বিশ্বের ৫টি বিষাক্ত মাকড়সা

364
0

আপনি বাড়িতে অথবা বাড়ির উঠোনে বিশ্রাম নিচ্ছেন হঠাৎ একটি মাকড়সার দেখতে পারেন। আপাতদৃষ্টিতে এই মাকড়সাগুলো বিষাক্ত নয়। কারণ এগুলো আমাদের খুবই পরিচিত এবং তারা একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় বিষ ছড়ায়। কিন্তু পৃথিবীতে এমন কিছু বিষাক্ত প্রজাতির মাকড়সার সন্ধান পাওয়া যায় যেগুলো মানুষের জন্য খুবই বিপজ্জনক।

বিষাক্ত প্রজাতির মাকড়সার কামড়ে মানবদেহে পচনসহ যেকোন বড় ক্ষতি হতে পারে। তবে যে মাকড়সাগুলো মানুষকে কামড়াতে সক্ষম সেগুলোর সংখ্যা খুবই কম। অনুমান করা হয়, বিশ্বব্যাপী ৪০,০০০ এরও বেশি ধরনের মাকড়সা রয়েছে। এদের মধ্যে বিভিন্ন প্রজাতির উপর নির্ভর করে বিষাক্ত মাকড়সা চিহ্নিত করা হয়। আজকের আয়োজনে বিশ্বের ৫টি বিষাক্ত মাকড়সার তালিকা তুলে ধরা হলো।

ব্রাজিলিয়ান ওয়ান্ডারিং মাকড়সা 

ব্রাজিলিয়ান ওয়ান্ডারিং মাকড়সা মূলত আট প্রজাতির মাকড়সার সাধারণ নাম, যা ফোনুট্রিয়া গোত্রের অন্তর্গত। এর ল্যাটিন নাম গ্রিক থেকে এসেছে। এই প্রজাতির মাকড়সাকে বিশ্বের সবচেয়ে বিষাক্ত মাকড়সা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এই মাকড়সার বিষ এতটা বিপজ্জনক যে গবেষণায় ইঁদুরকে মাত্র ০.০০৬ মিলিগ্রাম বিষের ইনজেকশনই যথেষ্ট ছিল ইঁদুরের প্রাণবায়ু ত্যাগ করার জন্য।

ব্রাজিলিয়ান ওয়ান্ডারিং মাকড়সা। Image Source: Daily Sun

ব্রাজিলিয়ান ওয়ান্ডারিং মাকড়সা রাতের বেলা জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করে। এদের বিশেষত্ব হলো অন্যান্য মাকড়সার মতো জাল বোনেনা। জালের পরিবর্তে দিনে কলা গাছে বা ঢিবির মধ্যে বিশ্রাম নেয়। এদেরকে যেকোন ফুল এবং ফলের মধ্যে বেশি পাওয়া যায়।

ব্রাজিলিয়ান ওয়ান্ডারিং মাকড়সা উত্তর আমেরিকার নেকড়ে মাকড়সার মতো এতো বড় বা এতটা আক্রমণাত্বক নয়। কিন্তু উত্তেজিত হলে নিজেকে রক্ষা করার উপায় হিসাবে কামড় দেয়। তাদের চলাচলে বিরক্ত করলে তারা আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে।

ব্রাজিলিয়ান ওয়ান্ডারিং মাকড়সা অল্প সময়ে বেশি বংশ বিস্তার করতে পারে। Image Source: independent.co.uk

এই প্রজাতির মাকড়সাগুলো প্রচুর ভ্রমণ করে এবং তারা খুব সক্রিয় শিকারী। এদেরকে পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক হিসেবেও বিবেচনা করা হয় । এই বিষাক্ত মাকড়সার বিষ প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুদের উপর বেশি  প্রভাব ফেলে।সুতরাং  এই মাকড়সার কামড়ালে শিশুকে দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা নিতে হবে।

ব্রাউন উইডো মাকড়সা

ব্রাউন উইডো মাকড়সার বেশিরভাগই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণে উষ্ণ অঞ্চলে পাওয়া যায়। এই বিষাক্ত প্রজাতির প্রথম দেখা পাওয়া যায়  ২০০০ সালের গোড়ার দিকে দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায়। যেখানে এই মাকড়সাকে বেহালা-পিঠ বা রিপার নামে ডাকা হয়। এছাড়াও, এদেরকে লস অ্যাঞ্জেলস, অরেঞ্জ এবং সান দিয়েগো কাউন্টিতে আরও বেশি সংঘটিত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল।

অধিকাংশ গবেষণায় দেখা যায়, এই বিষাক্ত প্রজাতির মাকড়সা বহু বছর ধরে হাওয়াই, ফ্লোরিডায় একাধিক স্থানে বসবাস করে আসছে। আবার কিছু প্রজাতি ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জতে স্থায়ী বসতি গড়ে তুলেছে। এদেরই একাংশকে আবার অস্ট্রেলিয়ায়, দক্ষিণ আফ্রিকা, জাপান এবং সাইপ্রাসে সন্ধান পাওয়া যায়।

ব্রাউন ইউডো মাকড়সা নিরবিচ্ছিন্ন জায়গায় বাসা বানিয়ে বসবাস করতে পছন্দ করে। Image Source: unplash.com

এই প্রজাতির মাকড়সাগুলো গুহা, ইঁদুরের গর্ত এবং অন্যান্য আশ্রয়যোগ্য পরিবেশে বসবাস করতে পছন্দ করে। এছাড়াও দালানকোঠা, দেয়াল এবং সিলিং-এর মতো বিল্ডিং-এ নিরবচ্ছিন্ন জায়গায় বাসা বানিয়ে বসবাস করে।    

সাধারণত কালো বা অন্যান্য বিষাক্ত মাকড়সার মতো এদের পর্যাপ্ত বিষ থাকে না বা কামড় দেয় না। কিন্তু কেউ তাদের তাড়াতে চাইলে বিরক্ত হয়ে কামড়ে দেয়, এতে তীব্র ব্যথা এবং অস্বস্তি হয়। 

স্ত্রী প্রজাতির প্রাপ্তবয়স্ক ব্রাউন ইউডো মাকড়সা। Source :Unplash.com

প্রাপ্ত বয়স্কদের চেয়ে শিশু এবং বৃদ্ধদের জন্য ব্রাউন উইডোর কামড় ঝুঁকিপূর্ণ। অন্যদিকে স্ত্রী মাকড়সার কামড় পুরুষ মাকড়সার চেয়ে বেশি বিপজ্জনক। সুতরাং আক্রান্ত হলে জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে ভর্তি করতে হতে পারে।

ব্ল্যাক উইডো মাকড়সা

ব্ল্যাক উইডো হলো মশারী প্রজাতির একটি অদ্ভুত মাকড়সা। এর বৈজ্ঞানিক নাম Lampona murina। ব্ল্যাক উইডো মাকড়সার মোট তিনটি প্রজাতি রয়েছে। যার তিনটি প্রজাতির অস্তিত্বই দক্ষিণ আমেরিকায় পাওয়া যায়। ব্ল্যাক উইডো মাকড়সা শরীর সবুজ বা কালো রংযুক্ত হয়। এই মাকড়সার বেলুনের মতো গঠনের কারণে মুখ ভালুকের মতো দেখায়। 

ব্লাক ইউডো মাকড়সার শরীরের দৈর্ঘ্য প্রায় ১.২ সেমি থেকে ২.১ সেমি হয়ে থাকে। Image Source: arrownj.com

বিষাক্ত স্ত্রী ব্ল্যাক উইডো মাকড়সার কামড় মানুষের জন্য খুবই ক্ষতিকর। পুরুষ মাকড়সার কামড়ে তেমন কোনো ক্ষতি হয় না। তবে এর কামড়ে মৃত্যুর ঘটনা শোনা যায় নি। কারণ এরা কামড় দেয়ার সময় সামান্য পরিমাণ বিষ প্রয়োগ করে। তাই প্রাথমিক চিকিৎসায় রোগী দ্রুত সুস্থ্য হয়ে ওঠে। কিন্তু বয়স্কদের তুলনায় শিশুদের ক্ষেত্রে ব্লাক ইউডোর বিষ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।

চটুল ব্লাক ইউডো গাছে বাসা বানিয়ে বসবাস করতে পছন্দ করে। Image Source: New Scientist 

ব্ল্যাক উইডো মাকড়সা সাধারণত চটুল হয়ে থাকে, তাদের বেশিরভাগই গাছের উপর ঘর বানিয়ে বসবাস করতে শুরু করে। এছাড়া এরা পায়ের মাধ্যমে শুঁড়ে চলতে পারে এবং ব্যস্ত রাস্তায় ঘুরে বেঁকে চলাচল করে। এই প্রজাতির মাকড়সা খাদ্য হিসাবে বেচেঁ নেয় ছোট মাকড়সা, পোকামাকড় ইত্যাদি।

নেকড়ে মাকড়সা

নেকড়ে মাকড়সা সাধারণত এক বা দুই ইঞ্চি পরিমাপ লম্বা হয়। এদের শরীর লোমশ এবং ধূসর বা বাদামী রঙের। বিশেষত, তাদের আটটি চোখ যা তিনটি সারিতে সাজানো রয়েছে, এবং নীচে চারটি ছোট চোখ আর মাঝখানে দুটি বড় চোখ এবং উপরে দুটি মঝারি চোখ। বেশিরভাগ নেকড়ে মাকড়সা অন্যান্য মাকড়সার থেকে ভিন্ন, তারা জাল বুনে না। কিন্তু তারা আক্রমণাত্মক শিকারী হয়।

নেকড়ে মাকড়সা
১/৪-”২” সমান নেকড়ে  মাকড়সাটি যেকোন সময় আক্রমণাত্বক হয়ে ওঠে। Image Source: Arrow Exterminators

অত্যন্ত বিষাক্ত হওয়া সত্ত্বেও, নেকড়ে মাকড়সার বিষ তেমন প্রাণঘাতী নয়। এই প্রজাতির মাকড়সা খুব বিপদে না পড়লে কামড়ায় না যতদূর সম্ভব তারা দ্রুত সরে যায়। তবে এই মাকড়সা কামড় দিলে কামড়ের স্থান ব্যান্ডেজ না দেয়াই উত্তম। তার পরিবর্তে, ফোলা কমাতে আক্রান্ত স্থানে একটি বরফের টুকরো ঘষতে পারেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উত্তর ক্যারোলিনা রাজ্য এবং সেন্ট্রাল টেক্সাস থেকে ফ্লোরিডার শেষ ভাগ পর্যন্ত নেকড়ে মাকড়সার আবাসস্থল রয়েছে। এছাড়াও পাথুরে এলাকা, খোলা চাদর এবং তৃণভূমিতে এদের বিচরণ দেখা যায়। এই প্রজাতির মাকড়সার পাহাড়, মরুভূমি, জলাভূমির মধ্যে বসবাস করতে পারে।

৩টি সারিতে মোট ৮টি  চোখ রয়েছে নেকড়ে মাকড়সার। Image Source: pest-gurdian.com 

ফানেল-ওয়েব মাকড়সা

ফানেল-ওয়েব মাকড়সা প্রাণীজগতের সবচেয়ে কুখ্যাত সদস্য হিসেবে পরিচিত। বৈজ্ঞানিকরা এই মাকড়সার নাম দিয়েছেন মেগাস্পাইডার। এই প্রজাতির মাকড়সা বেশির ভাগই অস্ট্রেলিয়ায় পাওয়া যায়। এটিও বিশ্বের বিপজ্জনক বা বিষাক্ত মাকড়সা হিসেবে পরিচিত।

ফানেল ওয়েব মাকড়সা। Image Source: Coastcommunty News

এই মাকড়সার জালের গঠন ফানেল-আকৃতির তাই এর নাম দেয়া হয়েছে ফানেল ওয়েব। এই মাকড়সার বিষ হলো নিউরোটক্সিন এবং এতে প্রচুর পরিমাণে পেপটাইড থাকে। ফানেল-ওয়েব মাকড়সার অন্তত ৪০টি প্রজাতি রয়েছে এবং বর্তমানে দুটি প্রজাতি সনাক্ত করা হয়েছে। এগুলো হলো হ্যাড্রোনিসে এবং অ্যাট্রাক্স। এই প্রজাতির মাকড়সা মাঝারি থেকে বড় হয়, যার শরীরের দৈর্ঘ্য ১ সেমি ৫ সেমি থেকে পরিবর্তিত হয়।

ফানেল ওয়েব মাকড়সা।
দেখতে ক্ষুদ্র কিন্তু কখনো কখনো প্রানঘাতী  হয়ে ওঠে ফানেল ওয়েব মাকড়সা। Image Source: nbnnews.com.au

সাধারণত, পুরুষ মাকড়সাগুলো মহিলা মাকড়সার তুলনায় আরেকটু একটু হালকা হয়। তাদের দেহের রঙ কালো থেকে বাদামী পর্যন্ত পরিবর্তিত হতে পারে। তবে শরীরের সামনের অংশ ঢেকে রাখা শক্ত ক্যারাপেসটি সর্বদা অল্প লোমযুক্ত এবং চকচকে হয়। এই প্রজাতির মাকড়সার কামড়ে মানুষের শরীরে প্রচন্ড যন্ত্রণা, শ্বাসকষ্ট, স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার মতো ঘটনা শোনা যায়।

এমনকি বিপজ্জনকভাবে উচ্চরক্তচাপ ও বৃদ্ধি পেতে পারে অথবা মানুষ মারা যাওয়ার সম্ভাবনাও আছে। এতএব, এই মাকড়সা কামড়ালে চিকিৎসক এর পরামর্শ নিতে হবে।

 

 

 

Feature Image: cornwalllive.com 
Sources: 

01. 5 Venomous Poisonous Spiders in California02. Most Venomous Spiders03. What are the Most Poisonous Spiders in the World04. Poisonous Spiders05. 10 Most Dangerous Spiders World.