কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার সেরা ৫টি ভালো দিক

440
0
Image sources: Pixabay

গত ক’মাসে চ্যাট জিপির নাম শোনেননি কিংবা চ্যাট জিপি কে প্রশ্ন করে উত্তর পাননি, কিংবা মিডজার্ণি এ আই ব্যবহারে হরেক রকম ছবি তৈরি করেনি, এমন মানুষ হাতে গোনা। চ্যাট জিপির উত্তর দাতা একজন কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার বস্তু। আর এ আই শুধু চ্যাট জিপিতেই না, এই আছে রোবোটে, আছে আমাদের মোবাইলে, আছে গাড়িতে, আছে ল্যাপটপে। সোফিয়া রোবটের কথা মনে আছে? এই সোফিয়া হলো প্রথম এ আই রোবট। 

এক কথায় বলা যায়, এখন হাতে গুণে বের করা সম্ভব এ আই কোথায় নেই। চারদিকে খুব শোনা যাচ্ছে এ আই নাকি মানুষের জায়গা দখল করে নেবে, মানুষ কাজ হারাবে, এ আই এর জন্য নাকি কাজ হারাচ্ছে মানুষ, কর্মী ছাটাই করে টেক কোম্পানিগুলো। এই এ আই বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর সুবিধা কী?

এআই কী 

মুদ্রার দুটো দিক থাকে। এপিঠ ওপিঠ। এ আই এর দুটো দিক নিয়ে বিশদে কথা বলার আগে জানা দরকার এ আই আসলে কী?এ আই হল এক ধরনের কম্পিউটার প্রোগ্রাম, যেটা মানুষের তৈরি হলেও নিজে কাজ করা, নিজে কিছু শেখা বা সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা রাখে। 

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা হল, আধুনিক “কম্পিউটার বিজ্ঞান” এর একটি শাখা। অ্যাপেলের সিরি, গুগল এসিস্ট্যানড়, এলেক্সা, ওয়েমো সবকিছুই এ আই এর উদাহরণ। মজার ব্যাপার হলো, এই এ আই এর সূত্রপাত হয়েছিল ১৯৫০ সালের দিকে।

Image source : robots.ieee.org

এ আই এর ভালো দিক 

এ আই নিজে নিজে শিখে, নিজে সিদ্ধান্ত নেয়। বড় বড় হিসেব যেমন নিমিষে কষে দেবে, হিউম্যান এরর কম হবে, তবে তাকে যা খাওয়ানো হবে তাই সে উগড়ে দেবে বা ইম্রুভ করবে। এ আই আমাদের জীবিন যাত্রাকে অনেকাংশে সহজ করে দিয়েছে, দিচ্ছে এবং সামনে আরো দেবে।

এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে আমাদের দৈনন্দিন জীবন অনেক সহজ করে দেবে।  এখন ছবি তৈরি করা থেকে শুরু করে গান লেখা কিংবা ক্লাসের এসাইনমেন্ট তৈরি করা, ওয়েব সাইটের কাজ করা কী করতে পারবেন না বলুন। হ্যা শুধু মানবীয় যে অনুভূতি সেটার দেখা এখানে মিলবে না। চলুন আজ জেনে নেই এই “কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা”’র ভালোদিকগুলো। 

১. মানব সৃষ্ট ভুল কমে যাওয়া

মানুষ মাত্রই ভুল করে, করবেই।অনেক জটিল হিসেবে, অনেক কঠিন ফর্মুলা নিয়ে কাজ করতে গেলে মানুষ হিমশিম খায়। এখানে এ আই ঠান্ডা মাথায় হিসেব কষে দেবে। ফর্মুলা মিলিয়ে দেবে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ভুল কমিয়ে দেয়। সমাধাবে আসে । এ আই এর সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা রয়েছে। যদি একটি এ আই এর এলগরিদম আর প্রোগ্রামিং ঠিক ভাবে করা হয়, তাহলে এটি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম এবং প্রায় নির্ভুল ভাবে। 

২. সব সময় “এ আই” কে পাবেন

কিছুক্ষণ কাজ করার পরেই মানুষের কাজের আগ্রহ যেমন কমে যায়, তেমন কমে যায় নির্ভুল ভাবে কাজ করার ক্ষমতা। এর সাথে আছে পারিপার্শ্বিক আরো অনেক কিছু। কাজের মাঝে মাঝে প্রয়োজন হয় বিরতির। কিন্তু একটা এ আই এর রোবট বা অ্যাপ কিংবা সফটওয়্যার অথবা ওয়েব সাইট আপনাকে ৩৬৫ দিনই সাহায্য করবে। সময়ের হিসেব ও কষা লাগবে না। যেকোন সময়ে,যে কোন পরিস্থিতিতে এ আই বন্ধুর মত আপনাকে সাহায্য করে যাবে। 

Image source : pixabay

৩. রিস্কি কাজে সহায়ক  

এ আই এর সুবিধা কিন্তু একটা দুটো না। আধুনিক প্রযুক্তির সৃষ্টি হয়েছেই আমাদের কাজ নির্ভুলভাবে করার জন্য, জীবন কে সহজ করার জন্য। মানুষের পক্ষে রিস্ক হয়ে যায় যে সকল কাজ, এ আই দিয়ে সে কাজ অতি সহজে করা যায়। যেমন ধরুন, চাঁদে কিংবা মহাশুণ্যে যাওয়া,  যে কোন ধস বা অগ্নিকান্ড থেকে মানুষকে উদ্ধার করা, বোম্ব ডিভিউজ করা, সমুদ্র বিজয় করা আরো কত কী। এ আই দ্বারা তৈরি করা রোবট পরিবেশের যে কোন পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে পারে। আর সহজেই কঠিন কাজ সমাধা করে ফেলে। এছাড়াও নির্ভুল ভাবে সহজ করে যে কোন কাজ করতে পারে। 

৪. সঠিক এবং নিরপেক্ষ সিদ্ধান্ত 

মানব জাতির অনেকগুলো দোষের মধ্যে একটা হল, পক্ষপাত্বিত্ত করা। কোন সিদ্ধান্ত নেবার আগে নিজের সুবিধা যেমন ভাবে, তেমনি অনেক ক্ষেত্রে পরিবার-পরিজনের কথা আগে মাথায় আসে। মন-মস্তিষ্ক সব নিজের সুবিধা দেখে। কিন্তু সঠিক এবং নিরপেক্ষ সিদ্ধান্ত নিতে হলে এ আই এর বিকল্প হতেই পারে না। না ইমোশন দিয়ে এ ভাবে, না চাপে পড়ে এই সিদ্ধান্ত নেয়। যখন যেটা দরকার,  যেভাবে দরকার সেভাবে সে সিদ্ধান্ত নেয়। 

৫. কাজের পুনরাবৃত্তি

একই কাজ বারংবার করতে করতে আমাদের মধ্যে বিরক্তি চলে আসে। কাজের আগ্রহ যেমন কমে যায়, তেমন কমে যায় প্রোডাক্টিভিটি। যেমন ধরেন অফিশিয়াল কোন কাজ যেটা রেগুলার করতে হয়, হতে পারে কারো এটেন্ডেন্স চেকিং। অফিসে ঢোকা বা বের হবার সময় সব ম্যানুয়ালি করতে হলে সেটা খুব বিরক্তির পর্যায়ে চলে যায়, যে এই কাজের হিসাব রাখবেন তার জন্য বোরিং আর একঘেয়ে । এটা যদি এ আই এর মাধ্যমে হয় তাহলে বিরক্তির সৃষ্টি হবে না।  

এ আই এর অনেক গুণের মধ্যে সেরা ৫ টি কাজ নিয়ে আজ কথা বললাম। এইগুলো ছাড়াও এ আই যা যা করে তা হল, কঠিন অংক নিমেষে সমাধান করা কিংবা  ডিজিটাল সহকারীর কাজ, যেমন ওয়েবসাইটে সর্বসাধারণের প্রশ্নের উত্তর দেয়া, কাস্টোমার কেয়ার সার্ভিস দেয়া সর্বদা হল এ আই চ্যাট বটের কাজ, গুগল ম্যাপে কোন জায়গা খুঁজে পাওয়া, কমান্ড দিলে কাউকে কল করা কিংবা ওয়েবসাইট থেকে তথ্য খুঁজে বের করা, ডাক্তারের এপয়েনমেন্ট করে দেয়া, কিছু কিছু ক্ষেত্রে অপারেশনে সাহায্য করা, গাড়ি চালানো সহ অনেক ছোট বড় কাজ। 

Image source : pixabay

 

নিত্যনতুন কাজের জন্য নিত্য নতুন এ আই  এর প্রয়োজন পড়ছে, প্রকৌশলী আর প্রোগ্রামারগন সে কাজ করে যাচ্ছে। অনুভূতি, ক্ষুৎপিপাসা বা এধরনের কিছু মানবীয় অনুভূতি বাদ দিলে মানুষের মত সব গুণ এ আই এর আছে। 

মিথ শোনা যাচ্ছে মিডজার্ণির কল্যাণে গ্রাফিক্স ডিজাইনারদের চাকরী থাকবে না কিংবা চ্যাট জিপিটি দখল করবে কন্টেন্ট রাইটারদের জায়গা। কিন্তু আসলেই কী তাই? এ কী সম্ভব? উত্তর হল না, মানুষের কাজে সহায়তা করবে এ আই, মানুষের সাহায্যকারী হতে পারে এরা। কারন এ আই এর ক্ষমতা এবং চিন্তাশক্তি সীমাবদ্ধ। এ নিজে নিজে কিছু শিখতে পারবে না, একে যা শেখানো হবে তাই শিখবে, তাই করবে। এ আই কে উন্নত পর্যায়ে নিয়ে যেতে যোগ্য মানুষের দরকার। 

এ আই এর ত্রুটি যে একেবারে নেই সেটা কিন্তু না, তবে এই এ আই আমাদের জীবনকে সহজ করেছে, ভবিষ্যতে আরো সহজ করবে। আমাদের উচিত হল, কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার উপর পুরোপুরি নির্ভর না হয়ে এর সাহায্য নিয়ে কঠিনতম কাজকে সহজ করে ফেলা। 

 

Feature Image: pinterest.com 
Source: 

Advantages and Disadvantages of Artificial Intelligence.