কর্মক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য যে বৈশিষ্ট্যগুলো জানা আবশ্যক

347
0
Confidential businessman in suit holding bag walk to success on stair, development and leader in business concept

কর্মক্ষেত্রে সফল হওয়ার উপায় কী? এককথায় বলা যায়, ভালো পারফর্ম করার দৃঢ় ইচ্ছা ও মানসিকতা থাকা। কর্মক্ষেত্রে সফল হবার স্বপ্ন সবার মাঝে থাকে। কারণ প্রতিযোগিতামূলক এই বিশ্বে টিকে থাকতে হলে কর্মক্ষেত্রে ভালো করা এবং ক্যারিয়ারে এগিয়ে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

প্রতিটি মানুষের নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে আলাদা স্বপ্ন থাকে। প্রতিনিয়ত চোখ-মুখ বন্ধ করে সে যেন ছুটছে সফলতার দিকে। দিন শেষে একটাই চাওয়া সফলতা নামক সোনার হরিণকে যেন বশে আনা যায়। কর্মক্ষেত্রে প্রত্যেকেই চান নিজেকে যোগ্য, কর্তব্যপরায়ণ এবং বুদ্ধিমান হিসেবে প্রমাণ করতে।

কর্মক্ষেত্রে সফল হতে মানুষ নানান রকমের পরিকল্পনা করে থাকে। কর্মক্ষেত্রে সফলতার লড়াইয়ে কয়েকগুণ এগিয়ে থাকতে হলে সবাইকেই কয়েকটি বিষয় অনুসরণ করতে হবে। কর্মক্ষেত্রে সফল হওয়ার জন্য যে বৈশিষ্ট্যগুলো দিকে নজর দেওয়ার প্রয়োজন তাই নিয়ে আজকের আয়োজন।

১. নতুন কিছু শেখার আগ্রহ:

কর্মজীবনে সফল হতে হলে নতুন কিছু শেখার ও জানার আগ্রহ থাকতে হবে। একাডেমিক পারফরম্যান্স যাই হোক না কেন পেশাগত জীবন কিন্তু একদমই আলাদা। কর্মক্ষেত্রে কে কি করছেন তার উপর ভিত্তি করে যোগ্যতা যাচাই করা হয়। গঠনমূলক প্রতিক্রিয়া গ্রহণ করার মানসিকতা থাকতে হবে।

কারণ এখানে আপনি যা করছেন তা নিয়ে প্রতিদিন নানান প্রশ্ন ও সমালোচনার মুখোমুখি হতে হবে। কিন্তু সেসব বিষয়কে পাত্তা না দিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে নিজেকে প্রকাশ করতে হবে যে, আপনি সবসময় নতুন জিনিস শিখতে আগ্রহী এবং জ্ঞানের পরিধি বাড়িয়ে দক্ষতার সাথে কর্মক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে পারেন।

কর্মজীবনে সফল হতে হলে নতুন কিছু শেখার ও জানার আগ্রহ থাকতে হবে। Image Source-Pexels

২. নিজের কর্মদক্ষতা মূল্যায়ন:

কর্মক্ষেত্রে সফলতার অন্যতম আরো একটি উপায় হলো নিজের কর্মক্ষমতা মূল্যায়ন করা। আপনি কতটুকু জানেন, তার ১০০% কর্মক্ষেত্রে দিচ্ছেন কি না তা মূল্যায়ন করুন। চাকরিতে নিজের উন্নতির জন্য নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ ও লক্ষ্য অর্জনে বিস্তারিত পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে।

আপনার কাজগুলো সাপ্তাহিক বা দৈনিক হিসেবে ভাগ করে নিতে পারেন। আপনি সঠিক লক্ষ্যের দিকে যাচ্ছেন কি না তা জানতে সপ্তাহের শেষে একটি ছোট ফরম পূরণ করুন। এতে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন আপনার কাজগুলো কতটুকু এগিয়ে যাচ্ছে। কর্মক্ষেত্রে সবার কাছ থেকেই শেখার চেষ্টা করুন।

৩. উদ্যোগী হতে হবে:

যে সকল মানুষ খোলা মনে সব কাজে এগিয়ে আসে, তাকে চারপাশের মানুষ খেয়াল করতে বাধ্য। বর্তমানে প্রতিযোগিতামূলক কর্মজীবনে নিয়োগকর্তারা এমন ব্যক্তিকে খোঁজেন যারা নতুন পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নিতে পারেন, নতুন প্রকল্প শুরু করতে পারেন এবং ব্যবসায়ের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করতে পারেন।

একইসাথে ঝুঁকি নিতে পারেন, যেকোনো সমস্যার তাৎক্ষণিক কোনো সমাধান করতে পারেন। আপনি যে ধরনের কাজই করেন না কেন, সময়ের সাথে আপনিও যদি নিজেকে আপডেট করতে পারেন, উদ্যোগ নিতে পারেন, ঝুঁকি নিতে পারেন তবে কর্মক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে যাবেন।

সময়ের সাথে সাথে নিজেকে আপডেট করতে হবে। Image Source- Pexels

৪. প্রযুক্তিগত জ্ঞান:

ডিজিটাল এই সময়ে প্রযুক্তিগত জ্ঞানে অদক্ষ লোকদের চাকরি পাওয়া প্রায় অসম্ভব। প্রতিটি অফিসের মূল কাজগুলো করার জন্য কম্পিউটার-ল্যাপটপ চালানোর জন্য দক্ষ কর্মীদের প্রয়োজন হয়। এছাড়াও টাইপিং, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, ইমেইল করা এই ধরনের বেসিক জ্ঞান প্রতিটি কর্মীর জানা গুরুত্বপূর্ণ। আর আপনি যদি প্রযুক্তি নির্ভর কর্মক্ষেত্রের কর্মী হয়ে থাকেন, তাহলে তো আপনাকে অবশ্যই প্রযুক্তিতে দক্ষ হতে হবে।

৫. যোগাযোগের দক্ষতা:

যোগাযোগ দক্ষতা একজন কর্মচারী ও প্রতিষ্ঠানের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। যোগাযোগ দক্ষতাই প্রকাশ করবে আপনার ব্যক্তিত্ব এবং রুচিবোধ। আপনাকে কর্মক্ষেত্রে সফল হতে হলে সেই দক্ষতা অর্জন করতে হবে। কারণ কথা বলার মধ্যে রয়েছে আদান-প্রদান, ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া ও সর্বোপরি প্রকাশ করা এবং অপরকে বোঝার ক্ষমতা।

কথা শুধু বললেই কিন্তু সংযোগ দক্ষতা গড়ে তোলা যায় না। আপনাকে মনোযোগ দিয়ে অন্যের কথা শুনতে হবে এবং কথা বলার সময় শব্দ উচ্চারণ করতে হবে কিছুটা আবেগের সাথে। অর্থাৎ অন্যের জন্য সহানুভূতি, আগ্রহ ও দুঃখ বোধ ইত্যাদি থাকা জরুরি। যেকোনো প্রয়োজনে উর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে সহকর্মী সবার সাথে কথা বলুন।

প্রতিটি কাজ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানিয়ে করুন। যোগাযোগ দক্ষতা অর্জনে আপনাকে সক্রিয় হতে হবে তবেই তো কর্মক্ষেত্রে সফলতার মুখ দেখতে পারবেন।

যোগাযোগ দক্ষতা অর্জনে আপনাকে সক্রিয় হতে হবে। Image Source – Pexels

৬. কাজের প্রতি মনোযোগ:

আপনি যে কাজই করেন না কেন, প্রতিটি খুঁটিনাটি বিষয়ের প্রতি গভীর মনোযোগ দিন। যতক্ষণ কাজ করবেন শতভাগ পূর্ণ মনোযোগ বা ফোকাস রাখুন। যার ফলে কাজটিকে আপনি খুব ভালোমত বুঝতে পারবেন।

কিভাবে কাজ হচ্ছে, আপনার কাজের ফলে কোথায় কি পরিবর্তন হচ্ছে সব বিষয় গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করুন। প্রয়োজনে সিনিয়রদের কাছে থেকেও সাহায্য নিতে পারেন। কর্মক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য সঠিকভাবে নিজের কাজ বুঝে নেয়া এবং প্রতিষ্ঠানের নিয়মগুলো সুন্দর ভাবে মানার কোনও বিকল্প নেই।

৭. সৃজনশীলতা:

সৃজনশীলতা একটা মানুষের গভীর চিন্তার ফসল। যেকোন মানুষের নিজস্ব কিছু ধ্যান-ধারণা আছে, সেই ধারণাকে আরো পরিণত করার দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। কর্মক্ষেত্রে নতুন কর্ম পরিকল্পনাকে পরিণত করার দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে নতুন পদ্ধতি এবং নতুন নতুন কাজ করার সময় সুযোগ বরাবরই রয়েছে।

প্রয়োজন শুধু ইচ্ছা শক্তির। সময়ের সৎব্যবহারে নতুন কিছু করে দেখানোর মতো যথেষ্ট সাহস থাকা চাই। নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে শেষ পর্যন্ত কর্মতৎপর হিসেবে লেগে থাকতে হবে।

সৃজনশীলতা একটা মানুষের গভীর চিন্তার ফসল। Image Source-Pexels

৮. সমস্যা সমাধানের দক্ষতা:

সমস্যা সমাধানের দক্ষতা প্রতিষ্ঠানকে যেকোন বিপদ থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে। আপনার যদি এই ধরনের দক্ষতা থাকে তাহলে সমস্যা বিশ্লেষণ করে এবং দ্রুত সমাধান করে প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করতে পারবেন। উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এমন কর্মচারীদের উপর নির্ভর করে থাকেন যারা কম তত্ত্বাবধানে কাজ করে সমস্যার সমাধান করতে পারে। সমস্যা সমাধানের দক্ষতার মধ্যে রয়েছে:

  • সমস্যার উৎস চিহ্নিত করা
  • সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানের তথ্য নির্ধারণ করা
  • যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া
  • দক্ষতার সাথে সমস্যার সমাধান করা।

৯. সহকর্মীদের সাথে ভালো সম্পর্ক:

কর্মস্থলকে সাধারণত সেকেন্ড হোম বলা হয় কারণ দিনের বেশিরভাগ সময় আপনি সেখানে সহকর্মীদের সাথে থাকেন। তাদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা অন্যতম কাজ। সহকর্মীদের সাথে হাসিমুখে কথা বলা এবং সম্মান করুন। এতে করে আপনার সহকর্মীদের মনে আপনাকে নিয়ে ভালো ধারণা হবে যা আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

কর্মস্থলের পরিবেশ ভালো থাকলে আপনার কাজে আগ্রহ বাড়বে এবং আপনি ভালো সার্ভিস দিতে পারবেন। সবসময় ইতিবাচক চিন্তা করুন এবং বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক কর্মকান্ড থেকে নিজেকে মুক্ত রাখবেন।

সহকর্মীদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা অন্যতম কাজ। Image Source-Pexels

১০. বিশস্ততা অর্জন:

কর্মক্ষেত্রে সফলতার অন্যতম চাবিকাঠি বিশ্বাস অর্জন করা। কর্মক্ষেত্রে আপনি যদি বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠেন তাহলে আপনার ওপর আস্থা রেখে আপনার কাছে কাজ হস্তান্তর করবে। বিশ্বাস অর্জনে আপনাকে সৎ থাকতে হবে। নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে লক্ষ্য পূরণ এবং প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে হবে তবেই না বিশ্বস্ততা অর্জন সম্ভব। সততা ও নিষ্ঠার সাথে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে কাজ করলে আপনি কর্মী হিসেবে দক্ষ হয়ে উঠবেন এবং আপনার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন।

কর্মক্ষেত্রে সফল হওয়াটাও কিন্তু জীবনে সফল হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আপনি যদি আপনার কর্মক্ষেত্রে কাঙ্খিত সাফল্য অর্জন করতে পারেন, তাহলে দেখবেন জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও সফল হওয়াটা অনেক সহজ হয়ে গেছে। কর্মক্ষেত্রে সফলতা সহজেই আপনার হাতের মুঠোয় ধরা দেবে যদি আপনি সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করেন এবং সব সময়ে নিজেকে আরও দক্ষ ও উন্নত করার চেষ্টা করেন।

তবে অনেক সময়ে নিজের সবটা দিয়ে চেষ্টা করার পরও কাঙ্খিত সাফল্য আসে না। তখন অবশ্যই ধৈর্য ধরে সময় নিয়ে ধীরে ধীরে কাজ করে যেতে হবে। আর এভাবেই একদিন আপনি পৌঁছে যাবেন সফলতার সবোর্চ্চ শিখরে।

 

 

 

Feature Image: veectezy.com
References:

01. Skills to be Successful in the Workplace. 
02. The 12 Most Important Skills you need to Succeed at Work. 
03. Important Employee Skills Workplace. 
04. Workplace Skills. 
05. Way to Improve Work Performance. 
06. Areas of Improvement. 
07. 10 Tips to Excel in Your Career.