প্রায় শত বছর আগেকার কথা। অষ্টাদশ শতকের শুরুতে অর্থাৎ ১৭০৪ সালে ‘শ্রীকৃষ্ণ’ ভাওয়াল জমিদারী অধিকার করে নেয়। পূর্বে এই জমিদারীর মালিক ছিল ভাওয়াল গাজীগণ। গাজীদের দেওয়ান ছিলেন কৃষ্ণের বাবা। তার পৈত্রিক নিবাস বিক্রমপুরের বজ্রযোগীনি গ্রামে।
সেই সময় মুঘল শাসিত পূর্ব বাংলার দেওয়ান ছিলেন মুর্শিদকুলী খান। খাজনা আদায়ের সুবিধার্থে তিনি গ্রহণ করেন একটি বিশেষ নীতি। তারই অংশ হিসেবে স্থানীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান জমিদারদের উচ্ছেদ করে তার স্থলে নিযুক্ত করা হয় হিন্দু জমিদার।
এভাবে কেটে যায় প্রায় পৌনে দুইশত বছর। ১৮৭৮ সালের দিকে তৎকালীন জমিদার কালীনারায়ণ ব্রিটিশ রাজের নিকট থেকে বংশানুক্রমিকভাবে রাজা উপাধি লাভ করেন। এর মধ্যে পরিবারটি আশপাশের ছোট বড় অনেক জমিদারী কিনে নেয়। সেই বিস্তৃতি ঘটে ঢাকা, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ ও বাকেরগঞ্জ পর্যন্ত; পরবর্তীতে ব্রিটিশ নীলকর জেমস্ ওয়াইজের জমিদারী কিনে নিয়ে সমগ্র ভাওয়াল পরগনার অধিকারী বনে যায় এই পরিবারটি।
গাজীপুরের জয়দেবপুর সদরে রানী বিলাসমনি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে ছিল তাদের রাজপ্রাসাদ। বর্তমানে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত এটি। সেই রাজপ্রসাদে ঘটে এক অদ্ভুত ঘটনা! আজ থকে শত বছর আগে সেই রাজপ্রসাদে সন্ন্যাসির বেশে ফিরে আসে মৃত রাজা।
ঘটনার সূত্রপাত রাজা রমেন্দ্রনারায়ণকে নিয়ে! একটু ইতিহাসের দিকে তাকালে, সতেরো শতকের শেষ দিকে ভাওয়াল রাজ্যে জমিদারি প্রথা শুরু হয়। তখন রাজা ছিলেন কালীনারায়ণ। তার পরে জমিদারির দায়িত্ব পান তার একমাত্র পুত্র রাজেন্দ্রনারায়ণ।
তিনি খুব বেশিদিন জমিদারি ভোগ করতে পারেননি। তার মৃত্যুর পর তার তিন পুত্রকে জমিদারির বিভিন্ন অংশের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এই তিন ভাইয়ের মধ্যে দ্বিতীয়পুত্র রমেন্দ্রনারায়ণকেই মূলত ভাওয়াল রাজা বলা হয়।
কিন্তু ঘোর অমানিশা নেমে আসে রাজবাড়ির দিকে ১৯০১ সালের দিকে। পরিবারে নেমে আসে এক ঘোর সংকট। রাজা রাজেন্দ্রনারায়ণ রায় চৌধুরীর মৃত্যুতে জমিদারী নেমে আসে অতলে! তার তিন পুত্র রণেন্দ্রনারায়ণ, রমেন্দ্রনারায়ণ এবং রবীন্দ্রনারায়ণ।
নাবালক হওয়ার দরুণ তখনই তারা কেউ পরবর্তী রাজা হিসেবে আবির্ভূত হতে পারলেন না। বিধি মোতাবেক জমিদারী নির্বাহ ও তত্বাবধায়নের দায়িত্ব চলে যায় ‘কোর্ট অব অর্ডার’ এর অধীনে। ব্রিটিশ আমলে কোর্ট অব অর্ডার মানেই জমিদারীর মালিক নাবালক অথবা জমিদারী চালাতে অক্ষম হলে এস্টেট এই দফতরের আওতায় যাওয়া।
১৯০৯ সালে মেজ রাজপুত্র রমেন্দ্রনারায়ণ জটিল রোগে অসুস্থ হয়ে পড়েন। কথিত আছে, রাজা হিসেবে তিনি ছিলেন বেশ প্রজাবৎসল। কিন্তু তিনি পছন্দভাবে আসক্ত ছিলেন নারীসঙ্গ আর ফূর্তি করাতে।
ধরতে গেলে স্ত্রী বিভাবতী দেবী ছিলেন চরম একা। অতিরিক্ত মদ্যপান ও নারী সংসর্গের কারণে রাজা ‘সিফিলিস’ রোগে আক্রান্ত হোন। তখন রাজার চিকিৎসা করছিলেন পারিবারিক চিকিৎসক আশুতোষ দাসগুপ্ত।
১৯০৯ সালের ১৮ এপ্রিল উন্নত চিকিৎসা ও বায়ু পরিবর্তনের জন্য ২৪ বছর বয়সে তাকে দার্জিলিং নিয়ে যাওয়া হয়। এখানে একটি ঘটনা না উল্লেখ করলেই নয়, দার্জিলিং পৌঁছার ঠিক পনের দিন আগে রমেন্দ্রনারায়ণ পরগনার শালনা জঙ্গল থেকে একটি রয়েলবেঙ্গল টাইগার শিকার করেন।
ধরাশায়ী হওয়া বাঘটির পাশে দাঁড়িয়ে তিনি একটি ছবি তোলেন। ছবিটি পরবর্তীতে ‘টাইগার ফটো’ বলে পরিচিতি পায় এবং বিংশ শতকের অন্যতম ছবি হিসেবে বর্তমানে বাংলাদেশ আর্কাইভে স্থান পেয়েছে এই ছবিটি।
যাইহোক, দার্জিলিং রাজার সঙ্গী হোন চিকিৎসক, রাজার শ্যালক সত্যেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী এবং কিছু কাছের লোক। কিন্তু দার্জিলিংয়ে গিয়ে রাজার অবস্থা হিতে বিপরীত হলো। তার অসুখ ক্রমেই বেড়ে যেতে লাগল। অনেক চেষ্টা করেও আর বাঁচিয়ে তোলা গেল না রমেন্দ্রনারায়ণকে।
চিকিৎসকের মারফতে প্রচার হয় গলব্লাডারে পাথর হওয়ার কারণেই রাজার মৃত্যু। দার্জিলিংয়েই রাজার শবদেহ পোড়ানো হয় এবং মে মাসের ১৮ তারিখ শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান পালিত হয়। রাজপুত্র রমেন্দ্রনারায়ণের জীবনের প্রথম পর্বের এখানেই সমাপ্তি বলা যায়।
এদিকে, রমেন্দ্রনারায়ণের মৃত্যুর পরে তার স্ত্রী বিভাবতীর ভাই সত্যেন্দ্রনাথ নড়েচড়ে উঠেন বোনের অধিকার নিয়ে। কথিত আছে, একটা নির্দিষ্ট পরিমান মাসোহারা দিয়ে বিভাবতীকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার প্রস্তাব উঠেছিল। স্বাভাবিকভাবেই সত্যেন্দ্রনাথ তা মেনে নিতে পারলেন না।
আবার এই কথাও শোনা যায়, এস্টেটের ব্যাপারে সত্যেন্দ্রনাথ অতিরিক্ত নাক গলানোর চেষ্টা করছিলেন। মূলত তাকে ঠেকাতেই রাজ পরিবারে এমন প্রস্তাব উঠেছিল। তিনি তার বোনকে রাজবাড়ি ছেড়ে চলে আসার জন্য বোঝান।
বিভাবতী প্রথমে রাজী না হলেও কিছুদিন পরে রাজবাড়ি ছেড়ে ভাইয়ের সঙ্গে চলে যান। একই সঙ্গে এস্টেটের কাছে তার স্বামীর জন্য করা বীমার ত্রিশ হাজার টাকা দাবি করলেন। ভাওয়াল রাজবাড়িতে নেমে আসে বিভীষিকার কালো মেঘ!
রমেন্দ্রনারায়ণের মৃত্যুর প্রায় বছরের মাথায় ১৯১০ সালের সেপ্টেম্বরে মারা গেলেন তার বড় ভাই রণেন্দ্রনারায়ন। পরের বছর এপ্রিলে রমেন্দ্রনারায়ণের স্ত্রী বিভাবতী এস্টেট ম্যানেজার মি. নিডহ্যামের মাধ্যমে জানতে পান তার অংশের সম্পত্তি কোর্ট অব অর্ডার অধিগ্রহণ করেছে।
একই বছর মে মাসে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর ছোট রাজপুত্র রবীন্দ্রনারায়ণকে জমিদারী চালানোয় অনুপযুক্ত ঘোষণা করে এবং তার অংশও কোর্ট অব অর্ডারের অধীনে চলে যায়। সবশেষে ১৯১২ সালে রণেন্দ্রনারায়ণের স্ত্রী সূর্যবালার অংশ কোর্ট অব অর্ডারের অধীনে চলে যাওয়ার মধ্য দিয়ে সম্পূর্ণ ভাওয়াল জমিদারীটিই এই দফতরের অধীনে চলে যায়।
১৯১৩ সালের সেপ্টেম্বরে মৃত্যু হয় ছোট রাজপুত্র রবীন্দ্রনারায়ণের। অতঃপর পূর্ববাংলার বৃহত্তম জমিদারী ভাওয়াল রাজপরিবারে বাকি থাকল কেবল নিঃসন্তান তিন বিধবা রাণী। এরই মধ্যে মেজকুমারের মৃত্যুর পরে কেটে গেছে এক দশক!
১৯২১ সালের জানুয়ারি মাস নাগাদ ঢাকার বাকল্যান্ড বাঁধে এক সন্ন্যাসীর আবির্ভাব ঘটে। জটা ধরা ছাই মাখা হলেও তাকে দেখে অনুমান করা যেতো যে, নিশ্চয় কোন উচ্চ বর্ণের সন্তান। রাজ্যের অনেকেই অপরিচিত সন্ন্যাসীকে দেখতে এবং তার কথা শুনতে যান। সন্ন্যাসীর কথা বলার ধরন এবং মুখাবয়ব দেখে অনেকেরই একটি ব্যাপারে সন্দেহ হতে থাকে। ঘটনাক্রমে গুজবের মুখ এবার ভাওয়াল রাজবাড়ির দিকে মোড় নিতে থাকল।
একদিন রাজা রমেন্দ্রনারায়ণের এক বিশ্বস্ত দেহরক্ষী সন্ন্যাসীকে চিনে ফেলে। সে তখন ‘রাজা এসেছে রাজা এসেছে’ বলে চিৎকার করতে থাকে। ফলে অল্প সময়ের মধ্যেই রাজ্যের চারিদিকে শোরগোল ওঠে।
সন্ন্যাসীকে দেখার জন্যে তখন বিশাল ভিড় জমে যায়। অনেক জল গড়িয়ে শেষ পর্যন্ত সন্ন্যাসী নিজ মুখে স্বীকার করেন যে, তিনিই রাজা রমেন্দ্রনারায়ণ!
এদিকে, সন্ন্যাসীকে সকলেই মেজকুমার বলে বিশ্বাস করলেও মেজরাণী বিভাবতী ও তার ভাই সত্যেন্দ্রনাথ কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারলেন না। ওদিকে এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের পক্ষেও তা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।
ক’দিন বাদেই গঠন হয় ‘ভাওয়াল তালুকদার ও প্রজা সমিতি’। সংগঠনটির মূল উদ্দেশ্য হলো কুমারের ন্যায্য অধিকার আদায় করার জন্য চাঁদা তোলা।
মেজকুমার দুজন উকিল ও স্থানীয় এক জমিদারকে নিয়ে হাজির হোন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট লিন্ডসের নিকট। প্রজা সাধারণের স্বার্থে তিনি নিজ অধিকার ফিরে পেতে চান বলে তাকে অবহিত করেন। লিন্ডসে জানালেন বোর্ড তা মেনে নিতে পারে না, কারণ মেজকুমার মৃত জেনেই বোর্ড বহু বছর ধরে এস্টেটের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সুতরাং, চাইলে তিনি নিজের পরিচয় আদালতের সামনে প্রমাণ করতে পারেন।
যাইহোক, সরকার বাহাদুর ভাবনায় পড়ে গেল কিভাবে এই সন্ন্যাসীকে প্রতারক প্রমাণ করা যায়! এদিকে, প্রভাবতী এসে প্রজাদের বোঝানোর চেষ্ট করলেন যে, ইনি মেজকুমার নন। অথচ তিনি একবারের জন্যও সন্ন্যাসীকে দেখলেন না। এই পরিস্থিতিতে সন্ন্যাসী ১৯৩০ সালের ২৪শে এপ্রিল কোর্টে আত্মপরিচয় ও নিজ অধিকার আদায়ের জন্য মামলা দায়ের করেন।
প্রতিপক্ষের অন্যতম ব্যক্তি সত্যেন্দ্রনাথ বাবু দার্জিলিং সিভিল সার্জনের কাছ থেকে সংগ্রহ করা মেজকুমারের মৃত্যুর সনদ আদালতে দাখিল করেন। এছাড়াও দার্জিলিং আবহাওয়া অফিস থেকে সংগ্রহ করা সেই দিনের আবহাওয়ার প্রতিবেদন দাখিল করেন। তিনি প্রমাণ করার চেষ্টা করেন মৃত্যুর দিনে আবহাওয়া ভালো ছিল।
মামলার শুনানির দিনগুলোতে আদালত প্রাঙ্গন ভরে উঠে হাজার হাজার মানুষে। মামলার এক পর্যায়ে কোর্টের সামনে সন্ন্যাসী ওরফে মেজকুমার বলতে শুরু করে সেই রাতের কথা! দার্জিলিং যাওয়ার পর চিকিৎসায় তার শরীর ভালোই ছিল। তারপর একরাতে হঠাৎ পেট ফাঁপা থেকে অসুস্থ্য হয়ে যায় মেজকুমার।
রাতেই আশুতোষ ডাক্তারের সঙ্গে কথা হয়। পরের দিন এক ইংরেজ ডাক্তার আসেন এবং ওষুধ খেতে দেন। তিন দিন পর একই ওষুধ খান কিন্তু কোন লাভ হয় না। এবার ডা.আশুতোষ তাকে গ্লাসে করে ওষুধ খেতে দেয়। খেয়েই বুক জ্বালা শুরু হয়ে যায়। বমি এবং শরীর ভীষণ অস্থির হয়ে যায় মেজকুমারের। পরের দিন রক্ত পায়খানা শুরু হলে কোন এক সময় জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।
জ্ঞান ফিরে দেখতে পান তিনি একটি চালার নিচে শোওয়া এবং চারজন সন্ন্যাসী তাকে ঘিরে রয়েছে। তারা জানায় সে চার দিন যাবত অচেতন রয়েছে। এরপর থেকেই তার সন্ন্যাস জীবন শুরু। গেলেন কাশ্মিরের অমরনাথ, সেখানেই দেখা হয় গুরু ধর্মদাসের সাথে। ওইসময় মেজকুমার তার স্মৃতি পূর্ণভাবে হারিয়ে ফেলেন। একসময় গিয়ে আস্তে আস্তে নিজের রাজ্য, পরিবারের কথা মেজকুমারের স্মৃতিপটে আসতে শুরু করে।
কথিত আছে, মৃত্যুর পরের দিন সৎকারের জন্য তার মৃতদেহ দার্জিলিং শ্মশানে নেওয়ার পর শুরু হয় প্রচন্ড ঝড়বৃষ্টি। ঝড়ের মাত্রা এতটাই প্রবল ছিল যে, অন্যরা লাশ ফেলে চলে আসতে বাধ্য হয়েছিল। যদিও দেশে ফিরে তারা প্রচার করেছিল সৎকার ভালোভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ঘটনাবহুল এই মামলার সাক্ষী হিসেবে নাগা সন্ন্যাসীদেরকে পর্যন্ত আনা হয়।
বড়রাণী সূর্যবালা কলকাতায় অবস্থান করার কারণে তার সাক্ষ্য সেখানেই নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। আর এক অন্যতম সাক্ষী পর্দানশীল জ্যোতির্ময়ীর খাতিরে তিন সপ্তাহ আদালত তার বাড়িতেই বসে। এমনকি বিশেষ সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য বিলেতে (লন্ডন) পর্যন্ত কমিশন বসে।
অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে অবশেষে আসে সেই মহেন্দ্রক্ষণ! ১৯৩৬ সালের ২৪ আগস্ট। পান্নালালের আদালতের সামনে লোক যেন ভেঙ্গে পড়ছে। আগের রাত থেকেই বহু লোক দাঁড়িয়ে আছে। কলকাতার পত্রিকাগুলিও চলে এসেছে। ঘোষিত হলো বিচারক পান্নালাল বসুর ঐতিহাসিক রায়। ৫২৫ পাতা রায়ের মূল বক্তব্য-বাদী রাজেন্দ্রনারায়ণ রায়ের দ্বিতীয় পুত্র রমেন্দ্রনারায়ণ রায়-ই ভাওয়াল রাজা!
রায়ে অসন্তুষ্ট হয়ে বিবাদী পক্ষ কলকাতায় উচ্চ আদালতে আপিল করলেন। তিন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ বেঞ্চে শুনানি চলে ১৬৪ দিন ধরে। শুনানি চলার সময়গুলিতে বিভাবতী ও তার ভাইয়ের পরিবারের বিরুদ্ধে স্থানীয় পত্রপত্রিকাগুলো প্রবল আক্রমণ করে। ১৯৪১ সালের মে মাসে উচ্চ আদালত নিম্ন আদালতের রায়ই বহাল রাখেন। ফলে আইনত জমিদারির পূর্ণ অংশের অধিকার পান সন্ন্যাসী রাজা।
রায় ঘোষণার পরের দিন ৩১ জুলাই সংবাদ পৌঁছে কোলকাতায়। কুমার রমেন্দ্রনারায়ণ শেষ পর্যন্ত নিজ পরিচয় প্রমাণ করতে সক্ষম হলেন। সংবাদটি শহরের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ল। অভিনন্দন জানাতে তার ধর্মতলা স্ট্রিটের বাড়িতে তখন শত শত লোকের ভিড়। কুমার যাচ্ছিলেন কর্ণাওয়ালিস স্ট্রিটের ঠনঠনিয়া কালীমন্দিরে পূজা দিতে।
রাস্তায় বেরোতেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার শরীর বেশ কিছু দিন ধরেই ভালো ছিল না। পরের দিন হিন্দুস্থান স্ট্যান্ডার্ডে ছোট্ট করে ভেসে আসে মৃত্যু সংবাদ। আত্মপরিচয়ের স্বীকৃতি প্রাপ্তির মাত্র একদিন পরেই ১ আগস্ট, ১৯৪৬ রাজপুত্র রমেন্দ্রনারায়ণ রায়চৌধুরী সব মায়া ত্যাগ করে চলে গেলেন চিরতরে।
ভাওয়াল রাজার এই গল্প প্রচলিত বাস্তব হলেও সাহিত্য আর চলচ্চিত্রে এই নিয়ে এসেছে অনেক কাল্পনিক ঘটনা। এখনও স্থানীয়দের লোকমুখে রাণী বিভাবতী ও চিকিৎসক আশুতোষ দাসগুপ্তকে নিয়ে রসাত্মক অনেক গল্প প্রচলিত শোনা যায়। বিখ্যাত অভিনেতা উত্তম কুমারের একটি চলচ্চিত্র সন্ন্যাসী রাজা এই ভাওয়াল রাজাকে নিয়েই নির্মিত হয়েছিল।
১৯৫১ সালে জমিদারি প্রথা বাতিল না হওয়া পর্যন্ত ভাওয়ালের জমিদারির উত্তরাধিকারের বিষয়টি কোর্ট অব ওয়ার্ডসের অধীনে ছিল। পাকিস্তান আমলেও জমিদারির বিষয়টি কোর্ট অব ওয়ার্ডসই দেখাশুনা করত।
বর্তমানে ভাওয়াল এস্টেটের কর্মকাণ্ড গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ভূমি সংস্কার বোর্ড পরিচালনা করে। যে কেউ গুগল করলেই ওয়েবসাইটে ভেসে আসে শত বছর আগের সন্ন্যাসী রাজার কাহিনি!
Feature Image: indiatimes.com References: 01. The Strange and Universal History of the Kumaar of Bhawal. 02. The Bhawal State Scandal.