I, Mulan, have no elder brother.
I’m willing to buy a horse and saddle,
I will take my father’s place in battle.
হুয়া মুলান (Mulan), চীনের লোকগাঁথার অন্যতম জনপ্রিয় নারী যোদ্ধা বা নারী চরিত্র। মুলানের গাঁথা (Mulan’s Ballad) এর মূল কাহিনী লিপিবদ্ধ হবার অনেক বছর পর ১৯৯৮ সালে ওয়াল্ট ডিজনি ফিল্ম মুলান প্রচারিত হলে এর জনপ্রিয়তা নতুন করে সবার সামনে আসে। পৌরাণিক এই গল্প নিয়ে কিছুদিন আগেও তৈরি হয়েছে সিনেমা। এছাড়া নানা কার্টুন, অ্যানিমেশন, কমিকস, গল্প, কবিতা, গাঁথা, পুঁথি, নাটক নানা সময়ে নানাভাবে সব বয়েসের মানুষের মনে গেঁথে গেছে।
মুলান হলো সেই মেয়ে, যে ছেলে সেজে যুদ্ধের ময়দানে ১০-১২ বছর ধরে যুদ্ধ করে গেছে, এবং সফলও হয়েছে। সফল হবার পরে কী হয়েছিল? আসলেই কী এত দীর্ঘসময় নিজেকে লুকিয়ে রেখেছিল? নাকি কেউ জানত? হুয়া মুলান (Mulan), এক সাহসী নারী যোদ্ধার গল্প। চীনের প্রচলিত এই লোকগাঁথার অস্তিত্ব ছিল, একেবারেই কাল্পনিক নয় এই গল্প; অন্তত ইতিহাস তো তাই বলে।
হুয়া মুলান (Hua Mulan)
সেই আদিকাল হতে, চীনের প্রচলিত প্রতীকের মধ্যে অন্যতম প্রাচীন হুয়া মুলান। যে শব্দের অর্থ হলো ম্যাগনোলিয়া ফুল। উল্লেখ্য, হুয়া অর্থ ফুল, মুলান হলো ম্যাগনোলিয়া। তবে তার পারিবারিক নাম কিংবা পরিবার সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। কারণ, সঠিকভাবে এই রহস্যময় মেয়েকে নিয়ে কোথাও লেখা হয়নি। অনেকের মতে তার নাম ছিল ফাও মুলান।
ইন দ্য হিস্টোরি অফ মিং অনুসারে তার পারিবারিক নাম Zhu বা ঝু। অন্যদিকে ইন দ্য হিস্টোরি অফ কিং অনুসারে তাকে উই বা Wei বলা হয়। তবে তার পারিবারিক ইতিহাস না জানা গেলেও সকল তথ্য মতে তার জন্ম এবং কর্ম ৪র্থ বা ৫ম শতাব্দীর দিকে ছিল।
কোথা থেকে এলো এই গল্প?
চীনের সুপ্রাচীন ফোক গান, নর্থ উই ডাইনাস্টি (North Wei Destiny) এর একটি গানে সর্বপ্রথম মুলানের কথা শোনা যায়। সময়টা ৩৮৬ খ্রিঃ থেকে ৫৫৭ খ্রিঃ এর মধ্যে পড়ে। মুলানের গাঁথা নামের এই ফোক গানের অস্তিত্ব এখন আর পাওয়া যায় না। ষষ্ট শতাব্দীর দিকে, মূল ফোক থেকে গান বা মুলানের তথ্য সংগ্রহ করে অনুবাদ করা হয়, পরে নানাভাবে এর কথা উদ্ধারের চেষ্টা করা হয়।
বর্তমানে গানে, কবিতায়, ছন্দে মুলানকে খুঁজে পাওয়া যায় অহরহ। ১১ কিংবা ১২ শতকে গুও মাওকিয়ান (Guo Maoqian) মুলানের ইতিহাস সংকলন করেন। তার মতে, চীনের মিউজিকাল রেকর্ডস থেকে সকল তথ্য নিয়েই তিনি মুলানের গল্প নতুন করে আমাদের শোনান।
মুলানের গল্প মঞ্চ নাটক, সিনেমা, পুঁথিতে নানাভাবে এসেছে। সর্বশেষ ১৭ শতকে ছু রেনহুও (Chu Renhuo) সুই-টাং মুলান নামে একটি উপন্যাসে বিস্তারিত আলোচনা করেন। সাহসী নারীর কথা উঠলেও খোদ চীনসহ সমস্ত বিশ্বে মুলানের নাম উঠে আসেই। আজো যোদ্ধারা কিংবা নানা ক্ষেত্রে নারীরা মুলানকে আদর্শ মেনে থাকে।
মুলানের গল্প
৯০ দশকের শেষ দিকে, ডিজনিল্যান্ড-এর মাধ্যমে আলোয় আশা মুলানের গল্প মোটামুটি এরকম ছিল, একদিন মুলান কাপড় ধোয়ার সময় প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য সেনাবাহিনীতে ঘরের ছেলেদের যোগ দেয়ার আহবান শুনতে পায়। এদিকে মুলানের বাবা বৃদ্ধ এবং অসুস্থ, তার সক্ষমতা নেই যুদ্ধে যাবার।
সরকার থেকে নির্দেশ ছিল, প্রতি পরিবার থেকে অবশ্যই একজন ছেলে যোগ দেবে, দিতেই হবে। যুদ্ধে মেয়েদের যাবার অনুমতি ছিল না আর মুলানের ছিল না কোন বড় বা ছোট ভাই। মা-বাবাকে লুকিয়ে মুলান ছদ্মবেশে সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়।
পারিবারিক ঐতিহ্য আর দেশের প্রতি ভালোবাসা, নিজের শক্তি সব মিলিয়ে মুলান ছদ্মবেশ ধারণ করে। এবং পারাবারিক হাতিয়ার হাতে যুদ্ধের ময়দানে নামে। তবে সে নিজের পরিচয় গোপন রেখে, ছেলে যোদ্ধার সাজে ময়দানে নামে। দীর্ঘ ১০ থেকে ১২ বছর সে এভাবেই যুদ্ধ করে এবং সর্বক্ষেত্রে সফলও হয়।
এক পর্যায়ে জেনেরাল পদে উন্নীত হয় সে। কেউ বলে সে পুরষ্কার নিতে অস্বীকার করে আর গ্রামে ফিরে আসে। অনেক গল্প মতে, রাজার দেয়া পুরস্কার হাতে করেই বাবা মায়ের কাছে সে ফিরে আসে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যেটা শোনা যায়, তার আসল রহস্য পাবার পর তাকে যুদ্ধবাহিনী থেকে বের করে দেয়া হয়। নানা প্রেক্ষিতে আবার সে নিজের রূপে ফিরে যায়। আসলে মুলানের শেষ নিয়ে নানান মতভেদ প্রচলিত আছে।
তবে ৩০০ বছর ধরে চলা এই দীর্ঘ যুদ্ধে, অনেক বড় একটা অবদান রেখেছিল মুলান। অনেকের মতে, জিন ইয়ং নামে যোদ্ধার সাথে যুদ্ধ চলাকালে মুলানের পরিচয় হয়। একে অপরের প্রতি অনুরক্তও হয়ে পড়ে মুলান। মুলানের আসল পরিচয় জানবার পর তাদের বিয়েও হয়।
যুদ্ধের একটা বেশ কঠিন পরিস্থিতিতে মুলান নিজের স্বরূপে ফিরে আসে বা ধরা পড়ে যায়। পুরুষের পোশাক আর ছদ্মবেশ ছেড়ে নারী রূপে যুদ্ধে নামেন। সেই যাত্রাও যুদ্ধের চাইতে কম ছিল না। মেয়েরা যুদ্ধ করতে পারে, জয়ী হতে পারে, তাদের প্রজ্ঞা, সাহস জ্ঞান আর মেধা যে সব আছে। ভূয়সী প্রশংসা কুড়ায় মুলান, সাথে অনুপ্রেরনা দেয় যুদ্ধের ময়দানে।
কিছু কিছু মতে, মুলান যুদ্ধ ময়দান থেকে ফিরে আত্মহত্যা করেছিল। তার বাবার অকাল মৃত্যু বা প্রিয় মানুষের মৃত্য আর ভয়াবহতা সহ্য করতে পারেনি সে। আর তাই আত্মহত্যা করে। তবে যাইহোক, আজো মুলান সকলের কাছে সাহসের প্রতীক হয়ে আছে।
বাস্তবের মুলান
মতভেদে নর্দান উই এবং ট্যাং ডেস্টিনিতে ৬২০ শতকে এক সাহসী নারী যোদ্ধার গল্প শোনা যায়। এরা ওয়াং শিচং এবং ডো জিয়ান্ড এর বিরুদ্ধে জয় লাভ করে। অন্যদিকে একই সময়ে আরো এক নারী যোদ্ধার গল্প শোনা যায়। দুটো গল্প পরবর্তীতে বিশ্লেষণ করে দেখা যায় একই গল্পের দুটো রূপ। যদিও মুখে মুখে চলা বলে, কিছুটা বদলে গেছে। তবে বাস্তবে তার অতিস্ত্ব ছিল বলেই নানা ত্বত্ত থেকে জানা গেছে।
হারিয়ে যাওয়া পুঁথি খুঁজে পাওয়া গেলেও হয়তো মুলান সম্পর্কে আরো কিছু জানা যেতো। সময়ের সাথে সাথে আর মুখে মুখে চলতে চলতে যদিও বেশ বদলে গেছে, তবু মূল কথা ঠিক আছে, এক সাহসী নারীর ছদ্মবেশে যুদ্ধে নামা, যুদ্ধ জয় করার গল্প। সেই প্রাচীন যুগেও যেমন মেয়েদের ঘরে আটকে রাখার চিন্তা ছিল, আজো যে খুব একটা বদলে গেছে সেটা কিন্তু না। মুলান গাঁথার দুটো লাইন খুব সুন্দর করে পুরো চিন্তা ঘুরিয়ে দেয়।
But when the two rabbits run side by side,
Can you really discern whether I am a he or a she?
পুরুষ বা মহিলা খরগোশ চেনা যায়, আলাদাভাবে দৌড় বা হাটা চলার গতি দেখে। কিন্তু যখন পাশাপাশি দুটো খরগোশ দৌঁড়ায় কারো পক্ষে চেনা সম্ভব না। একইভাবে যুদ্ধক্ষেত্রে বা যেকোনো কাজের ক্ষেত্রে যোগ্যতাই আসল, ছেলে হোক বা মেয়ে।
Feature Image: Wikimedia. commons References: 01. Mulan The Chinese Legend. 02. Is Mulan Based on A True Story? 03. Mulan Real History. 04. Mulan Disney Movie True Story. 05. Ballad Hua Mulan Legendary Warrior Woman Who Brought Hope China. 06. Ballad of Mulan.
সম্পূর্ণ অজানা তথ্য জেনে খুব ভালো লাগলো। গল্পটিও খুব সুন্দর। ঝাঁসির রানি বা জোন অফ আর্কের কথা মনে করিয়ে দিল। অনেক ধন্যবাদ।
কত না জানা ইতিহাস সম্পর্কে জানলাম লিখাটি থেকে। ভালো লেগেছে লিখাটি।