ডিজিটাল মার্কেটিং এর ইতিহাস ও উন্নতির ধারা

466
0

এক কথায় বলতে গেলে, টেকনোলজি বা ইন্টারনেট ব্যবহার করে পণ্য বা সেবার বিজ্ঞাপন দেয়াটাই ডিজিটাল মার্কেটিং। মার্কেটিং মানেই হলো সঠিক সময়ে, সঠিক জায়গায় গ্রাহকের সাথে সংযুক্ত হওয়া। নিজের দিকেই তাকিয়ে দেখুন, আপনি অবসর সময়টা কাটান কিভাবে? নিশ্চয় ডিজিটাল কোন প্ল্যাটফর্মে! 

অনূরুপভাবেই যেকোনো ব্যবসায়ের টার্গেট গ্রাহকের দেখা মেলে নির্দিষ্ট কোন প্ল্যাটফর্মে। আর তাই বিজনেসগুলো এখন নজর দিচ্ছে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের দিকেই, যেমন- সার্চ ইঞ্জিন, সোশাল মিডিয়া, মেইল মার্কেটিং বা নিজস্ব ওয়েবসাইট ইত্যাদিতে। 

ডিজিটাল মার্কেটিং টার্মটির উদ্ভব 

ঠিক ১৯৯০ সালেই ডিজিটাল মার্কেটিং টার্মটির ব্যবহার শুরু হয়েছিল। তখন থেকেই ইন্টারনেট এবং ওয়েব ১.০ এর উন্নতি ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছিল। ইউজাররা ওয়েব ১.০ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে যেকোনো তথ্য সহজেই খুঁজে নিতে পারতো। কিন্তু সেগুলো ওয়েবের ভেতরে শেয়ার করতে পারতো না। আর তখন বিশ্বব্যাপী মার্কেটিয়াররা বেশ সন্দিহান ছিল ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে তাদের স্ট্র‌্যাটিজিগুলো কাজ করবে কিনা তা নিয়ে।  

ডিজিটাল মার্কেটিং।Image Source: Campaign Creators/Unsplash

ক্লিকেবল ব্যানার, ১৯৯৩

১৯৯৩ সালে যখন Hot-wired নামে একটি প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞাপন দেয়ার জন্য কিছু ব্যানার অ্যাডস ক্রয় করে তখন থেকেই ক্লিকেবল ব্যানারের পদযাত্রা শুরু হয়। তখন থেকেই ডিজিটালি মার্কেটিং করার আইডিয়াটা সবার কাছে বোধগম্য হতে শুরু করে। 

ইয়াহু, ১৯৯৪

১৯৯৪ সালে ডিজিটাল মার্কেটপ্লেসে আসে নতুন টেকনোলজি, আমাদের সবার পরিচিত ‘ইয়াহু’ যার প্রতিষ্ঠাতা Jerry Yang। এটি আবার ‘Jerry’s Guide to the World Wide Web’ নামেও বহুল পরিচিত। ইয়াহু প্রথম বছরেই এক মিলিয়ন ইউজার পায়। মূলত এটিই ডিজিটাল মার্কেটিং এর স্পেসটাকে পুরো বদলে দিতে সাহায্য করে। কোম্পানিগুলো তাদের ওয়েবাসাইটকে অপটিমাইজ করে সার্চ ইঞ্জিন এর র‌্যাংকে নিয়ে আসতে চায়। ১৯৯৬ সালে HotBot, LookSmart, এবং Alexa নামের আরো কিছু সার্চ ইঞ্জিন উঠে আসে।  

গুগল, ১৯৯৮

১৯৯৮ সালে আবির্ভাব ঘটে গুগলের। মাইক্রোসফট লঞ্চ করে ‘MSN সার্চ ইঞ্জিন’, ইয়াহু নিয়ে আসে ‘ইয়াহু ওয়েব সার্চ’। তার ঠিক দুই বছর পর, ইন্টারনেট বাবল ব্রাস্ট হয়, যেখানে সব ছোট ছোট সার্চ ইঞ্জিনগুলো পেছনে পড়ে যায় বা মার্কেট থেকে বের হয়ে যায়, আর দৈত্যাকৃতির সার্চ ইঞ্জিনগুলোকে আরো ফুলে-ফেঁপে ওঠার জন্য জায়গা করে দেয়। 

সার্চ ইঞ্জিন এর তড়িৎ গতি, ২০০৬

২০০৬ সালে সার্চ ইঞ্জিন এর ট্রাফিক তড়িৎ গতিতে বেড়ে যায়।  শুধুমাত্র এক মাসেই ৬.৪ বিলিয়ন ট্রাফিক বাড়ে। আর এদিকে মাইক্রোসফট গুগল আর ইয়াহু এর সাথে পাল্লা দিয়ে, তাদের আগের সার্চ ইঞ্জিন MSN কে বাদ দিয়ে নিয়ে আসে নতুন সার্চ ইঞ্জিন ‘Live Search’। 

লাইভ সার্ভ ইঞ্জিনের লোগো। Image Source: pinterest.com

ওয়েব ২.০

তারপর আসলো ওয়েব ২.০, যেটা নিষ্ক্রিয় ইউজারদের সক্রিয় হতে বাধ্য করলো। ইউজাররা, অন্য ইউজার বা কোন ব্যবসায়ের সাথে যোগাযোগ করা করতে লাগলো। ২০০৪ থেকে শুরু হলো ইন্টারনেট অ্যাডভারটারইজিং, শুধুমাত্র US এ মার্কেটিং এর খরচ ছিল প্রায় ২.৯ বিলিয়ন ডলার। 

সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইট

MySpace ছিল প্রথম সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইট। অধিকাংশ কোম্পানি বুঝতে পারলো এরকম নতুন, ফ্রেশ সোশাল মিডিয়াগুলো পণ্যের ব্র‌্যান্ডিং এর জন্য নতুন দুয়ার খুলবে। সত্যিই, এটা ছিল বিজনেস এর জন্য নতুন একটি চাপ্টার। এই নতুন রিসোর্সগুলোর সাথে, মার্কেটারদের নতুন অ্যাপ্রোচ মিলিত হয়ে তৈরী হলো ব্র‌্যান্ডগুলোর প্রমোশন আর সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলোর আরো বড় হওয়া।  

কুকিজ

ডিজিটাল মার্কেটিং ইন্ডাস্ট্রিতে গুরুত্বপূর্ন মাইলস্টোন সেট করে ‘কুকিজ’। অ্যাডভারটাইজাররা টেকনোলজিকে ব্যবহার করতে নতুন নতুন টেকনিক ব্যবহার করতে শুরু করেন। এমনই একটি টেকনিক ইউজারদের কমন ব্রাউজিং ট্র‌্যাক করে, তাদের চাহিদা মাফিক পন্যের বিজ্ঞাপন দেখানো।

প্রথম কুকিজটি ডিজাইন করা হয়েছিল ইউজারদের হ্যাবিট রেকর্ড করার জন্য। বর্তমানে মার্কেটাররা কুুুকিজগুলো কোড করেন ভিন্ন ভিন্ন ইউজার-ডাটা (ব্যবহারযোগ্য) সংগ্রহের জন্য।

৫টি ডিজিটাল মার্কেটিং টার্নিং পয়েন্ট 

সার্চ ইঞ্জিন  

১৯৯১ সালে, ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব এর শুরুর দিকে এটি তেমন প্রভাব বিস্তার করে উঠতে পারেনি। মূলত গুগল আসার পর থেকেই মানুষ ওয়েব ব্যবহারের দিকে ঝুকে পরে। এরপর সার্চ ইঞ্জিনগুলো ওয়েব পেইজ ক্রল করে এবং সার্চ বার-এ ব্যবহার হয় এমন কিওয়ার্ডগুলো জমা করতে থাকে। আর এর ফলেই সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং বা (SEM) এর যাত্রা শুরু হয়, সেই সাথে শুরু হয় সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO) এবং পেইড অ্যাডভারটাইজিং।   

ডিজিটাল মার্কেটিং। Image Source: Carlos Muza/Unsplash

সোশাল মিডিয়া

ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবে দিনকে দিন তথ্য শেয়ার করার বিশেষ স্পেস তৈরি হচ্ছিল। সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোতে (ফেসবুক, টুইটার) মুখ্য বিষয় ছিল এক অপরের সাথে তথ্য আদান-প্রদান ও বেশী বেশী মানুষের সাথে সংযুক্ত হওয়া। 

সোশাল মিডিয়ার ফলে বিজনেসগুলো সহজেই বিশ্বের সকল গ্রাহকদের সাথে সংযুক্ত হতে পারে। মার্কেটিয়াররা ব্র‌্যান্ড অ্যাওয়ারনেস বাড়াতে আরো কিছু কাজ করছিল। যেমন- নির্দিষ্ট গ্রাহকের জন্য পেইড অ্যাড, ইনফ্লুয়েন্সারদের দ্বারা ফলোয়ার বাড়ানো ইত্যাদি। 

উদাহরনস্বরূপ, ২০০৪ সালে লঞ্চ হওয়া ফেসবুক ২০০৭ সালেই এর ইউজারের সংখ্যা দাঁড়ায় এক মিলিয়নে। একই বছরে যখন সেল্ফ-সার্ভিস অ্যাড প্ল্যাটফর্ম চালু করে তখন এর রেভিনিউ দাঁড়ায় প্রায় ৭০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। 

টার্গেটেড ক্যাম্পেইন ও ভয়েস সার্চ

কাস্টমার রিলেশনশিপ ম্যানেজমেন্ট এর দ্বারা কাস্টমারদের সাথে লং-টার্ম সম্পর্ক যেমন ধরে রাখা যায় তেমনি টার্গেটেড মার্কেটিং ক্যাম্পেইন সাজানো যায়। CRM টুলগুলো কাস্টমারদের বায়িং হ্যাবিটকে লক্ষ্য রেখে টার্গেটেড অডিয়েন্স খুজে বের করে। মার্কেটিং এর দুনিয়ায় নতুন সংযোগ হলো, ভয়েস সার্চ। এর দ্বারা কাস্টমার দের কষ্ট করে লিখতে হয় না, মুখে বললেই কতো কতো পণ্যের এডস চলে আসে।

ডিজিটাল মার্কেটিং এর ফিউচার

বর্তমান ট্রেন্ডের আলোকে যদি বলি, মার্কেটিং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর অনেক ব্যবহার দেখা যাচ্ছে। যার দ্বারা কন্টেন্ট ক্রিয়েশন থেকে শুরু করে প্রোডাক্ট রেকোমেন্ডশন, ই-কমার্স ট্রানজেকশন সবই করা যাচ্ছে। এছাড়াও কাস্টমার এঙ্গেজমেন্ট এর জন্য চ্যাটবট এর ব্যবহারও উত্তোরত্তর বাড়ছে। যেখানে বটগুলো মানুষের সব ধরনের প্রশ্নের উত্তর সহজেই দিয়ে দিচ্ছে। তদুপরি, এই ট্রেন্ড গুলো মার্কেটিং স্ট্র‌্যাটেজি গুলোকে আরো স্পেসিফিক করছে এবং কাস্টমারদের টেকনোলজি দ্বারা সাহায্য করছে। 

 

Feature image: Pershing.com 
Reference:

01. History and Evolution of Digital Marketing. 
02. The History and Evolution of Digital Marketing.