মানব মস্তিষ্কের যত গূঢ় রহস্য

464
0
Facts of Brain
Facts of Brain

মানুষ হল সৃষ্টির সেরা জীব। এর অন্যতম কারন মানুষ চিন্তা করতে পারে, কথা বলতে পারে। মানুষের মস্তিষ্ক খুব ইন্টারেস্টিং একটা বিষয়। যত গবেষণা করা হবে, তত বেশি অদ্ভুত তথ্য বের হবে। প্রতিটি মানুষের আঙুলের ছাপ যেমন আলাদা, ঠিক তেমনভাবেই মস্তিষ্কের প্যাটার্ন ও আলাদা। মস্তিষ্কের জানা অজানা কিছু তথ্য নিয়েই আজকের এই আয়োজন। 

The human brain is an incredible pattern-matching machine.

Jeff Bezos

মানব মস্তিষ্ক নিয়ে যত বেশি কথা বলা যাবে, তত বেশি অবাক করা তথ্য মিলবে। এসব নিয়ে হাজার রকম মিথ্যে-সত্য তথ্য আছে। কেউ জেনে কিংবা না জেনেই তা বিশ্বাস করি। এতে করে সারাজীবন অনেক ভুল তথ্য দিয়ে মস্তিষ্ক পূর্ণ করি, সেটা আবার মস্তিষ্ক নিয়েই, যেটা মস্তিষ্কও জানে না এটা ভুল। চলুন চেনা অচেনা কিছু ভুল ভাঙ্গাই। 

১.

আপনার কি মনে হয়, আপনার উপর আপনার নিয়ন্ত্রণ আছে? এই ভাবনা অনেক বড় একটা মিথ। কারন আমরা যত সিদ্ধান্ত নিই না কেন, হুট করে বলুন বা ভেবে চিন্তেই বলুন, সব আমাদের অবচেতন মস্তিষ্কের কাজ। প্রায় ৯৫% সিদ্ধান্ত অবচেতনভাবেই গৃহীত। 

২. 

আমাদের ব্রেইনে ঠিক কতগুলো সেল আছে তা নির্দিষ্টভাবে বলা বেশ শক্ত। তবে ধারনা করা হয় কম বেশি ৮৬ বিলিয়নের মত সেল রয়েছে। আবার এই সেলগুলো কিন্তু এক নয়। আমাদের সেলের প্রকারভেদ প্রায় ১০,০০০।

৩.

কেবল বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেন দরকার তা কিন্তু না, অক্সিজেনের দরকারের কারন আমাদের ব্রেইন সেল ঠিকঠাক কাজ করার জন্য।  ৪-৫ মিনিট যদি মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ না করা হয়, তাহলে কিছু ব্রেইন সেল ড্যামেজ এবং কিছু সেল ডেড হয়ে যেতে পারে। 

৪.

২০ ওয়াটের বাল্ব জ্বালাতে সক্ষম একটি পূর্ণ এবং সুস্থ মস্তিষ্ক।  এর অর্থ হল, ব্রেইন ২০ ওয়াটের মত বিদ্যুৎ তৈরি করে। অন্যদিকে আমাদের মস্তিষ্কে থাকা তথ্য ২৬৮ মাইল/ঘন্টা বেগে ভ্রমণ করে। যেটা যেকোন শক্তিশালী গাড়ির চাইতেও দ্রুতগতির।

Facts of Brain
Image Source: pixabay.com

৫.

কোন লেখা বা ছবি আঁকা বা কাজের জন্য আমরা আইডিয়া খুঁজে ফিরি। গুগোল সার্চ বারে হাজার খানেক, ফ্রি এবং পেইড আইডিয়া জেনারেটর পাবেন। কিন্তু সবকিছুর চাইতে বড় আইডিয়া জেনারেটর হল আমাদের মস্তিষ্ক। দিনে কমপক্ষে ৭০,০০০ আইডিয়া উৎপাদন করতে সক্ষম একটি সুস্থ মস্তিষ্ক। 

৬.

আমাদের মুঠোফোনে কিছু টানা ছবি কিংবা ভিডিও ক্যাপচার করলে, প্রয়োজনীয় দুটো- চারটে এপস ব্যবহারেই র‍্যাম এর অনেক খানি ব্যবহার করা হয়ে যায়। মেমরি স্পেস বেশ কমে যায়। অনেক কিছু ডিলেট কিংবা মুভ করে অন্য কোথাও রাখতে হয়। কিন্তু আমাদের মস্তিষ্কের র‍্যাম বা স্টোরেজ ক্যাপাসিটি কিন্তু সহজে পূর্ণ হবে না। সহজ ভাষায় আনলিমিটেড স্টোরেজ আছে। আধুনিক কিছু গবেষণা অনুসারে, এটাকে পেরাবাইট রেঞ্জে মাপা যায়। পেরাবাইট হল কুয়ার্ডিলিয়ন বা ১০^১৫ বাইট। 

৭.

একটি সুপার কম্পিউটার যা করতে পারবে, মানব মস্তিষ্ক তার চেয়ে বহু উন্নতমানের ভাবনা ভাবতে পারবে এবং কাজ করতে পারে। আই বি এম সিকুইয়োয়া (IBM Sequoia) বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সুপার ফাস্ট কম্পিউটার। মানব মস্তিষ্ক প্রায় এর চাইতে ৩০ গুণ বেশি শক্তিশালী। 

অন্যদিকে জাপানের কে কম্পিউটার হলো বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী কম্পিউটার। এটি যে কাজ করতে ৪০ মিনিট সময় নেয়, আমাদের মস্তিষ্ক সেই কাজ করতে সেকেন্ডের বেশি সময় নেবে না। 

৮.

ব্যথার অনুভূতি আমাদের মস্তিষ্কে উৎপাদিত হয়। কিন্তু মজার ব্যাপার কি জানেন? কোন ব্যথা বোঝা বা গ্রহনের ক্ষমতা মস্তিষ্কের নেই। মাথা ব্যথা মনে হয় এটি মস্তিষ্ক থেকে শুরু কিন্তু এটা হল ত্বক, জয়েন্ট পেইন, সাইনাস, ব্লাড ভেসেল, মাসল সহ নানা শরীরীয় অংশের সংবেদনশীলতা থেকে আসে। 

Facts of Brain
Image Source: pixabay.com

৯.

আরো একটা চেনা ফ্যাক্ট শেয়ার করি আপনাদের সাথে। ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, কোন শব্দের বর্ণগুলো কীভাবে সাজানো আছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ না। কোন শব্দের প্রথম আর শেষ শব্দ যদি নিজের জায়গায় থাকে, তাহলে বাকী শব্দ মানব মস্তিষ্ক নিজেরায় সাজিয়ে গুছিয়ে নেয়। ধরুন, Read কে Raed লেখা থাকলে আমরা আসল শব্দটায় পড়ব।

১০.

পৃথিবীতে যত মানুষ আছে, প্রত্যেকের ফিঙ্গার প্রিন্ট আলাদা । হিউম্যান ব্রেইন ও ঠিক তাই। প্রতিটি মানুষের ব্রেইনের নার্ভের কানেক্টিভিটি একদম আলাদা। আবার অন্যদিকে আমাদের ব্রেইন এর টিস্যুর ঘনত্ব কিন্তু বেশি নয়। সহজ ভাষায় একদম পলকা, নরম, একটু আঠালো ধরনের। 

এই দশটি ছাড়াও আমাদের মস্তিষ্ক নিয়ে আরো শ’খানেক ফ্যাক্ট বলে দেয়া যায়। আমাদের মস্তিষ্ক যদি অর্ধেকও কাজ করে, তবুও এতে কোন প্রভাব সেভাবে পড়বে না। 

আমরা যে কেবল মস্তিষ্ক নিয়ে মজাদার তথ্য শেয়ার করতে এসেছি সেটা কিন্তু না, আমাদের মূল উদ্দেশ্য হল ব্রেইন আমাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা আপনাদের জানানো। হয়তো নিজের অজান্তে ভুল তথ্য দিয়ে ঠেসে ফেলছেন মস্তিষ্ক, অজান্তে ক্ষতি করে ফেলছেন মনের।

মানসিক চাপ, ডিপ্রেশন বা উদ্বেগের দরুন মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটছে। এ ধরনের ক্ষতি থেকে বাঁচতে হলে মনের এবং শরীরের যত্ন নিন।  কারণ সব কিছুই একে ওপরের সাথে ওতোপ্রত ভাবে জড়িত, মস্তিষ্কের সাথে শরীরের বাকী সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গ। একটা অংশ সুস্থ থাকলে অন্য অংশও সুস্থ থাকবে।

 

Feature Image: pixabay.com 
References: 

1. https://www.buzzfeed.com/audreyworboys/facts-about-brain. 
2. https://bebrainfit.com/human-brain-facts. 
3. 7 facts about the brain that incline the mind to joy.