বিশ্বের প্রিয় খাবারগুলো নিয়ে দাতব্য সংস্থা অক্সফামের একটি বিশ্বব্যাপী সমীক্ষায় মাংস, ভাত এবং পিজ্জার চেয়ে পাস্তাকে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।কিন্ত কীভাবে ইতালির এ খাবারটি বিশ্বজুড়ে এত জনপ্রিয় হয়ে উঠল? চলুন জেনে আসি আজকের টপিক পাস্তার বিশ্বজয়ের গল্প নিয়ে।
আজ পাস্তা সাধারণ মানুষের প্রতিদিনের খাবার হলেও একসময় শুধুমাত্র ইতালীয় অভিজাতদের জন্য এ খাবার বরাদ্দ ছিল। রেনেসাঁর সময় অভিজাত ভোজসভায় পাস্তাকে ধনীদের খাবার হিসাবে বিবেচনা করা হত।
পাস্তা বানানোর উপকরণগুলো সস্তা। আর বানানোও সহজ এবং স্বাদে অনন্য। সস্তা উপকরণ হলেও এক প্লেট পাস্তা দিয়েই কিন্ত আপনার উদর পুর্তি হয়ে যাবে।এজন্যই অতীতে ইতালির অর্থনৈতিক সংকটের সময় এ পাস্তাকে সেখানকার মানুষ তাদের রোজকার খাবারের তালিকায় যুক্ত করেছিল।
মূলত ইতালিয়ানরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পরিভ্রমণের সময় এ পাস্তা সাথে নিয়ে সেসব দেশে পরিচিত করানোর মাধ্যমে পাস্তা সারাবিশ্বে পরিচিতি লাভ করে। তাছাড়া এটি খেতে সুস্বাদু ও কম সময়ে রান্না করা যায় বলে এর জনপ্রিয়তা বেড়েছে।
পাস্তার ইতিহাস
যখন থেকে প্রাচীন এট্রুস্কানরা রান্না করার আগে শস্য এবং শস্যকে পানি দিয়ে মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করেছিল, তখন থেকেই মৌলিক পাস্তার অস্তিত্ব বিদ্যমান ছিল।কিন্তু আজকে আমরা যেটিকে পাস্তা হিসেবে জানি তার উৎপত্তি শনাক্ত করা একটু জটিল।
জনশ্রুতি আছে যে মার্কো পোলো চীন থেকে তার সাথে ইতালিতে পাস্তা আনেন সর্বপ্রথম,কিন্তু এটি সত্য নয়।কারণ চীনারা যে নুডলস তৈরি করত তা ছিল চাল ও কাসাভা গাছ থেকে উৎপন্ন। আর ইতালির পাস্তা গমের আটা থেকে তৈরি।অতীত ইতিহাস ঘাঁটলে এ বিষয়ে অনেক প্রমাণ মিলে।
৮ম শতাব্দীতে আরবদের ইতালি আক্রমণের পর ইতালিয়ান খাবারে আরবীয় প্রভাব পড়ে।আরবদের থেকেই পাস্তার উদ্ভব বলে মনে করা হয়।অনেক সিসিলিয়ান পাস্তা রেসিপিতে এখনও মধ্যপ্রাচ্যের উপাদান রয়ে গেছে, যেমন কিশমিশ এবং দারুচিনি।
১২শতকে সিসিলিতে শুকনো পাস্তা চালু হয়।গ্র্যাগনানো শহরের চারপাশে শুষ্ক এবং উষ্ণ জলবায়ুর কারণে সেখানে ডুরম গরম চাষ বৃদ্ধি পায় কারণ ডুরম গম দিয়ে শুকনো পাস্তা, শক্ত পাস্তা তৈরি করা সহজ ছিল।পাস্তা শুকানোর জন্য নেপলস পাস্তা উৎপাদনের কেন্দ্রস্থল হয়ে ওঠে।
ইতালিয়ানরা প্রথমদিকে হাতে তৈরি তাজা পাস্তা খেত।কিন্ত পরবর্তীতে চাহিদা বাড়তে থাকায় হাতে করা পাস্তা পাওয়া কিছুটা দুর্লভ হয়ে ওঠে।অষ্টাদশ শতাব্দীতে প্রথম পাস্তা কারখানা গড়ে তোলা হয় যেখানে মেশিনের সাহায্যে পাস্তা তৈরি শুরু হয়।কিন্ত মেশিনে উৎপাদিত পাস্তা হাতে তৈরি পাস্তার চেয়ে বেশ ভিন্ন ছিল, সেই সাথে সেগুলো ছিল অনেক বেশি রুক্ষ এবং কম সুস্বাদু।
কিন্তু ১৮৭০ এর দিকে যখন মার্সেলাইস পিউরিফায়ার আবিষ্কৃত হয় তখন সুজি প্রক্রিয়া করা সহজ হয়ে যায় (যা ঐতিহ্যগতভাবে চালনি ব্যবহার করে হাতে করা হত) এবং আধুনিক দিনের পাস্তার জন্ম হয়। এছাড়া ১৭ শতকের দিকে নেপলসে পাস্তার রেসিপিতে টমেটো সসের ব্যবহার শুরু হয় যা খুবই জনপ্রিয়তা পায়।
পাস্তার বিশ্বজয়
পাস্তা যেহেতু ইতালির খাবার তাই একে আমরা ইতালিয়ান খাবারই বলে থাকি।কিন্তু প্রায় প্রতিটি দেশেই এই জনপ্রিয়, সস্তা ও সুস্বাদু পাস্তার নিজস্ব অনন্য সংস্করণ রয়েছে।যদিও রান্নার ক্ষেত্রে মূল ইতালিয় স্টাইল পরিবর্তিত হয় নি।কিন্তু এ পাস্তার বিশ্বজয়ের গল্প শুরু হয় কী করে?
পাস্তা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এটি সস্তা এবং প্রস্তুত করা সহজ বলে।কম খরচে পাস্তা উৎপাদনের ফলে নেপলসের বাইরে এবং ইতালির বাকি অংশে পাস্তার সুনাম ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে।১৯১০ সাল নাগাদ কৃত্রিমভাবে পাস্তা শুকানোর পদ্ধতি আবিষ্কারের পর এটি রপ্তানি করা আগের তুলনায় অনেক সহজ হয়ে যায়।
বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে, পাস্তা কারখানাগুলো আরও উন্নত ও বড় হয় এবং নতুন মেশিনগুলি আগের চেয়ে দ্রুত ময়দা মিশ্রিত করতে, মাড়াতে এবং চাপতে সক্ষম হয়েছিল।এর ফলে উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং বিদেশে চাহিদা বাড়তে শুরু করে।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতালির বাইরে সবচেয়ে বড় বাজার হয়ে ওঠে এবং অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলিতেও এই সহজ কিন্তু সুস্বাদু শুকনো পাস্তা পরিচিতি পেতে শুরু করে।
২০শতকের শুরুতে যখন বহু ইতালীয় আমেরিকায় অভিবাসন করে তখন তারা পাস্তা তাদের সাথে নিয়ে যায়। পাস্তা অবিলম্বে আমেরিকাতে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ও ছড়িয়ে পড়ে।ইতালীয়রা আমেরিকা ছাড়াও যেসব দেশে অভিবাসিত হয়েছিল সেখানে তাদের নিজস্ব খাদ্য বাজারজাত ও প্রচার করেছিল।
ইতালিতে বসতি স্থাপনকারী স্প্যানিশরা প্রথম পাস্তা আমেরিকায় নিয়ে আসেন।থমাস জেফারসন নামক জনৈক ব্যাক্তি পাস্তাকে জনপ্রিয়তা দিতে সাহায্য করেছিলেন।১৭৮৪-১৭৮৯ সালের দিকে জেফারসন ম্যাকারোনি স্টাইলের পাস্তা খেয়েছিলেন।তিনি এটি এতটাই পছন্দ করেছিলেন যে দুটি কেস ভরে পাস্তা নিয়ে আমেরিকায় ফিরে আসেন।এমনকি সেগুলো শেষ হলে,নেপলস থেকে এক বন্ধুর মাধ্যমে পাস্তা আনিয়ে নেন।
ব্রিটিশরাও তাদের খাদ্যতালিকায় ইতালীয় পাস্তাকে অন্তর্ভুক্ত করেছিল। পাস্তা ইউরোপীয় দেশগুলিতে জনপ্রিয় হওয়ার পাশাপাশি ফিলিপাইন, গুয়াতেমালা, ব্রাজিল এবং দক্ষিণ আফ্রিকায়ও জনপ্রিয়তা পেয়েছে ।
তবে আমেরিকানরা পাস্তাকে এত পছন্দ করেছিল যে ২০ শতকের দিকে তারা পাস্তাকে টিভি পর্দায় নিয়ে আসে।স্প্যাগেটি মার্কস ব্রাদার্স নাইট অ্যাট দ্য অপেরা (1935), ডিজনি’স লেডি অ্যান্ড দ্য ট্রাম্প (1955), এবং গুডফেলাস (1990) এর মতো ক্লাসিক চলচ্চিত্রে পাস্তাকে স্মরণীয় ভূমিকায় উপস্থাপন করা হয়েছে।
পাস্তার প্রকারভেদ
সারা বিশ্বে ৩৫০ প্রকারের এবং ৬০০ টিরও বেশি আকৃতির পাস্তা রয়েছে। যেমন ফারফালে, ফুঁসিলি, ম্যাকারনি, টরটেলিনি, ক্যানেলোলোনি, পেনে, স্প্যাগেটি, বোকোলোটি, রিগাটেনি, পেরসিটেলিনি, ফোরাটিনি, ফিদেলিনি বুকাটি, ফিড বুকেট, অগোনি বুকাটি, স্পিলোনি বুকাতি ইত্যাদি।
তবে অভিজ্ঞ শেফরা বিভিন্ন উদ্দেশ্যে বিভিন্ন আকার এবং মাপের পাস্তা ব্যবহার করে।কারণ এক এক আকারের পাস্তা এক এক ধরণের সসকে ধরে রাখে।
কিছু কিছু শেফ বলেন পাতলা পাস্তা, যেমন (এঞ্জেল হেয়ার)কোঁকড়ানো চুলের মত যা পাতলা সসের সাথে পরিবেশন করা উচিত।আবার ঘন সস মোটা ও ভারী পাস্তার সাথে ভাল লাগে।আর ক্রিম সসের সাথে ফ্ল্যাট পাস্তা এবং টমেটো সস দিয়ে গোল পাস্তা খেতে ভাল লাগে।এরকম নানা স্বাদের পাস্তা রয়েছে যা বর্ণনা করতে গেলে একটি বই লেখা হয়ে যাবে।
পাস্তার রেসিপি
পাস্তার বিশ্বজয়ের গল্প পড়বেন আর পাস্তার রেসিপি জানবেন না?চলুন পাস্তা রান্নার একটি সাধারণ রেসিপি জানিয়ে দেই।
উপকরণ
ডিম- ২টি
ময়দা- পরিমাণমত
লবণ- পরিমাণমত
তেল- ২ চা চামচ।
প্রণালী
প্রথমে একটি পাত্রে ২টি ডিম নিয়ে ভালো করে ফেটিয়ে নিন।এর সাথে পরিমাণমত লবণ মেশান।
এবার ডিমের সাথে অল্প অল্প করে ময়দা মেশান এবং ময়ান করতে থাকুন। রুটি বানানোর জন্য যেমন ময়ান করতে হয় তেমন শক্ত ময়ান হওয়া পর্যন্ত ময়দা মেশাতে থাকুন।তবে ভুলেও পানি মেশাবেন না। ময়ান করা শেষ হয়ে এলে তেল মিশিয়ে নিবেন।এই তেল ময়দার মিশ্রণকে বারবার হাতে লাগা থেকে রক্ষা করবে।ময়ান হয়ে গেলে আধাঘন্টা ময়ানটা ঢেকে রেখে দিন।
আধা ঘন্টা পরে ময়ান দিয়ে রুটি বেলুন। মনে রাখতে হবে রুটি যত বেশি পাতলা হবে আপনার পাস্তা তত ভালো হবে।রুটি বেলা হলে ছুরি দিয়ে পছন্দের শেইপে পাস্তা কেটে নিন। একটু চিকন আর ছোট করতে চেষ্টা করবেন।ব্যাস পাস্তা বানানো কিন্তু হয়েই গেলো।
এবার রান্নার পালা। পাস্তা অনেকভাবে রান্না করা যায়।কড়াইয়ে পানি ফুটিয়ে তাতে কেটে রাখা পাস্তা গুলো দিয়ে দিন। ১৫/২০ মিনিট গরম পানিতে পাস্তাগুলোকে সেদ্ধ করুন। সেদ্ধ হয়ে গেলে পানি ছেঁকে বাতাসে শুকিয়ে নিন।
আজকে হোয়াইট চিজি নামক একটি পাস্তা রেসিপি শেয়ার করলাম।
হোয়াইট চিজি পাস্তা
নোনতা আর মিষ্টি স্বাদের এই পাস্তা খেতে দারুণ লাগে। কড়াইতে মাখনের সাথে দুধ আর হোয়াইট সস মিশিয়ে নিন।এটি জ্বাল দিলে সসের মতো তৈরি হবে। সেদ্ধ করা পাস্তা এই মিশ্রণের মধ্যে দিয়ে তাতে সামান্য লবণ আর চিনি মিশিয়ে নিন।ইচ্ছা হলে সেদ্ধ করে রাখা মুরগীর বুকের মাংসের ছোট টুকরা দিতে পারেন। এবার পনির কুচি করে তাতে মিশিয়ে দিন। মৃদু আঁচে ১৫/২০ মিনিট রান্না করুন।আপনার পাস্তা তৈরি।
পাস্তার বিশ্ববাজার
গত এক দশকে বিশ্বব্যাপী পাস্তার বিক্রি তীব্রভাবে বেড়েছে।২০০৩ সালে ১৩ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পাস্তা বিক্রি হয়েছিল এবং ২০১০ সালে ১৬ বিলিয়ন ডলার। ইতালীয়রা যেমন পাস্তা উৎপাদনে এক নম্বর তেমনি ভোক্তা হিসেবেও এক নম্বর।তারা মাথাপিছু বার্ষিক ২৬ কেজি পাস্তা খেয়ে থাকে।এরপরের অবস্থানে আছে ভেনিজুয়েলা এবং তিউনিসিয়া।চিলি এবং পেরুও শীর্ষ দশে রয়েছে।আবার মেক্সিকান, আর্জেন্টিনা এবং বলিভিয়ানরা সবাই ব্রিটিশদের চেয়ে বেশি পাস্তা খায়।
পাস্তা খাওয়া কি স্বাস্থ্যকর?
পাস্তা সচরাচর গমের আটা থেকে তৈরি করা ছাড়াও চাল, বেকওয়েট, ছোলার ময়দা, ভুট্টার ময়দা এবং অন্যান্য শাক থেকে তৈরি করা হয়। পাস্তা ভিটামিন বি এবং ই, আয়রন, ফসফরাস, ম্যাঙ্গানিজ, পটাসিয়ামের উৎস।
পরিমিতভাবে খাওয়া হলে পাস্তা অবশ্যই একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্য ।হোল গ্রেইন পাস্তা অনেকের জন্য পছন্দের, কারণ এতে ক্যালোরি এবং কার্বোহাইড্রেট কম কিন্তু ফাইবার এবং পুষ্টিগুণ বেশি।
পাস্তার বিশ্বজয়ের গল্প এমনি এমনি তৈরি হয়নি।কারণ এটি খেতে বেশি উপকরণ লাগেনা।এটি রান্নার পর সাথে খেতে একটি সস তৈরি করুন, ব্যস আপনার কাজ শেষ।তাছাড়া পাস্তা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের খাবার তৈরি করা যায়। এর স্বাদ ভালো এবং পেট ভরে।যেকারণে অনেক দেশেই পাস্তাকে তাদের প্রধান খাদ্যের অংশ বানিয়েছে।
পাস্তা কার্বোহাইড্রেটের আকারে শক্তি উৎপন্ন করে, যে কারণে ক্রীড়াবিদরা নিয়মিত পাস্তা খান।পাস্তা অল্প খেলেই পেট ভরে যায় বিধায় বেশি খাওয়া যায়না যা ডায়েটকন্ট্রোলে সাহায্য করতে পারে।ভেগান পাস্তা এক্ষেত্রে দারুণ কার্যকর। আর এর সাথে সবজি মিশিয়ে রান্না করা হয় বলে পাস্তার সাথে সবজি ও খাওয়া হয়ে যায়।
কোন দেশ সবচেয়ে বেশি পাস্তা বানায়?
যদিও ইতালিই পাস্তা উৎপাদনে শীর্ষে।তবুও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বছরে প্রায় ২ মিলিয়ন টন পাস্তা উৎপাদন করে ২য় অবস্থানে আছে।বিশ্বের ৩য় বৃহত্তম পাস্তা উৎপাদনকারী দেশ হলো ব্রাজিল যারা বছরে প্রায় ১,১৯১ মিলিয়ন টন পাস্তা উৎপাদন করেছে।এরপর আছে রাশিয়া যারা বার্ষিক ১,০৮৩ মিলিয়ন টন পাস্তা বানায়।
ভাত যেমন আমাদের প্রধান খাদ্য তেমনি ইতালির প্রধান খাদ্য পাস্তা।তবে এ পাস্তা একটি ফাস্টফুড জাতীয় খাবার হওয়ায় এটির জনপ্রিয়তা বিশ্বজুড়ে। আমাদের দেশেও কিন্তু রেস্তোরাঁগুলোতে পাস্তার রেসিপির ছড়াছড়ি। এমনকি আমাদের ঘরে ঘরে নুডলসের বদলে অনেকেই এখন পাস্তা বানিয়ে খাচ্ছে এর ভিন্ন স্বাদ ও দ্রুত রান্নার জন্য।আর এভাবেই একটু একটু করে তৈরি হয়েছে ইতালীয় পাস্তার বিশ্বজয়ের গল্প।
Feature Image: foodnetwork.com References: 01. How pasta became so popular across the world. 02. Changing Food Trends Fuel Pasta Popularity. 03. How pasta became the world's favorite food. 04. Pasta.