প্রাকৃতিক উপায়ে উদ্বিগ্নতা দূর করবেন যে ভাবে

461
0
Naturally Reduce Anxiety
Naturally Reduce Anxiety

মানসিক উদ্বিগ্নতা আমাদের মানসিক আর শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো না এটা আমরা কিন্তু জানি। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বেশ ভালোমতো এর প্রভাব রয়েছে। কাজে অনাগ্রহ, ইনসোমেনিয়া, মানসিক অস্থিরতা বেড়ে যায়। স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যহত হয়। 

যদিও এই উদ্বিগ্নতা কমাতে চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হতে হয়। তবে আমরা প্রাকৃতিকভাবেও এই মানসিক অস্বস্তি আর অস্থিরতা এবং উদ্বিগ্নতা কমাতে পারে। উদ্বিগ্নতা নিয়ে অল্প কথায় আমরা জানব, এর পেছনের কারণ কী আর কীভাবে তা সমাধান করতে পারি। 

উদ্বিগ্নতা কী? 

চিকিৎসার সঙ্গে অসুস্থতা কী, লক্ষণ কী সেটা প্রথমে বোঝা দরকার। যখন আমাদের মানসিক অবস্থা ভালো থাকে না, একটা অতিরিক্ত চাপের সৃষ্টি হয়, সেটায় এংজাইটি বা উদ্বিগ্নতা। জেনেটিক কারন, পরিস্থিতি, কাজের চাপ বা পড়াশোনার চাপ, শারীরিক অসুস্থতা সব কিছু কাজ করে এই মানসিক চাপ বা অসুস্থতার সৃষ্টি হয়। 

যত দ্রুত সম্ভব এর সমাধান না করলে, পরবর্তীতে নানা ধরনের জটিলতার তৈরি হতে পারে। ইনসোমেনিয়া, ক্ষুধামন্দা, প্রচন্ড অস্থিরতা, হার্টবিট দ্রুত হওয়া, ঘন ঘন শ্বাস পড়া, প্যানিক অ্যাটাক, মাথার ভেতরে একদম ফাঁকা লাগা কিংবা ভারি লাগা ইত্যাদি হলো এই মানসিক চাপের লক্ষণ। 

কেন বাড়ে উদ্বেগ? 

মানসিক উদ্বেগ বাড়ার অনেকগুলো কারণগুলোর মধ্যে আছে শৈশব-কৈশোরের কোন ঘটনা, পারিবারিক চাপ, পড়াশোনা বা কাজের চাপ, অপারেশন বা কোন দুর্ঘটনা পরবর্তী ট্রমা, বর্তমান খারাপ পরিস্থিতি,  শারীরিক অসুস্থতা, র‍্যাগ বা বুলিং এর শিকার হওয়া; কর্মক্ষেত্রে বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বা পরিবারে, শারীরিক বা মানসিক অত্যাচার, আর্থিক সংকটসহ নানা ধরনের ব্যক্তিগত সমস্যা, দীর্ঘ সময় ধরে একই ধরনের কাজ করে যাওয়া, অতিরিক্ত চিন্তা করা কোন বিষয় নিয়ে। এটা ছাড়াও আরো অনেক কার্যকর কারণ রয়েছে এই উদ্বিগ্নতা তৈরি হবার পেছনে। এক বা একাধিক কারনে মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে এই রোগ।

Naturally Reduce Anxiety
Image Source: pinterest.com

প্রাকৃতিক উপায়ে উদ্বিগ্নতা দূর করবেন যে ভাবে

১. প্রথমেই শ্বাস প্রশ্বাস এর ব্যায়াম করার অভ্যাস করুন। এংজাইটির ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক শ্বাস প্রশ্বাস অনেক বড় আর প্রধান একটা সমস্যা।বেশ জোরে শ্বাস নিলে ধীরে ধীরে অস্বাভাবিক শ্বাস এর সমস্যা, অস্থিরতা, ফাস্ট হার্টবিট এইগুলো বেশ কমে যায়। বেশ কিছুদিন টানা অভ্যাস করলে স্বাভাবিক শ্বাস প্রশ্বাস ফিরে আসে। 

শ্বাস প্রশ্বাসের কথ বললে ইয়োগা বা ব্যায়ামের কথাও একই সাথে চলে আসে। কোন একটা শান্ত এবং পরিচ্ছন স্থানে কিছুক্ষণ বসুন। যেখানে অতিরিক্ত শব্দ বা আলোর প্রবেশ নেই। কিছু সময় বসে জোরে শ্বাস নিন। দেখবেন ধীরে ধীরে মানসিক চাপ কমে যাবে। 

২. আমাদের জীবনে অক্সিজেনের পাশাপাশি যেটা সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ হল পরিমিত আর সুষম খাদ্য।  উচ্চ রক্তচাপ কিংবা নিম্ন রক্তচাপ, পানি স্বল্পতা , ব্লাড সুগার বেড়ে যাওয়া কিংবা কমে যাওয়া , প্রিজারভেটিভ এবং কেমিক্যালযুক্ত খাবার খাওয়া ইত্যাদি কারনে মানসিক চাপ এবং অশান্তির তৈরি হয়। তাই প্রচুর পরিমানে শাক সবজী খাওয়া উচিত, প্রচুর পানি পান করা কিংবা ফল খাওয়া দরকার।

পরিমিত পরিমানে পুষ্টিকর খাদ্য শরীর বং মন দুটোই ভালো রাখতে সাহায্য করে।এছাড়াও এলকোহলসহ সব ধরনের ক্ষতিকর পানীয় গ্রহণ বন্ধ করতে হবে, নিকোটিন-মাদক এবং ধুমপান পরিহার করতে হবে। এইগুলো শারীরিক এবং মানসিক ক্ষতি সাধন করে। 

অনেক ক্ষেত্রে অতিরিক্ত চা বা কফি, সফট ড্রিংক্স এর ব্যবহার কমালে শারীরিক অনেক সমস্যার সমাধান যেন হয়। এর সাথে মানসিক প্রশান্তি আসবে এবং উদ্বেগ কমে যাবে ধীরে ধীরে। 

৩. পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে মানুষ অসুস্থ হয়ে যায় এবং অনেক ক্ষেত্রে বিষয়টা সুইসাইডাল থট পর্যন্ত চলে আসে। মানসিক উদ্বিগ্নতা, ডিপ্রেশন এবং বাইপোলার ডিজঅর্ডারের মত অসুস্থতা আসে এই ইনসমনিয়া থেকেই। তাই সুস্থ শরীর এবং সুস্থ মনের জন্য দরকার প্রতিদিন ৬ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমের। 

পর্যাপ্ত ঘুমের জন্য ঘুমানোর আগে ক্যাফেইন জাতীয় খাবার খাওয়া বাদ দিতে হবে। ঘুমের সময় যেন রুমে অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরম কিংবা অতিরিক্ত আলো না আসে।  এবং অবশ্যই ঘরটিতে শব্দ দূষন না থাকে, এই বিষয়গুলো ঘুমের ব্যঘাত ঘটায়।

অন্যদিকে চেষ্টা করুন ঘুমকে একটা ছকে ফেলতে। প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাবেন এবং চেষ্টা করবেন সকাল সকাল ওঠার জন্য। অবশ্যই মাথায় রাখবেন, রুম স্বাস্থ্যসম্মত হতে হবে। যদি আপনার পর্যাপ্ত ঘুম হয়, তাহলে মানসিক শান্তি পাবেন, দুশ্চিন্তা বা চাপের কারনে দৈনন্দিন কাজে কোন প্রভাব পড়বে না। উদ্বিগ্নতা ক্রমশ কমে যাবে।  

Image Source: spiritualfitclub.com

৪. পরিশ্রম করুন। নিজের শরীর কে কার্যকর রাখতে কাজ করা বা পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই। প্রতিদিন কাজ বা ব্যায়াম করলে যে শুধু শরীর ভালো থাকে তা কিন্তু না, মানসিক পরিস্থিতির ও বেশ উন্নতি ঘটে। 

এর অনেকগুলো কারনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণ হল, যখন কাজে ব্যস্ত থাকবেন, তখন আপনার মন অন্যদিকে ব্যস্ত থাকবে। যে কারনে আম্পনার মানসিক অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছে বা হচ্ছে, সেটা নিয়ে ভাবার সময় খুব বেশি পাবেন না। 

নানা গবেষনার মাধ্যমে এটাও জানা যায় যে, নিয়মিত শরীর চর্চা বা কাজ করলে, শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়, মানসিক চাপ-উদ্বেগ কমে যায় এবং নিজের ইচ্ছাশক্তি বা প্রতিকূলতাকে জয় করার মানসিকতা বেড়ে যায়। 

৫. ফুলের গন্ধে আমাদের মন আন্দোলিত হয়। এটাকেই কাজে লাগিয়ে অনাদিকাল থেকে হিলিং ট্রিটমেন্ট চলে আসছে। প্রাকৃতিক নির্যাস এবং সুগন্ধী তেল, শরীর এবং মন দুটোই চনমনে রাখতে সাহায্য করে। কেবল মন-শরীর নয়, আত্মিক শান্তির জন্য-প্রাকৃতিক উপাদান যে কোন ওষুধের চাইতে বেশি কার্যকর। আমাদের অশান্ত শরীরকে শান্ত করে, সুগন্ধী নির্যাস ঘুম আসতে সাহায্য করে আর মন ভালো করে দেয় সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। 

আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে ছোট বড় অনেক কারণ থাকে, যার কারনে বিষন্নতা-উদ্বিগ্নতা একেবারে ছেঁকে ধরে। প্রতিটা মানুষেরই কোন কোন কারণ রয়েছে মানসিক চাপের। কেউ মোকাবেলা করে, কেউ বোঝে না, কেউ বা অবহেলা করে। অবহেলা ক্রলে বা গুরুত্ব না  দিলে সেটা অনেক নড় ক্ষতি বয়ে আনে। যদি আপনি বুঝতে পারেন, কোন মানসিক চাপ ধীরে ধীরে তৈরি হচ্ছে। 

যা থেকে আপনি বের হতে পারছেন না, তখন প্রথমে প্রাকৃতিক এই পদ্ধতিগুলো মেনে চলার চেষ্টা করুন। নিজেকে সময় দিন। একটা সময় গেলে দেখবেন আস্তে আস্তে মানসিক চাপ কমে একটা প্রশান্তি জায়গা করে নিচ্ছে। যদি সেটা না কমে, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। 

এটার পাশাপাশি যেটা মাথায় রাখা দরকার, তা হল, যা আপনার উদ্বেগের কারণ সেটা খুঁজে বের করে সেটার সমাধান করার চেষ্টা করতে হবে। নিজের প্রবল ইচ্ছাশক্তি এক্ষেত্রে অনেক বড় একটা ভূমিকা রাখবে । 

 

Feature Image: Pixabay.com 
References: 

01. Natural ways to reduce anxiety. 
02. Natural remedies for anxiety.