সিডনি শহরের নাম শুনলেই মুহূর্তেই একজন মানুষের মানসপটে ভেসে আসে নীল জলরাশি সংলগ্ন শুভ্র সাদা রঙের নৌকার পালের আকৃতিতে গড়া অপেরা হাউজ, ধনুক আকারের ধূসর রঙের একটি সুউচ্চ সেতু, অথবা বন্দরে নোঙর করে রাখা সাদা রঙের নানা আকৃতির নৌকা ও জাহাজের সারি।
দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের অন্যতম বন্দরের অধিকারী সিডনি শহর, অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত। সিডনি অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের রাজধানী এবং বৃহত্তম শহর। প্রাচীন ও আধুনিক স্থাপত্যশৈলিতে ভরপুর এই শহরটির সমৃদ্ধ শিল্প-সংস্কৃতি থেকে শুরু করে খ্যাতি রয়েছে উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থাপনা, বিজ্ঞান প্রযুক্তি, খেলাধুলাসহ নানা ক্ষেত্রে।
বন্দরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা এই শহরের সুউচ্চ অবকাঠামোগুলো প্রাকৃতিক ভূদৃশ্যের সাথে একীভূত হয়ে রয়েছে। বন্দর নগরী সিডনির প্রাচীন ইতিহাস আর বর্তমানের নানা জানা-অজানা তথ্য নিয়ে সাজানো হয়েছে আজকের আয়োজন।
এই শহরের ইতিহাসও আবর্তিত হয়েছে বন্দরকে ঘিরে। বর্তমানে পোর্ট জ্যাকসন নামে পরিচিত বন্দরটি ১৭৭০ সালে ক্যাপ্টেন জেমস কুক নামক একজন ব্রিটিশ অভিযাত্রী প্রথম খুঁজে পান। তখনকার ব্রিটিশ নৌ প্রশাসনের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্বরত স্যার জর্জ জ্যাকসনের সম্মানে কুক এর নামকরণ করেন।
ইতিহাস বলে, প্রায় ৪৫০০০ বছর ধরে এই অঞ্চলে ইওরা নামক আদিবাসীদের বসবাস ছিল। ক্যাপ্টেন কুক প্রথম এই বন্ধরের সন্ধান খুঁজে পেলেও মূলত আর্থার ফিলিপের মাধ্যমে বন্দরটিতে বসতি স্থাপন শুরু হয়।
১৭৮৮ সালে ইংরেজ নৌবাহিনীর কর্মকর্তা আর্থার ফিলিপ তার প্রথম নৌবহর নিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব অস্ট্রেলিয়ার উপকূলে পৌঁছানোর পর বোটানি উপসাগরে প্রথম যাত্রা করেন।
কিন্তু এই উপসাগরটি নিরাপদ নোঙ্গরের জন্যে যুথসই না হওয়ায় এবং বসতি স্থাপনের অনুপযুক্ত দেখে তিনি আরও উত্তর দিকে গিয়ে মাত্র কয়েক মাইল দূরে পোর্ট জ্যাকসনের প্রবেশপথ আবিষ্কার করেন।
এরপর ফিলিপ তার পুরো নৌবহর পোর্ট জ্যাকসনে নিয়ে যাবার পরিকল্পনা করেন এবং একটি উপসাগরে প্রথম বসতি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন। একটি ভালো মিঠা পানির স্রোতধারা থাকায় আর তার জাহাজগুলো গভীর জলের নিকটে নোঙর করার উপযুক্ত জায়গা পাওয়ায়, তিনি মূলত এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
বর্তমানে ‘সার্কুলার কোয়ে’ নামে পরিচিত এই উপসাগরটিকে ঘিরে উপনিবেশটির ‘সিডনি’ নামকরণ করা হয় সেই সময়ের ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র সচিব টমাস টাউনশেন্ড লর্ড সিডনির নামানুসারে।
ইতিহাসবিদদের তথ্যমতে, নতুন বসতি স্থাপনাকারীদের আগমনের পর এই অঞ্চলের আদিবাসীদের মধ্যে ১৭৮৯ সালের গুটি বসন্তের মহামারি দেখা দেয় এবং ধীরে ধীরে আদিবাসী জনসংখ্যা কমতে থাকে। সিডনি অঞ্চলের বিস্তার লাভের সাথে সাথে ইওরার জাতির কিছু গোত্র হারিয়ে গেলেও এই শহরে আজও তাদের বেশ কিছু বংশধরদের পদচারণ আছে।
ফিলিপের সময়ের বিশ্বসেরা পোর্ট জ্যাকসন, এখনো বিশ্বের অন্যতম সেরা প্রাকৃতিক বন্দর এবং অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রধান বন্দর হিসেবে পরিচিত রয়েছে। এটি ১২ মাইল দীর্ঘ এবং মোট আয়তন ২১ বর্গমাইল। এটির সর্বনিম্ন গভীরতা ৩০ ফুট এবং কম পানিতেও সর্বাধিক গভীরতা ১৫৫ ফুট।
এই অনিয়মিত উপকূলগুলো ১৫০ মাইলেরও বেশি প্রসারিত যা বিস্তৃত নোঙরের সুবিধা দিয়ে থাকে। পূর্বে কার্যক্ষম ‘সার্কুলার কোয়ে’ বন্দর বর্তমানে আন্তর্জাতিক যাত্রীবাহী শিপিং বন্দর, পর্যটন প্রাঙ্গণ এবং ঐতিহ্যবাহী এলাকায় পরিণত হয়েছে। এটি সিডনি শহরের স্থানীয় সরকার এলাকার একটি অংশ হিসেবেও রয়েছে।
সিডনির প্রাচীন ইতিহাসে প্রভাব বিস্তার করে আছে ব্রিটিশ শাস্তিমূলক উপনিবেশ। এই অঞ্চলের বিভিন্ন তীরে ফেলা রেখে যাওয়া হতো অপরাধীদের। অনুর্বর মাটির এই রুক্ষ জমিতে ফসল উৎপাদন করা ভীষণ কষ্টসাধ্য ছিল।
এইখানের বসতি স্থাপনকারীরা ব্লু মাউন্টেইন এবং গ্রেট ডিভাইনিং রেঞ্জের পশ্চিমে গিয়ে যতদিন পর্যন্ত উর্বর জমি ও খাদ্যের উৎস খুঁজে পায়নি ততদিন পর্যন্ত তারা তীব্র খাদ্য সংকটে জীবন অতিবাহিত করেছে। তার উপর ছিল গভর্নর, মুক্ত বসতি স্থাপনকারী এবং দোষীদের মধ্যে প্রতিনিয়ত দ্বন্দ্ব।
সিডনি শহরের দ্রুত বিস্তার ঘটেছে নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রসার আর বন্দোবস্তের সাথে। ব্রিটিশ সরকার তার উপনিবেশকে বিনামূল্যে জমি, শ্রম, মূলধনসহ নিশ্চিত বাজারজাতকরণেও সুবিধা প্রদান করতো। এর ফলে বাকি বিশ্বের সাথে সিডনির ব্যবসায় যোগাযোগ দ্রুত বাড়তে থাকে।
তবে সিডনিকে বসবাসের জন্যে সমৃদ্ধশালী একটি শহরে পরিণীত করতে লাচলান ম্যাককোয়ারির ভূমিকা ছিল অনেক। ম্যাকোয়ারি ১৮১০ থেকে ১৮২১ সাল পর্যন্ত নিউ সাউথ ওয়েলসের পঞ্চম গভর্নর হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তার আমলেই সিডনি একটি অনিশ্চিত শাস্তিমূলক বন্দোবস্ত থেকে ধীরে ধীরে সম্মানজনক শহরে বিকশিত হয়।
তিনি সুবিধাজনক অপরাধী শ্রমশক্তি ব্যবহার করে শহরে অনেকগুলো অবকাঠামো তৈরি করেন। তিনি শহরে গির্জা, হাসপাতাল, সৈন্য নিবাস, স্কুল, পার্ক, কোর্ট হাউজ নির্মাণ করেন এবং সেই সাথে সাধারণ জনগণের জন্যে একটি প্রকল্পও শুরু করেন।
ম্যাককোয়ারি এই সকল কাজে ইংল্যান্ডে জালিয়াতির জন্য নির্বাসিত হওয়া ফ্রান্সিস গ্রিনওয়ে নামক এক দোষী স্থপতির সহায়তা পান। বর্তমানে ম্যাককোয়ারি স্ট্রীটে অবস্থিত হাইড পার্ক ব্যারাকস এবং সেন্ট জেমস চার্চসহ কয়েকটি দারুণ স্থাপত্য তার হাতেই গড়া।
ম্যাককোয়ারি, অপরাধীদের মধ্যে কর্মক্ষমতা বৃদ্ধ্বি ও নৈতিক চরিত্র উন্নয়নের জন্যে এই ব্যারাকে তাদের জন্যে আবাসনের ব্যবস্থা করেন। এভাবেই দোষীদের তাদের পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নেবার কার্যক্রমের যাত্রা শুরু হয়। স্থাপত্যটি সম্ভবত অস্ট্রেলিয়ার ঔপনিবেশিক আমলের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য স্থান হিসেবে আজও সিডনির বিকাশের সাক্ষী হয়ে রয়েছে।
১৮১৯ সালে উদ্বোধন থেকে শুরু করে বিংশ শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত, ব্যারাকগুলি অপরাধী, নারী অভিবাসী, বয়স্ক ও নিঃস্ব মহিলাদের জন্য আবাসন সরবরাহ করেছে এবং পরে প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহার করা হতো।
পরবর্তীতে গ্রিনওয়ের স্থাপত্যশৈলিতে তৈরি এই হাইড পার্ক ব্যারাকস ইউনেস্কো বিশ্বসেরা ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন হিসেবে স্বীকৃত পেয়েছে এবং বর্তমানে এটি এক জীবন্ত মিউজিয়াম হিসেবে রয়েছে যেখানে অত্যাধুনিক উদ্ভাবনের মাধ্যমে পর্যটকদের পুরোনো সেই ইতিহাসের সময়ে নিয়ে যায়।
১৮৫০ থেকে ১৮৯০ এর মধ্যে সিডনির উপশহরগুলোতে ঘরবাড়ি নির্মাণ শুরু হওয়ার ফলে খুব দ্রুত গতিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ৬০,০০০ থেকে ৪,০০,০০০ এসে পৌঁছে। এই সময়কালেই সিডনি ধীরে ধীরে আধুনিক শহরে রূপান্তরিত হতে থাকে।
১২,৩৬৭.৭ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের শহরটিতে বর্তমানে প্রায় ৫ মিলিয়নের বেশি মানুষের বসবাস। ব্রিটিশদের মাধ্যমে উৎপত্তি হয়েছে বলে, শহরের জনসংখ্যার বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে ব্রিটিশ জনগোষ্ঠী।
তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপ এবং এশিয়া থেকে প্রচুর অভিবাসী গ্রহণ করে অস্ট্রেলিয়া। এছাড়াও অভিবাসীদের একটি বড় অংশ আসে নিউজিল্যান্ড থেকে।
এদের বেশির ভাগই সিডনি শহরকে বেছে নেয় বসবাসের জন্যে। অ্যাংলিকান এবং রোমান ক্যাথলিক নামক দুটি বৃহত্তম খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের নিজস্ব ক্যাথেড্রালসহ সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যময় সিডনিতে রয়েছে মুসলিম মসজিদ, ইহুদি সিনাগগ, বৌদ্ধ মন্দির এবং অন্যান্য অনেক খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের গির্জা।
বৃহত্তর সিডনি পশ্চিমে ব্লু মাউন্টেইন থেকে পূর্বে প্রশান্ত মহাসাগর এবং উত্তরে ম্যাককোয়ারি হ্রদের দক্ষিণ তীর থেকে বোটানি বে এর দক্ষিণ পর্যন্ত একটি বিস্তৃত অঞ্চল। পোর্ট জ্যাকসন বা সিডনি হারবার নামে পরিচিত বন্দরটি দ্বারা শহরটি উত্তরে ও দক্ষিণে বিভক্ত।
উত্তর ও দক্ষিণকে যুক্ত করে বিশ্বের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন হিসেবে খ্যাত সেই সিডনি হারবার ব্রিজ। এই সেতুটি ১৯৩২ সালে উদ্বোধন করা হয়। এটি প্রায় ৫০০ মিটার বিস্তৃত, যা বিশ্বের ইস্পাত দিয়ে নির্মিত দীর্ঘতম ধনুক আকৃতির সেতুগুলোর একটি।
চূড়ার অংশটি পানি থেকে ১৩৪ মিটার উপরে। এই সেতুতে রয়েছে চারটি রেলপথ, একটি মহাসড়ক এবং দুটি পথচারীদের হাঁটার রাস্তা। পর্যটকরা সম্পূর্ণ নিরাপত্তার সাথে সেতুর চূড়ায় উঠে এক ঝলকে উপভোগ করতে পারে শ্বাস রুদ্ধ্বকর সিডনি শহরের মনোরম দৃশ্য। সেতুটির চূড়ার অংশে পোঁছাতে সময় লাগে প্রায় ৩ ঘণ্টার মতো এবং সেই সাথে গুনতে হবে ১৩৩২ পদক্ষেপ।
সেতুটি চালু হওয়ার আগ পর্যন্ত ফেরি ছিল অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের অন্যতম ব্যবস্থা; যা বছরে প্রায় ৪৭ মিলিয়ন যাত্রী বহন করতো। বর্তমানে সিডনির যোগাযোগ ব্যবস্থায় গাড়ি ব্যবহারের সংখ্যা বাড়লেও, সিডনিসাইডারদের আবেগের সাথে জড়িয়ে থাকা ফেরিগুলো আজও এক তীর থেকে আরেক তীরে মানুষ নিয়ে বয়ে চলে।
নিঃসন্দেহে সিডনির প্রতীকী দালান হিসেবে রয়েছে বিশাল সাদা নৌকার পালের আকৃতিতে গড়ে তোলা অপেরা হাউজ। তিন দিক থেকে বিস্তৃত জলরাশির মাঝে নৌকার পালের মতো হাওয়া লাগিয়ে যেন ভেসে বেড়াচ্ছে মানবসৃষ্ট এক অপরূপ নির্মাণশৈলী।
রাষ্ট্রের সম্প্রদায়কে শিল্প সংস্কৃতির মাধ্যমে আলোকিত করার প্রয়াসে ১৯৫৪ সালে, নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রধানমন্ত্রী জোসেফ কাহিল বিভিন্ন পদক্ষেপ নেন। তার সূত্র ধরেই মূলত অপেরা হাউজের সৃষ্টি হয়।
১৯৫৭ সালে এই নান্দনিক এবং ব্যয়বহুল দালানটি ডেনিশ স্থপতি জর্ন উটজন ডিজাইন করেন। এরপর ১৯৫৮ সালে নির্মাণ কাজ শুরু হলেও মাঝে নানা কারণে বাঁধাপ্রাপ্ত হয়ে অবশেষে ১৯৭৩ সালে উদ্বোধন করা হয়।
এক সময় নাট্যমঞ্চ ও কনসার্ট হলের ভীষণ ঘাটতি হওয়া এই শহরটিতে আজ অপেরা হাউজ রয়েছে শিল্পকলার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে। বন্দরের একটি উপদ্বীপে তৈরি করা অপেরা হাউজের একটি কনসার্ট হল রয়েছে যেখানে একসাথে ২৬৬৯ জন মানুষ বসতে পারে; অপেরা এবং ব্যালে এর জন্য রয়েছে ১৫০৭ আসনের একটি বড় থিয়েটার।
এছাড়া নাটক, নৃত্য, বক্তৃতা, সেমিনার এবং সংগীতের জন্য রয়েছে তিনটি ছোট থিয়েটার; রয়েছে একটি অভ্যর্থনা কক্ষ ও কিছু রেস্তোরাঁ। এই দালানের অভ্যন্তরের একটি বিশেষ দিক হলো, পুরো থিয়েটারের তাপমাত্রা পাইপের একটি সিস্টেম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় যার পানি সরবরাহ হয়ে থাকে সরাসরি সমুদ্র থেকে।
আধুনিক স্থাপত্যশৈলিতে নির্মিত এই অপেরা হাউজ বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ দুই দিক থেকেই পর্যটকদের দৃষ্টি কেড়ে নেয়। রোদের কিরণে দেখা মেলে এক রূপ, রাতের আলোক রশ্মিতে ভিন্ন রূপ।
প্রতিবছর ইংরেজি বর্ষের প্রথম দিন এই অপেরা হাউজ সংলগ্ন এলাকায় বিশ্ব সেরা আতশবাজির প্রদর্শনী দেখতে প্রায় এক মিলিয়ন দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে।
অপেরা হাউজ ও সিডনি হারবার ব্রিজ ছাড়াও পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে মডার্ন সিডনির জন্মস্থান হিসেবে পরিচিত দ্য রকস, যা একটি সৃজনশীল কেন্দ্র, সমসাময়িক শিল্প জাদুঘর এবং অত্যাধুনিক প্রদর্শনীর আবাসস্থল।
এছাড়াও রয়েছে রয়্যাল বোটানিক গার্ডেন, সিডনি টাউন হল, ডার্লিং হারবার, চায়নাটাউন, সিডনি অলিম্পিক পার্ক, পরমাট্টা পার্ক এবং পরমাট্টার পুরাতন সরকারি ভবন।
সিডনিতে রয়েছে ১০০ টি সৈকত। বোন্ডি বিচ, পাম বিচ সহ এইখানে রয়েছে শান্ত ও মনোরম পরিবেশের সৈকত। সৈকতের শহর হলেও পাহাড় প্রেমী পর্যটকদের কিন্তু সিডনি হতাশ করে না। কারণ শহরের পশ্চিমেই রয়েছে ব্লু মাউন্টেইনস অঞ্চল যা ৮টি পৃথক জাতীয় উদ্যানের সমন্বয়ে গঠিত।
এইখানে ঘন জঙ্গল ধরে হাঁটতে হাঁটতে অস্ট্রেলিয়ার বিরল প্রজাতির কিছু পাইন গাছসহ বিভিন্ন বিলুপ্তপ্রায় প্রাণির সাক্ষাৎ পাওয়া যায়।
এছাড়াও দুঃসাহসিক অভিযাত্রী প্রেমীরা উপভোগ করতে পারে পর্বতারোহণ, মনোমুগ্ধকর গভীর গিরিখাত বা দীর্ঘ ওয়েন্টওয়ার্থ জলপ্রপাত, রহস্যময়ী গুহা, সর্বাধিক পরিচিত পাথরের পর্বত থ্রি সিস্টারসের অপার সৌন্দর্য।
প্রকৃতির সৌন্দর্যকে অটুট রেখে ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব সেরা এই স্থানটিতে দর্শনার্থীদের জন্যে রোমাঞ্চিত বিনোদনের আয়োজন করা হয়েছে।
বিশ্বের খুব কম বড় শহরই সাঁতার কাটা, সার্ফিং, নৌভ্রমন এবং অন্যান্য বহিরঙ্গণ খেলাধুলার জন্য এমন অতুলনীয় সুযোগ সরবরাহ করে থাকে। সিডনিকে জাহাজের শহর নামেও আখ্যা দেয়া হয়ে থাকে।
প্রতি সপ্তাহেই বন্দর জুড়ে নানা আকার ও আকৃতির পাল দ্বারা আচ্ছাদিত বিলাসবহুল জাহাজের সমারোহ থাকে। সিডনিসাইডাররা নিজেদের খেলা প্রেমী হিসেবে দাবি করলেও সিডনির একটি জোরালো সাংস্কৃতিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জীবন রয়েছে।
তাই তো, ফুটবল, ক্রিকেট, গলফ, রাগবি, টেনিসসহ খেলাধুলাতে শীর্ষ শ্রেণীর সুযোগ-সুবিধা প্রদানের সাথে সাথে এই শহরে রয়েছে বিশ্বের শীর্ষ স্থান দখল করা বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
সিডনির অধিবাসীদের একটি বড় অংশ জানালা দিয়ে একটু খানি হলেও নীল জলরাশি দেখার এবং প্রায় সবাই সৈকতের এক ঘণ্টা দূরত্বের মধ্যে বাস করার সৌভাগ্য পায়।
বন্দরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা এই সিডনি , ভৈগোলিকগত অবস্থানের কারণে সর্বাধিক আকর্ষণীয় শহর হিসেবে এখনো জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে।
Feature Image Source: wallpaperaccess.com References: 01. Sydney | History, Population, Climate, & Facts. 02. History - City of Sydney. 03. Aboriginal People and Place. 04. Harbour life: tracing early Sydney's watery history. 05. The Sydney Opera House: history and interesting facts. 06. Top Places to Visit in Sydney. 07. How to Visit the Blue Mountains. 08. A short history of the Hyde Park Barracks.