চুপাকাবরা! কারো মতে নরক থেকে উঠে আসা এক প্রাণী। আবার, কেউ বলে রাসায়নিক পরীক্ষার শিকার এক জন্তু। কেউবা বলে রোবট। আবার কেউ বলে স্বয়ং শয়তান! বিংশ শতকের এক রহস্যময় আরবান লেজেন্ড হচ্ছে এই চুপাকাবরা। স্প্যানিশ ভাষাতে চুপাকাবরা (Chupacabra) উচ্চারণটা হয় ‘চুপাকাউরা’। এর অর্থ দাঁড়ায় ‘ছাগলের রক্ত চোষা’। কথিত আছে, এই জন্তুর হাতে সবচেয়ে বেশী প্রাণনাশ হয়েছে ছাগলের। ঠিক এই কারণেই এমন নামকরন।
ঘটনার সূত্রপাত ১৯৯৫ সালে। পুয়ের্তো রিকোর শহর ক্যানোভানাসের এক ছাগল খামারের মালিক হুট করেই একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে, তার খামারের প্রায় পনেরটি ছাগল মরে পড়ে আছে। বাকি ছাগলগুলো একপাশে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে। বেঁচে থাকা ছাগলগুলোর চোখমুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট! যেন কিছু দেখে প্রচন্ড ভয় পেয়েছে ওগুলো। পরবর্তীতে, পরীক্ষা করে দেখা যায় প্রতিটা মৃত ছাগলের গলার কাছে দুটো ছোট্ট ফুটো। শুধু তাই নয়, ওদের শরীরে নাকি বিন্দুমাত্র রক্তও ছিল না। যেন ওই ফুটো দুটো দিয়ে কেউ ওদের শরীর থেকে সমস্ত রক্ত শুষে নিয়েছে! পুরো শহরে হইচই পড়ে যায়।
কেউ বললো যে শহরে কোনো পিশাচের আবির্ভাব ঘটেছে; আবার কেউ বললো যে কোনো প্রাচীন অভিশাপ নেমে এসেছে। বিজ্ঞানমনষ্করা অবশ্য এসব হেসেই উড়িয়ে দিলেন। তাদের মতে ছাগলগুলো বিশেষ কোনো রোগে মারা গেছে।
যাই হোক, ঘটনার শুরুটা ছিল এমনই।
সেদিন রাতেই ক্যানোভানাস শহরেই আরেকটি কান্ড ঘটে। পূর্বোক্ত খামার থেকে বেশ কিছুটা দূরে আরেকটি খামার ছিল যার মালিক সান্ট্রো নামের এক ভদ্রলোক। পরের দিন গভীর রাতে তিনি শুনতে পেলেন যে, তার খামারের ভেড়াগুলো অদ্ভুতভাবে চিৎকার করছে। উঠে গিয়ে স্যান্ট্রো দেখতে চাইলেন যে কী হয়েছে। কিন্তু ইতোমধ্যেই গোটা শহরে সকালবেলার ঘটনা ছড়িয়ে পড়েছিল। তাই স্যান্ট্রোর স্ত্রী মারিয়া তাকে যেতে নিষেধ করলেন।
সকাল উঠে দেখা গেলো স্যান্ট্রোর খামারের ভেড়া আর খরগোশগুলো সব মরে পড়ে আছে। সবার গলাতে সেই রহস্যময় দুটো ফুটো; আর কোনো প্রাণীর শরীরেই রক্তের চিহ্নমাত্র নেই! চঞ্চল হয়ে উঠলো পুরো শহর! কী হচ্ছে এসব? স্থানীয় গির্জার পাদ্রী তো ঘোষনাই দিয়ে বসলেন যে, স্বয়ং নরকের আত্মারা নেমে এসেছে ক্যানোভানাসে। এবার আর কারো রক্ষা নেই!
সত্যিকার অর্থেই নরক নেমে এলো ক্যানোভানাসে। প্রতি রাতেই কোনো না কোনো খামারের প্রাণীর মৃত্যু হতে লাগলো, তাও রহস্যজনকভাবে। শহর জুড়ে ছড়িয়ে পড়লো নানান গুজব। বাচ্চাদেরকেও একা ছাড়তে ভয় পাচ্ছিলেন মা-বাবা।
স্কুলগুলোতে নোটিশ দিয়ে দেয়া হলো যেন অভিভাবকেরা বাচ্চাদের স্কুলে দিয়ে যান এবং স্কুল থেকে আবার নিয়ে আসেন। কিন্তু মৃত্যু যেন থামার কোনো নামই নিল না। গরু, ছাগল, ভেড়া, হাঁস-মুরগী, খরগোশ এবং আরো গৃহপালিত পশু মারা যেতে লাগলো প্রতি রাতে। রাতের বেলা বাড়ি থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দিল মানুষ। অফিস-আদালত, দোকান-পাট সবকিছুই সন্ধ্যাবেলাতেই বন্ধ হয়ে যেত। লোকেরাও কাজ সেরে সন্ধ্যার আগেই বাড়ি ফিরতে লাগলো, আতঙ্ক আর ভয়ে।
এরকমই এক সন্ধ্যাতে জঙ্গলের রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফিরছিল পাবলো আর ব্যাঞ্জো নামে দুই বন্ধু। হুট করেই এক ঝোপের আড়াল থেকে ছাগলের মর্মান্তিক আর্তনাদ শুনতে পেল তারা। ব্যাঞ্জো ভীতু হলেও পাবলো ছিল খানিকটা সাহসী। সাহস করে এগিয়ে গেল সে। সেদিন ছিল পূর্ণিমা রাত। চাঁদের আলোতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল চারপাশ।
পাবলো দেখতে পেল চার-পাঁচ ফুট লম্বা এক অদ্ভুত প্রাণী একটা ছাগলের গলা কামড়ে রক্ত চুষে নিচ্ছে। এতক্ষণ ওরা যে চিৎকার শুনেছিল তা ছিল ছাগলটার অন্তিম আর্তনাদ। অদ্ভুত-দর্শন সেই প্রাণীটার মুখটা ছিল অনেকটা মাছের মতো। চোখ দুটো ছিল কুৎসিত আর পুরো শরীরটা মানুষের মতো, তবে অনেক রোগা।
ভয়ে চিৎকার করে উঠলো পাবলো। ওর দিকে ফিরে তাকালো প্রাণীটা। এবার পাবলো দেখতে পেল প্রাণীটার পিঠে দুটো ডানাও আছে। ওর চোখের সামনেই ডানা মেলে আকাশে উড়ে গেলো অদ্ভুত-দর্শন সেই প্রাণীটা!
ব্যাঞ্জোও দেখতে পেল প্রাণীটাকে। কোনোমতে বাড়ি ফিরলো দুজন। পরের দিন সকালে পুরো শহরে রটে গেল ঘটনাটা। একটা অদ্ভুত প্রাণী ছাগলদের রক্ত চুষে খাচ্ছে। তাই, ওটার নাম দেওয়া হলো ‘ছাগলের রক্তচোষা’ বা ‘চুপাকাবরা’। এই কাহিনীর প্রভাবেই হোক বা অন্য কোনো কারণে, এরপর অনেক মানুষই দেখতে পেল অদ্ভুত-দর্শন সেই প্রাণীটাকে। কেউ বললো ওটা আকাশে ওড়ে, কেউ বললো পানিতে ভাসে, আবার কেউ বললো বানরের মতো লাফিয়ে লাফিয়ে চলে!
খামারের পশুগুলো কিন্তু ঠিকই মরতে থাকলো। বছরের শেষের দিকে বাধ্য হয়ে লোকেরা দলবেঁধে চুপাকাবরাকে ঠেকানোর জন্য খামারগুলো রাতের বেলা পাহারা দিতে শুরু করলো। এই সময় থেকে হুট করেই যেন চুপাকাবরার উৎপাত কমে গেল। কোনো খামার আর আক্রান্ত হলো না। তবে মাঝে মাঝে এখানেই ওখানে মিলতে লাগলো কোনো নিঃসঙ্গ ছাগল বা ভেড়ার মৃতদেহ।
পুয়ের্তো রিকোর সংবাদপত্রগুলোতে আসতে লাগলো এই অদ্ভুত উৎপাতের খবর। ধীরে ধীরে আমেরিকার বাকি অঞ্চলগুলোতেও ছড়িয়ে পড়তে লাগলো এই কাহিনীগুলো। পুয়ের্তো রিকো মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি কমনওয়েলথ প্রদেশ। অর্থাৎ, এখানকার লোকেরা আনুষ্ঠানিকভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হলেও এদের কোনো ভোটাধিকার নেই। নিজেদের ভূমিতেই এরা পরবাসী। যাইহোক, ওয়াশিংটন পোস্ট আর নিউইয়র্ক টাইমসেও খবর এলো চুপাকাবরার উৎপাতের। সাথেই সাথেই ব্যাপারটাতে রাজনীতিতেও জড়িয়ে পড়লো।
অক্টোবর মাসের দিকে মেয়র হোসে র্যামন কিমো সোতো চুপাকাবরাকে ধরার জন্য একটি বিরাট বাহিনী বানালেন। প্রতিরাতে পুলিশ, সাধারণ মানুষসহ প্রায় দুইশো লোকের একটি বাহিনী নিয়ে উনি চুপাকাবরা শিকারে বের হতেন। সবার সামনে থাকতো একটা ছোট্ট গাড়ি যার পিছনে খাঁচাতে বন্দী একটা ছাগল। তারপর আরেকটা ভ্যান, যার পিছে বিশাল একটা ক্রুশ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেন মেয়র কিমো। তার পিছনে থাকতো পুলিশের গাড়ি। আর পুলিশের গাড়ির পিছে সাধারণ মানুষেরা লাঠি-বর্শা নিয়ে হেঁটে-হেঁটে আসতো।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম এজন্য মজা করে কিমোকে ইন্ডিয়ানা জোনসের আদলে নাম দেয়, ‘কিমো জোনস’। চুপাকাবরা নিয়ে বহু সাক্ষাৎকারও দিয়েছিলেন তিনি। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসাবে ব্যাপারটা বেশ ভালোই ছিল। ১৯৯৬ সালের শুরুতে এক হিসাবে দেখা যায় যে, পুরো বছরে প্রায় দুই হাজার গবাদিপশু মারা গেছে এই অদ্ভুত আক্রমণে। নড়ে-চড়ে বসে পুয়ের্তো রিকো সরকার। ক্যানোভানাসের এই অদ্ভুত আরবান লেজেন্ডের কাহিনী ধীরে ধীরে গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে যাচ্ছিল, যার ফলে পর্যটনখাতে ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছিল তারা।
শহরের সবখানে পুলিশ মোতায়েন করা হলো, একদল বিজ্ঞানী আর পশু চিকিৎসককে নির্দেশ দেওয়া হলো মৃত পশুগুলোর দেহ পরীক্ষা করার জন্য। ১৯৯৬ সালের মার্চের শেষ নাগাদ চুপাকাবরার উপদ্রব একেবারেই কমে এলো। তবে গল্প কিন্তু এখানেই থেমে গেল না।
যেসব বিজ্ঞানীদের মৃতদেহগুলো দেখার কাজ দেওয়া হয়েছিল তারা স্পষ্ট কোনো সমাধান দিতে পারলেন না। কেউ কেউ বললেন প্রাণীগুলোর মৃত্যু হয়েছে বাদুড় জাতীয় কোনো প্রাণীর কামড়ে; আবার কেউ কেউ বললেন প্রাণীগুলো অসুস্থ ছিল। ওদিকে পুয়ের্তো রিকোর একটা মহল ততদিনে প্রচার করে ফেলেছে, চুপাকাবরা আসলে মার্কিন সরকারের কোনো গোপন প্রজেক্ট থেকে পালিয়ে আসা কোনো প্রাণী। মার্কিন সরকার নাকি নিজেদের ফায়দার জন্য প্রাণীদের ওপর ভয়াবহ সব রাসায়নিক পরীক্ষা চালায়।
আরেকটি সংবাদপত্রে এলো, চুপাকাবরা আসলে ভিনগ্রহ থেকে আসা কোনো প্রাণী। তাকে ডেকে এনেছে আমেরিকানরা। কেউ কেউ বলতে লাগলো, আদিম যুগের কোনো ডায়নোসরকে জাগ্রত করেছে মার্কিন সরকার! এরকম নানান গুজব ছড়াতেই থাকলো। অদ্ভুত ব্যাপার হলো, এসব গুজবের কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ এখন পর্যন্ত মার্কিন সরকার জানায়নি।
১৯৯৬ সালের মে-জুন মাস নাগাদ চুপাকাবরা নামক আরবান লেজেন্ডটির ভাবমূর্তিতে অদ্ভুত এক পরিবর্তন এলো। আগেই বলা হয়েছে, পুয়ের্তো রিকোর লোকেরা নিজেদের ভূমিতেই পরবাসী। তাই, তারা চুপাকাবরাকে নিজেদের স্বকীয়তার প্রতীক হিসাবে বিবেচনা করতে লাগলো। ১৯৯৬ সালের শেষ নাগাদ চুপাকাবরার কার্টুন আঁকা প্রায় পঞ্চাশ হাজার টিশার্ট বিক্রি হলো পুরো পুয়ের্তো রিকোতে, কয়েকটি গানও হলো এই অদ্ভুত প্রাণীটিকে নিয়ে। শুধু তাই নয়, এমনকি এই প্রাণীকে নিয়ে অ্যানিমেশন সিনেমাও নির্মিত হয়েছে।
বিখ্যাত কার্টুন স্কুবি ডু’র একটি এপিসোডও আছে চুপাকাবরাকে নিয়ে। এখনো চুবাকাবরা কিংবদন্তীটি পুয়ের্তো রিকোর লোকেদের কাছে একটি গর্বের চিহ্ন! যাই হোক, ২০০০ সালের দিকে আমেরিকার দক্ষিণাঞ্চল এবং মেক্সিকোতে অদ্ভুত কিছু প্রাণীর উপদ্রব শুরু হয়। আবারো নতুন করে শুরু হয় গুজব। লোকেরা বলতে লাগলো চুপাকাবরা ফিরে এসেছে।
তবে এবার একটু ভিন্ন রূপে। লোকেরা বলাবলি করছিল যে কালো রঙের, কুকুরের আকৃতির, চারপায়ে হাঁটা কিছু অদ্ভুত প্রাণী নাকি রাতের আঁধারে বনে-জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ওই প্রাণীগুলোর শরীরে নাকি কোনো লোম নেই। এই রহস্যের সমাধান অবশ্য কিছু দিনের মধ্যেই হয়ে যায়। আসলে ওই অঞ্চলের বন্য কুকুরগুলোর মধ্যে অদ্ভুত এক অসুখ মহামারি আকার ছড়িয়ে পড়েছিল সেই সময়। এই অসুখের ফলে ওদের শরীর থেকে সমস্ত লোম ঝরে যেত এবং লোমকূপ বন্ধ হয়ে কালশিটে দাগ পড়ে যেত।
এবার অবশ্য কোনো ভেড়া বা ছাগলের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। এটাই ছিল মূলত উত্তর আর দক্ষিণ আমেরিকার কিংবদন্তী চুপাকাবরার গল্প। তবে একটা বিষয় কিন্তু আশ্চর্যজনক! চুপাকাবরার শিকার কোনো মানুষের মৃত্যুর কথা কিন্তু শোনা যায়নি। তবে কি চুপাকাবরা মানুষকে পছন্দ করতো? নাহলে ঘটনাটা কি?
২০১৮ সালে ভারতের মণিপুর রাজ্যের অদ্ভুত এক আতংক ছড়িয়ে পড়ে। দুই পায়ে হাঁটা মানুষের মতো শরীর আর ছাগলের মতো মাথাওয়ালা একটা প্রাণী নাকি গবাদি পশু আর মানুষদের ওপর হামলা করতো রাতের বেলা। প্রচুর গবাদিপশু নাকি মারা গেল এই প্রাণীর আক্রমণে।
একই বছরের জুলাই মাসের দিকে এক কৃষক গভীর রাতে মলত্যাগ করতে গিয়ে দেখে তার গোয়ালঘরের ভিতর অদ্ভুত-দর্শন এক প্রাণী বসে আছে; যেটা তার গরুটাকে মেরে মাংস চিবিয়ে খাচ্ছে। সাহস করে এগিয়ে গিয়ে কৃষক দেখে প্রাণীটার শরীর মানুষের মতো হলেও মাথাটা ছাগলের আকৃতির। কৃষক আরো কাছে যেতেই ওটা ঘুরে তার ওপরেও হামলা চালায়। কৃষকের তীব্র চিৎকারে তার বাড়ির লোকেরা চলে এলে প্রাণীটা পালিয়ে যায়। গোয়ালঘরে গরুটার ছিন্ন-ভিন্ন মৃতদেহ পাওয়া যায়।
এরপর নাকি আরো অনেক প্রাণীরই ছিন্ন-ভিন্ন মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছিল জঙ্গলে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এই অদ্ভুত প্রাণীটিকে চুপাকাবরার সাথে তুলনা করতে শুরু করে। সত্যিই কি সেটা চুপাকাবরা ছিল? নাকি অন্য কিছু? চুপাকাবরার অস্তিত্ব কি সত্যিকার অর্থেই আছে? নাকি এটা কেবলই আতঙ্কের বশে গড়া মানবমনের একটা কাল্পনিক রূপ মাত্র? এমন হাজারটা প্রশ্নের সমাধান হয়নি বলেই – চুপাকাবরা! আজো এক অমীমাংসিত রহস্যই রয়ে গেছে।
Feature Image: brittanica.com
তথ্যসূত্রসমূহ:
01. আরবান লেজেন্ডস। সংকলন ও অনুবাদ – লুৎফুল কায়সার। প্রকাশনী – ভূমিপ্রকাশ।
02. The Creepy Truth About Chupacabras.
03. The History of El Chupacabra.
04. On the mystery of livestock deaths in Manipur.