে এযাবৎকালে দশ হাজারের অধিক প্রজাতির পাখির খোঁজ মিলেছে। পৃথিবীতে পাখির যত বৈচিত্র্যতা রয়েছে তা সত্যিই বিস্ময়কর। আজকের আলোচনা বিশ্বের বৃহত্তম পাঁচটি পাখি নিয়ে। 

উটপাখি

উটপাখি বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম পাখি যা লম্বায় ৯ ফুট পর্যন্ত হতে পারে এবং সর্বাধিক ১৫৬ কিলোগ্রাম ওজনের হয়ে থাকে। এই পাখিটিকে সাধারণত আফ্রিকার সাহারা মরুভূমিতে এবং অস্ট্রেলিয়া মহাদেশে অধিক মাত্রায় দেখতে পাওয়া যায়। এরা তাদের গতির জন্য সুপরিচিত।  কারণ পাখিটি ঘন্টায় ৪৫ মাইল পর্যন্ত দৌঁড়াতে পারে, যা এই পাখিটিকে পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুততম পাখির তকমাও দেয়। 

এছাড়াও, উটপাখির অনন্য দৈহিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যেমন তাদের লম্বা ঘাড় এবং পা থাকে। তাদের চোখ সাধারণত যে কোনো স্থলচর প্রাণীর চেয়ে বড় হয়ে থাকে। তবে, উটপাখি অন্যান্য পাখির মতো উড়তে পারে না। উটপাখি সর্বভুক, এরা বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ ও পোকামাকড় খেয়ে বেঁচে থাকে। 

উটপাখি স্ট্রুথিও গণের অন্তর্ভুক্ত। বিশ্বে নানান প্রজাতির উটপাখি দেখতে পাওয়া যায় তবে, উটপাখি বলতে সাধারণত কমন অস্ট্রিচ (Struthio camelus)-কেই বুঝানো হয়ে থাকে। তবে সোমালিয়ায় বসবাসকারী সোমালি উটপাখি (Struthio molybdophanes) উটপাখির জনপ্রিয় একটি প্রজাতি যা আকারে সাধারণ উটপাখির তুলনায় আকারে কিছুটা ছোট হয়। 

উটপাখি। Image Source: brittanica.com

ইমু

উটপাখির মতোই পৃথিবীর আরেকটি বিস্ময়কর বৃহত্তম পাখি হলো ইমু। উটপাখির মতো এই পাখিটির চারণভূমিও মূলত অস্ট্রেলিয়া মহাদেশে। এই মহাদেশের বাইরে একে খুব একটা দেখতে পাওয়া যায় না। লম্বায় ৬ ফুট এবং ৬০ কেজি ওজনের এই পাখিটিও উড়তে অক্ষম। তবে উটপাখির মতো এরাও দ্রুতগতিতে দৌড়ে পারদর্শী।

ইমু প্রতি ঘন্টায় এরা ৩০ মাইল গতিতে ছুটতে পারে অনায়শে। ইমু পাখি সর্বভুক এবং পোকামাকড়, গাছপালা এবং ছোট প্রাণীদের খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। ইমু পাখিরা তাদের বিচিত্র আওয়াজের জন্য সুপরিচিত, যার মাধ্যমে তারা একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম।

ইমু পাখি। Image Source: brittanica.com

সাউদার্ন ক্যাসোওয়ারি

উটপাখি এবং ইমুর মতো এই পাখিটিও আকাশে উড়তে অক্ষম। পাপুয়া নিউ গিনির গ্রীষ্মমন্ডলীয় রেইনফরেস্ট এবং অস্ট্রেলিয়ার কিছু কিছু অঞ্চলে এই পাখিটিকে দেখতে পাওয়া যায়। এরাও ৬ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে এবং ৮৫ কেজি পর্যন্ত ওজনের হতে পারে। ক্যাসোওয়ারি তাদের মাথায় তাদের স্বতন্ত্র শিরস্ত্রাণ-সদৃশ কাস্কের জন্য পরিচিত, যেগুলি তারা যুদ্ধ এবং শিকারে ব্যবহার করে থাকে। 

এছাড়াও, তারা চমৎকার সাঁতারু এবং নদী ও হ্রদ সহজেই পার হতে পারে। ক্যাসোওয়ারি পাখি সর্বভুক হলেও মূলত ফল বা ফল জাতীয় উদ্ভিজ্জ খেয়ে থাকে। তবে তারা ছোট প্রাণী এবং পোকামাকড়ও খায়। ইমু আর উটপাখির মতো এরাও দৌড়ে পারদর্শী এবং ঘণ্টায় ৩০ মাইল বেগে দৌড়তে পারে। 

সাউদার্ন ক্যাসোওয়ারি। Image Source: animaliabio.com

অ্যান্ডিয়ান কনডর 

আন্ডিয়ান কনডর দক্ষিণ আমেরিকার আন্দিজ পর্বতমালায় পাওয়া একটি বিশাল শিকারী পাখি। তালিকার অন্যান্য পাখির চেয়ে এই পাখিটি একটু আলাদা। কারণ, এই পাখিটি উড়তে সক্ষম এবং উড়তে পারা পাখিদের মধ্যে এটিই সর্ববৃহৎ। আকারের দিক থেকে এদেরকে দেখলে যেন মনে হয় রূপকথার ব্যঙ্গমা পাখি। এই পাখির অন্যতম বিশেষত্ব হলো এর প্রায় ১০ ফুট পর্যন্ত ডানা থাকে এবং ওজনে এরা ১৫ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। 

অ্যান্ডিয়ান কনডর তাদের অসাধারণ উড্ডয়নের ক্ষমতার জন্য সুপরিচিত এবং এরা ১৬,০০০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় উড়তে পারে। এই পাখিটি সর্বভুক হলেও মূলত মৃত জীবজন্তু ও মাছ খেয়েই বেঁচে থাকে। এই পাখিটি তাদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিশক্তি এবং ঘ্রাণশক্তির জন্য পরিচিত এবং ইন্দ্রিয়কে ব্যবহার করে তারা মৃত জীব শনাক্ত করতে সক্ষম। 

অ্যান্ডিয়ান কনডর। Image Source: ebird.com

এম্পেরর পেঙ্গুইন   

পেঙ্গুইন নামটা শুনলেই দক্ষিণ মেরু তথা অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের কথা মাথায় আসে। দক্ষিণ মেরুর অতি শীতল পরিবেশে বসবাসকারী এই পাখিটিও অন্যান্য পাখির মতো ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতিতে বিভক্ত। এদের মধ্যে সবচেয়ে বৃহদাকারের প্রজাতিটি এম্পেরর পেঙ্গুইন নামে পরিচিত। অন্যান্য পাখির চেয়ে এই প্রাণীটি দেখতে বেশ অদ্ভুত। আকার এবং দৈহিক গঠনের কারণে এই সুদর্শন পাখিটি কোট পড়া ভদ্রলোকের তকমা পেয়েছে। 

এদের মূল বিশেষত্ব হলো, দক্ষিণ মেরুর যেখানকার তাপমাত্রা সর্বদা হিমাঙ্কের নিচেই অবস্থান করে, সেখানেও এম্পেরর পেঙ্গুইন বেঁচে থাকতে পারে অনায়সে। এদের দেহও সেভাবেই গঠিত এবং -৪০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড পর্যন্ত তীব্র শীতল আবহাওয়াও তাদের কাছে সহনীয়। অন্যান্য যেকোনো পাখির চেয়ে তারা বলা যায় একদমই আলাদা। 

এম্পেরর পেঙ্গুইন। Image Source: brittanica.com

এরা উড়তে পারে না, দৌঁড়েও পারদর্শী নয়। কিন্তু এরা সাঁতার কাটতে জানে। এরা মুলত মাছ এবং ছোট জলচর প্রাণী খেয়েই জীবনধারণ করে থাকে। সাঁতারে পারদর্শী হওয়ায় এরা নিজেরাই পানিতে নেমে মাছ শিকার করে থাকে। সামাজিক জীব হিসেবে এই বৃহদাকার পাখিটির বিশেষ খ্যাতি রয়েছে। এরা লম্বায় ৪ থেকে ৫ ফুট হয় এবং ওজনে ৪৫ কেজি পর্যন্ত হতে পারে।

 

 

Feature Image: Wazedur Rahman Wazed