এক নজরে দশটি প্রাচীন মানব সভ্যতা

4060
0

মানব সভ্যতার বিবর্তনে পারস্পরিক বোঝাপড়া, নির্ভরতার এবং একাকীত্ব দূর করার জন্যে মানুষ একত্রে বসবাস করা শুরু করেছিল। তাদের এই ব্যবহারিক জীবনযাত্রা ছোট বিচ্ছিন্ন গোষ্ঠী থেকে সম্প্রদায়ে রূপান্তরিত হয়েছিল। এরপর এই সম্প্রদায় থেকে সমাজব্যবস্থার প্রচলন হয়েছিল। আর সেই সমাজব্যবস্থা মানুষকে সভ্যতা গড়তে শিখিয়েছিল। একদম অজ্ঞতা থেকে মানব মন কিভাবে এতটা উন্নত ভাবনা ভাবতে সক্ষম হয়েছিল – এই টপিকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আর জনপ্রিয় নৃতাত্ত্বিক আর প্রত্নতাত্ত্বিকদের কাছে। 

কিন্তু, সেসব বাদ দিয়ে বরং বিশ্বের দশটি প্রাচীন সভ্যতার কথা বলা যাক। অ্যাটলান্টিস, লেমুরিয়া কিংবা রামার মতো কল্পকাহিনীর সভ্যতা নয়; বরং অস্তিত্বের প্রমাণ মেলেছে এমন সব সভ্যতার কথাই বলা হবে। কালানুক্রমিকভাবে সভ্যতার কথা বলতে গেলে নিকট অতীত থেকে শুরু করে মানব সভ্যতার একদম প্রাচীন ইতিহাসের দিকে যেতে হবে। তাই এখানেও ঠিক একই ভাবে নিকট অতীত থেকে কালানুক্রমিকভাবে বর্ণনা দেয়া হবে। 

১০. ইনকা সভ্যতা

সময়কাল – ১৪৩৮ থেকে ১৫৩২ খ্রিস্টাব্দ। 
অবস্থান – বর্তমান ইকুয়েডর, চিলি এবং পেরুর বৃহৎ অঞ্চল। 
উল্লেখযোগ্য বিষয় – প্রাক-কলম্বীয় যুগে দক্ষিণ আমেরিকার বৃহত্তম ও সমৃদ্ধ এক সাম্রাজ্য। 

প্রাক-কলম্বীয় যুগে দক্ষিণ আমেরিকা সবচেয়ে বৃহত্তম সাম্রাজ্য ছিল ইনকা সাম্রাজ্য। ইনকারা কোথা থেকে এসেছিল তা নিয়ে ব্যাপক ধোঁয়াশা রয়েছে। তবে তারা নিজেদের সূর্যের সন্তান বলেই দাবী করতো। তাছাড়া, কোনো লেখ্যরূপ না থাকায় তাদের আদি জাতি নিয়ে অনেক ধারণা প্রচলিত রয়েছে। মুলত ১২০০ শতাব্দীতে বর্তমান পেরুর কুজকো শহরেই ইনকাদের বসতি স্থাপন হয়েছিল। মাত্র ১০০ বছরের মধ্যেই বিশাল এক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিল ইনকারা। ইনকা বেশ সুপ্রতিষ্ঠিত আর বেশ সমৃদ্ধ এক সাম্রাজ্য ছিল। ইনকারা সূর্য দেবতা ইন্তির অনুসারী ছিল। আর তাদেরকে রাজাকে ‘সাপা ইনকা’ বলে অভিহিত করা হতো; যার অর্থ সূর্যের সন্তান। 

ইনকাদের নির্মিত মাচু-পিচু শহর। Image Source: Universidad de San Martin de Porres

ইনকা সভ্যতার গোড়াপত্তন হয়েছিল প্রথম রাজা বা সম্রাট মানকো কাপাকের হাতে। তবে ইনকা রাজা পাচাকুটির হাতেই ইনকা সাম্রাজ্যের ব্যাপক বিস্তৃতি আর সমৃদ্ধি হয়েছিল। ইনকারা নির্মাতা হিসেবেও ছিল ব্যাপক বুদ্ধিমান এবং আধুনিক। তাদের তৈরি মাচুপিচু এবং কুজকো শহর এখনো মানুষদের ভাবায়। তবে এই সমৃদ্ধিশালী সভ্যতা ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল পনেরশ শতকের শুরুতেই। স্প্যানিশ সৈন্যদের আধুনিক অস্ত্রের সঙ্গে ঠিক পেরে উঠতে পারেনি আদিম ধারণাকে আঁকড়ে ধরে রাখা এই সাম্রাজ্য। প্রায় চারশো বছর অন্ধকারে থাকার পর ১৯১১ সালে প্রত্নতাত্ত্বিক হিরাম বিংহামের কল্যাণে মাচুপিচু তথা ইনকা সভ্যতা পুনরায় মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়। 

০৯. অ্যাজটেক সভ্যতা

সময়কাল – ১৩৪৫ থেকে ১৫২১ খ্রিস্টাব্দ। 
অবস্থান – বর্তমান মেক্সিকো। 
উল্লেখযোগ্য বিষয় – অ্যাজটেক সভ্যতার অন্যতম নিদর্শন অ্যাজটেক ক্যালেন্ডার।  

ইনকারা যখন দক্ষিণ আমেরিকাতে নিজেদের শক্তিশালী এক জাতিতে পরিণত করেছিল; ঠিক সেই সময়টাতেই দৃশ্যপটে আবির্ভূত হয় অ্যাজটেক জাতির। ১২০০ এবং ১৩০০ শতকের গোড়ার দিকে বর্তমান মেক্সিকোর লোকেরা টেনোচতিতলান, টেক্সকোকো এবং ট্যালাকোপান নামক তিনটি প্রতিদ্বন্দ্বীপূর্ণ শহরে বসবাস করতো। পরবর্তীতে ১৩২৫ খ্রিষ্টাব্দে এই তিন গোত্র একত্রিত হয়ে জোট গঠন করে এবং মেক্সিকোতে নতুন সাম্রাজ্য বিস্তার করে। মেক্সিকোর আরেক প্রভাবশালী সভ্যতা, মায়ানদের পতনের এক শতাব্দীর মধ্যেই অ্যাজটেক সভ্যতার উত্থান হয়েছিল। অ্যাজটেক সভ্যতার লোকেদের আদিভূমি নিয়ে বেশ বিতর্ক রয়েছে। তবে উত্তরাঞ্চলের শিকারি গোষ্ঠীদেরকেই অ্যাজটেকদের পূর্বপুরুষ মানা হয়। কেননা, তারা এসেছিল অ্যাজটেলান (অর্থাৎ ‘সাদা ভূমি’) থেকে; যেজন্য তাদেরকে অ্যাজটেক বলা হয়ে থাকে। 

অ্যাজটেক সাম্রাজ্যের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। Image Source: earth.com

অ্যাজটেকদের ভাষা ছিল নাহুয়াতল; যা তখনকার সময়ের অত্যন্ত প্রভাবশালি এক ভাষা বলে খ্যাত।  অ্যাজটেকরা ভূমি, বৃষ্টি এবং সূর্যকে নিজেদের প্রধান দেবতা হিসেবে মানতো। এমনকি দেবতাদের সন্তুষ্ট করার জন্যে কয়েদিদের বলি দেয়ার প্রচলনও ছিল তাদের মধ্যে। অ্যাজটেকরা সবদিক থেকেই বেশ উন্নত ছিল। আর তাদের উন্নত ভাবনার অন্যতম নিদর্শন অ্যাজটেক দিনপঞ্জি বা ক্যালেন্ডার। সুবিশাল এক পাথরে ছিল এই দিনপঞ্জি খোঁদাই করা; যেখানে মহাবিশ্বের প্রতীক পর্যন্ত ছিল যেগুলোর কেন্দ্রে থাকতো সূর্য। তবে এই সুবিধাল আর সমৃদ্ধ সভ্যতার পতন হয়েছিল স্প্যানিশ বাহিনীর হাতে। ১৫০০ শতকের গোড়ার দিকে অ্যাজটেকরা যখন সমৃদ্ধির তুঙ্গে তখনই স্প্যানিশরা আক্রমণ করে। আর অ্যাজটেকদের আরো কিছু স্থানীয় শত্রু গোত্র ছিল, যারা বহিরাগতদের সঙ্গে আঁতাত করে অ্যাজটেকদের পতন ঘটায়। অ্যাজটেকদের পতন হলে সেই ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই গড়ে উঠে মেক্সিকো সিটি। 

০৮. রোমান সভ্যতা

সময়কাল – খ্রিষ্টপূর্ব ৭৫৩ থেকে ৫৬৫ খ্রিস্টাব্দ। 
অবস্থান – বর্তমান রোম, ইতালি। 
উল্লেখযোগ্য বিষয় – সবচাইতে শক্তিশালী আর প্রভাবশালী প্রাচীন সভ্যতা বা সাম্রাজ্য। 

খ্রিষ্টপূর্ব ৭৫৩ সালে প্রাচীন রোমের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল বলে কিংবদন্তি আছে। পরবর্তীতে এই সভ্যতা প্রায় চার শতাব্দী ধরে নিজেদের সাম্রাজ্য ও সভ্যতাকে চালিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। তিবের নদীর কোলঘেষা ছোট্ট এক গ্রাম থেকে বিশাল এক সভ্যতায় পরিণত হয়েছিল রোম। বর্তমান ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের বেশিরভাগই রোমান সাম্রাজ্যের অধিকারে ছিল। এমনকি অটোমানদের ১৪৫৩ সালে কন্সট্যান্টিনোপল বিজয় হয়েছিল পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যের একটি অংশ থেকেই। সাত রাজা রোমকে শাসন করার পর জনগণ নিজেদের শহরের নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং প্রজাতন্ত্রী রোম গঠন করা হয়। তবে রোমান সাম্রাজ্য গঠিত হয়েছিল জুলিয়াস সিজারের হাত ধরেই। মসনদে বসেই তিনি প্রজাতন্ত্র বাতিল করে নিজেকে স্বৈরশাসক এবং সম্রাট বলে ঘোষিত করেন। খ্রিষ্ট্রপূর্ব ২৭ সালে সিনেট কর্তৃক রোমের প্রথম সম্রাট হিসেবে অক্টাভিয়ান নিজেকে অগাস্টাস নাম দেন। অগাস্টাস নিজেকে প্রাচীন মিশরের মতো ফারাও সম্রাট হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন। 

রোমান ফোরাম ও রোমান মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ। Image Source: Peitro Canali/Grand Tour/Corbis

তার শাসনকালেই রোমান সভ্যতা সামাজিক সংস্কার, সামরিক বিজয়, সাম্রাজ্য বিস্তার, সাহিত্য, শিল্প, সংস্কৃতি এবং ধর্ম, সবদিকেই ব্যাপক বিকাশ লাভ করেছিল। ৫৬ বছর শাসন করে নিজেকে সম্রাট থেকে দেবতার পদে আসীন করতে সক্ষম হয়েছিল অগাস্টাস। সম্রাটের মৃত্যু হলে রোমান সভ্যতায় ব্যাপক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। টানা দুইশো বছর বিশৃঙ্খলায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া রোমকে পুনরায় একত্রিত করে কন্সট্যান্টাইন। রাজধানী সরিয়ে বাইজেন্টিয়ামে স্থানান্তরিত করেন; যা পরবর্তীতে কন্সট্যান্টিনোপল নামে পরিচিতি পায়। এবং খ্রিস্ট ধর্মকে সাগ্রহে গ্রহণ করে রোমানরা। মূলত কন্সট্যান্টাইনের মৃত্যু দিয়েই রোমান সাম্রাজ্যের পতন হয়। কেননা, এরপর রোমান সভ্যতা এবং সাম্রাজ্য – দুটি আলাদা অংশে বিভক্ত হয়ে যায়। রোমান সভ্যতায় সাহিত্য, শিল্পকলা, আইন ব্যবস্থার ব্যাপক বিকাশ ঘটেছিল। কলোসিয়াম এবং বর্তমান ইতালির রোমান স্থাপত্য এবং সড়ক তার জ্বলন্ত প্রমাণ। 

০৭. পারস্য সভ্যতা

সময়কাল – খ্রিষ্টপূর্ব ৫৫৯ থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ৩৩০। 
অবস্থান – বর্তমান ইরান। 
উল্লেখযোগ্য বিষয় – সবচাইতে বিশাল সাম্রাজ্যের অধিকারী এক সভ্যতা।  

যদিও ৫৩৯ খ্রিষ্ট্রপূর্বাব্দে পারসিয়ানরা মেসোপটেমিয়ার শেষ সভ্যতা ক্যালডীয়দের উপর আধিপত্য বিস্তার করেছিল। কিন্তু তাদের নতুন সভ্যতার সূত্রপাত হয়েছিল খ্রিষ্টপূর্ব ৫৫৯ অব্দে। আর প্রথম পারস্য সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল পারস্য সম্রাট সাইরাস দ্য গ্রেটের হাতে। বিশ্ব ইতিহাসে সর্ববৃহৎ সাম্রাজ্য ধরা হয় পারস্য সাম্রাজ্যকে। কেননা, মাত্র দুইশো বছরের ব্যবধানে তারা পশ্চিমে ইউরোপের বলকান উপদ্বীপ হতে পূর্বে সিন্ধু সভ্যতা অবধি নিজেদের সাম্রাজ্য বিস্তার করেছিল। যাযাবর পার্সীয়রা অনেকগুলো গোত্রে বিভক্ত ছিল। সেই রকমই এক গোত্রের রাজা ছিলেন সাইরাস। পাঁচ বছরের মধ্যেই আশেপাশের বিভিন্ন অঞ্চলের উপর নিজের আধিপত্য বিস্তার করেন সাইরাস। সর্বকালের দূরদর্শী এক বিজেতা হিসেবে খ্যাত সাইরাস পারস্যের সম্রাটে আসনে আসীন হন। মাত্র বিশ বছরের ব্যবধানে তিনি তার সাম্রাজ্য সমকালীন ইতিহাসে বিশাল এক ভূখণ্ডে পরিণত করেন। 

পারস্য সভ্যতার পারসেপোলিস শহরের প্রবেশদ্বার। Image Source: gashtool.com

 পারস্য সভ্যতাকে আর্কিমিনীয় সাম্রাজ্য বা হাখমানেশি সাম্রাজ্য বলে অভিহিত করা হয়। সাইরাসকে পারস্যের পিতা বলেও অভিহিত করা হয়। সাইরাসের মৃত্যুর পর চতুর্থ সম্রাট হিসেবে মসনদে বসেন মহান দারিয়ুস বা দারিয়ুস দ্য গ্রেট। সাইরাসের মতোই দারিয়ুসও অল্প সময়ের মধ্যেই পারস্যের সাম্রাজ্য ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করাতে সক্ষম হয়েছিল। দারিয়ুসের পর জারেক্সেস প্রথম সম্রাট হন। কিন্তু বাবার মতো এতটা যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি জারেক্সেস। গ্রীকদের কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজয় হয় তার। জারেক্সেসের মৃত্যুর পর তৃতীয় দারিয়ুস ক্ষমতায় আসেন। কিন্তু ততদিনে পারস্য সাম্রাজ্যের ভিত নড়ে গেছে। মহান বীর আলেকজান্ডারের কাছে পরাজিত হন তৃতীয় দারিয়ুস। আর এই পরাজয়ের মধ্য দিয়েই পারস্য সাম্রাজ্যের বা সভ্যতার পতন হয়। শিল্প, ভাষালিপি এবং স্থাপত্যশৈলী সবকিছুতেই পার্সীয়রা ব্যাপক সমৃদ্ধ ছিল। বিজ্ঞানের উন্নয়নেও ছিল পার্সীয়দের অবদান। 

০৬. প্রাচীন গ্রিক সভ্যতা

সময়কাল – খ্রিষ্টপূর্ব ২৭০০ থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ৫২৫। 
অবস্থান – বর্তমান গ্রিস। 
উল্লেখযোগ্য বিষয় – গণতন্ত্রের সূতিকাগার, অলিম্পিকের সূচনা এবং দর্শন চর্চা। 

গ্রিক সভ্যতা মূলত বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রে বিভক্ত ছিল। অনেকগুলো নগররাষ্ট্রের উদ্ভব হয়েছিল সেইসময়ে। তবে শুরুতে গ্রিক সভ্যতা দুটি ভিন্ন সভ্যতা হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিল। সাইক্ল্যাডিক এবং মিনোয়ান সভ্যতা ছিল গ্রিক সভ্যতার পূর্বেকার রূপ। অন্তত এমনটাই ইতিহাস বলে। সাইক্ল্যাডিক সভ্যতা খ্রিষ্ট্রপূর্ব ৩২০০ অব্দ থেকে  খ্রিষ্টপূর্ব ১১০০ অব্দ পর্যন্ত স্থায়ী হয়ে বিলীন হয়ে গিয়েছিল। আর মিনোয়ান সভ্যতা খ্রিষ্টপূর্ব ২৭৭০ অব্দ থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০ অব্দ পর্যন্ত টিকে ছিল। এবং মাইসেনীয় সভ্যতা খ্রিষ্টপূর্ব ১৯০০ থেকে ১১০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ অবধি টিকে ছিল। মজার বিষয় হচ্ছে, এই সভ্যতাগুলোর সময়কালে গ্রিক সভ্যতা বলে কোনো কিছুর অস্তিত্ব ছিল না। সমস্ত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নগররাষ্ট নিয়ন্ত্রণ করতো অ্যাথেন্স এবং স্পার্টা। তবে ধর্মীয়ভাবে ঐক্য ছিল এসব ক্ষুদ্র নগররাষ্ট্রে। আর তারই প্রভাবে গড়ে উঠেছিল হেলেনীয় সংস্কৃতি। যেখান থেকে পৃথিবী ও মানব উৎসের কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে যুক্তিবাদী দার্শনিকদের উদ্ভব হয়। 

অ্যাথেন্সের আক্রোপোলিস জনপদের ধ্বংসাবশেষ। Image Source: iStockphoto/Thinkstock

আর এই যুক্তিবাদী দর্শনের প্রভাবেই সক্রেটিস, প্লেটো, এসকাইলাস, সফোক্লিস এবং ইতিহাসের জনক হেরোডেটাস ইতিহাসের পাতায় নিজেদের নাম লিখিয়েছিল। পিথাগোরাস, অ্যারিস্টটল, আর্কেমিডিস এবং টলেমির মতো মহারথীরাও এই হেলেনীয় সংস্কৃতির অবদান। আবার, গ্রিসের অন্য প্রান্তে গড়ে উঠে আরেক সভ্যতা; যা হেলেনিস্টিক সভ্যতা নামে পরিচিতি পায়। এই সভ্যতাও পরবর্তীতে গ্রিক সভ্যতা বলে আখ্যায়িত করা হয়। হেলেনিস্টিক সভ্যতায়ও প্রচুর জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা হতো। গ্রিক সভ্যতার সবচেয়ে বড় অবদান দর্শন। তাদের এই ভাবনা পুরো পৃথিবীর ইতিহাস বদলে দিয়েছিল। এমনকি আজকের এই আধুনিক সভ্যতার পেছনেও রয়েছে গ্রিকদের অবদান। আধুনিক জ্যামিতি, প্রাণীবিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান, রাজনৈতিক জ্ঞান এবং আরো বহু কিছু আবিষ্কারের পেছনে গ্রিকদের অবদান। ইতিহাসের মহান বীর আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটও ছিলেন গ্রিক সন্তান। সভ্যতার বিপ্লব এসেছিল মূলত গ্রিকদের হাত ধরেই। 

০৫. চৈনিক সভ্যতা

সময়কাল – খ্রিষ্টপূর্ব ২০৭০ থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ১০৪৬। 
অবস্থান – বর্তমান চায়না। 
উল্লেখযোগ্য বিষয় – গানপাউডার, কাগজ আর সিল্কের ব্যবহার। 

প্রায় তিন হাজার বছর আগে ইয়াংহো আর ইয়াংজেকিয়াং নদীর তীরে গড়ে উঠেছিল চৈনিক সভ্যতা। ছোট্ট গ্রাম এবং কৃষক সম্প্রদায় থেকে সরকার ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল চৈনিক সভ্যতার আদিম মানুষেরা। প্রাচীন চীনের প্রথম রাজবংশ ছিল শিয়া সাম্রাজ্য (খ্রিষ্টপূর্ব ২০৭০ থেকে ১৬০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ)। যদিও অনেক বছর ধরেই শিয়া সাম্রাজ্যকে কাল্পনিক বলে গণ্য করা হতো। কিন্তু, ১৯৬০ আর ৭০ দশকে প্রত্নতাত্ত্বিকদের আবিষ্কার শিয়া সাম্রাজ্যের অস্তিত্ব প্রমাণ করে। এই সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ইউ দ্য গ্রেটের হাত ধরে। পরবর্তীতে শিয়া শাসকদের পতন হলে ত্যাং প্রতিষ্ঠা করেন শাং সাম্রাজ্য (খ্রিষ্টপূর্ব ১৬০০ থেকে ১০৪৬ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ)। ত্যাং সম্রাট হবার পর শাং সাম্রাজ্যকে প্রবল বিস্তার করেন। 

চৈনিক সভ্যতার টেরাকোটা আর্মি। Image Source: iemily/Fotolia

শাং সাম্রাজ্যের পতন হলে চৈনিক সভ্যতায় নতুন সাম্রাজ্যের উত্থান হয়। খ্রিষ্টপূর্ব ১০৪৫ থেকে ২২১ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ অবধি চৌ রাজবংশের রাজত্ব ছিল। তাদের সময়কালেই চৈনিক সভ্যতায় ধ্রুপদী সংস্কৃতি বিকাশ হয়েছে সবচেয়ে বেশি। চৌ রাজবংশ বা সাম্রাজ্যকে আবার তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। পশ্চিমা চৌ সাম্রাজ্য (১০৪৫ থেকে ৭৭১ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ), বসন্ত এবং শরৎ সময়কাল (৭৭০-৪৭৬ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) এবং ওয়ারিং স্টেটস পিরিয়ড (৪৭৫-২২১ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ)। ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী থেকে সামন্ততান্ত্রিক সমাজে রূপান্তরের অধ্যায় বলে বিবেচিত হয় এই সময়কালগুলো। কনফুসিয়াস এবং লাওৎসের মতোর মহান দার্শনিক ছিল চৈনিক সভ্যতার অন্যতম নিদর্শন। তবে এই সময়কালে চৈনিক সভ্যতা পৃথিবীকে তাদের কার্যকরী আবিষ্কার উপহার দিয়েছিল। যার মধ্যে গানপাউডার, কাগজ, মুদ্রণ, কম্পাস, অ্যালকোহল, কামান এবং আরো অনেক কিছু। খ্রিষ্টপূর্ব ২২১ থেকে ১৯১২ সাল অবধি চীন ছিল ইম্পেরিয়াল চিন নামে পরিচিত। 

০৪. মায়া সভ্যতা

সময়কাল – খ্রিষ্টপূর্ব ২৬০০ থেকে ৯০০ খ্রিষ্টাব্দ। 
অবস্থান – বর্তমান মেক্সিকো, গুয়েতেমালা, বেলিজ, এল সালভাদর এবং হন্ডুরাস। 
উল্লেখযোগ্য বিষয় – জ্যোতির্বিজ্ঞানের জটিলতা উপলব্ধি এবং আধুনিক ক্যালেন্ডার উদ্ভাবন। 

খ্রিষ্টপূর্ব ২৬০০ অব্দ থেকেই মূলত মায়া সভ্যতা উন্নতি লাভ করেছিল পুরো মধ্য আমেরিকা জুড়ে। এবং মায়া সভ্যতার কথা ব্যাপকভাবে প্রচার হবার অন্যতম কারণ ছিল তাদের ক্যালেন্ডার ব্যবস্থা। মায়া সভ্যতাকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয় এর ক্রমবর্ধমান বিকাশ হিসেবে। আর্কাইক যুগ – যা ৭০০০-২০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। এই সময়কালে মায়ানরা বসতি স্থাপন করে, কৃষিকাজ শুরু করে এবং জীবিকা নির্বাহ শুরু করে। এরপর আসে ওলমেক যুগ, ১৫০০-২০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ। এটিকে অনেকেই প্রি-ক্ল্যাসিক বা গঠনকালীন যুগ বলেও আখ্যায়িত করে থাকে। এই যুগে মায়ানরা পাথর আর ইটের তৈরি বিশাল সব ইমারত গড়া শুরু করে। এরপরের যুগটাকে বলা ক্ল্যাসিক মায়া যুগ, খ্রিষ্টপূর্ব ২০০ থেকে ৯০০ খ্রিষ্টাব্দ অবধি। এই যুগে আরো তিন সময়কাল ধরা হয়। 

চিচেন ইৎজার কাস্তিলো পিরামিড। Image Source: Dennis Jarvis/ancient.eu

জ্যাপোটিক যুগ (খ্রিষ্টপূর্ব ৬০০-৮০০ খ্রিষ্টাব্দ), তেওতিহুয়াকান যুগ (খ্রিষ্টপূর্ব ২০০-৯০০ খ্রিষ্টাব্দ) এবং এল ত্যাজিন যুগ (খ্রিষ্টপূর্ব ২৫০-৯০০ খ্রিষ্টাব্দ)। এই সময়কালে মায়ানরা তাদের সভ্যতার উচ্চতম শিখরে ছিল। মূলত এটা ছিল মায়ানদের শিল্প-সংস্কৃতি এবং স্থাপত্যশৈলীসহ সমস্ত দিকে রেনেসাঁ কাল। নগরায়ন এবং সভ্যতার বড় আকৃতির স্থাপত্যশৈলীর নির্মান হয়েছিল এই সময়কালেই। গাণিতিক, জ্যোতির্বিদ্যা, স্থাপত্যকলা এবং শিল্পের সব ক্ষেত্রেই মায়ানরা তখন ছিল সর্বোচ্চ চূড়ায়। মায়ান ক্যালেন্ডারও এই সময়কালেরই আবিষ্কার। চিচেন ইতজার মতো শহরের প্রতিষ্ঠাও হয়েছিল এই সময়কালেই। মায়ান পিরামিডগুলো এই সময়েরই আবিষ্কার। ১৫২৪ সালে উতাতলানের যুদ্ধে মায়ানদের পরাজয়ই ছিল মায়া সভ্যতার পতন। যদিও বর্তমানে পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রেখেছে মায়ারা। 

০৩. প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতা

সময়কাল – খ্রিষ্টপূর্ব ৩১৫০ থেকে ৩০ অব্দ। 
অবস্থান – বর্তমান মিশর। 
উল্লেখযোগ্য বিষয় – ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ নির্মাতা এবং সংস্কৃতিতে পরিপূর্ণ এক সভ্যতা। 

মূল প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার সময়কাল ধরা হয় ৫০০০ থেকে ৫২৫ খ্রিষ্টপূর্ব সময়কালকে। তবে মিশরীয় সভ্যতার উন্নতি আর সমৃদ্ধি এবং পতনের মূল সময়কাল হচ্ছে খ্রিষ্টপূর্ব ৩১৫০ থেকে ৩০ অব্দ। প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতাকে মোট ৩০টি (মতান্তরে ৩১টি) রাজবংশ বা সাম্রাজ্যে বিভক্ত করা হয়। ৩০ হোক আর ৩১টি, এই রাজবংশ প্রায় ৩০০০ বছর মিশরকে শাসন করেছে।  এই সাম্রাজ্যগুলোকে আবার সময়কালের অনুসারে বিভিন্ন নামেও অভিহিত করা হয়। আর এই কাজটা করার একমাত্র কৃতিত্ব মেনাথো নামক এক পুরোহিতের। প্রথম আর দ্বিতীয় রাজবংশের সময়কালকে ধরা হয় আর্কাইক যুগ বা আর্লি ডাইনেস্টি। মেনেস ছিলেন প্রথম রাজবংশের প্রথম ফারাও বা রাজা। তবে ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, মেনেসের পূর্বেও কয়েকজন রাজা মিশরে রাজত্ব করেছে। ইতিহাসবিদরা সেই সময়টাকে, প্রি-মেনেস বা জিরো ডাইনেস্টি বলে। 

মিশরীয় সভ্যতার সেরা নিদর্শন দ্য গ্রেট পিরামিড অফ গিজা। Image Source: bbc.com

৩ থেকে ৬ ডাইনেস্টি সময়কালকে বলা হয় ওল্ড কিংডোম। এই সময়কালে তৃতীয় রাজবংশেই প্রথমবারের মতো মিশরে পিরামিড নির্মাণ করা হয়। ফারাও জোসেরের মৃত্যু পরবর্তী জীবন এবং ফারাওয়ের নাম বাঁচিয়ে রাখতে রাজ্যের প্রধান প্রকৌশলী ইমহোটেপ স্টেপ পিরামিড নির্মাণ করেন। আরো অনেক পিরামিড নির্মিত হয় এইসময়ে। যার মধ্যে দ্য গ্রেট পিরামিড অফ খুফু, খাফরের পিরামিড, দ্য গ্রেট স্ফিংস এবং ম্যানকাউরের পিরামিডও নির্মাণ হয়। এরপর ৭ থেকে ১০ রাজংশের সময়কাল আসে; সঙ্গে ১১ রাজবংশের খানিকটাও জুড়ে দেয়া হয়। মেনতুহোটেপ দ্বিতীয়ের হাত ধরে মিডল কিংডোমের সময়াকাল শুরু হয়েছিল। যা ১১ রাজংশের খানিক অংশ এবং ১২ আর ১৩ রাজবংশের সময়কালকে চিহ্নিত করে। ১৮-২০ রাজবংশের সময়কালটা ছিল মিশরের অন্যতম সেরা যুগ। এই সময়কালে ভ্যালি অফ দ্য কিং নির্মিত হয়। যেখানে ফারাওদের কবর শায়িত হতো পাথরের গহীন আবদ্ধ অথচ সজ্জিত এক ঘরে। ২৫ রাজবংশ থেকে নুবিয়ায় সাম্রাজ্য বিস্তার হয়। মিশরীয় সভ্যতা প্রাচীন ইতিহাসের সবচাইতে বণাঢ্য এক মানব সভ্যতা। 

০২. সিন্ধু সভ্যতা

সময়কাল – খ্রিষ্টপূর্ব ৩৩০০ থেকে ১৯০০ অব্দ। 
অবস্থান – উত্তরপূর্ব আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং উত্তরপূর্ব ভারত।
উল্লেখযোগ্য বিষয় – সবচাইতে বিস্তৃত এবং পরিকল্পিত এক সভ্যতা। 

ভারতবর্ষে খ্রিষ্টপূর্ব ৭০০০ থেকে ৬০০ অব্দে সিন্ধু সভ্যতা গড়ে উঠেছিল সিন্ধু নদীর তীরবর্তী শহরে। সিন্ধু নদীর তীরবর্তী গড়ে উঠেছিল বলে এই সভ্যতাকে সিন্ধু সভ্যতা নামে আখ্যায়িত করা হয়। এছাড়াও, সিন্ধু-স্বরসতী সভ্যতা, হরপ্পা সভ্যতা নামেও পরিচিত। এই সভ্যতার মাত্র দুটি শহরেরই ধংসাবশেষ পাওয়া গিয়েছে, মহেঞ্জো-দারো এবং হরপ্পা। এবং তাদের বিস্তৃত আর পরিকল্পিত নগর ব্যবস্থা থেকে এটাই প্রমাণিত হয় যে, এখানে কমপক্ষে ৪০,০০০ থেকে ৫০,০০০ মানুষের বসবাস ছিল। যেখানে প্রাচীন সভ্যতাগুলোতে ১০,০০০ মানুষের বসতি অনেক বেশি কিংবা সর্বোচ্চ বলে ধরা হতো। যেজন্য তাদের থাকার ভূমির পরিমাণ ছিল প্রায় ৯০০ মাইল বা ১৫০০ কিলোমিটার। 

মহেঞ্জোদারোর ধ্বংসাবশেষ। Image Source: ancient.eu

সিন্ধু সভ্যতার প্রচুর শৈল্পিক জিনিসপত্র এবং তৈজস জিনিসপত্র আবিষ্কার করা হয়েছে। ধারণা করা হয় যে, সিন্ধু সভ্যতার লোকেরা মূলত কৃষিকাজ, কারিগরি এবং ব্যবসায় করে জীবিকা নির্বাহ করতো। মুদ্রার বদলে এক ধরণের সীল ব্যবহার করা হতো। স্থায়ী সেনাবাহিনী, রাজপ্রাসাদ বা মন্দিরের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায় নি। তবে মহেঞ্জো-দারোতে গ্রেট বাথ নামক যেই জায়গাটি খনন করে পাওয়া গেছে; তা হয়তো ধর্মীয় শুদ্ধিকরণের সঙ্গে সম্পর্কিত। কিন্তু সভ্যতার পতন কেন এবং কিভাবে হয়েছিল তা নিয়ে রয়েছে ব্যাপক বিতর্ক। ধারনা করা হয়, সিন্ধু নদীর গতিপথ বদলে গেলে সিন্ধু সভ্যতার মহেঞ্জো-দারো তলিয়ে যায়। আবার, বলা হয়ে যে নদীর গতিপথ বদলে গেলে লোকেরা দক্ষিণমুখী হয় এবং শহরটি পরিত্যক্তই রয়ে যায়। এছাড়া, আর্যদের আক্রমণকেও সিন্ধু সভ্যতার পতনের কারণ হিসেবে বর্নণা করা হয়ে থাকে। 

০১. মেসোপটেমীয় সভ্যতা

সময়কাল – খ্রিষ্টপূর্ব ৩৫০০ থেকে ৫০০ অব্দ। 
অবস্থান – ইরাক, সিরিয়া এবং তুর্কি।
উল্লেখযোগ্য বিষয় – মানব ইতিহাসের প্রথম সভ্যতা। 

টাইগ্রিস এবং ইউফ্রেটিস নদীর তীরে গড়ে উঠেছিল মানব ইতিহাসের প্রথম সভ্যতা মেসোপটেমীয় সভ্যতা। মূলত কয়েকটি বিচ্ছিন্ন সভ্যতার সময়কালকে একত্রে জুড়ে মেসোপটেমীয় সভ্যতা নির্ধারণ করেছেন ইতিহাসবিদরা।  সুমের গোষ্ঠীর লোকেরাই সর্বপ্রথম সভ্যতার ধারক ও বাহক। তারাই আধুনিক নগরের রূপ দান করেছিল মেসোপটেমীয় সভ্যতায়। উরুক ছিল এই সভ্যতার প্রথম শহর বা নগর। ধীরে ধীরে সুমেরীয়রা উরুক থেকে কিস, উর, ইরিদু এবং নিপ্পুরের মতো শহরের গোড়াপত্তন করে। পৃথিবীর প্রথম গল্প খ্যাত গিলগামেশের মহাকাব্যও সুমেরীয় সভ্যতার দান। সুমেরীয়দের পর মেসোপটেমীয় সভ্যতায় এসেছিল আক্কাদিয়ানরা। আক্কাদিয়ানরা মেসোপটেমীয় সভ্যতার ব্যাপক উন্নতি করেছিল। ধর্মীয় প্রার্থণালয় হিসেবে নির্মিত জিগুরাত হচ্ছে তাদের সভ্যতার এক অনন্য নিদর্শন। আক্কাদিয়ান সভ্যতার পতন হলে খানিক সময়ের জন্য জাগ্রোস পর্বতমালার বর্বর জাতি গুটিয়ানরা মেসোপটেমীয় সভ্যতায় রাজত্ব করেছিল। 

সুমেরীয়দের নির্মিত উর শহরের জিগুরাত। Image Source: Julia Harte/nationalgeography.com

পরবর্তীতে রাজা হাম্বুরাবি ব্যবিলনীয় সভ্যতার গোড়াপত্তন করে। ব্যবিলয়নীয় সভ্যতা ছিল মেসোপটেমিয়ার সবচাইতে সমৃদ্ধ সময়কাল। হাম্বুরাবি কর্তৃক দ্য ল অফ হাম্বুরাবি বা হাম্বুরাবির আইন এই সময়কালেরই অবদান। এছাড়াও, প্রাচীন পৃথিবীর সপ্তমাশ্চার্য খ্যাত ব্যবিলনের শূন্য উদ্যানও এই সময়ের নিদর্শন। এরপর সম্রাট আশুরের হাত ধরে গড়ে উঠেছিল অ্যাসেরীয় সভ্যতা। পার্সিয়ান সভ্যতার উত্থান হলে মেসোপটেমীয় সভ্যতা দিনকে দিন দুর্বল হতে থাকে। এবং একসময় পৃথিবীর সবচাইতে প্রাচীন এই সভ্যতার পতন হয়। 

Feature Image: ancient-origins.net
তথ্যসূত্র:

01. The 10 Oldest Ancient Civilizations.