বর্তমান বিশ্ব ইন্টারনেট জগতের বিশ্ব। আমাদের একটা মুহূর্ত একে ছাড়া ভাবা প্রায় অসম্ভব। ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ কোন কাজে এর ব্যবহার অপরিসীম। এই ইন্টারনেটের জগতে কত কি যে আমাদের জীবনকে সহজ করে দিয়েছে তার হিসাব নেই। সম্প্রতি ইন্টারনেট জগতে যুক্ত হয়েছে পডকাস্ট (Podcast) নামক একটি প্রযুক্তি যা অনেকের কাছেই এখনো অজানা।
পডকাস্ট মূলত একটি ডিজিটাল অডিও ফাইল (Digital Audio File), যা মোবাইল কিংবা কম্পিউটারে ডাউনলোড করে এতে বিভিন্ন কন্টেন্ট, আইডিয়া, আমাদের চারপাশের কথা একটি অডিও ফাইলে রূপান্তর করা। বর্তমানে ইউটিউবের মত জনপ্রিয় সাইটে এই পডকাস্টের ব্যবহার অনেক বেশি দেখা যায়। এই পডকাস্ট আমাদের অনেক কাজই সহজ করে দিয়েছে। আর আজ জানবো এই পডকাস্ট মূলত কি, এর কাজ এবং এটির ব্যবহারে আপনার কি কি উপকার আসতে পারে।
পডকাস্ট কি?
পডকাস্টের কথা পড়লে প্রথমেই মাথায় আসবে এটি আসলে কি! পডকাস্ট হচ্ছে এমন একটি অডিও ফাইল যা আপনার প্রয়োজনীয় তথ্যাদি, আপনার পছন্দের গল্প, বিশ্বের নানান কন্টেন্ট ইত্যাদি অডিও হিসেবে খুব সহজেই শুনতে পারবেন। এবং মজার ব্যপার হচ্ছে, এটি ব্যবহারে আপনাকে কোন চার্জ বহন করতে হবে না।
পডকাস্ট আমাদের দেশসহ এশিয়ার বেশ কিছু দেশে নতুন, যার কারণে এটি অনেকের কাছেই সম্পূর্ণ অজানা একটি প্লাটফর্ম। সহজ ভাষায় বলতে গেলে আমরা যখন কোন আলোচনা, কথা, যেকোনো বিষয় ভয়েসের মাধ্যমে রেকর্ড করে কন্টেন্ট তৈরি করি তখন তাকে পডকাস্ট বলে।
বর্তমানে পডকাস্টিং করে অনেকেই অর্থ উপার্জন করতে সক্ষম হচ্ছেন। পডকাস্ট আপনাকে মূলত এমন এক প্লাটফর্মে নিয়ে যাবে যেখানে আপনার সফলতা আসার সম্ভাবনা খুব বেশি। আপনি যেকোনো জায়গায় বসে, যেকোনো স্থানে, যেকোনো অবস্থায় এর স্বাদ নিতে পারেন। পডকাস্টের সাহায্যে আপনি কি কি সুবিধা লাভ করতে পারেন চলুন জেনে নেয়া যাক!
পডকাস্টের সুবিধা সমূহ
খুব সহজেই সবার কাছে পরিচিতি লাভ করা এখন মুহূর্তের ব্যপার মাত্র! ভাবছেন খুব জটিল? এর উত্তর, না! পডকাস্ট আপনাকে খুব সহজেই সবার কাছে পরিচিত করে তুলতে সাহায্য করবে। আমরা এখন অনেকেই মুঠোফোন ব্যবহার করে থাকি। এই মুঠোফোনেই যদি আপনি যখন ইচ্ছে পছন্দের লেখক, কিংবা কোন কন্টেন্ট শুনতে ইচ্ছে করে তবে পডকাস্ট আপনার কাছে আশীর্বাদস্বরূপ। আপনি পডকাস্টের সাহায্যে নিজের লেখা গল্প বা কোন কন্টেন্ট বানিয়ে তা পডকাস্টে আপলোড করতে পারেন।
অর্থ উপার্জনের জন্য এখন অনেকেই পডকাস্টকে ব্যবহার করে আসছে। পডকাস্টে বেশ কিছু প্লাটফর্ম আছে যেখান থেকে খুব সহজেই আপনি অর্থ উপার্জন করতে পারেন!
মাসিক সাবস্ক্রিপশন প্ল্যান
এটি মূলত একটি পেইড পডকাস্ট, যা শুনতে আপনাকে অর্থ দিতে হবে। আপনি চাইলে নিজের পডকাস্ট শুনার জন্য কিছু পডকাস্ট ফ্রিতে দিয়ে রাখেন এবং আপনার রেগুলার লিসেনারদের বলে রাখেন তারা যদি এমন পডকাস্ট রেগুলার শুনতে চান তাহলে তারা এটি সাবস্ক্রাইব করে রাখতে পারেন এবং এতে করে আপনার অর্থ উপার্জনের ব্যপারটি নিশ্চিত হবে।
স্পন্সরশীপ
আপনার সফলতা যদি ধরাছোঁয়ার ভেতরে থাকে, তবে আপনার লিসেনার বাড়বে এটাই স্বাভাবিক! আর যখন আপনার লিসেনারের সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে বেশি হবে তখন আপনি চাইলে স্পন্সরশীপ দিয়ে অর্থ উপার্জন করতে পারেন। এছাড়া বিভিন্ন কোম্পানি আপনাকে তাদের পণ্য সম্পর্কে আপনার লিসেনারদের কাছে বলতে বলবে আর এর বিনিময়ে তারা আপনাকে বেশ ভালো পরিমাণের অর্থ প্রদান করে থাকবে। অর্থ উপার্জনের এই ধাপটি বেশ সহজ এবং জনপ্রিয়।
ডিরেক্ট প্রমোশন
এটি বেশ জনপ্রিয় একটি মাধ্যম বলা যায়। অনেকটা স্পন্সরশীপ-এর ন্যায় হলেও এর কাজ একটু ভিন্ন। আপনি এই ধাপে বিভিন্ন ব্র্যান্ড, ওয়েবসাইট, ব্লগ, বিজনেসগুলোর সরাসরি প্রমোশন করেও টাকা আয় করতে পারবেন আর এক্ষেত্রে আপনার পূর্বের ধাপটির মতোই গ্রাহক প্রচুর থাকা লাগবে। কেননা যত বেশি গ্রাহক থাকবে, তত বেশি লাভ।
কীভাবে করতে হবে?
আমাদের মধ্যে যাদের কাছে পডকাস্ট শব্দটি একেবারেই নতুন তারা হয়ত জানিনা পডকাস্ট ঠিক কোথায় কীভাবে আর কোন বিষয়ে করে থাকবো। আমরা আগেই জেনেছি যে এটি বেশ সহজ একটি পন্থা যা আপনার ভবিষ্যৎ অনেকটাই আপনার মন মতো করে তুলতে সাহায্য করবে। বিশেষ করে যারা পরিচিতি লাভ করার আকাঙ্ক্ষা রাখেন। পডকাস্ট করতে গেলে প্রথমেই আপনাকে ভাবতে হবে আপনি কোন বিষয়ে খুব বেশি আগ্রহী এবং আপনার জ্ঞান রয়েছে।
যদি আপনি কোন নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর পডকাস্ট করতে চান তাহলে কিছু দিন পরপর আপনার বিষয়ের উপর পডকাস্টিং করে আপলোড করার মানসিকতা তৈরি করে রাখতে হবে। নির্দিষ্ট কোন বিষয় ঠিক করে না রাখলে দেখা যাবে আপনার কাজে বেশ ব্যঘাত দেখা দিবে, বিশৃঙ্খলা তো আছেই!
১. ব্লগিং, যা বর্তমান বিশ্বে একটি উচ্চ চাহিদা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বিভিন্ন প্রযুক্তিগত দিক বা এর আপডেট দিকসমূহ।
২. এন্টারটেইনমেন্ট বা বিনোদন। বর্তমান সময়ে এটি এতোটাই জনপ্রিয় জায়গায় আছে যে, একটু লেগে থাকলেই তৈরি হতে পারে আপনার বিশাল ফ্যান বেইস।
৩. বিভিন্ন ধরণের গল্প কিংবা প্রেষণামূলক কথা, যা আপনার লিসেনার বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে। কেননা মানুষ গল্প কিংবা প্রেরণামূলক কথা শুনতে বেশ পছন্দ করে থাকেন।
৪. আন্তর্জাতিক খবরাখবর, যা শ্রোতা মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনতে প্রস্তুত! এটি এমন একটি বিষয় যা পডকাস্টের জন্য অন্যান্য বিষয় থেকে তুলনামূলক ভাবে বেশ জনপ্রিয়।
৫. স্বাস্থ্য বা সেবাদায়ক কোন তথ্য। এর সাহায্যে আপনি চাইলে ছোট ছোট তথ্য দিয়ে পডকাস্ট করতে পারেন। কিংবা ঘরে বসে নিজের শরীরের যত্ন নেয়ার গুরুত্ব সম্পর্কেও জানাতে পারেন।
এতক্ষন তো বেশ করে পডকাস্টের উপকারীতা, কীভাবে কোন বিষয়ের উপর করা যায় জেনে আসলাম কিন্তু আপনাকে পডকাস্ট করতে কি কি লাগবে তা জানা তো আরও বেশি জরুরী! পডকাস্ট করার প্রথম শর্ত হচ্ছে আপনার ভয়েস রেকর্ডিং করতে যা যা লাগে তা আপনার কাছে থাকার নিশ্চিত করা। আসুন জানা যাক কি কি আপনার লাগবে পডকাস্ট করতে!
ভয়েস রেকর্ডার
এটি মূলত প্রধান উপকরণ যা আপনার কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করতে সাহায্য করবে। ভালো ভয়েস রেকর্ডার ছাড়াও আপনার কাছে যদি স্মার্টফোন থাকে তবে সেটিও কাজে লাগাতে পারেন। এছাড়া বেশ ভালো মানের মাইক্রোফোনও রাখতে পারেন। মাইক্রোফোন ভালো মানের না হলে রেকর্ডিং স্পষ্ট ও কোয়ালিটি সম্পন্ন হলে আপনার লিসেনারের কাছে আপনার রেকর্ডকৃত পডকাস্টটি ততটাই পছন্দের তালিকায় থাকবে।
অডিও এডিটর
আপনার করা রেকর্ডটিতে অপ্রয়োজনীয় শব্দগুলো ছাটাই করার জন্য এটির ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে করে আপনি আপনার রেকর্ডটির কোয়ালিটিও বেশ ভালো করে তুলতে পারবেন।
স্টুডিও
সাধারণত এসব কাজে নিরিবিলি স্থান বেছে নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। এতে করে যেমন আপনার রেকর্ডে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি হবে তেমনি আপনার রেকর্ডে কোন রকম অপ্রাসঙ্গিক শব্দ আসবে না।
এই পডকাস্টের কিন্তু বেশ ভালো একটি ভবিষ্যৎ রয়েছে! যারা পডকাস্ট করবেন বলে ভেবে রেখেছেন তারা এই চিন্তাকে সামনে এগিয়ে নেয়ার জন্য তা বাস্তবায়ন করার জন্য লেগে থাকাই বাঞ্ছনীয়। বর্তমানে খুব সহজে অনলাইনে আয় করার জন্য এটি যেমন কাজে দিবে তেমনই যেকোনো বড় বড় প্রতিষ্ঠানের পণ্য বা সেবার প্রমোশন করে তাদের সাথে যুক্ত থাকতে পারবেন।
শুধুমাত্র অডিও শুনেই যারা জানা-অজানা তথ্য, গল্পের ঝুড়ি, ব্লগ ইত্যাদি নিয়ে বসতে চান তাদের জন্য এবং যারা পডকাস্ট করে থাকে তাদের জন্যেও এটি এক আশীর্বাদস্বরূপ প্লাটফর্ম হিসেবে আপনার পাশে থাকবে।
Feature Image: pinterest.com Reference: 1. Podcasting. 2. What is a Podcast and how do they work.