আমাদের চারপাশের সবকিছু নিয়েই আমাদের পরিবেশ গড়ে ওঠে। আমাদের অনেক কার্যকলাপ পরিবেশের উপর গভীরভাবে প্রভাব ফেলতে পারে। পরিবেশ দূষণ ঘটানোর পেছনে মানুষই দায়ী বেশি থাকে। পরিবেশ দূষিত হলে সেই দূষণ আমাদের জীবণকে বিপর্যস্ত করতে পারে। যার ফলস্বরূপ পরিবেশে আমাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে।
প্রতিনিয়ত আমরা অনেক ধরনের কাজ করি যা আমাদের পরিবেশ, জলবায়ু এবং পশুপাখি সহ অনেক প্রজাতির ক্ষতিসাধন হয়ে থাকে। বন্য প্রানী এবং গাছপালাদের রক্ষা করতে আমাদের পরিবেশ দূষণ ঘটায় এমন কার্য কলাপ কমাতে হবে।
১. কোনকিছু কেনার আগে ভাবুন
’পুনঃ ব্যবহার করুন‘ এই কথাটির তাৎপর্য রয়েছে আমাদের জীবনে। প্রয়োজন ব্যতীত কোনকিছু ক্রয় করা থেকে আমাদের বিরত থাকা উচিত। আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যে সকল পণ্য কিনে থাকি প্রতিটি পণ্যেরই কিছু প্রভাব রয়েছে পরিবেশের উপর। একটি পণ্য তৈরি করতে উৎপাদন থেকে শুরু করে পণ্যটির প্যাকেজিং থেকে বাজারজাতকরণ পর্যন্ত এসব কিছুই পরিবেশে এক ধরনের প্রভাব বিস্তার করে।
তাই আমাদের করণীয় হলো পরিবেশবান্ধব পণ্য উৎপাদন করা এবং পরিবেশের ক্ষতি সাধন না করে পণ্যটি বাজারজাত করা এবং পরিবেশ উপযোগীভাবে ব্যবহার করা।
২. নিশ্চিত হোন যে আপনার ক্রয়কৃত পণ্যে পরিবেশগত সুবিধা রয়েছে
আমরা যদি একটি নতুন গাড়ি তৈরি করার কথা চিন্তা করি তাহলে দেখা যাবে যে একটি গাড়ি তৈরি করতে অনেক সম্পদের প্রয়োজন হয়। পরিবেশ দূষণ রোধ করতে নতুন গাড়ি তৈরিতে জ্বালানী দক্ষ মডেলের ব্যবহার করতে হবে। আপনি যদি গ্যাসের অর্থ সাশ্রয় করার চিন্তা করে থাকেন এবং কম খরচের জ্বালানী হিসেবে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের ব্যবহার করেন বছরের পর বছর এই কার্বন-ডাই-অক্সাইড পরিবেশের উপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলে।
আপনি যদি রেফ্রিজারেটর, ওয়াশার বা ড্রায়ার কেনার চিন্তা করেন তবে সেই পণ্যটিতে এনার্জি স্টার লেবেলটি দেখে কিনুন। ওয়াটার হিটার কেনার ক্ষেত্রে সোলার আপগ্রেড দেখে কিনুন। পরিবেশের ক্ষতি করে না এমন জ্বালানী ব্যবহার করুন।
৩. প্লাস্টিক ব্যবহার না করা
প্লাস্টিক কখনো সম্পূর্ণভাবে মাটির সাথে মিশে যায় না। শত শত বছর পরেও সমুদ্রের তলদেশে ৪০ শতাংশ প্লাস্টিক পাওয়া যায়। প্রতি বছর হাজার হাজার সামুদ্রিক পাখি, সামুদ্রিক কচ্ছপ এবং অন্যান্য সামুদ্রিক প্রানী প্লাস্টিক খাওয়ার পরে বা এতে জট পাকিয়ে মারা যায়।
এজন্য আমাদের প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো উচিত। কেনাকাটার সময় প্লাস্টিকের ব্যাগ বর্জন করে পাটের ব্যাগ ব্যবহার করতে হবে। যতটুকু সম্ভব প্লাস্টিকের তৈরী পণ্য এড়িয়ে চলা উচিত।
৪. বন্যপ্রাণিকে বিপন্ন করে এমন পণ্য ব্যবহার না করা
বন্যপ্রাণিদের বিপদে ফেলে এমন পণ্য ক্রয়, বিক্রয়, আমদানি বা বানিজ্য বিশ্বের অনেক দেশেই বেআইনি। এমন কিছু পণ্য রয়েছে যা বন্যপ্রাণিকে বিপন্ন করে তাদের আবাসস্থলকে হুমকির মুখে ফেলে।
অনেক বছরের পুরনো বন কেটে ফেলা, নদীর পানি ব্যবহার করা ইত্যাদি কারণে বন্যপ্রাণি হুমকির মুখে পড়ে। তাই বন্যপ্রাণিকে বিপন্ন করে এমন কাজ থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে।
৫. লেবেল দেখে পণ্য কিনুন
পরিবেশ উপযোগী পণ্য কিনতে পন্যের লেবেল দেখে পণ্য কিনুন। লেবেল দেখে পণ্য ক্রয় করলে পরিবেশ দূষন কমবে যা শ্রমিক, বন্যপ্রাণি এবং আমাদের পরিবারকে রক্ষা করবে।
লেবেল একটি পণ্যের অপরিহার্য অংশ। লেবেলে পণ্য সম্পর্কে অনেক তথ্য থাকে। তাই সেই তথ্য থেকে আমরা খুব সহজেই জানতে পারি পণ্যটি পরিবেশ উপযোগী কিনা।
৬. পরিবেশ উপযোগীভাবে পানির ব্যবহার
বোতলজাত পানি আমাদের জন্য ক্ষতিকর। বোতল সাধারণত বেশিরভাগ প্লাস্টিকের হয়ে থাকে। তাই প্লাস্টিকের বোতলজাত পানি পান করলে ক্যান্সারসহ বিভিন্ন ধরনের রোগ হয়ে থাকে। কলের পানি ফুটিয়ে পান করলে পানিবাহিত রোগ থেকে মুক্ত থাকা যায়। বোতলজাত পানির তুলনায় কলের পানির মূল্য কম হয়ে থাকে। অনেক নামিদামি ব্র্যান্ডের পানি এবং কলের পানি পরীক্ষায় গুনগত মান এবং স্বাদ পরীক্ষায় কলের পানি জিতেছে।
প্লাস্টিকের বোতল মানুষ এবং বন্যপ্রানীদের জন্য খুবই ক্ষতিকর । আমাদের দেশে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য পানি সংরক্ষন ও গুরুত্বপূর্ন। এখন থেকে পানি সংরক্ষন না করলে ভবিষ্যৎে আমরা বিপদের সম্মুখীন হবো। আমাদেরকে বিভিন্ন উপায়ে পানি সংরক্ষন করতে হবে। এবং পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে বন্য প্রানীদের জন্য পানি সংরক্ষন করতে হবে।
৭. পাবলিক যানবাহন ব্যবহার করুন
নিজস্ব গাড়ির ব্যবহার কমিয়ে পাবলিক যানবাহন ব্যবহার করলে পরিবেশে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ অনেক কমে যাবে। যতটুকু সম্ভব পবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করুন। পরিবেশ দূষণ কমাতে গাড়ির জ্বালানী ঠিক রাখাও গুরুত্বপূর্ণ। পরিবেশ দূষণ রোধে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের ব্যবহার কমানো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
৮. আপনার ঘরকে সবুজ শ্যামল রাখুন
আপনার বাড়ির পরিবেশ সবুজ রাখলে তা আপনার কর্ম দক্ষতাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। বাড়ির ছাদে বিভিন্ন ধরনের ফল বা ফুলের গাছ লাগিয়ে নিয়মিত পরিচর্যা করলে মন এবং শরীর ভালো থাকে। ঘরের সবুজ শ্যামল পরিবেশ আমাদের মন ভালো রাখতেও সাহায্য করে।
৯. বন্য শক্তি চয়ন করুন
জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যবহারের অভ্যাস বাদ দিতে হবে। এতে করে বন্য প্রানীরা সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে বেঁচে থাকতে পারবে। জলবায়ু পরিবর্তনের গতি কমবে। ভূমি এবং পানি রক্ষা করতে জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যবহার কমানো গুরুত্বপূর্ণ।
বিদ্যুৎ সরবরাহকারী ব্যবহারের ক্ষেত্রে এমন কোম্পানী ব্যবহার করুন যেটি বায়ু , সৌর এবং অন্যান্য পরিষ্কার উৎস থেকে শক্তি উৎপন্ন করে। এছাড়াও আপনার বাড়ির ছাদে সোলার প্যানেল ব্যবহার করতে পারেন।
১০. পৃথিবীবান্ধব খাদ্য গ্রহন
যে সকল খাদ্য খেলে শরীর ভালো থাকবে সে সকল খাদ্য বেছে নেওয়া উচিৎ। সবসময় হালাল খাবার গুলো খাওয়া উচিৎ। অনেক সময় অনেক ধরনের খাবারে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস থাকে যা পরিবেশে দূষণ ঘটায়।
এবং বন্যপ্রাণির জীবন এতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। পরিকল্পিত কেনাকাটা করুন এবং যা কিনছেন তা খাওয়ার সৃজনশীল উপায়ে খাবারের অপচয় রোধ করুন।
Feature Image: Asian Hospital Faridabad References: 01. Top 10 Ways Live More Sustainably. 02. Live More Sustainably. 03. 30 Ways To Make Your Life More Environmentally Friendly.