প্রতিদিন আপনার ঠিক কতটুকু ক্যালোরি দরকার?

205
0

ক্যালোরি হচ্ছে একটি মাত্রা যা খাদ্য ও পানির মাধ্যমে আমাদের শরীরে প্রবাহিত হয়। এই ক্যালোরি আমাদের শরীরের শক্তি বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয়। একজন সুস্থ ব্যক্তির জন্য প্রতিদিনে কতটুকু ক্যালোরি প্রয়োজন সেটা বিভিন্ন কারণে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।

প্রতিদিন আপনার ঠিক কতটুকু ক্যালোরি দরকাতা নির্ভর করে আপনার বয়স, লিঙ্গ, ওজন, উচ্চতা, দৈনিক কার্যকলাপ, শারীরিক পরিস্থিতি ও স্বাস্থ্যের অবস্থা ইত্যাদি উপর। আজকের আলোচনায় থাকছে প্রতিদিন একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য ঠিক কতটুকু ক্যালোরি প্রয়োজন? 

ক্যালোরি কি? 

ক্যালোরি মানে হলো মানবদেহে খাদ্য থেকে পাওয়া শক্তি। খাদ্যে পুষ্টিমান পরিমাপের একক এই ক্যালোরি। এটি শারীরিক ক্রিয়াকলাপের সময় শরীর থেকে নির্গত শক্তি পরিমাপ করতে পারে। তবে CSG পদ্ধতিতে ক্যালোরি মানে হলো তাপশক্তির একক। এর বৈজ্ঞানিক সংজ্ঞায় বলা যায় এক গ্রাম পানির তাপমাত্রা এক ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়াতে যতটুকু শক্তি খরচ হয় তাই ক্যালোরি। 

A CALORIE IS JUST A CALORIE RIGHT? - Forging Fitness in Norfolk
ক্যালোরি। Image source: Saxon CrossFit

ক্যালোরির প্রকারভেদ 

ক্যালোরিকে ২ ভাগে উল্লেখ করা হয়। যথা- 

১. ক্ষুদ্র ক্যালোরি বা গ্রাম ক্যালোরি(Calorie): যা মূলত খাদ্যে শক্তি পরিমাপ করতে ব্যবহার করা হয়। 

২. কিলোক্যালোরি (Kcal): ১ কিলোগ্রাম পানির তাপমাত্রা এক ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়াতে যতটুকু শক্তি খরচ হয় তাই কিলোক্যালোরি।

তবে এই দুই প্রকারের ক্যালোরির মধ্যে তফাৎ আছে। ১০০০ ক্যালোরি সমান ১ কিলোক্যালোরি।  

প্রতিদিন কতটুকু ক্যালোরি দরকার? 

বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য গ্রহণ করতেই হবে। তবে এমন পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করতে হবে যেন তা শরীরে পর্যাপ্ত  শক্তি উৎপাদন করতে পারে। তবে বয়স ও লিঙ্গভেদে সবার জন্য এই শক্তি বা ক্যালোরির প্রয়োজনীয়তা এক নয়। পুরুষের শরীরে মেটাবলিক রেট মহিলাদের শরীরের চেয়ে বেশি। যার ফলে পুরুষদের দৈনিক ক্যালোরির প্রয়োজনীয় পরিমাণ বেশি হতে পারে। 

বয়সভেদে একজন নারীর দৈনিক ক্যালোরির প্রয়োজনীয়তা

  • ১৯-৩০ বছর ১৮০০-২৪০০ ক্যালোরি
  • ৩১- ৬০ বছর ১৬০০-২২০০ ক্যালোরি
  • ৬০+ বছর ১৬০০-২০০০ ক্যালোরি

তবে যারা গর্ভবতী বা বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন তাদের ক্ষেত্রে এই অনুমানগুলি প্রযোজ্য নয়। কারণ তাদের আরও বেশি ক্যালোরির প্রয়োজন হবে। 

বয়সভেদে একজন পুরুষের দৈনিক ক্যালোরির প্রয়োজনীয়তা

  • ১৯-৩০ বছর ২৪০০-৩০০০ ক্যালোরি
  • ৩১-৬০ বছর ২২০০-৩০০০ ক্যালোরি
  • ৬০+ বছর ২২০০-২৬০০ ক্যালোরি

তবে যেসব পুরুষ নিয়মিত ব্যায়াম করে বা খেলাধুলা করে তাদের আরও ক্যালোরির প্রয়োজন হতে পারে। 

বয়সভেদে শিশুদের দৈনিক ক্যালোরির প্রয়োজনীয়তা

  • ২-৪ বছরের ছেলে শিশু: ১০০০-১৬০০ ক্যালোরি ও মেয়ে শিশু: ১০০০-১৪০০ ক্যালোরি।
  • ৫-৮ বছর ছেলে শিশু : ১২০০-২০০০ক্যালোরি ও মেয়ে শিশু: ১২০০-১৮০০ ক্যালোরি।
  • ৯-১৩ বছর ছেলে শিশু: ১৬০০-২৬০০ ক্যালোরি ও মেয়ে শিশু: ১৪০০-২২০০ ক্যালোরি।
  • ১৪-১৮ বছর কিশোর : ২০০০-৩২০০ ক্যালোরি ও কিশোরী: ১৮০০-২৪০০ ক্যালোরি। 
How Many Calories Should I Eat A Day? - My Power Life
প্রতিদিন আপনার ঠিক কতটুকু ক্যালোরি দরকার। Image source: Power Life

ক্যালোরি কেন গুরুত্বপূর্ণ?

আমরা যে খাবার খাই তা থেকে পাওয়া শক্তির সমষ্টিই ক্যালোরি। ক্যালোরি থেকে পাওয়া শক্তি দেহে তাপ উৎপন্ন করে। শরীরের কার্যক্রম যথাযথভাবে চালানোর জন্য এই তাপশক্তি প্রয়োজন। একটি গাড়ির যদি চলার মতো পেট্রোল বা গ্যাস না থাকে তাহলে তো সেটি চলবে না। তেমনি মানবদেহও ক্যালোরি ব্যতীত চলতে পারেনা। সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে ক্যালোরি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ।  

খাবারের মাধ্যমে যে ক্যালোরি দেহে জমা হয় তার উপর দেহের ওজন নির্ভর করে। যেমন দেহের মোট চাহিদার চেয়ে বেশি ক্যালোরি গ্রহণ করলে ওজন বৃদ্ধি পায় এবং শরীরে চর্বি জমে। আবার প্রয়োজনের তুলনায় কম ক্যালোরি গ্রহণ করলে ওজন হ্রাস পায়। এজন্য ক্যালোরি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকলে স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে। 

ক্যালোরি কীভাবে নির্ধারণ করতে হয়?

খাবারে উপস্থিত ক্যালোরি নির্ধারণ করার কিছু উপায় আছে। কারণ ওজন কমানোর বা বাড়ানোর জন্য খাবারের ক্যালোরি নির্ধারণ করা জরুরি। সাধারণত খাদ্যের প্রধান তিনটি উপাদান শর্করা, আমিষ ও চর্বি থেকে ক্যালোরির উদ্ভব। এর মধ্যে চর্বি হলো সর্বাধিক ক্যালোরি সমৃদ্ধ পুষ্টি উপাদান। ১ গ্রাম চর্বিতে আনুমানিক ৯ ক্যালোরি থাকে। আর প্রতি ১ গ্রাম শর্করা ও আমিষে আনুমানিক ৪ ক্যালোরি করে উপস্থিত থাকে। 

যদি শর্করা, আমিষ ও চর্বি থেকে আসা ক্যালোরির সঠিক সংখ্যা জানতে হয়, তাহলে খাবারের পুষ্টি উপাদানের পরিমাণকে অংকের মাধ্যমে হিসাব করে বের করতে হবে। যেমন এক প্লেট রান্না করা পাস্তায় যদি ২০ গ্রাম আমিষ, ৩৫ গ্রাম শর্করা  এবং ১৫ গ্রাম চর্বি থাকে তাহলে এতে ক্যালোরির সংখ্যা খুঁজে পেতে নিচের গুণটি করা যেতে পারে। 

  • ২০×৪=৮০ ক্যালোরি
  • ৩৫×৪=১৪০ ক্যালোরি
  • ১৫×৯=১৩৫ ক্যালোরি

এভাবে খাবারের ক্যালোরির হিসাব বের করে খাবার খেলে ওজন ঠিক রাখা সহজ হবে।

BMR এর মাধ্যমে ক্যালোরি নির্ধারণ 

ক্যালোরি নির্ধারণের জনপ্রিয় উপায় হলো BMR হিসাব করা। BMR মানে হলো বেসেল মেটাবলিক রেট বা মৌলিক বিপাকীয় হার। এটি অনুমান করার একটি কার্যকর উপায় হলো মিফলিন সেন্ট জিওর সমীকরণ: 

১. পুরুষ: ১০ × ওজন (কেজি) + ৬.২৫ × উচ্চতা (সেমি) – ৫ × বয়স + ৫
২. মহিলা: ১০× ওজন (কেজি) + ৬.২৫ × উচ্চতা (সেমি) – ৫ × বয়স – ১৬১

এই সমীকরণ থেকে প্রাপ্ত ফলাফলকে নিচের নিয়মে গুণ করলে ব্যাক্তিভেদে ক্যালোরি নির্ণয় করা সহজ হয়। 

  • কেউ যদি খুব কম ব্যায়াম করে বা একেবারেই না করে তবে তার দৈনিক ক্যালোরির প্রয়োজন BMR×১.২।
  • কেউ যদি সপ্তাহে এক থেকে তিনবার হালকা ব্যায়াম করে তাহলে তার দৈনিক ক্যালোরির প্রয়োজন BMR×১.৩৭৫।
  • যারা সপ্তাহে ৩ থেকে ৫ বার পরিমিত ব্যায়াম করে তাদের দৈনিক ক্যালোরির প্রয়োজন BMR×১.৫৫।
  • যদি কেউ প্রতি সপ্তাহে ছয় থেকে সাত বার ব্যায়াম করে তাহলে তার দৈনিক ক্যালোরির প্রয়োজন BMR×১.৭২৫।
  • কেউ যদি দিনে দুবার ব্যায়াম করে, অতিরিক্ত ভারী কাজ করে তাহলে তার দৈনিক ক্যালোরির প্রয়োজন BMR×১.৯। 
BMR হিসাব। Image source: feastgood.com

কোন খাবারে কতটুকু ক্যালোরি আছে?

ক্যালোরি হিসাব করে খাবার গ্রহণ করতে চাইলে কোন খাবারে কতটুকু ক্যালোরি আছে তা জানা দরকার। মৌলিক কিছু খাবারের ক্যালোরির পরিমাণ নিচে দেওয়া হলো: 

শর্করা  

  • ভাত – ১ কাপ – ২১৮ ক্যালোরি
  • পোলাও – ১ কাপ – ২৫৮ ক্যালোরি
  • বিরিয়ানি – ১ কাপ – (৪৫০-৪৭০) ক্যালোরি
  • খিচুড়ি    – ১ কাপ – ২০০ ক্যালোরি
  • পাউরুটি – ১ পিস – (৬০-৮৯) ক্যালোরি
  • বান রুটি – ১টি – ১৫০ ক্যালোরি
  • রুমালি রুটি – ১টি – ২০০ ক্যালোরি
  • তন্দুরি রুটি  – ১টি – ১৪৭ ক্যালোরি
  • লুচি – ১টি – ১৪০ ক্যালোরি
  • নান রুটি – ১টি – ৩১২ ক্যালোরি
  • চালের রুটি – ১টি – ১০৫ ক্যালোরি
  • পরোটা – ১টি – ২৪৩-২৯০ ক্যালোরি
  • সাদা আটা – ১কাপ – ৩৬৪ ক্যালোরি
  • লাল আটা – ১ কাপ – ৩৫৬ ক্যালোরি
  • ময়দা – ১ কাপ – ৪৫৫ ক্যালোরি
  • নুডলস সিদ্ধ – ১ কাপ – ২২০ ক্যালোরি
  • ওটস – ১ কাপ (৩৫ গ্রাম) – ৩৭০ ক্যালোরি
  • পেস্তা বাদাম – ১ মুঠো – ১৮৮ ক্যালোরি
  • কাজু বাদাম -১ মুঠো – ১৭৮ ক্যালোরি
  • চিনা বাদাম -১ মুঠো – ১৭০ ক্যালোরি
  • কাঠ বাদাম -১ মুঠো – ১৬৮ ক্যালোরি
  • কিশমিশ – ১/২ কাপ – ২১০ ক্যালোরি
  • চিনি – ১ চা চামচ – ১৬ ক্যালোরি
  • গুড় – ১ চা চামচ – ২৫ ক্যালোরি
  • মধু – ১ চা চামচ – ২২ ক্যালোরি

আমিষ 

  • মুরগির মাংস – ১০০ গ্রাম (২৫০ – ৩২০) ক্যালোরি
  • মুরগির কলিজা – ১০০ গ্রাম – ১৭২ ক্যালোরি
  • গরু ভুনা মাংস – ১ কাপ – ৪৩৪ ক্যালোরি
  • গরুর কলিজা – ১০০ গ্রাম – ১৩৫ ক্যালোরি
  • গরুর কিমা রান্না করা – ১ কাপ – ৫৫৫ ক্যালোরি 
  • খাসির কিমা রান্না – ১০০ গ্রাম – ১৭৫ ক্যালোরি
  • খাসির  মাংস -১০০ গ্রাম – (১৪৩ -৩২০) ক্যালোরি
  • মাছ  ভুনা – ১০০ গ্রাম – (৩২৩-৫০০) ক্যালোরি
  • চিংড়ি  – ১০০ গ্রাম – ২৬১ ক্যালোরি
  • বুটের ডাল (রান্না করা) – ১ কাপ- ১০৭ ক্যালোরি 
  • মুগ ডাল (রান্না করা) – ১ কাপ – ১৫০ ক্যালোরি 
  • মসুর ডাল (রান্না করা) – ১ কাপ – ২২৬ ক্যালোরি
  • ডিম পোচ  (তেলে ভাজা)-১ টি –  ২০২ ক্যালোরি 
  • ডিম সিদ্ধ – ১টি – ৭৫ ক্যালোরি
  • আলু ভর্তা – ১০০ গ্রাম – ১৫০ ক্যালোরি 
  • ঢেরস ভাজি – ১  কাপ – ১৩০ ক্যালোরি
  • বেগুন ভাজা -১ পিস – ১১৪ ক্যালোরি 
  • মিষ্টি আলু – ১০০ গ্রাম – ৭০ ক্যালোরি
  • শালগম – ১০০ গ্রাম – ৭০ ক্যালোরি 
  • বেগুন ভর্তা- ১০০ গ্রাম-৭০ ক্যালোরি
  • শশা – ১/২ কাপ – ৪ ক্যালোরি
  • গাজর – ১ কাপ – ৫২ ক্যালোরি
  • টমেটো – ১টি – ৩৯ ক্যালোরি
  • লেটুস – ৩টি -৫ ক্যালোরি
  • ক্যাপসিকাম – ১টি – ১৫ ক্যালোরি
  • মাশরুম – ৬০ গ্রাম – ১৫ ক্যালোরি
  • ডাবের পানি – ১ গ্লাস – ৫০ ক্যালোরি  
20 High-Protein, Low-Calorie Foods Worth Subbing Into Your Diet | BarBend
আমিষ জাতীয় খাবার। Image source: BarBend

চর্বি 

  • দুধ – ১ কাপ – ১৪৬ ক্যালোরি
  • কনডেন্সড মিল্ক – ১/২ কাপ – ৪৯০ ক্যালোরি
  • মেয়নেজ- ১ টেবিল চামচ – ১১০ ক্যালোরি
  • পিনাট বাটার – ১ টেবিল চামচ – ৯৪ ক্যালোরি
  • টমেটো সস – ১ টেবিল চামচ – ২৫ ক্যালোরি
  • সয়াবিন তেল – ১ টেবিল চামচ – ১২০ ক্যালোরি
  • জলপাই তেল – ১ টেবিল চামচ – ১১৯ ক্যালোরি
  • সরষের তেল – ১ টেবিল চামচ – ৫৫ ক্যালোরি
  • মাখন – ১ টেবিল চামচ – ১০০ ক্যালোরি
  • ঘি – ১ টেবিল চামচ – ১১২ ক্যালোরি
  • অলিভ/সান ফ্লাওয়ার তেল – ১ টেবিল চামচ – ১৩৫ ক্যালোরি

ক্যালোরি কি কি কাজে খরচ হয়?

মানবদেহ যে শক্তি গ্রহণ করে তার প্রায় ২০ শতাংশ মস্তিষ্কের বিপাকের জন্য ব্যবহৃত হয়। বাকি বেশিরভাগই মূল বিপাক তথা বিশ্রাম, রক্ত ​​সঞ্চালন, হজম এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের মতো কাজগুলির জন্য ব্যবহৃত হয়। ঠাণ্ডা পরিবেশে দেহের তাপমাত্রা স্থির রাখার জন্য বেশি ক্যালোরি প্রয়োজন কারণ বিপাক প্রক্রিয়ার তখন আরও তাপ উৎপাদন করতে হয়। অপরদিকে উষ্ণ পরিবেশে অপেক্ষাকৃত কম ক্যালোরি প্রয়োজন হয়।

দেহের মাংসপেশী ও হাড়ের গতি বজায় রাখতে এবং চারপাশে চলাফেরা করার জন্য ক্যালোরি খরচ হয়। এছাড়া, বিপাকীয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোষগুলি গ্লুকোজের সাথে অক্সিজেন বিক্রিয়া করে কার্বন-ডাই-অক্সাইড, পানি ও শক্তি তৈরি করে। এর জন্যও ক্যালোরি খরচ হয়। মোট কথা শারীরিক ক্রিয়াকলাপ যেমন শ্বাস-প্রশ্বাস, চিন্তাভাবনা, দেহভঙ্গি বজায় রাখা, ঘুরে বেড়ানোর জন্য ক্যালোরি খরচ হয়। 

 

 

 

Feature Image: thesun.co.uk 
References: 

01. How Many Calories to Lose Weight. 
02. How Many Calories Per Day. 
03. What Should My Daily Intake of Calories Be?