আমাদের প্রতিদিনের বিভিন্ন চাহিদার মাঝে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে খাদ্য। স্থান-কাল-পাত্র ভেদে একেক দেশের খাবার একের ধরণের হয়ে থাকে। খাবার নিয়ে বাড়াবাড়ি রকমের ফ্যাসিনেশন কাজ করে মানুষের ভেতরে। আর সেটি আরো বেশী সুস্পষ্ট হয়ে উঠে যখন বিশ্বের দামী খাবারগুলো সম্পর্কে জানা যায়। ভোজনরসিক এমন অনেকেই আছেন যারা বিশ্বের দামী খাবারের স্বাদ নিতে এক দেশ থেকে অন্য দেশেও যেয়ে থাকেন। ভোজনরসিকদের কথা ভেবেই আজকের এই লেখা। বিষয় বিশ্বের সেরা পাঁচটি দামী খাবারের নাম।
ক্যাভিয়ার
এমন অনেক ভোজনরসিক আছেন যারা মাছের ডিম খেতে খুব পছন্দ করেন। তাদের জন্য সেরা খাবার হচ্ছে ক্যাভিয়ার। এটি বিশ্বের সেরা সুস্বাদু খাবারের একটি। শুধু স্বাদ নয় দামেও সেরা। বিভিন্ন ধরণের মাছ থেকেই ক্যাভিয়ার তৈরি হলেও মূলত এটি আসে সামুদ্রিক মাছের ডিম থেকেই। সবচাইতে সেরা আর দামী ক্যাভিয়ার সংগ্রহ করা হয় বেলুজা স্টার্জেন মাছ থেকে। তবে কেবলমাত্র ক্যাস্পিয়ান সাগর ও কৃষ্ণ সাগরে সন্ধান মিলে বেলুজা স্টার্জেন মাছের। এই মাছের ডিম সংগ্রহের প্রক্রিয়া কিন্তু অন্য সব মাছ থেকে একেবারেই আলাদা। শুধুমাত্র পূর্ণবয়স্ক হতেই বেলুজার সময় লেগে যায় ১৫ থেকে ২০ বছর। এরপর ডিম দেওয়ার সময় হয় মাছটির। মাছের পেট থেকে ডিম সংগ্রহ করার কাজটি সম্পূর্ণ করতে বেলুজা স্টার্জেন মাছটিকে মারতে হয়।
যেহেতু এটি একটি বিরল মাছ আর হত্যা ছাড়া ডিম সংগ্রহ করা সম্ভব না তাই বেলুজা স্টার্জেনের মাছ থেকে ডিম সংরক্ষণ বেআইনি বলে ঘোষণা করা হয়েছে। যদি আপনার ক্যাভিয়ার খাওয়ার বাসনা থাকে তবে মন খারাপ করবেন না আগেই বলেছি বেলুজা স্টার্জেন ছাড়াও অন্যান্য মাছ থেকে ক্যাভিভার সংগ্রহ করা হয়। যেমন – স্যালমন ক্যাভিয়ার, বাইকা ক্যাভিয়ার ইত্যাদি।
ক্যাভিয়ার বিভিন্ন রঙের হয় যেমন – কালো, কমলা, সবুজ। কিন্তু সবচেয়ে সুস্বাদ্য ক্যাভিয়ার বলে বিবেচনা করা হয় কালো ক্যাভিয়ারকেই। ব্রেড, টোস্ট বা বিস্কিট দিয়ে ক্যাভিয়ার খাওয়া হয়। যদি ক্যাভিয়ার খাওয়ার বাসনা থাকে তবে গুনতে হবে ১২ থেকে ৩০ হাজার ডলার। ৩৪ হাজার ৫০০ ডলারের ক্যাভিয়ার স্থান করে নিয়েছিল গিনিস বুক অব রেকর্ডে। যেটি ছিল বিলুপ্তপ্রায় অ্যালবিনো মাছের ক্যাভিয়ার। যার ওজন ছিল মাত্র ১ কেজি। এটাই আজ পর্যন্ত সবচাইতে দামি ক্যাভিয়ার।
ঝিনুক
সমুদ্র সৈকতে কত ঝিনুকের দেখাই না মিলে। তবে আপনি জানেন কি ঝিনুক বিশ্বের দামি খাবারের একটি। হ্যাঁ, অবাক করার মতো তথ্য হলেও এটাই সত্যি। একটা সময় ছিল যখন ঝিনুক দামি খাবারের তালিকায় ছিল না। এই তো মাত্র উনিশ শতকের দিকে ঝিনুক ছিল উপকূলীয় এলাকার মানুষদের খাবার। এর দাম ছিল কম। সাধারণ মানুষ ঝিনুক খেতই না বলা যায়। কিন্তু অতিরিক্ত ঝিনুক আহরণ এবং সমূদ্র দূষণের কারণে কমতে থাকে ঝিনুকের সংখ্যা। চাহিদার স্বল্পতা দেখা দেওয়ায় বাড়তে থাকে ঝিনুকের দাম।
সি ফুডের ভেতরে অন্যতম সুস্বাদু খাবার হচ্ছে ঝিনুক বা ওয়েস্টার। দামি খাবার হওয়ার কারণে নামিদামি ও আন্তর্জাতিক মানের রেস্টুরেন্টে কেবল ঝিনুকের খাবার পাওয়া যায়। আপনি যদি প্ল্যানিং করতে থাকেন ঝিনুক খাওয়ার তবে আপনাকে গুনতে হবে ৬০ হাজার ডলার। বিশ্বে দিন দিন ঝিনুকের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেক দেশ ঝিনুকের খামার দিচ্ছে যার মধ্য রয়েছে প্রতিবেশি দেশ ভারত ও চীন।
বিফ বা জাপানি গরু
অনেকেই আছেন যারা খাবার বলতে কেবল গরুর মাংসই বুঝেন। এবারের খাবারটি আশা করছি তাদের কথা বিবেচনা করে তৈরি করেছে জাপানিজরা। কথা বলছি ওয়েগু বিফ নিয়ে। এটা অনেকের কাছে জাপানি গরুর মাংস বলে পরিচিত। এমন অনেক বাঙ্গালি আছেন যারা জাপানে গিয়ে কিছু না হলেও এই খাবারের স্বাদ নিতে ভুল করেন না। এই গরুর মাংস সাধারণ গরুর মাংসের থেকে বেশ আলাদা। এর মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে মাংসের প্রতি স্তরে থাকে চর্বি। মাংসটি রান্নার সময় চর্বি গলে যাওয়ার কারণে মাংস খুব বেশি নরম আর তুলতুলে হয়ে যায়।
আপনি যখন এই মজাদার খাবারটি খাবেন মনে হবে হাওয়াই মিঠায়ের মতো মাংস গলে যাচ্ছে আপনার মুখের ভেতরে। প্রায় ৭০০ ডলার ব্যয় করে আপনি এক কেজি ওয়েগু বিফ কিনতে পারবেন। ওয়েগু বিফ খাবারের পদ তৈরির জন্য গরুগুলোকেও বিশেষভাবে লালনপালন করতে হয়; যেটা অনেক বেশি ব্যয়বহুল। গরু একদম ছোট অবস্থা থেকেই এমনভাবে যত্ন নেওয়া হয় যাতে এদের শরীরের প্রতিটি অংশে চর্বি জমতে থাকে, এজন্য গরুকে বিশেষ খাবারও দেওয়া হয়।
দ্য ফ্রোজেন হাউট চকলেট
এবার কথা বলবো চকলেট নিয়ে। আচ্ছা আপনি কি চকলেট প্রেমি? বিশ্বের সবচাইতে দামি ডেজার্টের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে ‘দ্য ফ্রোজেন হাউট চকলেট’। এটি মূলত আইসক্রিম সানডে। ২০০৭ সালে এই চকলেট গিনিজ বুকে স্থান করে নেয়। এ পর্যন্ত এটিই বিশ্বের সবচেয়ে দামী চকলেট। এই ডেজার্টটি তৈরি করতে ২৮ রকমের কোকো ব্যবহার করা হয়। যার ১৪টি অনেক বেশি ব্যয়বহুল। শুধু তাই নয় এর সাথে দেওয়া হয় ২৩ ক্যারেট ভোজ্য সোনা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের সেরেন্ডিপিটি থ্রি রেস্টুরেন্টের মেন্যুতে দেখা মিলবে ফ্রোজেন হাউট চকলেটের। এই ডেজার্টি তৈরি করতে সেরেন্ডিপিটি থ্রি রেস্টুরেন্টের সাথে কাজ করেছে জুয়েলারি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইউফোরিয়া নিউ ইয়র্ক। শুধু ভোজ্য স্বর্ণ দিয়েই কিন্তু শেষ নয়। এই দামী ডেজার্টটি পরিবেশন করা হয়ে থাকে বিশেষভাবে তৈরি স্বর্ণের পাত্রে। আপনি যদি এটির স্বাদ উপভোগ করতে চান তবে আপনাকে ব্যয় করতে হবে ২৫ হাজার মার্কিন ডলার। শুধুমাত্র সেরেন্ডিপিটি থ্রি রেস্টুরেন্টেই দেখা মিলবে এই ডেজার্টটির।
হোয়াইট ট্রাফল
মাটির নিচের আলুর সাথে তো আমরা কমবেশি সবাই পরিচিত। কিন্তু মাটির নিচেই যে হীরের থেকে দামী খাবার হতে পারে সেটা কি জানেন? কথা বলছি হোয়াইট ট্রাফল বা সাদা ট্রাফল নিয়ে। এটাকে হীরের সাথে তুলনা করা যায়। কেননা এর দাম তো হীরের সমতুল্য। হোয়াইট ট্রাফল মাটির নিচে জম্মানো একটি দুর্লভ ছত্রাক। এর স্বাদ অনেকটা রসুনের মতোই। হোয়াইট ট্রাফলের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর ঘ্রাণ। দারুণ সুগন্ধের জন্যই মূলত এটি বিশেষভাবে জনপ্রিয়। সেরা পারফিউমগুলোর সাথে তুলনা করা যায় এর সুগন্ধকে। হোয়াইট ট্রাফল একমাত্র ছত্রাক যেটার ঘ্রাণ আর স্বাদ নিতে লাখ টাকা ব্যয় করতে হয়।
এটি এত দামী হওয়ার পেছনে মূল কারণ হচ্ছে এটা নিজেই মাটির নিচে গাছের শেকড়ে জম্ম নেয়। অনেকেই ব্যবসা করার জন্য হোয়াইট ট্রাফল চাষের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। কেবলমাত্র উত্তর ইটালির পাইডমন্ট অঞ্চলে দেখা মিলে এই হোয়াইট ট্রাফলের। বিবিসি নিউজের তথ্য মতে, ২০০৭ সালে ম্যাকাউ এর ক্যাসিনো মালিক স্ট্যানলি হো হোয়াইট ট্রাফল কেনার জন্য রেকর্ড পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছিলেন। মাত্র দেড় কেজির হোয়াইট ট্রাফল কিনতে স্ট্যানলি ব্যয় করেছিলেন ৩ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার।
Feature Image: Mesponsivemoney.com
তথ্যসুত্র:
O1. Eight of the world’s most expensive foods.
02. Most Expensive Food Items In The World.
03. THE MOST EXPENSIVE FOOD IN THE WORLD.
04. Most expensive dessert.