পৃথিবীতে ৭টি মহাদেশ রয়েছে। তার মধ্যে ইউরোপ একটি অন্যতম মহাদেশ। এই মহাদেশে আছে ৫০টি দেশ। আরও ৬টি দেশ আছে যা আংশিকভাবে স্বীকৃত। রয়েছে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, ইতালি, জার্মানি এবং স্পেন ইত্যাদির মত গুরুত্বপূর্ণ দেশ। তবে আজকে আমি ইউরোপের দেশ সম্পর্কে বলবো না; বরং ইউরোপের ১০টি সেরা শহর সম্পর্কে লিখবো। সেই ১০টি শহর হচ্ছে- লন্ডন, প্যারিস, মাদ্রিদ, ভেনিস, জুরিখ, আমস্টারডাম, রোম, মিউনিখ, প্রাগ এবং ভিয়েনা।
লন্ডন
ইউরোপের নাম নিয়ে চোখ বুজলেই যে শহরটির নাম শুরুতেই মনে পড়ে; সেটি হল লন্ডন, ইংল্যান্ডের রাজধানী! বিশ্বের পুরাতন শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রসিদ্ধ শহর হল – লন্ডন যা ইংল্যান্ডের দক্ষিণে অবস্থিত। ব্রিটেনের সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দুও এই শহর। এই শহরে কী নেই? আছে বিখ্যাত বাকিংহাম প্যালেস, ন্যাশনাল গ্যালারি, ব্রিটিশ মিউজিয়াম, টেট এবং টেট মডার্নসহ চমৎকার কিছু জাদুঘর। এছাড়াও আরও বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান রয়েছে। লন্ডন ঘুরতে গেলে কেনাকাটার ইচ্ছে জাগলেই পিকাডিলি সার্কাস বা পোর্টোবেলো রোড মার্কেটে কেনাকাটা করে পর্যটকেরা। নাটক দেখতে ইচ্ছে হলে ওয়েস্ট অ্যান্ডের থিয়েটার। আর শহরে সারা বছর ধরে বেশ কয়েকটি উৎসবের (যেমন চকলেট ফেস্টিভ্যাল বাই নাইট) আয়োজন তো থাকেই।
প্যারিস
ইউরোপের প্রসিদ্ধ শহরগুলোর নাম জিজ্ঞেস করলে লন্ডনের পর যে শহরের নাম মাথায় ঘুরপাক খাবে সেটি হল ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস। ফ্রান্সের উত্তর-মধ্য অংশে প্যারিস অবস্থিত। সবার কাছে এই শহর “ভালোবাসার শহর” নামে পরিচিত। আইফেল টাওয়ারের নাম নিশ্চয়ই শুনেছেন? বিখ্যাত এই টাওয়ারটি প্যারিসেই অবস্থিত। ধারণা করা হয় যে, আইফেল টাওয়ার সবচেয়ে বেশি পর্যটকদের ভ্রমণ করার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে একটি। প্যারিসে ভ্রমণ করতে গেলে আপনি অনেকগুলো জাদুঘর দেখতে পারবেন। ল্যুভর মিউজিয়াম এর মধ্যে অন্যতম।
মাদ্রিদ
স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদ হল স্পেনের দর্শন, সাহিত্য এবং অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিন্দু। পুয়ের্তা দেল সল মাদ্রিদের একটি উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান। যা গেইট অফ সান অর্থাৎ সূর্যের প্রবেশদ্বার। এছাড়াও আরও কিছু উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান হচ্ছে- প্যালাসিও রিয়েল, প্লাজা মেয়র, প্লাজা ডি সিবেলস। মিউজিও দেল প্রাডো অন্যতম মিউজিয়াম, যেখানে ৭০০০ এরও বেশি আর্টওয়ার্ক রয়েছে।
ভেনিস
ইতালির ঐতিহাসিক নগরী ভেনিস শিল্প সাহিত্য, স্থাপত্যশিল্পে যে কারও মন জুড়িয়ে দেয়। ভেনিস মূলত কতগুলো দ্বীপের সমষ্টি। ভেনিসে অসংখ্য খাল মাকড়সার জালের মত ছড়িয়ে রয়েছে। এই শহরকে দ্বিখণ্ডিত করেছে গ্র্যান্ড ক্যানেল। নৌকা অথবা স্পিডবোটে এসব খালে ঘুরে বেড়ালে চোখে পড়বে শহরের চোখ জুড়ানো রঙ, নকশা ও দারুণ স্থাপত্যশৈলীর। সান মার্কোতে আকর্ষণীয় ভৌজ প্যালেস আছে। যা এখন মূলত একটি জাদুঘর। এছাড়াও এখানে ছোট ছোট আরও অনেক পুরনো মনোমুগ্ধকর প্রাসাদ ও জাদুঘর রয়েছে। তার পাশাপাশি অনেক রকমের বুটিক, ক্যাফে ও রেস্টুরেন্টেও ঘুরতে পারবেন। ভেনিস একটি ভাসমান শহর, যা পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুও বটে!
জুরিখ
সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জুরিখ, যেখানে দিনের থেকে রাতেও সৌন্দর্য কোনও অংশে কম না! শহরের মাঝখান বরাবর বয়ে চলে এক নদী যা সাধারণ মানুষের পাশাপাশি পর্যটকদেরও মুগ্ধ করে তোলে। সেরা সুইস শহরগুলির মধ্যে অন্যতম শহর জুরিখ। কোনদিনও যদি জুরিখ ভ্রমণ করার সুযোগ পান তবে যে যে স্থানে যাবেন সেগুলো হচ্ছে- লেক জুরিখ, জুরিখ অলস্টাড, ইউটিলিবার্গ, ফরাসুস্টার, সুইস ন্যাশনাল মিউজিয়াম, জুরিখ চিড়িয়াখানা ইত্যাদি।
আমস্টারডাম
উত্তরের ভেনিস হিসেবে পরিচিত হল্যান্ডের অর্থাৎ নেদারল্যান্ডের রাজধানী আমস্টারডাম বিশ্বের অন্যতম প্রধান বন্দর, ও বাণিজ্যকেন্দ্রও বটে! ক্যানেল রিং থেকে উৎপত্তি হয়েছে এই শহরের, যেখানে আপনি নৌকাযোগে ট্যুর দিতে পারবেন। রাইক্স মিউজিয়াম; যেখানে রয়েছে বিখ্যাত চিত্রশিল্পী ভ্যান গগের চমৎকার সব সৃষ্টি। এছাড়াও রয়েছে – বিখ্যাত টিউলিপ পার্ক, অ্যানা ফ্রাঙ্কের বাসভবন ও হেরিটেজ আমস্টারডাম ইত্যাদি।
রোম
ইতালির রাজধানী রোম নগরী। যা ভ্রমণপিপাসুদের চোখে আকর্ষণীয় অনেকগুলো দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে একটি। ২০০০ বছর আগের দর্শনীয় যায়গা দেখতে রোমে আসেন লাখ লাখ পর্যটক। ইতালির আল্পস নামে পরিচিত ডলমাইটস রোমে অবস্থিত। এছাড়াও আছে মাইকেল এঞ্জেলোর বিখ্যাত পাথরের মূর্তি। রোমান সভ্যতার আকর্ষণীয় নিদর্শনে ভরপুর এই শহর। এই শহরের প্রধান সড়ক হচ্ছে ভিয়া ডেল করসো। ভ্যাটিকান জাদুঘর এবং কলোসিয়াম বিশ্বের সর্বাধিক দেখা পর্যটক গন্তব্যস্থলগুলির মধ্যে একটি।
মিউনিখ
জার্মানির প্রশাসনিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত মিউনিখ ট্রাভেলারদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। নয়েসভান্সটাইন ক্যাসেল মিউনিখের অন্যতম আকর্ষণ। এছাড়াও মিউনিখ সেন্ট্রাল স্কয়ারে আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মার্কেট, স্ট্রীট পার্ফরমার, দোকান, ক্যাফে এবং রেস্টুরেন্ট। আরও আছে পিনাকথেক মিউজিয়াম, মিউনিখ রেসিডেঞ্জ ইত্যাদি।
প্রাগ
প্রসিদ্ধ ও প্রাচীন নগরী প্রাগ, চেক রিপাবলিকের রাজধানী; যা দেশটির উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে অবস্থিত । এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের ১৩তম বৃহত্তর এই শহর ইউনেস্কোর ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যেগুলোর মধ্যে অন্যতম। ভলতাভা নদী ভ্রমণের মাধ্যমে প্রাগের প্রাচীন স্থাপনাগুলোর সৌন্দর্য আপনি অন্যরকমভাবে উপভোগ করতে পারবেন। প্রাগ সিটি মিউজিয়াম, প্রাগের ইতিহাস এর প্রতিনিধিত্ব করে। এছাড়াও আরেকটি আকর্ষণের মূল কেন্দ্র হচ্ছে চার্লস ব্রীজ যা ভলতাভা নদীর উপর অবস্থিত। সেতুর দুইপাশে আছে পাথর দিয়ে খোদাই করা অসংখ্য মূর্তি। প্রাগের আরও কিছু উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান হচ্ছে – প্রাগ ক্যাসেল, পেট্রিন টাওয়ার, ওল্ড টাউন স্কয়ার, সেন্ট ভাইটাস ক্যাথেড্রাল, প্রাগ চিড়িয়াখানা, প্রাগ অ্যাস্ট্রনমিকাল ক্লক ইত্যাদি।
ভিয়েনা
ইউরোপের সর্বশেষ সেরা শহর হচ্ছে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনা। দানিয়ুব নদীর তীরে অবস্থিত এই শহরটি বেশ প্রাচীন। ভিয়েনা ঘুরতে গেলেই সর্বপ্রথমেই যে স্থানটি ঘুরতে যাবেন সেটি হচ্ছে- হফবার্গ। এটি একটি প্যালেস। শনব্রুন প্যালেসের চারপাশ ঘিরে রয়েছে সুন্দর মনোমুগ্ধকর বাগান, যা আপনার মনকে প্রশান্তি এনে দিবে। এছাড়াও রয়েছে- বেলভেদ্রে প্যালেস, ভিয়েনা স্টেট অপেরা, আলবার্ট্রিনা, প্রাটার- ভিয়েনার ডিজনিল্যান্ড, দানিয়ুব টাওয়ার, হাউস অফ মিউজিক ইত্যাদি।
Feature Image: Canva.com
তথ্যসূত্রঃ
01. Top-10-european-cities
02. Paris
03. London
04. Madrid
05. Venice
06. Zurich
07. Amsterdam
08. Rome
09. München
10. Prague
11. Vienna