দিন যত যাচ্ছে আমরা প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে উঠছি। সকালে ঘুম থেকে উঠে দাঁত ব্রাশ করা থেকে শুরু করে রাত্রে ঘুমুতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সবকিছুতেই যেন রয়েছে প্রযুক্তির প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ অবদান, যা আমরা অস্বীকার না করে পারবোনা। নতুন বছরের আগমনে আগমন ঘটে কিছু নিত্য নতুন টেকনোলজির যা আমাদের মানব জীবনে আনে আমূল পরিবর্তন। ২০২৩ সালে আগত এমনি ১০টি প্রযুক্তি নিয়ে আজকের এই আয়োজন।
২০২৩ সালে আগত প্রযুক্তিসমূহ
মেটাভার্স
বেশ কয়েকবছর ধরেই আমরা মেটাভার্সের নাম শুনে আসছি। গত এক দশক ধরেই টেক কোম্পানিগুলো গেমস খেলার জন্য ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি হেডসেট প্রোমোট করে আসছে। তবে এই টেকনোলজি পূর্বের তুলনায় আরও বেশি শক্তিশালী এবং তারহীন। মেটাভার্স হলো এমন একটি ভার্চুয়াল পরিবেশ যেখানে সব অ্যাক্টিভিটিজ একদম বাস্তব জীবনের মতো মনে হয়।
বিশেষজ্ঞরা ভবিষ্যতবাণী করেছে যে ২০৩০ নাগাদ বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মেটাভার্স ৫ ট্রিলিয়ন ডলার যোগ করবে এবং ২০২৩ সাল অর্থাৎ এই বছরেই মেটাভার্স ঠিক পথে এগোচ্ছে কিনা তা নির্ধারণ হবে। মেটাভার্সের মাধ্যমে যেকোনো মিটিং এনভায়রনমেন্ট তৈরি করে সহকর্মীদের সাথে আলাপ আলোচনা করা যাবে, ব্রেইনস্টর্মিং করা যাবে।
এছাড়াও কোলাবরেশনের মাধ্যমে কাজ করা যাবে। এমনকি মাইক্রোসফট এবং এনভিডিয়ার মতো জায়ান্ট কোম্পানি ডিজিটাল প্রজেক্টে কোলাবরেশনের জন্য মেটাভার্স প্ল্যাটফর্ম ডেভেলপ করছে।
মেটাভার্সে বিচরণ করতে প্রয়োজন হয় অ্যাভাটারের। অ্যাভাটার হলো আমাদেরই একটি প্রতিচ্ছবি যা আমাদের মেটাভার্সে রিপ্রেজেন্ট করে, আমরা রিয়েল লাইফে যা কিছু করি তার সবকিছুই মেলে ধরবে আমাদের অ্যাভাটার। এই অ্যাভাটার টেকনোলজিও পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি আপডেটেড হবে ২০২৩ এ।
কর্মী নিয়োগ এবং এইচ আর বিভাগের অনেক অফিসিয়াল কাজও বর্তমানে মেটাভার্সে সম্পন্ন হয়, এর জন্য কোন ফিজিক্যাল অফিসের দরকার পড়ে না।
এআই টুলস
২০২২ সালের শেষের দিক থেকেই ওপেন এআইয়ের চ্যাটজিপিটি ইত্যাদি এআই কন্টেন্ট জেনারেটিং অ্যাপের নামডাক শোনা যাচ্ছে। চ্যাটজিপিটি এমন একটি চ্যাটবট আপনি একে যেকোনো প্রশ্ন করলে তার উত্তর বেশ বুদ্ধিমত্তার সাথে দিয়ে দিবে।
যেকোনো বিজনেস প্রোপোজাল, ইমেইল লিখতে এটি ব্যবহার করা যাবে অনায়াসেই। এরকম আরও অনেক এআই টুলস সামনে আসবে কিংবা আছে যা ২০২৩ সালে ডিজিটাল জগতে ঝড় তুলতে সক্ষম।
ব্লকচেইন
মেটাভার্সের মতোই ব্লকচেইন নিয়ে চারপাশে বেশ শোরগোল হচ্ছে। ব্লকচেইন নতুন নতুন ব্যবসায়িক আইডিয়া তৈরি করছে, এর ডিসেন্ট্রালাইজ সিস্টেমের কারণে। ডিসেন্ট্রালাইজেশন সিস্টেম কমিউনিকেশন, ট্রানজেকশন, অটোমোশনে একটি বিশাল পরিবর্তন এনেছে। সাইবার অ্যাটাক, ফ্রড অ্যাক্টিভিটিজ রোধ করছে। ডাটা ট্র্যাকিং সিস্টেম উন্নত করছে।
গার্টনারের ফরকাস্ট অনুযায়ী ২০২৫ সালের মধ্যে এই প্রযুক্তির দ্বারা যুক্ত বাণিজ্যিক মূল্য ১৭৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি হবে, যে কারণে এটি একচেটিয়াভাবে আর্থিক খাতের জন্য বা ক্রিপ্টোকারেন্সির সাথে সম্পর্কিত একটি প্রযুক্তি থেকে বহু সেক্টরে বাস্তবায়িত হতে শুরু করেছে।
ওয়েব থ্রি
ব্লকচেইনের অগ্রগতির জন্য ওয়েব থ্রি তেও আসবে অনেক পরিবর্তন। উদাহরণস্বরূপ, বর্তমানে আমরা সবকিছু ক্লাউডে স্টোর করি। ক্লাউড স্টোরেজ আমাদের তথ্যের নিরাপত্তা খুব বেশি দিতে পারেনা। কিন্তু আমরা যদি আমাদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো ক্লাউড সিস্টেমে স্টোর না করে যেকোনো ডিসেন্ট্রালাইজ ডাটা স্টোরেজে সেইভ করে রাখি এবং ব্লকচেইন দিয়ে এনক্রিপ্ট করে রাখি।
তাহলে আমাদের তথ্যগুলো আরও বেশি নিরাপদ থাকবে কিন্তু এসকল তথ্যের এক্সেস পেতে চাইলে কিংবা অ্যানালাইসিস করতে চাইলে আমাদের কিছু ভিন্ন ধরনের পন্থা অবলম্বন করতে হবে।
নন ফাঞ্জিবল টোকেন বা এনএফটি তেমনি একটি উপায়। ধারণা করা হচ্ছে, নতুন বছরে এনএফটির ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে বহুগুণে। এনএফটি টোকেন দিয়ে আপনি একটি কন্সার্টের ব্যাকস্টেজে উঠার অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারবেন।
এছাড়াও আমরা অনেক ধরনের ডিজিটাল পণ্য কিংবা সার্ভিস ক্যাশ কিংবা ডিজিটাল পেমেন্টের মাধ্যমে কিনে থাকি যা ভবিষ্যতে এনএফটি ব্যবহার করে কিনতে পারবো। প্রতিটি এনএফটির একটি ইউনিক ডাটা থাকে যা শুধুমাত্র এর মালিক পক্ষেই জানে। ফলে গোপনীয়তার সাথে এবং নিশ্চিন্তে যেকোনো ডিজিটাল পণ্য কেনা যাবে।
ডিজিটাল টুইন্স
ডিজিটাল টুইন হলো একটি ভার্চুয়াল মডেল যা বাস্তব জগতের কোন বস্তুকে সঠিকভাবে প্রতিফলিত করার জন্য ডিজাইন করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, একটি বায়ু টারবাইনে বিভিন্ন সেন্সর থাকে। এই সেন্সরগুলি টারবাইনের কার্যক্ষমতার বিভিন্ন দিক, যেমন শক্তির আউটপুট, তাপমাত্রা, আবহাওয়া এবং আরও অনেক কিছু সম্পর্কে ডেটা তৈরি করে। এই ডেটা তারপর একটি প্রসেসিং সিস্টেমে রিলে করা হয় এবং ডিজিটালাইজ করা হয়।
ডিজিটাল টুইন্স বেশ কয়েক বছর ধরেই অবস্থান করছে এই মুহূর্তের অন্যতম প্রধান প্রযুক্তি হিসেবে, বিশেষ করে ইন্ডাস্ট্রিয়াল সেক্টরের কথা যদি বলি। কেবলমাত্র বস্তু, স্থান, ফিজিক্যাল সিস্টেমের প্রসেসেগুলো ডিজিটালি রিপ্লেস করেছে তা নয় বরং এর সাহায্যে আরও সঠিকভাবে পণ্যের তথ্য পাওয়া যায়, খরচ কমানো যায় বা সম্ভাব্য ত্রুটির পূর্বাভাস দেওয়া যায়।
ইলেকট্রিক কার
বরাবরের মতোই টেসলা এই বছর বৈদ্যুতিক গাড়ির বিক্রয়ের উপর আধিপত্য বজায় রেখেছে, তবে ২০২৩ সাল ইলেকট্রিক কার ইন্ডাস্ট্রির জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে। কিন্তু টেসলার শেয়ারে রাতারাতিভাবে ধস নেমেছে এর পেছনে যে কারণটি দায়ী করা হয় তা হচ্ছে মাস্কের টুইটার কিনে নেওয়ার সিদ্ধান্তকে। একই সময়ে টেসলার কম্পেটিটর ফোর্ড মোটর, কিয়া, জেনারেল মোটরস, অডি এবং রিভিয়ানের মতো নির্মাতারা তাদের বৈদ্যুতিক গাড়ির উৎপাদন বাড়াচ্ছে।
এছাড়াও, টেসলা নভেম্বরে বলেছিল যে অন্যান্য বৈদ্যুতিক গাড়ির জন্য তার চার্জিং কানেক্টর তৈরি করবে ফলে অন্যান্য গাড়ির চালকরা টেসলার চার্জিং স্টেশনগুলিতে তাদের ব্যাটারিগুলি পুনরায় চার্জ দিতে পারবে, যা অন্যান্য চার্জারের তুলনায় অনেক বেশি কার্যকর হবে।
টেসলার জন্য আশার বাণী এই যে, ক্যালিফোর্নিয়া এবং নিউইয়র্কে ২০৩৫ সালের মধ্যে গ্যাস-চালিত গাড়ির বিক্রয় নিষিদ্ধ করার চিন্তাভাবনা করছে। তাই শুধু টেসলা নয় বরং ২০২৩ সালে বৈদ্যুতিক গাড়ি শিল্পের জন্য এটি বেশ ভালো একটি টার্নিং পয়েন্টও বটে।
Feature Photo: Canva References: 01. The Top 10 Tech Trends In 2023 Everyone Must Be Ready For. 02. Top 10 Technology Trends that will shape 2023. 03. The Tech That Will Invade Our Lives in 2023. 04. Top 18 New Technology Trends for 2023.