পাঁচ বছর ধরে প্রেমিকা নামক হাতিটাকে পোষার পর সে আমার সাথে এক ঠুনকো বিষয়ে দোষারোপ করে ব্রেকআপ করলো। আমিও সেই রাগে, ক্ষোভে, দুঃখে পাঁচটা ঘুমের ট্যাবলেট খাইয়া বিশাল ঘুম দিলাম।
ঘুম ভাঙার পর দেখি চারদিকে অন্ধকার। আমার চারদিক কাপড়ে মোড়ানো। মনে হয় ২৫ পয়সার লজেন্স গুলোর মত কেউ আমাকে মুড়িয়ে রেখেছে। আস্তে আস্তে হাত বের করে শরীর টানা দিতে গেলাম, আর আমার হাত গুলো কোথাও ঠেকে গেলো। খুবই টাস্কি খাইলাম, ঘটনা কি! চারদিকেই দেহি মাটির দেয়াল!
পরে যা ভাবলাম তাতে আমার আত্মাটা কেঁপে উঠলো। একে তো অন্ধকার তার উপর চারদিকে মাটির দেয়াল। না চারদিকে না, ছয়দিকে। উপরে নিচেও মাটি। বুঝতে বাকি রইলো না, পাঁচ টা ঘুমের ট্যাবলেট খাইয়া আমি পরপারে আইসা পড়ছি। কিন্তু একটা জিনিষ ভাইবা আবারো টাস্কি খাইলাম, সেটা হইলো আমি যে মরে গেলাম সেটার তো টেরই পাইলাম না! অথচ হুজুরেরা কত ভয় দেহাইতো। মৃত্যু যন্ত্রনা কত কঠিন, সইতে কেউ নাকি পারবে না! আজব, তাইলে আমি কি এমন পূন্য করলাম যে সে যন্ত্রনা উপভোগ ছাড়াই পরপারে হাজির হইলাম!
বইসা বইসা আরো ভাবতাছি, ফেরেস্তারা কই? অহনো আসে না কে। আমার ঘুম তো তাদেরই ভাঙানির কথা। আইসা প্রশ্ন করে না কেন। কই কবরের মাটি তো আমারে অহনো চাপা দিল না! ভাবতাছি আর টাস্কি খাইতাছি। ঘটনা কি? আমি অহনো বাংলায় ভাবি কেমনে। আমার তো সব কিছু আরবীতে হওয়ার কথা। আল্লাহ কি হইলো আমার সাথে! ফেরেস্তারাও আহে না। প্রশ্নও করে না। মাটিও চারদিক থেইকা আমারে চাপা দেয় না! আমি কি এমন পূন্য করছিলাম যে আমার সব সহজ কইরা দিতাছো। ভাইবা জোরে একটা চিক্কার দিলাম, “আল্লাহ আমারে বাঁচাও!” একি আমি দেহি বাংলাতেই অহনো কথা কই! খালি টাস্কি আর টাস্কি!
এত কিছুর পর পেটে ইশপিশ করতাছে। বুঝলাম ক্ষুদা লাগছে। হাই হাই, কেমনে কি? মরার পরেও ক্ষুদা লাগে। পেটে হাত দিলাম, আবিষ্কার করলাম আমার শ্বাসকর্ম এখনো সচল। শ্বাস নিতাছি আর ছাড়তাছি। এতক্ষণে বুঝলাম আমি মরি নাই। আমার মনে হয় মরা ভাইবা সবাই আমারে কবর দিয়া দিছে! হাই আল্লাহ! আমি যদি সনাতনী হইতাম, এতক্ষণে আমারে পুইড়া তামা তামা, না পুইড়া ছাই বানাইয়া দিতো! মুসলিম ঘরে জন্ম নিয়ে এতকিছুর পরেও বাইচ্চা আছি। আজব না! হ্যাঁ আজব!
এখন আজব টাজন ভাবার সময় নাই। আমার কবরে অক্সিজেন কমে যাচ্ছে। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। কিছু একটা করতে হবে। হাত পা ঘুটাইয়া বইসা থাকলে এবার সত্যিই মরে যাবো। সাথে সাথে উপরে হাত দিলাম। বাঁশের চলা। ব্যাপার না। আমার হাতের নখ বড় ছিল। ওগুলা দিয়া পাশের মাটি আছড়ে বের হওয়ার রাস্তা ঠিক বানিয়ে ফেলবো। যেই ভাবা সেই কাজ। কিন্তু এবারো টাস্কি খাইলাম। আমার এমন স্বাদের নখ গুলোও কাইটা দিছে। মনের মধ্যে দুঃখ আরো প্রবল হইয়া গেল। কিসের চিন্তা। প্রেমিকার চিন্তা মাথায়ই আসে না। আমার বাঁচা মরার চিন্তা। মইরা গেলেও এই ঘুটঘুইট্টা আন্ধার ঘরে বাস করার মত ঈমান আমল কোনটাই নাই আমার। সেই চিন্তায়। প্রথমে চিন্তা করলাম আমি এইহানতে বাঁইচা ফিরলে মাঝারে গরু ছাগল দেওয়ার ব্যবস্থা করমু। পরক্ষণে চিন্তা করলাম, আরে আমি নিজেই তো নিজের মাঝারে ডুইকা আছি। যার যার মাঝারে হেই হেই আছে বিপদে। অবশেষে আল্লাহর উপর ভরসা করলাম। আল্লাহ বাঁচাও। এবারের মত রক্ষা কর। এইখান থেইকা বাহির হইয়া তোমার একনিষ্ট বান্দা হইয়া যামু। আল্লাহ বাঁচাও।
আমার সখের মোবাইল থাকলেও ফেসবুকে একটা পোস্ট দিয়া দিতাম। “আমি এখনো মরি নাই। আমারে কবর থেইকা উদ্ধার করেন। আমাকে বাঁচান। পোস্টটি আমার পরিবারের চোখে পড়তে বেশি বেশি সেয়ার দিন!” কিন্তু না। মোবাইলই নাই আবার ফেসবুক!
অবশেষে দুই হাত দিয়া বহু কষ্টে আছড়াইয়া আছড়াইয়া একটা বাঁশের চলা খুললাম। পরে সেটা দিয়েই তিন চারটা খুললাম। এক সাইডের মাটি কবরের ভিতরে পড়ে গেলো। এখন ফাঁকা হয়েছে। অক্সিজেন স্বাভাবিক হইলো। আল্লাহ এবারের মত বাঁচাইলো। আস্তে আস্তে আমার দেহ বের করার মত রাস্তা বানাইলাম। এতক্ষনে হাত দিয়া আছড়াইতে আছড়াইতে হাতের আঙুলের ডগা ফাইটা রক্তও বের হয়েছে। মুখের ঘাম মুছতে যাইয়া চেহারায় ও রক্তের ছাপ লাইগা আছে বুঝতে পারলাম। এরপর যেই মাথা কবরের বাইরে বের করলাম, দেহি ১০ কি ১২ বছরের একটা বাচ্চা আমাগো এমপি সাহেবের জার্সি পইড়া হিসু করতাছে। হাতে তার বল। আমি মাথা বাইর কইরা দিলাম হাসি। বাচ্চা ডা কিছু না বুইজ্জাই আমার চেহারা দেইখাই অজ্ঞান! কাম সারছে। তাড়াতাড়ি এইহান তে ভাগা লাগবো। নয় আমারে আবার কবরে না ডুকায় দেয় মানুষে!
উদাম দেহ, রাস্তায় এই বেশে যাওয়া সম্ভব না। গোরস্থানের পাশে একটা বাড়ি। দেহি উঠানে কাপড় নাড়া। কোন মত গেলাম। কিন্তু সব মহিলার কাপড়। যাইহোক আপাতত হেইহান তে একটা ১২ হাতের কাপড় নিয়ে দেহ ডাকলাম। অবশ্য এটা বাংলাদেশ না হয়ে যদি ফ্রান্স কিংবা ক্রোয়েশিয়া হইতো তাহলে নগ্ন দেহেও হাটলে কেউ কিছু কয়তো না। ওদের দেশ গুলা ন্যাংটা দেশ। তাও বাঙালিগো দেখছিলাম বল খেলায় তাগো সাপোর্ট করতে। যাগ গা। যার যার ব্যাপার।
মহিলাদের কাপড় জরায়ে গেলাম বাড়ি। গেইটের দারোয়ান না পাইয়া নিজেই উপ্রে গেলাম। দারোয়ান ব্যাটা টা ফাঁকিবাজ। উপরে যাইয়া কলিং বেলে টিপ দিলাম। মা আইসা দরজা খুললো। ততক্ষণে কাপড়ের ঘুমটা খুইলা দাড়াইয়া আছি। মা আমারে দেইখা ভূত দেহার মত ভয়ে অজ্ঞান! এরপর তারে ধইরা সোফায় শুয়াইলাম। আমি বাথরুমে যাইয়া আয়নায় নিজের চেহারা দেইখা আবারো টাস্কি খাইলাম। রক্তে বাইসা ভূতের মত দেহা যায়। অহন যে কেউ দেখলে ভাবতে পারে আমি মনে হয় কবরের আজাবে আছি। আমার নিজেরই তাই মনে হয়তাছে।
ফ্রেস হইয়া চিন্তা করলাম; না, আমার কয়টা দিন দূরে থাকা লাগবো। যেই বাবা মা জীবিত সন্তানরে মৃত মনে কইরা কবর দিয়া দিতে পারে তাগো লগে থাকবো না। নিজের ঘরে গিয়ে ব্যাগপত্র গুছাইলাম। আল্লাহ কে দেওয়া কথামত তার একনিষ্ঠ বান্দা হয়ে যাবো। তাই মায়ের ঘর থেকে কোরআন বের করলাম। তাবলীগ এ চলে যাবো। চিল্লায় চিল্লায় ঘুরবো। আর আল্লাহ আল্লাহ করবো। আপাতত কিছু টাকা দরকার। মায়ের আচল থেইকা চাবি নিয়া সিন্ধুক খুললাম। টাকা নিতে গিয়ে আমার মৃত্যুর সার্টিফিকেট পেলাম।
এবার আমি সবচেয়ে বড় টাস্কিটা খাইলাম। এত বড় টাস্কি কবরে গিয়েও খাইনাই। যেই ডাক্তার আমার মৃত্যু নিশ্চিত করেছে তার নাম ও এড্রেস পড়ে সোজা তার সাথে যোগাযোগ করার জন্য সার্টিফিকেট টা নিয়ে গেলাম তার হাসপাতালে। সে রোগী দেখায় ব্যস্ত। আমিও সিরিয়াল ধরলাম। রোগী সাইজা তার চেম্বারে ডুকলাম। বললাম ডাক্তার সাব প্রাইভেট রোগ। আপনে ছাড়া যেন এইখানে কেউ না থাকে। ডাক্তার সবাই কে বের করে দিলেন। সার্টিফিকেট টা বের করে বললাম এই টা আপনার সই করা? সে বলে হ্যাঁ। আমারি তো। কোন সমস্যা! আমি বললাম যার নামে এইটা ইসু করে দিয়েছেন সে আপনার সামনে বইসা আছে। সে আশ্চর্য হইয়া বলে ফাইজলামি করেন। আমি নিজে চেক করে এটা ইসু করছি!
খাড়ান খাড়ান। চিল্লাইয়েন না। আপনার ডাক্তারি করা বের করে দিবো। আসল কথা বলেন। আপনি ডাক্তারি পাশ করলেন কিভাবে? ডাক্তার সাব আমতা আমতা কইরা বলে না মানে, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে। আইচ্ছা তা বুঝলাম। কিভাবে পাশ করলেন? নকল করে? তার উত্তর, না না। বাসায় যা পড়েছিলাম তার সবই কমন ছিল। তাই ভালো রেজাল্ট নিয়ে পাশ করেছি। আমি এবার আরেকবার টাস্কি খাইয়া জিগাইলাম শিক্ষামন্ত্রী কে আছিল? তার উত্তর শুনে আমার টাস্কি খাওয়াটা বন্ধ হইলো। উত্তর ছিল নুরুল ইসলাম নাহিদ! তারপর বুঝতে বাকি রইলো না, ডাক্তার সাব ভূয়া না হইলেও ফাঁসকরা প্রশ্নে পরিক্ষা দিয়া আজ ডাক্তার!
সেখান থেকে উদাস হয়ে বাড়ির পথে হাটা ধরলাম। রাস্তায় হঠাৎ দেখি আমার এত শখের প্রেমিকা অন্য একটা পোলার লগে লুতুপুতু করতে করতে যাচ্ছে। হাইরে আমি এই প্রেমিকার লাইগা পাঁচ পাঁচটা ঘুমের ট্যাবলেট খাইছিলাম। আল্লাহ বাঁচাইছে ১০ বছর হইলে দশটা ট্যাবলেট খাইয়া তো সত্যি সত্যিই উপারে চইলা যাইতাম।
বাসায় ফিরে দেখি তাজ্জব অবস্থা। আমার মায় নাকি দেখছে আমি কবরের আজাবে কষ্ট পাইতাছি। তাই কান্না কাটি। বাবা হুজুর দের ডেকে কোরআন খতমের ব্যবস্থা করছে। মা কান্দে আর কয়, পোলা আমার কোরআন নিতে আইছিল! ব্যাগ বইড়াও নিতে পারে নাই! অন্যদিকে কৌতুহলী এলাকা বাসী এমপি সাহেবের জার্সি পড়া পোলার কথা শুইনা বাসায় এসে ভিড় জমাইছে। কি একটা থমথমে অবস্থা! তাদের পাশ কাটাইয়া আমার ঘরে গেলাম। কেউ টেরই পায় নাই।
ঘরে বসে কম্পিউটার অন করে ভার্চুয়ালে ডু মারলাম। হাই আল্লাহ! ৫ হাজার ফেসবুক বন্ধুর ১২ হাজার ট্যাগ! সবাই আমারে লইয়া কাব্য রচনা, গল্প লিখে ফেলছে। কেউ কেউ দোয়া করেছে। কেউ কেউ তো জাহান্নামি বানাইয়া পোস্ট দিছে। আত্মহত্যা করা মানেই জাহান্নামি! আল্লাহ, অনেক কিছু জানলাম। আমি যদি সত্যি সত্যি মইরা যাইতাম তাহলে সত্যি সত্যিই জাহান্নামী হয়ে যেতাম। এমন সময় দিলো মাগরিবের আজান। বাথরুমে গিয়ে অজু করে পাঞ্জাবি টুপি পড়ে ড্রয়িং রুমে উৎসুক জনতার উদ্দেশ্যে সালাম দিয়ে কইলাম, “অনেক তো সার্কাস দেখলেন, অহন যান নামাজ পড়তে যান। আমিও মসজিদে যাইতাছি!” কথা শেষ না হতেই পাবলিক ভয়ে দৌড়। হুজুর খালি বইসা ছিল। এবার আমার মা বাবা খাইছে আসল টাস্কি!
মা বাবারে কইলাম, নামাজ পড়ে আসি। পরে সব বলবো বিস্তারিত। ততক্ষণ ধৈর্য ধরেন। হুজুর চলেন যাই নামাজের সময় হইছে। বাবাও দেখি আমাগো লগে মসজিদে গেল। এবার বোধহয় আমি সত্যি সত্যিই ভালো হয়ে গেলাম।
লেখাঃ arfin rafi shohel