পাহাড়ের রানি দার্জিলিং সে যে কত রঙিন। স্রোতের দাপটে বয়ে চলেছে হাজারো নদী পাহাড়ের বুক চিরে।পাহাড়কে জাপটে ধরে রয়েছে শত শত মাইল জুড়ে চা বাগান। সবুজে ঘেরা পাহাড়-পর্বত মনোরম সুন্দর এই পরিবেশ দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। যেন মনে হয় পৃথিবীর বুকে এক টুকরো স্বর্গ এই দার্জিলিং।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি বিভাগের একটি অন্যতম জেলা হচ্ছে দার্জিলিং। যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৭১০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। ভারতবর্ষের অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ পাহাড়ের রানি খ্যাত এই দার্জিলিং। এছাড়া চায়ের জন্য দার্জিলিং বিখ্যাত। অপরূপ সৌন্দর্যে ভরপুর ২০৯৩ বর্গকিলোমিটার অঞ্চলে প্রায় ১৫ লাখ লোকের বসবাস।
দার্জিলিংয়ের ইতিহাসের সাথে নেপাল, সিকিম, ভুটান ও ব্রিটিশ ভারত-এর ইতিহাস ওতপ্রোতভাবে জড়িত। দার্জিলিং নামকরণের উৎপত্তি ‘দর্জে লিং’ থেকে। ‘দর্জে লিং’ ছিল দার্জিলিং-এর স্থানীয় এক জাতির উপসনালয়।যা সিকিমের রাজা ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে নির্মাণ করেছিলেন।
দার্জে মানে হচ্ছে বর্জ্য কিংবা চমক। লিং মানে হচ্ছে স্থান। তাহলে দার্জিলিংয়ের মানে দাঁড়ায় এটি এমন একটি স্থান যেখানে বর্জ্যসহ বিদ্যুৎ চমকায়।
তবে সবচাইতে কষ্টের ব্যাপার হচ্ছে উপাসনালয়টি ১৮১৫ সালে নেপালের অন্যতম ভয়ংকর বাহিনী গোর্খা বাহিনী দ্বারা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। এই দার্জিলিং এক সময় সিকিমের অংশ ছিল আর সিকিম তখন সম্পূর্ণ আলাদা ছিল।
ভারতের সঙ্গে যুক্ত ছিল না। ওই সময়টাতে সিকিম একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে বিবেচনা করা হতো। এখন প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে কিভাবে দার্জিলিং ভারতের অংশ হলো?
ওই সময় সিকিম আলাদা রাষ্ট্র ছিল আর সিকিমের সাথে সব সময় নেপালের ছোটখাটো যুদ্ধ ও দ্বন্দ্ব লেগেই থাকতো। উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ পর্যন্ত সিকিমের রাজ্য দ্বারা দার্জিলিং সংলগ্ন পাহাড়ি অঞ্চল এবং নেপালের রাজ্য দ্বারা শিলিগুড়ি সংলগ্ন ধারায় সমতল শাসিত হতো।
১৭৮০ খ্রিস্টাব্দের দিকে নেপালের গোরখারা সমস্ত পাহাড়ের আধিপত্য নেওয়ার চেষ্টা করলে সিকিমের রাজা তাদের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। গোরখারা ছিল অনেক শক্তিশালী এদিকে সিকিমের রাজা তুলনামূলক কম শক্তিশালী ছিল। তাদের সাথে পেরে ওঠা এতটা সহজ ছিল না।
সিকিমের রাজা বারবার যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার কারণে ব্রিটিশদের সহায়তা নিল। ওই সময়ে ভারত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তথা ব্রিটিশদের দখলে। ব্রিটিশরা তখন নেপালিদের বিজয় রুখতে সমগ্র উত্তর সীমান্তে নেপালিদের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দে অ্যাংলো-গোর্খা যুদ্ধে গোর্খারা পরাজিত হয়ে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এবং নেপাল সিকিম থেকে যতটুকু অঞ্চল দখল করেছিল তা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে ফেরত দিতে বাধ্য হয়।
১৮১৭ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তিতালিয়া চুক্তির মাধ্যমে এই অঞ্চল সিকিমের রাজাকে ফেরত দেওয়ার মাধ্যমে সিকিমের সার্বভৌমত্ব রক্ষা হয়। ব্রিটিশরা এখানে অনেক উদারতার পরিচয় দিয়েছিল। ১৮২৯ সালে নেপাল ও সিকিমের মাঝে আবারো যুদ্ধের সৃষ্টি হয় অন্তদ্বারা সীমান্ত নিয়ে এইজন্য ব্রিটিশ বড়লাট উইলিয়াম পেন্টিং তার দুইজন অফিসার পাঠালেন অন্তদ্বারতে।
দুই অফিসার যাওয়ার সময় যাত্রা বিরতি নেন দার্জিলিংয়ে। এবং তাদের দার্জিলিং এর মনোরম পরিবেশ পাহাড়-পর্বত প্রাকৃতিক আবহাওয়া ও ঠান্ডা পরিবেশ তাদের এতটাই পছন্দ হয় যে, তারা ব্রিটিশ গভর্নরকে প্রস্তাব দিয়ে বসেন যে এই স্থানে একটি স্বাস্থ্য নিবাস তৈরি করতে। ব্রিটিশরা তাদের দেশে ঠান্ডা আবহাওয়াতে থাকতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন তারা ভারতে এসে বলা চলে কিছুটা কষ্টেই থাকতো। কিন্তু দার্জিলিং এসে তারা কিছুটা স্বস্তি ফিরে পেল।
গভর্নর তাদের প্রস্তাব মনজুর করলেন। তখনই তিনি সিকিমের রাজার কাছে দার্জিলিং লিজ নেওয়ার প্রস্তাব পাঠালেন। রাজা ব্রিটিশদের সহায়তার কথা ভুলে যায়নি। ১৮৩৫ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারি তিনি দার্জিলিংকে বিনামূল্যে ব্রিটিশদের কাছে অনির্দিষ্টকালের জন্য লিজ দিয়ে দেন। ক্ষমতা পাওয়ার পর ব্রিটিশরা এই জায়গার প্রচুর উন্নয়ন ঘটায় রেললাইন, রাস্তাঘাট, চা বাগান, স্কুল-কলেজ, মন্দির-চার্চ ইত্যাদি তৈরি করেন।
ওই সময় স্থানীয় লেপচা গোত্রের বসবাস ছিল। ব্রিটিশরা যখন আসে মাত্র ১০০ লোকের বসবাস ছিল সেখানে। কিন্তু দার্জিলিংয়ে ধীরে ধীরে ব্যবসা ও চায়ের আবাদ বাড়ার কারণে সিকিম থেকে প্রচুর পরিমাণ শ্রমিক এখানে আসতে থাকে। তাই দেখে সিকিমের রাজা কিছুটা হিংসায় জড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে সিকিমের রাজা তা সহ্য না করতে পেরে সেই শ্রমিকগুলোকে আবার জোরপূর্বক সিকিমে ফিরিয়ে নিতে থাকে। কিন্তু সিকিমের রাজার এই কাজ ব্রিটিশরা ভালো চোখে দেখেনি।
এই নিয়ে রাজার সাথে ব্রিটিশদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থেকে দণ্ডাদণ্ডি শুরু হয়। এক পর্যায়ে রাজার সাথে ব্রিটিশদের অনেক বড় ঝামেলার সৃষ্টি হয়। ১৮৪৯ সালে দুইজন ব্রিটিশ নাগরিককে সিকিম রাজার আদেশে সিকিম ভ্রমণ অবস্থায় আটক করা হয়। তখন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তাদেরকে মুক্ত করার জন্য সেনাবাহিনী পাঠায়।
১৮৫০ সালের মধ্যে তারা ৬৫০ বর্গমাইল অঞ্চল নিজেদের দখলে করে নেয়। এর মধ্যে দিয়ে দার্জিলিং চিরতরে সিকিমের হাতছাড়া হয়ে গেল। এতটুকুতে শেষ হলেও পারতো; কিন্তু ব্রিটিশরা ১৮৬৪ সালে ভুটানের অংশ কালিম্পং দখল করে নেয়। ১৮৬৬ সালে কালিম্পংসহ ১২৩০ বর্গমাইল এলাকা নিয়ে এই দার্জিলিং জেলা গঠিত হয়।
১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার পর কার্শিয়াং, দার্জিলিং, তরাই, কালিম্পং অঞ্চল নিয়ে নির্মিত দার্জিলিং জেলাকে পশ্চিমবঙ্গের সাথে যুক্ত করা হয়। ঠিক এইভাবেই দার্জিলিং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের একটি অংশ হয়ে ওঠে। যা বর্তমানে ভারতের সবচেয়ে সুন্দর ভ্রমণ স্থানগুলোর মধ্যে একটি।
দার্জিলিং অপরূপ সৌন্দর্যে ভরপুর পাহাড়-পর্বতের এক জায়গা। যেখানে রয়েছে পাহাড়ের বুক জুড়ে শত শত চায়ের বাগান। আর এই চায়ের বাগান দিয়ে সেখানকার মানুষের জীবিকা নির্বাহ হয়। অফিসিয়াল তেমন কোনো রেকর্ড না থাকলেও বলা হয়, ১৯৪০ সালের দিকে ব্রিটিশ এক অফিসার ক্যাপ্টেন স্ম্যালার প্রথম চায়ের বাগান শুরু করেন।
১৯৪১ সালে তিনি চা উৎপাদন করে ইংল্যান্ড পাঠান। যা ব্যাপক লাভজনক হয়। এখান থেকেই ধীরে ধীরে দার্জিলিংয়ের চা উৎপাদন শুরু এবং দার্জিলিংয়ের চা বিখ্যাত হয় বিশ্বব্যাপী। পাহাড়ের সৌন্দর্যকে এক অনন্য রূপ দিয়েছে এই চায়ের বাগান। পাশাপাশি এখানকার মানুষ কৃষিকাজ থেকে শুরু করে পর্যটন শিল্পে তাদের প্রধান আয় করে।
প্রায় ১৫ লক্ষ লোকের বসবাস এই দার্জিলিং জেলায় যার মধ্যে বিভিন্ন ধর্মের লোক বসবাস করে। এখানে হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, ইসলাম, জৈন ও অন্যান্য ধর্মের লোক বসবাস করে। তবে মোট জনসংখ্যার ৭৪% হিন্দু।
এছাড়া, দার্জিলিং জেলায় বিভিন্ন লোকের বসবাসের কারণে এখানে বহুল ভাষা প্রচলিত আছে। যেমন-নেপালী, হিন্দী, বাংলা, কুরখ, সাঁওতালি, উর্দু, লেকচা ও অন্যান্য ভাষার মানুষ এখানে বসবাস করে। নেপাল কাছাকাছি হওয়ার কারণে এখানকার অধিকাংশ মানুষই নেপালি ভাষায় কথা বলে। প্রায় ৪৫ শতাংশ মানুষ নেপালি ভাষায় কথা বলে। এছাড়া সংখ্যাগরিষ্ঠ কিছু লোক বাংলা ও হিন্দি ভাষায় কথা বলে।
দার্জিলিং জেলায় অপরূপ সৌন্দর্য পাহাড়-পর্বতের পাশাপাশি অনেক নদীও প্রবাহমান রয়েছে। উল্লেখযোগ্য কিছু নদী হচ্ছে-তিস্তা, মহানন্দা, রাম্মাম, লোধবা। রিয়াং, পম্পা, রঙ্গু, কলক, মেচী। এছাড়া, পাহাড়ের বুকে রয়েছে অসংখ্য নদী। যা পাহাড়ের সৌন্দর্যকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে শতগুণ। এছাড়াও পাহাড়ের রানি দার্জিলিংয়ে রয়েছে অসংখ্য ছোট বড় পাহাড়।
এখানে সবচেয়ে বড় পাহাড়ের নাম হচ্ছে সান্দাকফু। যা ৩৬০৮ মিটার উঁচু। ভ্রমণের জন্য দার্জিলিং একটি আদর্শ জায়গা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশ থেকে ও ভারতের বিভিন্ন জেলা থেকে দার্জিলিং ভ্রমণ করতে আসে মানুষ। এপ্রিল থেকে জুন দার্জিলিং ভ্রমণের জন্য সবচাইতে ভালো সময়।
এছাড়াও, কিছু কিছু মানুষ শীতের মাসগুলো যেমন-ডিসেম্বর জানুয়ারিতে দার্জিলিংয়ে বসে শীতের সকাল দেখতে পছন্দ করে। দার্জিলিংয়ে রয়েছে পাহাড়ের আদিবাসীদের বসবাস ও রয়েছে এদের সংস্কৃতি। মূলত লেপচাস ও রঙ্গপা এই দুই ধরনের আদিবাসীদের বেশি বসবাস দার্জিলিংয়ে।
তারা নিজেদেরকে পাহাড়ি পরিচয় দিতে বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করে। তাদের উৎপত্তি অস্পষ্ট হলেও তারা বৈশিষ্ট্যগত মঙ্গোলিয়ান। পাহাড়ি মানুষের মধ্যে বড় একটি অংশ হচ্ছে গোর্খা। এরা অনেক বুদ্ধিমত্তার অধিকারী ও পরিশ্রমী। পাশাপাশি উদ্যোগী ও বিভিন্ন উপোভাষায় কথা বলতে জানে। এদের যুদ্ধ করার ক্ষমতা ও সাময়িক দক্ষতা মারাত্মক।
ওই সময়ের ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতেও এমনকি বর্তমানে ভারত সেনাবাহিনীতে রয়েছে এদের মারাত্মক সুনাম। তারা অস্ত্র ও যুদ্ধ করতে অনেক পারদর্শী। এছাড়াও তাদের রয়েছে পাহাড়ি নৃত্য ও রকমারি খাবারের সংস্কৃতি পাহাড়ি মানুষজন তাদের প্রতিটি মুহূর্ত নৃত্য গানের সংস্কৃতি মধ্যে পালন করে। তাদের রয়েছে নিজস্ব কবিতা গান ও নাচ। সবুজ শ্যামল পাহাড়ের মাঝখানে এসব নিত্য ও সংস্কৃতি আরো বেশি ফুটে ওঠে। মূলত নেপালিদের লোকসংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ এসব পাহাড়।
প্রধান দুইটি ধর্ম হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্ম লোকজনের মাঝে এসব সংস্কৃতি অন্যরকম এক বন্ধনে সৃষ্টি করেছে। হিন্দু ও বৌদ্ধ উভয় ধর্মের দেব-দেবীকে সন্তুষ্ট করার জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা নৃত্য। রয়েছে আলাদা আলাদা লোকসংগীত।
এসব নৃত্য লোকসংগীত তাদেরকে বহুৎ প্রভাবিত করে। তারা তাদের দেব-দেবীকে সন্তুষ্ট করার জন্য এসব লোকসংগীত ও নৃত্যর পাশাপাশি তাদের উপাসনালয়, ধর্মীয় মন্দির ও ধর্মীয় স্থানকে বিভিন্নভাবে সাজিয়ে তোলে ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পালন করে।
এসব কিছু নৃত্যের নাম হচ্ছে-ঝুমরা নাচ, বালান নাচ, দেওড়া নাচ, যাত্রা নাচ, মারনি নাচ, ঝাওরে নাচ, সঙ্গিনী নাচ ইত্যাদি।এছাড়াও রয়েছে তাদের রকমারি খাবার। পাহাড়িরা সাধারণত নিজেদের খাবার খেতেই বেশি পছন্দ করে। মোমো ও থুপকাস এই দুই জাতীয় খাবার তাদের প্রধান খাবারের মধ্যে পড়ে। এছাড়াও তাদের কিছু জনপ্রিয় খাবার হচ্ছে-আলুদুম, টংবা, তিব্বতি চা ও শাফলায় ইত্যাদি।
বিভিন্ন উৎসবের মাধ্যমে পাহাড়িরা তাদের দিনকাল পার করে। সরস্বতী পূজা, দুর্গাপূজা, দিওয়ালি ইত্যাদি প্রধান উৎসব ছাড়াও এই অঞ্চলের মানুষ তাদের নিজস্ব কিছু উৎসব পালন করে। তিব্বতিরা ফেব্রুয়ারির শেষ থেকে শুরু করে মার্চ পর্যন্ত নববর্ষ উদযাপন করে ও তাদের নিজস্ব শয়তান নৃত্য পালন করে।
ভুটিয়া এবং লেপচারা বছরের শেষে জানুয়ারি মাসের শুরুর দিনে নতুন বছর উদযাপন করে। সাপ বা ড্রাগন রাস্তায় কার্ল নৃত্য করে। এবং জুন মাসের মাঝামাঝি পবিত্র দালাই লামার জন্মদিন পালন করে। সব উৎসবের শুরুতেই তারা বিভিন্ন ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে থাকে নিজেদের ঘরবাড়ি থেকে শুরু করে নিজেরা বিভিন্ন সাজে সজ্জিত হয়ে থাকে।
Feature Image: thrillophilla.com References: 01. History of Darjeeling. 02. Darjeeling. 03. Darjeeling Tourism.