অ্যাপল সিডার ভিনেগার নিয়ে যত কথা

290
0

সময়ের পরিবর্তনে অ্যাপল সিডার ভিনেগার হয়ে উঠেছে তুমুল জনপ্রিয় একটি নাম। বর্তমানে অ্যাপল সিডার ভিনেগারের নাম শুনেননি বা এটা নিয়ে জানেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এটি নিয়ে লিখা শুরু করলে আদৌ শেষ করা যাবে কিনা সন্দিহান। এর কারণও আছে বটে। 

গ্যাস্ট্রিকের মাত্রা কমানো থেকে শুরু করে হরেক কাজের মহৌষধ হিসেবে ধরা হয় এই অ্যাপল সিডার ভিনেগারকে। বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে, রূপচর্চা হোক বা ওজন কমানো অনেকেই এসবকিছুর সমাধান পেয়েছেন অ্যাপেল সিডার ভিনেগারে। এছাড়াও, বাসন-পত্র কিংবা ফ্লোরের দাগ দূর করতেও দারূণভাবে কাজে লাগে এটি। 

অ্যাপেল সিডার ভিনেগার কি?  

নামেই বোঝা যাচ্ছে এটি এমন একটি ভিনেগার যা অ্যাপল দিয়েই তৈরি হয়। অ্যাপল সিডার ভিনেগার মূলত অ্যাপেলের রস বা জুস থেকে তৈরি হওয়া এক ধরণের ভিনেগার। অ্যাপলের রস, ইষ্ট ও চিনির সংমিশ্রণে তৈরি এই ভিনেগার আচার, সালাদ কিংবা খাবার ম্যারিনেটের কাজ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এছাড়াও, বহু আগে থেকেই মানুষ এটি বুক জ্বালাপোড়ার ওষুধ হিসেবে সেবন করে আসছে।  

সাধারণত বাজারে দুই ধরণের অ্যাপল সিডার ভিনেগার দেখতে পাওয়া যায়। যেমন- 

  • পরিশুদ্ধ বা ফিল্টার করা ভিনেগার
  • অপরিশুদ্ধ ভিনেগার
apple cider vinegar
Image Source: vecteezy.com

পরিশুদ্ধ বা ফিল্টার করা ভিনেগার: ফিল্টার করা ভিনেগার যেটি সাধারণত ক্লিয়ার ও প্যাস্টিসাইডযুক্ত থাকে। দীর্ঘদিন সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ধরণের কেমিক্যালজাতীয় প্যাস্টিসাইডস অ্যাড করা হয়ে থাকে এই ভিনেগারে। 

অপরিশুদ্ধ ভিনেগার: আরেক ধরণের অ্যাপল সিডার ভিনেগার রয়েছে, যেটি সম্পুর্ণ অপরিশোধিত ফলে এটি দেখতে কিছুটা ঘোলাটে হয়। এই ঘোলাটে  অংশটি ব্যাকটেরিয়া ও ইষ্টের তৈরি এবং একে ‘মাদার’ বলা হয়।  

যেহেতু এখানে উপকারী ব্যাকটেরিয়াগুলোকে ফিল্টার করা হয় না, তাই এটিতে পুষ্টিগুণ তুলনামূলক বেশি থাকে। এই দুই ধরণের ছাড়াও লোকাল মার্কেটগুলোতে অ্যাপল সিডার ভিনেগারের তৈরি নানা ধরনের পাউডার ও বড়ি পাওয়া যায়। 

এক জরিপে দেখা গিয়েছে অ্যাপল সিডার ভিনেগারের কিছু চমৎকার হেলথ বেনিফিট রয়েছে। যেমন- ওজন হ্রাস ও রক্তে সুগারের পরিমাণ কমানো; যদিও এখনো বৈজ্ঞানিকভাবে তা প্রমানিত নয়। তবে এটা সত্য যে, অ্যাপল সিডার ভিনেগার ততক্ষন শরীরের জন্য ক্ষতিকর না, যতক্ষন পর্যন্ত এটি সঠিক নিয়মে খাওয়া বা ব্যবহৃত হয়ে থাকে। 

অ্যাপল সিডার ভিনেগার থেকে অনেকেই অনেকভাবে উপকৃত হয়েছেন। যার একটি সম্ভাব্য তালিকা নিচে তুলে ধরা হলো: 

ওজন কমানো 

৩৯ জন মানুষের উপর ১২ সপ্তাহ ধরে করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে সপ্তাহে অন্তত দুই দিন অ্যাপল সিডার ভিনেগার সেবন করলে শরীরের অতিরিক্ত মেদ বা চর্বি কমে। 

apple cider vinegar
Image source: vecteezy.com

ব্লাডে সুগারের পরিমাণ কমায় 

খাওয়ার পরে যদি এক টেবিল চামচ অ্যাপল সিডার ভিনেগার গ্রহণ করা যায় তাহলে সেটি রক্তের অতিরিক্ত সুগার বা চিনির পরিমাণ কমিয়ে আনে। তবে বলে রাখা ভালো এটি কোনো অবস্থায় ডায়াবেটিসের চিকিৎসার বিকল্প ভেবে করা যাবে না। ডায়াবেটিসের চিকিৎসা নেয়ার সাথে সাথে এটি নিয়মিত করলে ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে আশা করা যায়। 

বুক জ্বালাপোড়া কমাতে 

অনেকের ক্ষেত্রে দেখা গেছে অ্যাসিডিটির ফলে হওয়া বুক জ্বালাপোড়া কমাতে অ্যাপল সিডার ভিনেগার বেশ সাহায্য করেছে। যদিও রিসার্চ দ্বারা এটি প্রমাণিত নয় তাই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েই এটিতে আগানো উচিত। প্রথম অবস্থায় ভিনেগার অল্প নিয়ে তাতে পানি মিশিয়ে সেবন করা যাতে পারে।  

জীবাণু ধ্বংস করতে 

কিছু রিসার্চে এটা প্রমাণিত যে, অ্যাপল সিডার ভিনেগার সালমোনেলার মতো ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে। 

খুশকি কমাতে অ্যাপল সিডার ভিনেগার 

অ্যাপল সিডার ভিনেগার ইউজে স্ক্যাল্প খুশকিমুক্ত হয়ে যায় সেটা সরাসরি বলা যাবে না। কারণ এমন কোনো প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি। তবে এতে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের বিরুদ্ধে লড়াই করে ফলে স্ক্যাল্প ক্লিন থাকে ও চুলের স্বাস্থ্য উন্নত হয়।  

এছাড়াও, অ্যাপল সিডার ভিনেগার হার্ড ওয়াটার থেকে হওয়া চুলের নানা সমস্যা দূরীভুত করতে পারে। সাধারণত হার্ড ওয়াটারে প্রচুর পরিমাণে মিনারেলস, ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম বাইকার্বোনেট ও সালফেটের মতো শক্তিশালী খনিজ পদার্থ থাকে; যা চুলের ড্যামেজ, ড্রাইনেস ও রুক্ষতা বাড়াতে দায়ী। 

তাই শ্যাম্পু করার পরে অ্যাপল সিডার ভিনেগার দিয়ে চুল ধুয়ে নিলে চুল ড্যামেজ হওয়া থেকে রক্ষা পায় একইসাথে চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। এছাড়া, অ্যাপল সিডার ভিনেগার ইউজে অনেকের দাঁতের হলদে ভাব দূর হয়েছে এমনও নজির পাওয়া যায়।   

Image Source: bicyclingmagazine.com

আপেল সিডার ভিনেগার বেশি খেলে কি হয়?

বেশি খাওয়ার ব্যাপারে বলতে গেলে, শুধু অ্যাপল সিডার ভিনেগারই না, কোনো খাবারই বেশি বা পরিমাণের অধিক খাওয়া অনুচিত। অ্যাপল সিডার ভিনেগার অতিরিক্ত সেবনে স্টমাক লাইনিং, ইফোফেগাস, দাঁত ও হাড় ক্ষয় থেকে শুরু করে নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও, ডায়রিয়া, বদহজমের মতো সমস্যারও সম্মুখীন হয়েছেন অনেকেই। 

ভিনেগার কি খুবই শক্তিশালী অ্যাসিড?

অ্যাপল সিডার ভিনেগারসহ প্রায় সব ধরণের ভিনেগারকে খুব অম্লীয় বা শক্তিশালী অ্যাসিড হিসেবেই ধরা হয়। অ্যাপল সিডার ভিনেগার PH স্কেলে দুই থেকে তিন লেভেলে থাকে। যেটিকে নিঃসন্দেহে একটি শক্তিশালী অ্যাসিড বলেই গন্য করা হয়। 

অ্যাপল সিডার ভিনেগারের ক্ষতিকর দিকগুলো 

প্রত্যেকটি জিনিসের উপকারিতা যেমন রয়েছে, তেমনি এতে কিছু অপকারিতা থাকাও স্বাভাবিক। অ্যাপল সিডার ভিনেগারও তার ব্যাতিক্রম নয়। যদি অতিরিক্ত অ্যাপল সিডার ভিনেগার সেবন করা হয়, তা খাদ্যনালীর জ্বালাপোড়া বাড়িতে দিতে পারে ও দাঁতের অ্যানামেল ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, অনেকের ক্ষেত্রে এটি বদহজম, ডায়েরিয়া ও বমি বমি ভাবের কারণ হিসেবে দেখা দিতে পারে। 

অ্যাপল সিডার ভিনেগার পটাশিয়ামের মাত্রা কমিয়ে দেয় ফলে কারো যদি শরীরের পটাশিয়ামের মাত্রা আদতে কম থাকে সেক্ষেত্রে এটি সেবন বা পান এড়িয়ে চলাই ভালো। এছাড়াও, কিডনির সমস্যায় ভোগা রোগীদের জন্য এটি গ্রহণ মোটেও উপকারীতা বয়ে আনবে না। উপরন্তু এটিতে উচ্চ মাত্রার অ্যাসিড থাকার ফলে কিডনির জটিলতা বেড়ে যেতে পারে। 

apple cider vinegar with mother
Image source: vecteezy.com

অ্যাপল সিডার ভিনেগারের কিছু স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকলেও সেটা সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। ওজন কমাতে, কার্বোহাইড্রেট খাওয়ার পর রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা কমাতে, ক্যালরি কিংবা কোমরের স্থুলতা কমাতে এটি বেশ গুরুত্ব বহন করে। 

তবে আপনার যদি শারীরিক নানা জটিলতা থেকে থাকে তাহলে অ্যাপল সিডার ভিনেগার সেবনের আগে একজন ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। 

 

 

 

Feature Image: eatthis.com 
References: 

01. Apple Cider Vinegar and Your Health. 
02. Is Apple Cider Vinegar Good for You? 
03. Apple Cider Vinegar. 
04. Apple Cider Vinegar Nutrition Facts Health Benefits Risks More.