লাইব্রেরিকে সাধারণত জ্ঞানের ভান্ডার বলা হয়। কথায় আছে না, একটি জাতির লাইব্রেরি যত বেশি সমৃদ্ধ হবে, সে জাতি তত বেশি সমৃদ্ধ হবে। কারণ লাইব্রেরি থেকে আপনি সকল বিষয়ে জ্ঞান আহরণ করতে পারবেন।
কিন্তু পৃথিবীতে এমন অনেক লাইব্রেরি রয়েছে যেগুলো পরিত্যক্ত এবং অব্যবহৃত অবস্থায় রয়েছে। যেগুলো যত্নের অভাবে প্রায় ধ্বংসাবশেষ অবস্থায় রয়েছে। তাই আজকে আমরা আপনাদের সাথে আলোকপাত করবো, এমনই বিশ্বের পাঁচটি পরিত্যক্ত ও অব্যবহৃত লাইব্রেরি নিয়ে।
মার্ক টোয়েন শাখা লাইব্রেরি
ডেট্রয়েটের গ্র্যাটিয়ট অ্যাভিনিউ এবং সেনেকা স্ট্রিটের কোণে অবস্থিত মার্ক টোয়েন শাখা লাইব্রেরি-টি শারীরিক ও সাংস্কৃতিক অবক্ষয়ের প্রমাণ হিসেবে রয়ে গেছে। ১৯৩০ এর দশকে যানজটের কারণে, গ্র্যাটিয়ট অ্যাভিনিউ শহরের রাস্তাগুলো বড় করার জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেয়। এর ফলে অনেক বিল্ডিং রাস্তা থেকে সরিয়ে ফেলা হয় এবং পুনরায় নির্মাণ করা হয়েছিল।
যখন শহরের রাস্তা গুলো বড় করার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয় তখন মার্ক টোয়েন লাইব্রেরির পাশে অবস্থিত ওসিয়াস শাখা লাইব্রেরিও ভেঙে ফেলা হয়। ঠিক সে সময় মার্ক টোয়েন শাখা লাইব্রেরির কী হবে তা নিয়েও কাজ শুরু হয়।
কারণ মার্ক টোয়েন শাখা লাইব্রেরি ছিল ডেট্রেয়েটের তৃতীয় আঞ্চলিক লাইব্রেরি। আশে-পাশের লাইব্রেরি থেকে বড় করার জন্য টোয়েন শাখাতেও কাজ শুরু করা হয়। লাইব্রেরির কাজ প্রথম শেষ হয় ১৯৪০ সালের দিকে এবং ২২শে ফেব্রুয়ারি জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। প্রথম যেদিন লাইব্রেরি-টি খুলে দেওয়া হয় সেদিন ২০,০০০ বেশি বই ছিল তাকগুলোতে এবং প্রধান গ্রন্থাগারিক এথেল কেলো এটি পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। বহু বছর ধরে টোয়েন শাখ লাইব্রেরি ডেট্রেয়েটের উত্তর-পূর্ব দিকের সামাজিক কেন্দ্র ছিল।
১৯৯০ সালের দিকে, মার্ক টোয়েন সহ আরেকটি শাখা আর্থিক সমস্যার কারণে বন্ধ হয়ে যায়। তবে সেপ্টেম্বর মাসে আবার দু’দিনের জন্য চালু করা হয়েছিল। ১৯৯৭ সালে, লাইব্রেরি কমিশন পুরো ছাদ প্রতিস্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং সাময়িকভাবে টোয়েন শাখা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
পরবর্তীতে মার্ক টোয়েন শাখ লাইব্রেরিতে আর কোন কাজ করা হয়নি। এতে ভবনটির জানালা, দরজা, আসবাবপত্র এবং অধিকাংশ জিনিস ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে যায়। তাই মার্ক টোয়েন শাখা লাইব্রেরি ২০১১ সালে জুলাই মাসে ২,০০,০০০ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে অ্যাভামো ডেমোলিশনের সাথে ভেঙে ফেলার জন্য চুক্তি করা হয়েছিল।
এতে বই বা উপকরণ সরিয়ে ফেলার কোন বিধান ছিল না। এছাড়া মিসেস ম্যাচি বলেছিলেন যে, বিল্ডিংয়ের প্রবেশ করে জিনিসপত্র উদ্ধার করা বিপদজনক হবে।
প্রিপিয়াত স্কুল নম্বর টু
প্রিপিয়াত সেকেন্ডারি স্কুল নম্বর ২ হলো প্রিপিয়াত শহরের পাঁচটি মাধ্যমিক স্কুলগুলোর একটি। এটি ২৯ কুরচাতোভা রোডের কাছেই অবস্থিত। শহরটি ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তবে এই শহরটি তরুণ শহর নামে সেই সময় বেশ পরিচিত ছিল।
প্রিপিয়াত শহর শুধুমাত্র পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের শহর হিসেবে খ্যাতি ছিল না। তাছাড়া এই শহরটাকে পরিবহন ধমনীর সংযোগস্থলে প্রধান ট্রান্সশিপমেন্ট পয়েন্ট হিসেবে ডিজাইন করা হয়। তাছাড়া এই শহরে শিক্ষিত মানুষের চাহিদা ছিল বেশি।
এই শহরের ৪৯৮০টি বাচ্চাদের জন্য ১৫টি প্রি-স্কুল ছিল। প্রিপিয়াত মাধ্যমিক স্কুল নম্বর #২, সে-সময় প্রায় ৬৭৮৬ জন শিক্ষার্থীকে শিক্ষাপ্রদান করতো। বাচ্চারা এই স্কুল থেকে স্নাতক পাস করার পর, প্রিপিয়াতের ভোকেশনাল স্কুলে পড়াশোনা করতে পারতো।
কিন্তু চেরনোবিল বিশ্বের সবচেয়ে বিপর্যয়কর পারমাণবিক দূর্ঘটনা ঘটে এবং প্রিপিয়াত শহরটি দীর্ঘকালের জন্য বসবাসের অযোগ্য বলে বিবেচিত হয়। যার ফলে শহরের অধিকাংশ ভবন গুলো ফাঁকা।
কিন্তু সবচেয়ে সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, প্রিপিয়াত স্কুল নম্বর ২ এখন পরিত্যক্ত তবে সেখান থেকে এখনও কোন বই সরানো হয়নি। কি-কারণে এখনও সরানো হয়নি, সেটা সবার কাছেই অজানা। পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল। পরে একজন নতুন মালিকের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়।
শ্যাতু দ্য ফ্লোরেহ লাইব্রেরি
শ্যাতু দ্য ফ্লোরেহ বাক্যটি হলো একটি ফ্রেন্স ভাষা। যার বাংলা অর্থ হলো ফ্লোরেট ক্যাসেল। এটি বেলজিয়ামের একটি ছোট শহর। মৌলবাইক্স নামক স্থানে অবস্থিত।
নিও-টিউডর শৈলীতে স্থপতি ডিসারি অ্যাথোইস লিমবার্গ দ্বারা ডিজাইন করা হয়েছিল। মার্কাইস ডু চ্যাস্টেলার অসওয়াল্ড এই ক্যাসেলটি নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
তিনি প্রাচীন হাইনল্ট পরিবারের বংশধর ছিলেন। নির্মাণের পর এখানে তিনি একটি ব্যক্তিগত দৃষ্টিনন্দন লাইব্রেরি স্থাপন করেন। যেখানে প্রচুর বইয়ের সমাহার ছিল। কিন্তু মানুষের লোভ বা সমস্যার কারণে এই ক্যাসেলটি বন্ধ হয়ে যায়।
সেই সাথে ব্যক্তিগত লাইব্রেরিও বন্ধ হয়ে যায়। যার ফলে সেখানে যে, অনেক বইয়ের সমাচার ছিল সেগুলোও আর সরানো হয় নিই। সেই অবস্থায় বহুবছর ধরে এগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে।
ডা: বেকোলারি র্যানসোম কুটি লাইব্রেরি
ডা: বেকোলারি র্যানসোম কুটি লাইব্রেরি ১৩ আদেমি সেন্ট, ওশোদি-ইসলো, লাগোস, নাইজেরিয়াতে অবস্থিত। এটি আসলে কখনোও লাইব্রেরি ছিল না। মানবাধিকার কর্মীকে সম্মান জানাতে এই নামকরণ করা হয়েছিল, তবে ভবনটিতে কোন নেই। এটি সম্পূর্ণ হওয়ার পর থেকে খালি পড়ে আছে।
আফিজ ইপেসার মত, লাইব্রেরি-টি রাষ্টীয় তহবিলের হস্তক্ষেপের মাধ্যমে নির্মিত হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে এখানে প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র এবং বই দিয়ে সজ্জিত করার জন্য যথেষ্ট অর্থ ছিল না। তবে কালের সাক্ষী হয়ে হিসেবে এখনও দাঁড়িয়ে আছে ডা: বেকোলারি র্যানসোম কুটি লাইব্রেরি।
পূর্ব সেন্ট লুইস লাইব্রেরি
১৮৭২ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি কাউন্সিলে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়, অ্যাটর্নি শহরের অফিসে পাবলিক স্কুল লাইব্রেরি জন্য একটি কক্ষ প্রদান করা হবে এবং সেখানে লাইব্রেরি স্থাপন করা হবে। কিন্তু স্কুল বোর্ড লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়। এতে রাজ্য গ্রন্থগার আইন প্রণয়ন করে ১৮৭২ সালের ১৬ জুলাই কাউন্সিলে একটি পাবলিক লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার অধ্যাদেশ পাস করা হয় যার নামকরণ করা হয় পূর্ব সেন্ট লুইস লাইব্রেরি।
১৮৭৪ সালের ৫-ই ফেব্রুয়ারি লাইব্রেরি প্রথম চালু করা হয়। কিন্তু পৌরসভার ঝামেলার কারণে পরে আর চালু করা হয় নিই। পৌরসভার বিভিন্ন কারণে পূর্ব সেন্ট লুইসে পরবর্তী দশবছর কোন লাইব্রেরি ছিল না। তবে ১৮৯১ সালে সিটি কাউন্সিল যখন পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হয় তখন পূর্ব সেন্ট লুইস লাইব্রেরি অ্যাডেল বিল্ডিংয়ের তৃতীয় তলায় নতুন করে আবার চালু করা হয় এবং জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
এখানে ১৮৯৫ সাল পর্যন্ত লাইব্রেরি-টি স্থানীয় ভাবে ছিল তবে পরে স্থানান্তরিত করা হয়। এখানে প্রায় ৭,০০০ মতো বই ফেলা রাখা হয়েছিল। তবে এটি কিন্তু পরিত্যক্ত লাইব্রেরি নয় একটি স্থানান্তরিত লাইব্রেরি। তবুও বই গুলো ফেলা রাখা হয়েছিল। কি কারণে বা কি উদ্দেশ্য ফেলা রাখা হয়েছিল বইগুলো আজও সেটা জানা যায়নি।
Feature Image: www.pinterest.jp References: 01. The abandoned-unused-libraries-of-world. 02. The Mark Twain Library. 03. The Pripyat-secondary-school Library. 04. The east-st-louis-public.