ডিঙ্গো ফেন্স: প্রকৃতির বিরুদ্ধে নির্মিত পৃথিবীর দীর্ঘতম সীমান্ত বেড়া

1616
4

মানব সভ্যতার ইতিহাস জুড়ে রয়েছে যুদ্ধ আর দ্বন্দ্বের ক্ষত। ক্রুসেড থেকে শুরু করে শতবর্ষব্যাপী যুদ্ধ যেন বিবর্তনের আরেক অধ্যায়। আজো যেখানে স্বাধীন কুর্দিস্তান বা কুর্দি সংকট নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপ বলতে বাধ্য হয় ‘অ্যা স্ট্রাগল উইদিন অ্যা স্ট্রাগল’ অথবা সিরিয়া সংকট বা ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, মানববৃত্ত দ্বন্দ্বের বলয়ে আবদ্ধ।

যুদ্ধের এই বলয় কি শুধু দুটি মানব গোষ্ঠীর মাঝেই স্থির? যেমন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সম্ভাব্য ফল নিয়ে অনেকে বলছে একসময় মানুষ আর রোবট প্রতিদ্বন্দ্বিতার রেশে এগিয়ে যাবে। এই সম্পর্কে নিউরোসাইন্স গবেষক ডিলেপ জর্জ বলেন,

Imagine a robot capable of treating Ebola patients or cleaning up nuclear waste.

ঠিক তেমনই প্রায় নব্বই বছর আগে মানুষের সাথে প্রকৃতির এক যুদ্ধের সূচনা হয়। ইতিহাস একে ‘ইমু যুদ্ধ’ বলে আখ্যায়িত করেছে। 

সাল ১৯৩২। অস্ট্রেলিয়ার বনে জঙ্গলে সেনাবাহিনী চষে বেড়াচ্ছে সমর অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে। নাহ, প্রতিপক্ষ প্রতিবেশী রাষ্ট্র বা বিদেশি শক্তিকে প্রতিহত করতে এই যুদ্ধ নয়। বরং এই যুদ্ধের কারণ ছিল, অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ইমু পাখির সংখ্যাধিক্য দমন করা। কারণ ঐ সময়টাতে প্রায় ইমুরা ঝাঁক বেঁধে এসে অস্ট্রেলিয়ার চাষীদের ফসলি জমির শস্য নষ্ট করে সব ধূলিসাৎ করে দিচ্ছিল।

ইমুদের সংখ্যা এত বেশি ছিল যে, জনগণের সাধ্য ছিল না তাদের আটকানোর। কিন্তু এই যুদ্ধে জয়ী কিন্তু সেনাবাহিনী হতে পারেনি! ইমু পাখি তার দ্রতগামীতা, সুক্ষ্মতা আর ক্ষিপ্রতা দিয়ে জয়ী হয় তামাম সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করে। 

এই যুদ্ধ দিয়ে প্রকৃতির সাথে মানুষের যুদ্ধের এক সূচনা হয়। আর এমনই এক প্রতিরোধ পৃথিবী দেখতে পায় অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় প্রতিরোধের অধ্যায় হিসেবে। যে প্রতিরোধের জন্য নির্মিত হয় ডিঙ্গো ব্যারিয়ার। অস্ট্রেলিয়ায় ডিঙ্গো বলা হয় কুকুর সদৃশ এক প্রাণীকে। যাদের প্রতিরোধে নির্মিত হয় বিশ্বের দীর্ঘতম সীমানা বেড়া। প্রায় ৫৬১৪ কিমি দৈঘ্যের এক বেড়া। 

বিশ্বের দীর্ঘতম সীমানা বেড়া ডিঙ্গো ফেন্স। Image Source: Amusing Planet

১৯৫০-এর দিকে এই বেড়াটি তৈরি করা হয়, যা দেশের শীর্ষ ঐতিহ্যের চিহ্ন প্রজাতি ডিঙ্গোকে ভেড়ার চারণভূমি থেকে উচ্ছেদের জন্য দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে নির্মাণ করা হয়। যদিও উচ্ছেদের পরের কাহিনী নির্মম। ডিঙ্গোরা ছিল খাদ্য শৃঙ্খলে সবচেয়ে উপরে। ফলে, তাদের প্রায় বিলুপ্তির মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ার ক্যাঙ্গারুর সংখ্যা মাত্রাতিরিক্তভাবে বেড়ে যায়। 

ঘটনার সূত্রপাত ডিঙ্গো যখন বন্য ও হিংস্র হয়ে পরে। অথচ এই ডিঙ্গো একসময় মানুষের পোষা ছিল। ডিঙ্গোকে ‘দ্য কিং অফ অস্ট্রেলিয়া’ বলা হয়। কিন্তু কেন জালের বেড়ার মাধ্যমে ডিঙ্গোকে দমন করা হলো? উত্তরের জন্য একটু ঔপনিবেশিক এরিয়াতে ঢুকতে হবে।

লক্ষ লক্ষ বছর পূর্বে পৃথিবীর মহাদেশীয় ভূখণ্ডগুলো বিভক্ত হয়। বিভক্ত হওয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে অস্ট্রেলিয়া দ্বীপরাষ্ট্রটি অন্যান্য মহাদেশীয় ভূখণ্ডগুলো থেকে সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং তখন থেকেই দ্বীপটি এর বর্তমান অবস্থানে থিতু হয়। ফলস্বরূপ, অস্ট্রেলিয়ার প্রাণীজগতের পক্ষে পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের প্রাণীজগতের সংস্পর্শে আসার সুযোগ একদমই হয়নি। তবে অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ ভাগে এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। আর ইউরোপীয়দের আগমনের মাধ্যমে এই পরিবর্তনের সূত্রপাত হয়। 

১৭৭০ সালে ক্যাপ্টেন কুক অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলকে ব্রিটিশদের উপনিবেশ অংশ হিসেবে ঘোষণা দেন। আর উপনিবেশ বলতে শুধু মানুষই আসেনি এই দক্ষিন-পূর্বে বসতি করতে। কারণ, অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় প্রাণীকূলের কোনোটির মাঝেই গবাদিপশুর কোনো বৈশিষ্ট্য খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয়নি। তাই নব্য উপনিবেশ স্থাপনকারীরা সিদ্ধান্ত নেয়, ইউরোপ ও এশিয়া থেকে গবাদি পশু আমদানি করার। যেহেতু ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকদের আগমনের পূর্বে অস্ট্রেলিয়ায় খুরবিশিষ্ট কোনো প্রাণীর অস্তিত্ব ছিল না।

নির্দিষ্ট করে বললে গরু, মহিষ, উট, ভেড়া, ঘোড়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির খুরবিশিষ্ট প্রাণী যে লক্ষাধিক সংখ্যা নিয়ে বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া জুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, এগুলো মূলত অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে ঔপনিবেশিকদের দ্বারা আমদানিকৃত। অথচ এই ঔপনিবেশিকদের আমদানিকৃত এই গবাদিপশুর মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়া বর্তমানে পৃথিবীর শীর্ষস্থানীয় মাংস ও দুগ্ধজাত পণ্যের রপ্তানিকারক! 

বাস্তসংস্থান প্রক্রিয়াতে প্রাণীজগতের বিন্যাস। Image Source: Link.springer.com

গবাদিপশুর মধ্যে ভেড়া ছিল অন্যতম। পোশাক পরিচ্ছদ থেকে শুরু করে খাবার টেবিল পর্যন্ত ভেড়া একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। কারণ ভেড়া যে শুধু দুধ, মাংস ও চামড়া দেয় তা নয়, বরং এর গায়ের পশম মানে উল ইউরোপীয় শীতপ্রধান দেশগুলোর জন্য অত্যাবশ্যক। আর ভেড়া প্রথম আসে অস্ট্রেলিয়ায় ১৭৯৩ সালে।

জন ও এলিজাবেথ ম্যাকআর্থার দম্পতি অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ভেড়ার খামার স্থাপন করে। এরপর অস্ট্রেলিয়া অতি উর্বর অঞ্চল তথা দক্ষিণ-পূর্বের রাজ্য কুইন্সল্যান্ড, নিউ সাউথ ওয়েলস, ভিক্টোরিয়া ও দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ায় ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে ভেড়ার খামারের সংখ্যা। 

বিভিন্ন অঞ্চলে ভেড়ার সংখ্যা বাড়তে থাকার পাশাপাশি এক অদ্ভুত বিড়ম্বনাও এসে হাজির হলো অঞ্চলবাসীর মধ্যে। কিছুদিন ধরে অনেকের খামারে ভেড়ার সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। ব্যাপারটা অনেকটা এমন যে, ভেড়ার খামার থেকে রাত হলেই কমতে থাকে একটি করে ভেড়া। প্রশ্ন হচ্ছে, এই ভেড়াগুলো যাচ্ছে কোথায়? তদন্তে বেরিয়ে লোমহর্ষক ঘটনা। আসলে কিছুদিন ধরে ভেড়া উধাও হওয়ার পেছনে মূল হোতা অস্ট্রেলিয়ার প্রাকৃতিক খাদ্যচক্রে সবার উপরে থাকা কুকুরসদৃশ হিংস্র পশু ডিঙ্গো।  

খাদ্যচক্রের সবার উপরে থাকা ডিঙ্গোর প্রভাবে কমতে শুরু করে ভেড়ার সংখ্যা। যদিও অস্ট্রেলিয়া ইউরোপীয়দের আগমনের পূর্বে হাজার হাজার বছর ধরে ডিঙ্গোর প্রধান খাদ্য ছিল ক্যাঙ্গারু। কিন্তু ভেড়ার আগমনে সেই দৃশ্যপটের পরিবর্তন আসে। ক্যাঙ্গারু থেকে ভেড়া শিকার সোজা এবং ভোজনেও অধিক পরিমাণে ছিল। তাই ভেড়ার সংখ্যা চোখের পলকে কমতে শুরু করে। কিন্তু স্থানীয় মানুষ তো তাদের সম্পদ এভাবে নষ্ট হতে দিতে পারে না। 

১৯৪৬ সালে পুলিশ ট্রেনিংরত ফেন্সে ডিঙ্গোর ক্ষিপ্ততা। Image Source: Link.springer.com

তাই, স্থানীয় খামারি মালিকরা গুলি করাসহ বিভিন্ন পদ্ধতিতে ডিঙ্গো হত্যা শুরু করে। কিন্তু কোনোভাবেই খামারগুলোতে ডিঙ্গোর আক্রমণের সংখ্যা কমানো সম্ভব হচ্ছিল না। ফলে সরকারের কাঁধে গিয়ে পড়ে এই আক্রমণ প্রতিহত করার চ্যালেঞ্জ। কারণ অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতিতে ঐ খামারগুলো ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই, এই সমস্যার সমাধান খুব জরুরি। তবে উক্ত সমস্যা সমাধানে অস্ট্রেলিয়ার সরকার যে পদ্ধতি অবলম্বন করেছে, তা পুরো দ্বীপটির জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। 

জীববৈচিত্র্য কীভাবে হুমকির মুখে এবার আসা যাক সেই প্রসঙ্গে। ডিঙ্গোর আক্রমণ থেকে ভেড়াকে বাঁচাতে নির্মিত হয় বিশ্বের দীর্ঘতম সীমানা বেড়া ডিঙ্গো ফেন্স। বর্তমানে এই বেড়ার বদৌলতে অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে ডিঙ্গো প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। ফলে, উক্ত অঞ্চলে ক্যাঙ্গারু সংখ্যা অত্যাধিক বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সংখ্যা বৃদ্ধি বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য নষ্ট করে দিচ্ছে। ক্যাঙ্গারুর সংখ্যাবৃদ্ধি শুধু যে অন্যান্য তৃণভোজী প্রাণীর খাদ্য সংকট ঘটিয়েছে তা নয়। 

প্রাকৃতিক খাদ্যচক্র যেকোনো বনাঞ্চলের মাটির উর্বরতা রক্ষায় ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু ডিঙ্গো ফেন্স সেই চক্র সম্পূর্ণরূপে নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছে। ফলে দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে ক্যাঙ্গারুর অতিচারণের ফলে মাটির উর্বরতা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। অন্যদিকে ক্যাঙ্গারু যেহেতু তৃণভোজী ঠিকই নিজেদের চাহিদামতো ঘাস ও লতাপাতা ভক্ষণ করছে।

ফলে মাটি উর্বরতা হারাচ্ছে। আর উক্ত অঞ্চলের অনুর্বর মাটি আর আগের মতো তৃণলতা উৎপাদন করে পারছে না। ফলস্বরূপ তৃণভূমির সংখ্যা কমে গিয়ে সবুজায়ন ব্যহত হচ্ছে। এমনকি মহাকাশ থেকে এই পরিবর্তন নজরে এসেছে। 

ডিঙ্গো ফেন্সে ‘Varanus Gouldii’, Image Source: Link.springer.com

প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের একটি উদাহরণ দেওয়া যায় যে, অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে বিশাল বিশাল স্যান্ড ডুন বা বালিয়াড়ির সৃষ্টি করছে। আবার সেই বালিয়াড়িগুলো দেয়াল হিসেবে বাতাসের গতিপথে পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। আর বাতাসের গতিপথ পরিবর্তন হওয়ার কারণে আবহাওয়ার পরিবর্তন দেখা দিচ্ছে। মোটামুটি ডিঙ্গো ফেন্স উক্ত অঞ্চলের প্রাকৃতিক ভারসাম্যকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে। 

অস্ট্রেলিয়ার ভূমি থেকে এই ডিঙ্গো ফেন্স অপসারণের জন্য প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে ৮২ মিলিয়ন হেক্টর জমির উর্বরতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। এটি শুধুমাত্র ক্ষতিগ্রস্ত প্রান্তিক চারণভূমিকে প্রভাবিত করবে না, মধ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব অস্ট্রেলিয়া জুড়ে বায়ুর গুণমান উন্নত করা, জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং খাদ্য নিরাপত্তা বৃদ্ধির সমূহ সম্ভাবনা নিশ্চিত করবে। 

এদিকে বিলুপ্তপ্রায় ডিঙ্গো নিয়েও উঠে এসেছে তাজা খবর। CSIRO জার্নাল পেপার Australian Mammalogy-তে নতুন প্রকাশিত গবেষণা নিবন্ধ ‘The myth of Wild dogs in Australia: are there any out there’ এর দ্বারা নতুন বিতর্কের শুরু হয়। যেখানে একটা সময় ভাবা হতো এমনকি এখনো ভাবা হয় যে অস্ট্রেলিয়াতে পিউর ডিঙ্গো খুবই বিরল। 

ঐশ্বর্য আর আভিজাত্যময় বন্য সৃষ্টি ‘ডিঙ্গো’। Image Source: The Conversation

দু-একটা আইল্যান্ডের ডিঙ্গো ছাড়া অস্ট্রেলিয়ার বেশিরভাগ ডিঙ্গোই অস্ট্রেলিয়ার ফেরাল ডগ বা ঘর ছাড়া কুকুরদের সাথে ক্রস ব্রিডিং করে নতুন প্রজন্মের জন্ম দিয়েছে। পিউর ডিঙ্গো এখন বিরল কেস। কিন্ত সাম্প্রতিক প্রকাশিত নিবন্ধ এই বিশ্বাসকে এক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন করে দিয়েছে। অধিকাংশ ফেরাল ডগ ডিঙ্গো হিসেবে সনাক্ত হয়েছে। 

যদিও কুকুর এবং ডিঙ্গোর মধ্যে অনেকখানি মিল আছে তথাপি ডিঙ্গোর মধ্যে এমন অনেক বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা ডিঙ্গোকে বন্য পরিবেশে টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করে। সেন্ট্রাল কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ব্রাডলি স্মিথ। তার গবেষণার বিষয় হলো কুকুর সম্বন্ধীয় প্রাণীদের আবেগ এবং আচরণ। ডক্টর স্মিথ বলেন,

মূল পার্থক্য হল তাদের মধ্যকার স্বাধীনভাব। আপনি একটি কুকুরকে সিম্পসন মরুভূমিতে  ছেড়ে দিয়ে আসতে পারবেন না। কিন্ত ডিঙ্গো অস্ট্রেলিয়ার যেকোনো জায়গাতে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবে । তারা মানুষের কোনোরকম সাহায্য ছাড়াই প্রজনন কাজ চালিয়ে যেতে পারবে। তাদের এই স্বাধীনভাবের কারণে ডিঙ্গো যেকোনো সমস্যা সমাধানে অনেক অভিজ্ঞ; অনেকটা বন্যে থেকেও আধুনিক প্রশিক্ষিত কুকুরের মতো। 

ইকোসিস্টেমে রক্ষায় ডিঙ্গোর ভুমিকা এবং ব্যবস্থা। Image Source: Link.springer.com

জাতিসংঘের ইকোসিস্টেম পুনর্গঠন ২০২১-২০৩০ দশকের লক্ষ্য বৃহৎ আকারের পুনরুদ্ধার কর্মসূচি পালন, অবনমিত, ক্ষতিগ্রস্ত এবং ধ্বংস হওয়া জমিগুলিকে পূর্ণগঠন করা যা বিশ্বব্যাপী জীববৈচিত্র্য সংকটের উত্তরণে বৈপ্লবিক ভূমিকা পালন করবে। 

বাস্তবিক এই আখ্যানে ডিঙ্গোর প্রয়োজন বোঝাটা আজ চরম দরকার। ইউরোপিয়ান সেটলাররা একসময় তাসমানিয়ান টাইগার গণহারে হত্যা করেছিল শুধুমাত্র তাদের গবাদিপশুদের বাঁচানোর জন্য। কিন্ত আজ বাস্তবতাই আমরা দেখতে পাচ্ছি, সেটা কতটা বড় ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। 

এখন যদি বন্য কুকুর হত্যার নাম দিয়ে ডিঙ্গোদেরও হত্যার লাইসেন্স দেওয়া হয় তাহলে হয়তোবা এই প্রাণীটিও একদিন হারিয়ে যাবে পৃথিবীর বুক থেকে। 

প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীনতার চিহ্ন কাঁধে বিরাণভূমি। Image Source: Link.springer.com

সৃষ্টির শুরু থেকে ঈশ্বরের নিপুণ কর্মে প্রতিটি জিনিস ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মানব বিচরণের এই অধ্যায়ে যতই আধুনিকতার কায়েম হোক না কেন সৃষ্টির এই সুরের ছন্দে কোনো অঘটন হলেই ছন্দপতন হয়ে যায় পুরো চক্রের। ডিঙ্গো ফেন্সের কোপে পরিবেশগত বিপর্যয় তেমনি এক বিস্ফোরিত উদাহরণ মানবিক এই পৃথিবীর বুকে। 

 

Feature Image: The Guardian
References:

01. Dingoes were here first.
02. Dingo Dilemma.
03. Dingo Barrier Fence: Presenting the case to decommission the world’s longest environmental barrier in the United Nations Decade on Ecosystem Restoration 2021-2030.

4 COMMENTS

  1. শুরুটা কোথায় থেকে কোথায় গিয়ে গড়ালো! আমার পড়তে একদম ছোট গল্পের মতো লেগেছে। তথ্য আর স্মার্ট পরিবেশন। একদম অন্যরকম টপিক্সে অনবদ্য ফিচার। এদের হাতেই পৃথিবী আসলে।

    অসাধারণ!

  2. হোয়াট অ্যা স্টোরিটেলিং উইথ ইনফো! এক্সসিলেন্ট। দিস ইজ অ্যা পারফেক্ট ফিচার ফর রিডার। মোর পাওয়ার টু রাইটার্স। ব্লেসড।