হলদে কাগজটিতে লিখছেন আবার ক্ষনিকের মধ্যে সেসব কেঁটে দিচ্ছেন। যিনি লিখছেন তিনি একজন কবি। আসলে কয়েকটি বাক্য লিখছেন কাগজে। অনবরত লিখে কেটেই যাচ্ছেন। তিনি লিখছেন, ‘আমার শহরের নাম দিল্লি। আমার মহল্লার নাম বাল্লিমারান…’
নাহ! কিছুতেই এগোচ্ছে না কলম। আবার কেটে দিচ্ছেন। চারপাশে কালি উপচে পড়ছে কাগজে। হলদে কাগজের পাতাটি ভরে উঠে অর্থবিহীন কাটা-ছেঁড়াতে। হঠাৎ কবি পাতাটির দিকে গভীরভাবে তাকিয়ে রইলেন। মুহুর্তে তার কাছে ভেসে উঠলো আসলে কাটা-ছেঁড়ার এই অকেজো পাতাটি তাঁর প্রিয় চেনা শহরটির মতোই!
হৃদয় আগুন না ঝরালে
লজ্জায় বুক কাঁপে
আবার আগুনের ফুলকি না ছুটলে প্রতিটি নিঃশ্বাসেই
এ-হৃদয় যে লজ্জায় মুখ ঢাকে।
বাল্লিমারানের সেই কবিকে উর্দু কবি ইকবাল জার্মানির মহাকবি গ্যেটের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তার নাম মির্জা আসাদুল্লাহ্ খাঁ। যিনি বিজয়ীর মতো পৃথিবীতে তার কাব্যের সম্ভার ঢেলেছেন। তার নাম বিজয়ী। বিজয়ী শব্দের আরেক অর্থ গালিব। আর এই উপাখ্যানের বিজয়ীকে পৃথিবী চিনেছে মির্জা গালিব শিরোনামে!
উর্দু সাহিত্যের বিশ্বখ্যাত গবেষক ও গালিব বিশেষজ্ঞ প্রফেসর রশিদ আহম্মদ সিদ্দিজী বলেন,
মোগলরা হিন্দুস্থানকে তিনটে জিনিস দিয়েছেন
উর্দু, তাজমহল এবং গালিব।
এমনকি, উর্দু সাহিত্যের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ এই কবিকে নিয়ে Ralf Rasel বলেছেন,
গালিব যদি ইংরেজিতে কবিতা লিখতেন
তিনি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কবি হিসেবে গণ্য হতেন।
তামাম দুনিয়াকে মোহিত করে রেখেছেন যিনি, তার জীবনটাই ছিল বেদনার সরাতে পূর্ণ। ১৭৯৭ সালে দিল্লীর আগ্রাতে জন্মগ্রহণ করা গালিবের আদি পূর্বজের নাম তুর্সেম খাঁ। যারা এসেছিলেন সমরকন্দ থেকে। তুর্কি ছাড়া ভারতীয় কোনো ভাষায় যারা বুঝতে পারতেন না।
খুব অল্প বয়সেই গালিব পিতাকে হারান। তখন তার বয়স বছর পাঁচেক। তারপর চাচা নসরুল্লাহ্ বেগ খাঁর কাছে পিতার স্নেহে বড় হতে থাকেন। কিন্তু বিধি বাম! ১৮০৬ সালে এক লড়াইয়ে হাতির পিট থেকে পড়ে মারা যান নসরুল্লাহ্ বেগ খাঁ। নিজের পীড়াদায়ক জীবন নিয়ে গালিব লিখছেন,
জগতের সকল বিপদ দুনিয়ায় এসে প্রথম জিজ্ঞেস করে
গালিবের ঘরখানি কোথায়?
তের বছর বয়সে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ফিরোজপুর ঝিরকার রইম আহম্মদ বখশ মারুফের কন্যা উমরাও বেগমের সঙ্গে। বৈবাহিক জীবনে অভাবের তাড়নায় জীবন ছিল বিপর্যস্ত। দারিদ্র্যের চক্রে বাড়িতে জুয়া খেলানোর আসর বসান। সেই অপরাধে ১৮৪১ সালে সাজাও পেতে হয় তাকে। সেই শোকনামা পাওয়া যায় মৌলানা আলতাফ হুসেন হালি রচিত বিখ্যাত গ্রন্থ ‘ইয়াদগারে গালিব’-এ।
এই ঘটনাটা ছিল মির্জা সাহেবের কাছে অত্যন্ত দুঃখের। যদিও ছ’মাসের মধ্যে তিন মাস কয়েকদখানায় কাটিয়েছেন তাতে তাঁর কোনোরকম কষ্ট হয়নি। সেখানেও প্রচলিত আছে গালিবকে নিয়ে নানা গল্প। জেলে থাকার সময় একদিন এক যুবককে কাঁদতে দেখেন গালিব। কারণ জানতে চাইলে যুবক উত্তর দেয়, তিনদিনের জেল হয়েছে। গালিব বিস্মিত হয়ে বলে উঠে মাত্র তিনদিনের জন্য কান্না!
ফোঁপাতে ফোঁপাতে যুবক জানায়, তার বিয়ে হবার কথা ছিল; বিয়েটাই ভেঙে গেল। গালিবের হাস্যরসে বলে উঠে, বাহ! মাত্র তিনদিনের জেলের বিনিময়ে সারাজীবনের জেল খাটা থেকে বেঁচে গেলে। তোমার তো বরং আনন্দ করার কথা। ঘরে যেভাবে থাকতেন কয়েকখানাতেও সেভাবেই ছিলেন। খাবার কাপড় সমস্ত প্রয়োজনীয় জিনিস তার ইচ্ছানুযায়ী বাড়ি থেকে দেওয়া হতো। বন্ধুরাও তার সঙ্গে দেখা করতে যেতেন। কিন্তু গালিবের মনে সেই ঘটনাটি দারুণ অভিমানের আস্তরণ ফেলে দেয়।
ওই যে অসীম অনন্ত
যার কোনো শুরু নেই
আমার স্বীকৃতিস্বরূপ নক্ষত্র
সেই আকাশই ছুঁয়েছে
কিন্তু এই পৃথিবীতে আমার কবিতার
খ্যাতি আসবে মৃত্যুর পরে!
সারাটা জীবন বিপদ আর ঝামেলার মধ্য দিয়ে কেটেছিল মির্জা গালিবের। এই বিপদের অন্যতম সারথি ছিল মাদকাশক্তি। দরিদ্রতার সাথে মাদকাশক্তি তার জীবনে ঋণের বোঝা চল্লিশ হাজারে নিয়ে যায়। এই ধারের জন্যও তাঁকে হাজতে নিয়ে যাওয়া হয়। নবাব আমীনুদ্দীন খাঁ চারশো টাকা জরিমানা দিয়ে হাজত থেকে ছাড়িয়ে আনেন। জীবন ভরে বিপদ আর ঝামেলার মধ্যে দিয়ে কেঁটেছিল বলে শেষ বয়সে খুব বেশি মৃত্যু আকাঙখা করতেন।
হাজারো খাওয়ায়িশে অ্যাইসি কি, হার খাওয়ায়িশ পে দাম নিকলে
বহুত নিকলে মিরে আরমা, লেকিন ফিরভি কাম নিকলে।
পৃথিবীর প্রায় সব ভাষায় কবিতা প্রথম সৃষ্টি হয়, পরে গদ্য। গালিব উর্দু ভাষাকে পরিপূর্ণ প্রানবন্ত রূপ প্রদান করেছেন। গালিব জীবনের সাথে কাব্যের সুধাকে ব্যঞ্জায়িত করেছেন। যদিও শুরুটা ছিল ফার্সি দিয়ে। মাত্র ন’ছর বয়স থেকেই ফার্সিতে কবিতা লেখা শুরু করেন তিনি। নবাব হুসামুদ্দৌলা ছিলেন গালিবের কবিতার ভক্ত।
একবার কিছু গজল সাথে নিয়ে সময়ের বিখ্যাত কবি মীরকে দেখাতে নিয়ে যান হুসাম। লক্ষ্ণৌতে বসে কিশোর কবির লেখা দেখে মীরের হৃদয়ে আক্ষেপের বর্ষণ শুরু হলো। গালিবকে নুয়ে মীর বলেন, একটা গুরু পেলে বালকটি বড় কবি হয়ে উঠার সম্ভাবনা আছে; আর না পেলে অসার কথামালা গেঁথেই প্রতিভা শেষ হয়ে যাবে। মীরের অবস্থান ছিল উর্দু কবিতায় সব থেকে উঁচুতে।
তাঁর মৃত্যুর সময় গালিবের বয়স ঠিক তের। অথচ সেই বয়সের লেখা কবিতা দেখেই মীর বয়ান দেয় গালিবের সম্ভাবনার। শেষ পর্যন্ত গালিবের গুরুর ছায়ায় থাকার দরকার হয়নি। নিজ নামেই এখনো উজ্জল দাঁড়িয়ে স্মরণীয় হয়ে আছেন।
গালিবের শরাবপ্রীতি ছিল কিংবদন্তীতুল্য। তার এই মদ খাওয়া নিয়ে নানান গল্প প্রচলিত আছে। তিনি দেশি মদকে একদমই সহ্য করতে পারতেন না। কিন্ত অবস্থা বিপাকে একদা জনৈক মহেশ দাসের কাছ থেকে দেশী মদ কিনতেন। কারণ, মদ ছাড়া একটি রাতও তিনি কাটাতে পারতেন না।
মদ ছেড়ে দেব বলেও তিনি কখনো ছাড়তে পারেননি। আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন হয়ে গেলে গালিব মদ ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেছেন। জীবনীকাররা যখন অত্যন্ত সম্মান ও শ্রদ্ধার সাথে বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনী লিখতে বসেন তখন তাঁদের স্ত্রীদের প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান বা অগ্রাহ্য করেন।
বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি ও আধুনিক উর্দুগদ্যের জনক মির্জা গালিব যেমন অত্যন্ত রঙ্গিন মেজাজের ব্যক্তিত্ব ছিলেন, ঠিক তেমনি একেবারেই বিষয়ী ও সংসারী ছিলেন না। তার যে স্ত্রী আছে সেকথাও তার মনে থাকতো না। সেই যে ন’বছর বয়সে কবিতা লেখা শুরু করেন আর কলম বন্ধ হয়নি।
সারাজীবন কোন চাকরি বা স্থায়ী রোজগারও ছিল না গালিবের। এছাড়াও, বিয়ের কয়েক বছর পর স্বামী-স্ত্রী যৌবনাস্থায় পৌঁছান, গালিব অন্য এক মহিলার প্রেমে গভীর আসক্ত হয়ে পড়েন। যেটা তার স্ত্রীর জন্য ছিল মারাত্মক আঘাত। ইংরেজ সরকার প্রদত্ত সামান্য পেনশন ও পরের দয়াদাক্ষিণ্যই ছিল গালিবের সম্বল। টাকার জন্য গালিব সারাদেশ ছুটে বেড়িয়েছেন, এমনকি অভাব মেটানোর তাগিদায় বাড়িতে জুয়োর আড্ডাও বসিয়েছেন, জেলে গেছেন, জরিমানা দিয়ে হয়েছে।
একবারও ভাবেননি তিনি নিজে একজন সংসারী, সংসারের খাওয়া পরার আরো লোক আছে, যারা তাঁরই ওপর নির্ভরশীল। গালিব পত্নী উমরাও বেগম স্বামীর এই লাগামহীন জীবনযাপন, মদ্যপান, রঈসী ঠাটবাট সব নীরবে সহ্য করে গেছেন। এমনকি গালিব যখন মারা যান আটশো টাকার ঋণের দায়িত্বও উমরাও বেগমকে সামলাতে হয়েছে। জীবনে সাত সাতটা সন্তান হয়, কিন্তু কোন সন্তান বেশিদিন বাঁচেনি, সবাই একে একে মায়ের কোল খালি করে চিরস্থায়ী দুঃখের দাগ রেখে গেছে। জীবনকে উপহাস করে গালিব লিখেছেন,
সারা জীবন ভরে গালিব একই ভুল করে গেছে। ধুলো ছিল মুখে আর সে বারবার পরিষ্কার করেছে আয়না।
গালিব শিষ্য মৌলানা আলতাফ হুসেন হালি লিখেছেন, যেহেতু হাসি ঠাট্টা করাটা গালিবের চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল, সেজন্য তাঁর মুখও কলম দিয়ে নিজের পত্নীর সম্পর্কে এ ধরনের কথা বেরিয়ে পড়তো, যেগুলোকে অজ্ঞ লোকেরা ঘৃণা কিংবা সম্পর্কের অবনতি হিসেবে অনুমান করেন। বাস্তবিক ঘটনা হলো গালিব নিজের বেগম সাহেবাকে অত্যন্ত ভালবাসতো, তেমনই বেগমসাহেবাও স্বামীর আরাম আয়েশের জন্য প্রাণপাত করে দিতেন। গালিবের হাস্যরস নিয়ে প্রায়ই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কথার যুদ্ধ লেগেই থাকতো।
মৌলানা হালির মতে, গালিব একবার বাসা বদল করতে চান। নতুন বাসার বৈঠকখানা গিয়ে দেখে পছন্দ করে আসেন। কিন্তু অন্তঃপুর দেখার জন্য উমারাও বেগম যান। ফিরে এলে গালিব ওনাকে জিজ্ঞেস করেন-কেমন দেখলে? পছন্দ তো? উমরাও বেগম উত্তর দেন- লোকে বলছে ওই ঘরে নাকি ভূত আছে। গালিব তৎক্ষণাৎ হো-হো করে হেসে বলে উঠেন, কিন্তু পৃথিবীতে তোমার চেয়েও বড় ভূত আর কোথায়?
জীবিতকালে স্বামী-স্ত্রী পরস্পর বিপরীত ছিলেন। কিন্তু মৃত্যু এমনই সহায়তা করে যে, গালিবের মৃত্যুর এক বছর পর কমরীমাসে (চান্দ্রমাস) ঠিক ওই দিনেই উমরাও বেগম ইহজগত ছেড়ে স্বামীর পেছনে রওনা দেন!
চাচা নাসরুল্লাহ খানের মৃত্যুর পর সরকার থেকে দশ হাজার টাকা ভাতার ব্যবস্থা করা হয় গালিবের পরিবারের জন্য। কিন্তু কিছুদিন পরই নতুন সংশোধনে পাঁচ হাজার টাকা গালিবের পরিবার এবং পাঁচ হাজার টাকা খাজা হাজী নামে এক ব্যক্তির জন্য বরাদ্দ হয়। দ্বিতীয় সংশোধনের বিষয়টি গালিবের পরিবারকে জানানো হয়নি।
তাই এই অন্যায়ের প্রতিবাদে আহমদ বক্সের মারফত অনুরোধ জানান গালিব। দিনের পর দিন চলে গেলেও কোনো ফলপ্রসূ খবর আসে না। অবশেষে গালিব নিজেই যাত্রা করলেন কলকাতায়। ইংরেজ সরকারের প্রতিনিধির সাথে মামলা খোলসা করার জন্য।
১৮২৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কানপুর, লক্ষ্ণৌ, এলাহাবাদ, মুর্শিদাবাদ হয়ে গালিব পৌঁছান কলকাতায়। দীর্ঘ সংগ্রামের পরে গভর্নর জেনারেলের কাছে আবেদন পেশ করেও অপরপক্ষ মজবুত যুক্তি থাকলেও হেরে যেতে হয় গালিবকে। বঞ্চিত হলেন পারিবারিক পেনশনের টাকা উদ্ধারে। নিজের অধিকার আদায়ের জন্য তিনি সারাজীবন লড়ে গেছেন।
১৮২৯ সালে কলকাতা ত্যাগ করেন গালিব গভীর কষ্টে। তার আগে কবি-সমাজের অনুষ্ঠানে যোগ দেন। ফার্সি ভাষার অগ্রদূতেরা ছিলেন সেখানকার মুকুট। গালিব স্পষ্ট কন্ঠে বলে উঠলেন, মাতৃভাষা ছাড়া অন্য ভাষায় সুপণ্ডিত হওয়া গেলেও প্রয়োগের ভালোমন্দ বিচার গড়ে উঠে না। গালিব নিজে বেশ কিছু লেখা ফার্সিতে লেখলেও উর্দু্র প্রতি তার দরদ ছিল অনন্য।
শেষের দিকে মোগল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহের সাথে তার সম্পর্ক বেশ ভালো হয়ে ওঠে। ১৮৫০ সালে বাদশাহ তাকে ফার্সি ভাষায় তৈমুর বংশের ইতিহাস রচনার ভার দিয়ে বছরে ছ’শো টাকা ভাতা বরাদ্দের ঘোষণা করেন।
হঠাৎ ভাগ্য যেন সুপ্রসন্ন হতে শুরু করে। মির্জা ফখরুদ্দীন এবং ওয়াজেদ আলি শাহ মূলত ভাতার ব্যবস্থা করেন গালিবের জন্য। কিন্তু এই সুখও বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ১৮৫৭ সালের ভারতের প্রথম স্বাধীনতা আন্দোলনে গালিব সরাসরি কোন পক্ষে সমর্থন দিলেন না। কিন্তু গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারলেন আগামীর নতুন পরিবর্তনকে। সিপাহী বিদ্রোহের সময়ে ভাবনা চিন্তার পরিস্ফুটন আসে গ্রন্থ দাস্তাম্ভু শিরোনামে।
গালিব দিল্লীতে ফেরেন ১৮৬৬ সালে। সেই সময়ে ভগ্ন দিল্লী শহরকে দেখে গালিব লেখেন,
দিল্লী বলতে বোঝায় লালকেল্লা, চাঁদনী চক, জামে মসজিদের কাছে সেই দৈনিক মাছের বাজার, যমুনার সেতুতে সাপ্তাহিক ভ্রমন, ফুল ব্যাপারিদের বার্ষিক মেলা-এইসব। তো, এই পাঁচটির একটিও আজ আর অবশিষ্ট নেই। তাই এখন দিল্লী কোথায়? তবে হ্যাঁ, এককালে দিল্লি বলতে হিন্দ্ এর বুকে এরকমই একটি শহরকে বোঝাতো।
তার জীবনাবসান হয় ঠিক তিন বছর পরে, ১৮৬৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী। দুপুরবেলা তাঁকে সুলতানজী’তে কবরস্থ করা হয়। এটি ছিল সেই পবিত্র তীর্থস্থান, ফকির নিজামুদ্দিন আউলিয়ার কবরের কাছে, লোহারু বংশের পারিবারিক কবরখানা। তার অন্তিমযাত্রার খরচটুকু বহন করে নবাব জিয়াউদ্দিন খান।
গোল বাঁধল, শেষকৃত্যের নিয়মগুলি নিয়ে। অর্থাৎ, শিয়া না সুন্নি কোনোমতে মির্জা আসাদুল্লাহ খাঁ গালিবকে গৌর করা হবে! শেষে নবাব জিয়াউদ্দিনের কথামতো উর্দু সাহিত্যের এই দেবদূতকে সুন্নি মতেই কবর দেওয়া হয়। যতকাল পৃথিবীতে প্রেম থাকবে, মির্জা গালিবও মিশে থাকবে প্রতিটি মানবিক স্নায়ুতে! নিজের মৃত্যুশয্যায় তিনি লিখেছেন,
বিপদ বিধ্বস্ত গালিবের অভাবে
কোনো কাজই কি থেমে থেকেছে?
এত কান্নাকাটির প্রয়োজন নেই
প্রয়োজন নেই উচ্চস্বরে বিলাপ করবার।
Feature Image: prothomalo.com References: 01. গালিবনামা-পুষ্পিত মুখোপাধ্যায়- প্রকাশনা-বাঙলার মুখ (মে-২০১৬) 02. মির্জা গালিব ও তার সময়- পবন কুমার বার্মা, অনুবাদ- মন্দার মুখোপাধ্যায়- প্রকাশনা- সাহিত্য অকাদেমি (২০০৬) 03. মির্জা গালিব কথা- পুষ্পিত মুখোপাধ্যায়- প্রকাশনা- প্রাচ্য পাশ্চাত্য (জুলাই ২০২১) 04. গালিব নির্বাচিত কবিতা-সম্পাদনা- জ্যোতিভূষণ চাকী এবং শঙ্খ ঘোষ- প্রকাশনা-সাহিত্য অকাদেমি (২০১৫) 05. A Desertful of Roses. 06. The life and loves of Mirza Galib: the last great poet of the Mughal era.
মির্জা গালিব খুব পছন্দের একজন। অসাধারণ মানুষটিকে নিয়ে অনবদ্য একটা লেখা। চোখে পানি এসে গেলো। হৃদয় দিয়ে লেখা।
মির্জা গালিব! শুরুটা এত সুন্দর করে তোলা হয়েছে মমনোযোগ টেনে নিয়ে গেছে পুরো ফিচারে! কী সুন্দর সূচনা! বাল্লিমারানের সেই কবি! খুব খুব খুব ভাল লাগলো।
আহ! মন ভরে গেল! জীবনের আরেক নাম গালিব। অনবদ্য একটা লেখা। ভাল লেগেছে সূচনা।
মির্জা গালিব কে প্রথম দৃষ্টি আসে টিভি চ্যানেল। তখন অনেক ছোট কিছুই বুঝতাম না। মা দেখতো সিরিয়াল টা মকন দিয়ে আর দেখতাম কাঁদতো। তখন সেই সিরিয়ালে কাজ করেছিলেন নাসির উদ্দিন শাহ। জিনি মির্জা গালিব চরিত্রটি ফুটিয়ে তোলেন।
কাট ২,২০০১ সাল HS পাশ করে প্রেমের তিলোত্তমা শহরে আমার তিলোত্তমা খুঁজতে গিয়ে বই আকারে হাতে এলো মির্জা গালিব shayari হিন্দি এবং ইংলিশ কোন্তেস।
কাট ৩,তোর লেখায় একটা জায়গা পড়তে গিয়ে মনে হলো শরৎচন্দ্রের দেবদাসের কথা। তবে কী এই দেবদাস আমাদের মির্জা বাবু?
কাট ৪,প্রেম রাস্তা গালিব না এলে সত্যি মনে হয়
Dil-e naadan, tujhe hua kya hai, aakhir iss dard ki dawa kya hai”
“Dard jab dil mein ho toh dawa keejiye, dil he jab dard ho toh kya keejiye “…. etc….
কাট ৫, Ghalib Academy দিল্লির Nizamuddin Dargah সামনে টিক। কত কিছু ওখানে আছে। সত্যি বলছি তোর লেখাটা সেখানে স্থান পাওয়ার মত হয়েছে।
কাট ৬, গালিব নিয়ে অনেক কিছু পড়ার আছে। সবচেয়ে বড় হলো উর্দু এবং হিন্দি মিশণ।
আরো অনেক কিছু জানলাম। ভালো থাক সুস্থ থাক।