মেইমান্দ: ইরানের অদ্ভুত এক পাথুরে গ্রাম

328
0
Image source:tehrantimes.com

১২ হাজার বছর আগে আরসাসিড যুগে পারস্যের দক্ষিণ কেরমানের বিভিন্ন উপজাতি বিভিন্ন দিকে স্থানান্তরিত হয়েছিল। এর মধ্যে একদল উপজাতি বসবাসের জন্য উপযুক্ত জায়গা হিসেবে পারস্যের এক পাহাড়ি উপত্যকা খুঁজে পায়। সূর্যের উপাসক উপজাতি দলটি এই পাহাড়কে পবিত্র মনে করতো। 

পাহাড় কেটে বানানো বসতিতে প্রথমে ধর্মীয় উদ্দেশ্যে থাকলেও পরে এখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। এভাবেই তারা অনেক বছরের শ্রম দিয়ে পাহাড়টির উপত্যকায় গড়ে তুলেছিল সমৃদ্ধশালী এক পাথুরে গ্রাম।  

১২ হাজার বছর পরে আজও তাদের সেই পবিত্র পাথুরে পাহাড় কেটে গড়ে তোলা বসতি অক্ষয় হয়ে আছে। যার নাম মেইমান্দ। বর্তমান ইরানের কেরমান প্রদেশে যার অবস্থান। 

Life continues in Iran's 12,000-year-old settlement "Meymand village" - Arkeonews
পাহাড় কেটে গড়ে তোলা মেইমান্দ। Image source: Arkeonews

মেইমান্দের নামকরণ 

মেইমান্দ গ্রামটি মানুষ নিজ হাতে পাহাড় কেটে তৈরি করেছে। এই পাহাড় কাটতে কোন আধুনিক সরঞ্জামও ব্যবহৃত হয়নি। তাছাড়া পাহাড়টিতে অধিক হারে পাথরের উপস্থিতি থাকায় গ্রামটিকে ‘দাস্তকন্দ’ও বলা হয়। মেইমান্দ দুটি শব্দ নিয়ে গঠিত যার ‘মেই’ অর্থ হতে পারে মদ্যপান বা মদ এবং ‘মান্দ’ মানে মাতাল। 

এই নামকরণের পেছনে গ্রামবাসীদের কাছে প্রচলিত একটি গল্প ছিল যে, গ্রামবাসীরা মদ্যপান করে মাতাল হয়ে পাথরের গর্ত খনন শুরু করতো। তাই এই গ্রামের নাম মেইমান্দ। কিন্তু কেউ কেউ বলেন ফারস প্রদেশের মেইমান্দের লোকেরা অতীতে এই জায়গায় চলে গেছে এবং এই কারণে তারা এই জায়গাটির নাম দিয়েছে মেইমান্দ। যেই কারণেই গ্রামটির নামকরণ মেইমান্দ হোক না কেন এই নামটিই এখন প্রচলিত।

মেইমান্দের অবস্থান

মেইমান্দের অবস্থান বর্তমান ইরানের কেরমান প্রদেশের শাহর-ই বাবাক শহরের ৩৬ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বদিকে। গ্রামটি দক্ষিণে খাতুন আবাদ সমভূমি এবং উত্তর-পশ্চিমে খোরিন পর্বত দ্বারা বেষ্টিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা ২২৪০ মিটার। এর আয়তন প্রায় ৪২০ কি.মি.। 

Geographical situation of Meymand village | Download Scientific Diagram
ইরানে মেইমান্দের অবস্থান, Image source: ResearchGate

মেইমান্দের ইতিহাস 

যদিও বলা হয় মেইমান্দ গ্রামের উত্থান ১২,০০০ বছর আগে। কিন্তু গ্রামটির বয়স সঠিকভাবে জানা যায়নি। তবে কেউ কেউ বলে যে গ্রামটির আবির্ভাব ইরানি মালভূমির পশ্চিমে মেডিসদের আবির্ভাবের সময় খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম ও সপ্তম শতাব্দীর। এই ব্যাপারে আরেকটি মতামত হলো মেইমান্দ অঞ্চলটি খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শতাব্দীর অন্তর্গত। 

এই সময়টি ইরানে পার্থিয়ান রাজবংশের উপস্থিতির সাথে মিলে যায়। এই সময়ে কেরমানের যাযাবর উপজাতিরা পার্থিয়ান রাজবংশের সমাপ্তির পর থেকে বিভিন্ন জায়গায় স্থানান্তরিত হয়েছিল। তারা ভালো আবহাওয়ায় বসতি স্থাপনের জন্য এখানে আসে এবং পরে একক বিবাহকে বেছে নিয়েছিল। 

মেইমান্দে একটি দুর্গের অস্তিত্ব এবং মৃতদের কবর দেওয়ার জন্য যে সমাধিগুলি তৈরি করা হয়েছিল তা বিবেচনা করে এই তত্ত্বটিই বাস্তবতার কাছাকাছি বলে মনে হয়। সাসানি যুগের মৃতদেহ ও কবরস্থানের সমাধির নিয়মের সাদৃশ্যও দ্বিতীয় অনুমানটিকে আরও বৈধ করে তোলে। 

আবার দেখা যায় যে, মিথ্রিয়ানরাও তাদের আচার-অনুষ্ঠানগুলো পাহাড় ও গুহার কেন্দ্রস্থলে পালন করতো। মিথ্রিয়ানদের সাথে এই গ্রামের বসতিগুলির সাদৃশ্য এই প্রশ্নটি উত্থাপন করে যে প্রাচীন অধিবাসীরা কি মিথ্রাবাদকে অনুসরণ করেছিল? মিথ্রাস পণ্ডিতরা বিশ্বাস করেন যে এই ধর্মের একটি ইরানী উৎস ছিল।

উপরন্তু, মদ এই প্রাচীন ধর্মে একটি পবিত্র উপাদান ছিল যা পরে গির্জার আচার-অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত হতো। যেহেতু মেইমান্দ শব্দটির অর্থও মদ ও মাতাল সেহেতু এই মতবাদটির পক্ষেই যুক্তি যায়। আন্তর্জাতিক প্রত্নতাত্ত্বিকরা এখনও এই মানুষদের পাহাড়ি গুহা নির্মাণের ইতিহাস এবং জীবনধারা অধ্যয়ন করছেন। এখানে প্রাপ্ত কিছু পেইন্টিং এবং মৃৎশিল্পের বয়স আনুমানিক ৬,০০০ থেকে ১০,০০০ বছর। তবে এই গ্রামে ধারাবাহিক ঘনবসতি গড়ে ওঠে ৩,০০০ বছর আগে থেকে। 

Meymand Cave Village
মেইমান্দের মসজিদ,Image source: TasteIran

মেইমান্দের পাথুরে গ্রামটির গঠন প্রকৃতি

মেইমান্দ গ্রামটি যে পাহাড়ে গড়ে উঠেছে সেই পাহাড়টি পাথুরে পাহাড়।স্থানীয়দের মতে, তাদের পূর্বপুরুষরা কোন মাটি, পানি, ইট,আধুনিক অস্ত্র বা মেশিন ছাড়াই ‘কামার’ নামক এক ধরনের শক্ত, ধারালো পাথরের সাহায্যে হাত দিয়েই গুহা সদৃশ বাড়িগুলি খোদাই করেছিলেন। কিছু কিছু গুহা হাজার হাজার বছর আগে তৈরি এবং তখন থেকেই পরিবারগুলি ক্রমাগত বসবাস করছে বলে বিশ্বাস করা হয়। 

এই গ্রামের যে বিষয়টি খুব আকর্ষণীয় তা হলো এখানকার প্রতিরক্ষা দুর্গ। গ্রামের নির্মাণ শৈলীর উপর ভিত্তি করে এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মেইমান্দকে ইতিহাস জুড়ে শত্রুদের গুরুতর আক্রমণ থেকে রক্ষা করেছে। একই কৌশল অনুসারে নির্মিত মেইমান্দের নিজস্ব স্কুল, স্নানাগার, মসজিদ, মন্দির, গুহা বা ঘর, টাওয়ার এবং দুর্গের মতো ঐতিহাসিক স্থাপনাও রয়েছে। এই অত্যাশ্চর্য জায়গাটি ইরানের প্রাচীন সংস্কৃতির সাক্ষ্য। 

মেইমান্দের বসতি

মেইমান্দ অঞ্চলের অদ্ভুত একটি বিষয় হলো এখানে তিন ধরনের বসতি রয়েছে। স্থানীয়রা বছরের তিনটি সময়ে এই তিন ধরনের বসতিতে থাকে।এগুলোর একটি হলো সারাঘোল (কোরাল), আরেকটি সরবাগ (মরুদ্যান) এবং শেষটি মেইমান্দ গ্রাম। 

বসন্তকালে সারাঘোলে মানুষ বসবাস করে। সারাঘোলে থাকাকালীন মানুষ পরিবর্তনশীল আবহাওয়ার নির্দিষ্ট তাপমাত্রা পায় এবং বাতাস থেকে রক্ষা পায়। সারাঘোলে আবার দুই ধরনের বাড়ি আছে: মারখানে ও মাশকদান। মারখানে হলো মাটির কিছুটা নিচে তৈরি বৃত্তাকার ঘর। আর মাশকদান বাড়িগুলো তৈরি হয়েছে মাটির ওপরে। মাশকদান বাড়িগুলি পাথরের দেয়াল ও কোণ আকৃতির ছাদ দিয়ে আচ্ছাদিত। 

আবার গ্রীষ্মকালে সরবাগের বাড়িতে মানুষ থাকে। সরবাগ বাড়িগুলো মূলত নদীর আশেপাশে অবস্থিত। গ্রীষ্মের তাপ থেকে মানুষকে রক্ষা করার জন্য এই ঘরগুলি পাতা এবং গাছের ডালের মতো হালকা উপকরণ দিয়ে তৈরি করা হয়। 

Maymand: A very old village of troglodytes - Tehran Times
কিচেহ,Image source: Tehran Times

আর বছরের শীত মৌসুমে স্থানীয়দের আবাসস্থল হয় মেইমান্দ গ্রাম। মেইমান্দের মূল বৈশিষ্ট্য পাহাড়ের পাথুরে গুহাসদৃশ এই ঘরগুলোকে বলা হয় ‘কিচেহ’। এই কিচেহ শীতকালে উষ্ণ রাখার জন্য একটি উত্তম জায়গা। মেইমান্দে প্রায় ৪০৫টি কিচেহ রয়েছে যেখানে মোট ২৫৬০টি কক্ষ রয়েছে। 

প্রতিটি কিচেহের সামনে একটি প্রবেশদ্বার ও খোলা জায়গা রয়েছে যা একে অন্য কক্ষের সাথে সংযুক্ত করে। পর্দা দ্বারা কক্ষগুলিকে শৌচাগার থেকে পৃথক করা হয়েছে।  ঘরের তাপমাত্রা সবসময় বাইরের তাপমাত্রার তুলনায় প্রায় পাঁচ ডিগ্রি বেশি থাকে। কারণ রান্নার চুলাগুলো কক্ষের ভেতরে। তবে চুলায় কাঠ পোড়ানোর কারণে ঘরের ছাদ ও দেয়ালের রং কালো হয়ে যায়।

একটি অদ্ভুত বিষয় যে ঘরে খাবার তৈরির কারণে আগুনের উপস্থিতিতে তাদের দেয়াল নিরোধক হয়েছে এবং এটি কক্ষের স্থায়িত্ব বাড়িয়েছে। এমনকি মশা ও অন্যান্য কীটপতঙ্গও এ কারণে আসে না।যেসব কিচেহে কয়েক বছর ধরে আগুন জ্বালানো হয়নি সেখানে ছাদ ধ্বসে পড়ে থাকতে দেখা গেছে।  মেইমান্দের বৃহত্তম কিচেহ প্রায় ৯০ মিটার এবং বেশিরভাগ কক্ষের ক্ষেত্রফল প্রায় ১২ মিটার।

Meymand Rocky Village, Still residential » Iran Local Guide
মেইমান্দের বাসিন্দা, Image source: Iran Local Guide

সামাজিক কাঠামো 

মেইমান্দের বাসিন্দারা নিজেদেরকে উপজাতি বলে ডাকে। তবে তাদের জীবনধারায় উপজাতি এবং গ্রাম্যতা উভয় উপাদানই উপস্থিত। মেইমান্দের প্রতিটি উপজাতি একটি নির্দিষ্ট এলাকায় বসতি স্থাপন করে, যার অর্থ প্রতিটি গ্রাম একটি উপজাতির জন্য নির্ধারিত। যেমন- লাখোরিন গ্রাম লাখোরিনী উপজাতির অন্তর্গত।

প্রতিটি উপজাতিতে বেশ কয়েকটি সম্প্রদায় বা পরিবার রয়েছে, প্রত্যেকটির নাম ধীরে ধীরে সেই সম্প্রদায়ের লোকদের পারিবারিক নাম হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। (যেমন ইব্রাহিমি সম্প্রদায়/লাখোরিনী উপজাতি থেকে পরিবার)। বর্তমানে উপজাতীয় কাঠামো ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়েছে বা দুর্বল হয়েছে। জীবন ও স্থাপত্যকে প্রভাবিত করে পূর্বের এমন মূল্যবোধগুলি অনেক ক্ষীণ হয়ে গেছে। 

এখানকার মানুষ এবং প্রকৃতির মধ্যে মিথস্ক্রিয়া এখনও অদ্ভুত বলে বিবেচিত হয় এবং এটিই তাদের প্রাচীন ঐতিহ্য সংরক্ষণ করছে।প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে মেইমান্দ বাসীদের একটি শক্তিশালী বন্ধন রয়েছে যা সামাজিক অনুশীলন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং ধর্মীয় বিশ্বাসে প্রকাশিত হয়। 

জীবনধারা

অতীত থেকে বর্তমান পর্যন্ত মেইমান্দবাসীরা ঐতিহ্যবাহী জীবনধারা অব্যাহত রেখেছে। এই গ্রামের লোকেরা আধা যাযাবর যারা কৃষিকাজ করে ও গবাদিপশু পালন করে। বছরের বিভিন্ন ঋতুতে তারা কয়েকবার বাসস্থান বদল করে। মেইমান্দ তাদের শীতকালীন বসতি।

গ্রামের মানুষ গ্রীষ্মকালে সমতলে গবাদি পশু পালন করে। শীতের সময় তারা গ্রামে ফিরে কৃষিকাজ ও হস্তশিল্প তৈরি করে।  মৌসুমী নদীর অস্তিত্ব এবং ঝর্ণা সহ বেশ কয়েকটি পানির উৎস এই অঞ্চলকে কৃষিতে সমৃদ্ধ করেছে। মেইমান্দ গ্রামবাসীর বোনা কার্পেট, কিলিম এবং ঝুড়ি কেরমান প্রদেশের সেরা পণ্যের মধ্যে অন্যতম। তাদের আয়ের প্রধান উৎস হলো এসব হাতে বোনা কার্পেট, ঝুড়ি, ক্রোশেট লেস বিক্রি, ট্যুরিস্ট গাইড, কৃষি ও পশুপালন। 

MAYMANDMOON ECOLODGE - Prices & Lodge Reviews (Maymand, Iran)
মেইমান্দের হাতে বোনা কার্পেট,Image source: TripAdvisor

মেইমান্দে প্রধান খাবার হিসেবে রুটি, সবজি, ফলমূল, ভাত, ডাল, দুধ, চা, দুধের স্যুপ কাশক, আঙুরের রস ইত্যাদি খাওয়া হয়। রুটি ছিঁড়ে স্যুপে ভিজিয়ে খাওয়া তাদের ঐতিহ্য। যেহেতু এখানে খুব বেশি ফসল হয় না তাই যতটুকু ফল, ফসল আছে তা থেকেই খাবার উৎপাদন করার চেষ্টা করা হয়। আর গবাদি পশু থেকে মাংস,ডিম ও দুধের চাহিদা পূরন করা হয়। 

মেইমান্দের বাসিন্দারা তাদের পূর্বপুরুষদের অনেক রীতি বজায় রেখেছে। তাদের ভাষা এবং উপভাষায় পাহলভি ও সাসানিড শব্দগুলি এখনও ব্যবহৃত হয়। গ্রামের দূরত্বের কারণে তাদের উপভাষা তেমন পরিবর্তিত হয়নি। এই গ্রামে মহররমের অনুষ্ঠান খুব ঘটা করে পালিত হয়। আর শীতকালে ঘরোয়া আড্ডা অনুষ্ঠান হয়।

প্রাকৃতিক সম্পদ 

মেইমান্দ গ্রামটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২২৪০ মিটার উচ্চতায় সমভূমি ও পাহাড়ের মধ্যে অবস্থিত। সমতলভূমিতে পেস্তা গাছ এবং বুনো বাদাম চাষ করা হয়। গ্রামের আশেপাশে তুঁত ও ব্ল্যাকবেরি গাছ প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। ব্ল্যাক থাইম, ঋষি, ইয়ারো, মার্শম্যালো, বাটারকাপ, জিরা, তরঞ্জেবিন, ল্যাভেন্ডার, প্ল্যান্টেন, মৌরি, অরিগ্যানো, পার্সিওশান, লিকোরিস, খাকশির, শাটার, চুলকানি, মোখলেস, এসফান্ড, রচোবার্ব এবং আরচোবার্টি জাতীয় বিভিন্ন ঔষধি গাছ জন্মায় এখানে।

মেইমান্দ সমভূমি সাপ, গিরগিটি, হেজহগ, কচ্ছপ এবং খরগোশের মতো মরুভূমির প্রাণীতেও পূর্ণ। এছাড়াও এখানে রয়েছে বিভিন্ন বন্য প্রাণী যেমন হরিণ, নেকড়ে, শিয়াল, এন্টিলোপ, তিতির এবং শিকারী পাখি। 

Cultural Landscape of Maymand - UNESCO World Heritage Centre
মোষের পাল নিয়ে যাচ্ছে একজন মেইমান্দবাসী,Image source: UNESCO World Heritage Centre

স্বয়ংসম্পূর্ণ মেইমান্দ গ্রামটি শুষ্ক ও অনেকাংশে মরুভূমি অঞ্চল। এখানকার পানির উৎস নদী, ঝর্ণা এবং ভূগর্ভস্থ কূপ। এসব উৎস থেকে পানি সংগ্রহ করে জলাধারে জমা করা হয়। তারপর ভূগর্ভস্থ কানাত দিয়ে বাগান,পশুর খামার ও ছোট সবজির জমিতে ব্যবহার করা হয়।  

বর্তমান অবস্থা

মেইমান্দ গ্রামের জনসংখ্যা এখন ১৩০ থেকে ১৫৯ জনের মধ্যে রয়েছে। আগে এই সংখ্যা আরও বেশি ছিল। কিন্তু অনেক গ্রামবাসী শহরে চলে গেছে। মাঝে মাঝে গ্রামে বেড়াতে আসে। আবার গুহায় বসবাসকারী মোট জনসংখ্যা শীতে বেশি থাকে। তবে গ্রীষ্মকালে এই সংখ্যা কমে যায়। কারণ গরমের সময় তারা ভিন্ন জায়গায় বাস করে।

এরকম শুষ্ক ও মরুভূমির পরিবেশে গুহাকে বাসস্থান হিসেবে ব্যবহার করা একটি অস্বাভাবিক আবাসন হিসেবে মনে হয়। কিন্তু মেইমান্দ গ্রামবাসীরা এভাবেই বসবাস করে আসছে হাজার বছর ধরে। আর এভাবেই টিকে আছে আজও।

ইরানের এই ঐতিহ্যবাহী গ্রামটি তাই ২০১৫ সালে স্বীকৃতি পেয়েছে ইউনেস্কোর পুরাকীর্তির তালিকায়। আর ইরানের ১৯তম বিশ্ব স্মৃতিস্তম্ভ হিসাবে নিবন্ধিত হয়েছে। মেইমান্দ গ্রাম তার প্রাচীন ঐতিহ্যের মাধ্যমেই ইরানের সভ্যতা, সংস্কৃতি এবং গৌরবকে স্মরণ করিয়ে দেবে।  

 

Feature Image: pinterest.com 
References: 

01. Meymand. 
02. Meymand. 
03. 13 things you didnt know about meymand irans troglodyte village.