ইউরোপের জানা-অজানা ১০টি মজার তথ্য

437
0
Palaces of Europe
Palaces of Europe

ইউরোপ নিয়ে সাধারণ মানুষের আগ্রহের কোন কমতি নেই। এই ইউরোপেই কোন দেশে যেমন মশা নেই, কোথাও টুং-টাং শব্দ নিষেধ, আবার পিরামিডের চাইতে দীর্ঘস্থায়ী সময় নিয়ে তৈরি হওয়া স্থাপত্যেরও গল্প আছে, আবার কোথাও আছে সব থেকে বেশি দর্শনার্থী আসা জাদুঘর। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য বলুন, কিংবা স্থাপত্যের নিদর্শন, সবকিছু আছে এই ইউরোপে। অসংখ্য মজার তথ্য থেকে বেছে বেছে সেরা ১০টি তথ্য নিয়ে আজকের আলোচনা। 

১. আইসল্যান্ডে কোন মশা নেই  

আইসল্যান্ড-এর মতো অপার্থিব সৌন্দর্যের দেশে মশা কোনভাবেই মানায় না। তাই বোধহয় মশারা নিজ দায়িত্বে ছেড়ে দিয়েছে আইসল্যান্ড। আরো মজার বিষয় হচ্ছে, আইসল্যান্ডে আইস বা বরফ নেই আর গ্রীণল্যান্ডে নাকি সবুজের দেখা মেলে না। বলা হয় আইসল্যান্ডে যা চান সব পাবেন, শুধু পাবেন না জীবানুবাহী মশা।  

Europe
আইসল্যান্ড: যে দেশে নেই কোনো মশা। Image Source: pixel.com

সূত্রানুসারে ৩০০০ এর বেশি ধরনের মশা আছে এই তাবৎ দুনিয়ায়। কিন্তু এর একটাও আইসল্যান্ডে নেই। প্রাকৃতিক পরিবেশ, মাটিতে থাকা কিছু রাসায়নিক এবং আবহাওয়া সবকিছু মিলে মশার বসাবসের উপযোগী নয় এই দেশ। না কোন জংলা পুকুর আছে, না আছে বদ্ধ ডোবা। তাই, মশারও আবাদ হবার সুযোগ নেই। 

২. অভিজাত পেঙ্গুইন 

কিং স্যার নিলস অলাভ আদতে একজন ইউরোপিয়ান। কেউ কেউ তাকে আবার ব্রিগেডিয়ার অলাভ (তৃতীয়) নামেও ডাকে। তিনি নরওয়েজিয়ান রাজার গার্ডদের কলোনাল চীফ। তবে এই অভিজাত ব্যক্তিটি কোন মানুষ নয়, বরং ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন পেঙ্গুইন। এর আগে তার স্বজাতির একই নামে আরো দুজন এই দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

Europe
কিং স্যার নিলস অলাভ। Image Source: military.com

প্রথম অলাফ ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৮৭, দ্বিতীয় অলাফ ২০০৮ পর্যন্ত এই দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমান এই অভিজাত তৃতীয় অলাফ নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে। শোনা যায় তিনি ৫০ জন সেনাসহস্য সাথে নিয়ে চলাফেরা করেন। 

৩. যে শহরের নামে ৫৮টি বর্ণমালা আছে

ওয়েলসের ‘Llanfairpwll-gwyngyllgogerychwyrndrob-wllllantysiliogogogoch’ হলো ইউরোপের এমন এক শহর যার নাম উচ্চারণ করতে পড়তে হয় ৫৮টি বর্ণমালা। শব্দ দেখে মনে হতে পারে, চোখ বন্ধ করে কেউ কি-বোর্ডে হাত চালিয়ে গেছেন ইচ্ছামতো। 

ইউরোপের সবচেয়ে বড় নামের শহর। Image Source: bbc.uk

ইউরোপের শহরগুলোর মধ্যে নামের দিক থেকে সবচাইতে বড় এটি। নাম যত না বড়, অর্থ তত ছোট। এই যে বিশালাকার নাম, এর অর্থ হলো গুহা। সাধারণ মানুষের পক্ষে উচ্চারণ করা বেশ কঠিন। কিন্তু সঠিক উচ্চারণ করতে পারেন কেবল কিছু মানুষ। সঠিক উচ্চারণ শুনুন এখান থেকে। 

৪. এক বর্ণের নামে গ্রাম 

ইউরোপের অদ্ভুত সব কাজকর্মের মধ্যে সবচেয়ে বড় নাম যেমন আছে, তেমনই সবচেয়ে ছোট নামের গ্রামও আছে। স্ক্যান্ডেনেভিয়ান, সুইডেন, নরওয়ে এবং ডেনমার্কে এরকম ১০টি গ্রামের খোঁজ পাওয়া যায়। 

নরওয়ের শহর। Image Source: wikimedia.commons

যেগুলোর নাম কেবল মাত্র একটি বর্ণ। যেমন ‘Å’ নামের একটি স্ক্যন্ডেনেভিয়ান গ্রাম, নামের অর্থ ছোট নদী, আবার সুইডেনের এক অক্ষরের কোন গ্রামের নামে  অর্থ দ্বীপ। 

৫. রবিবারে সুইজারল্যান্ডে কাজ করা নিষিদ্ধ 

ছুটির দিনে মানুষ কী করে? বাগান পরিষ্কার, গাড়ি পরিষ্কার বা ঘরদোর গুছানো। কিন্তু ছুটির দিনে অর্থাৎ রবিবারে সুইজারল্যান্ডে কোন কাজ করতে যায় না।  

রবিবার সবকিছুই বন্ধ থাকে। Image Source: thelocalswitzerland.com

এর পেছনে যুক্তি হচ্ছে সুইসরা বিশ্বাস করে, ছুটির দিন শান্তির দিন, বিশ্রামের দিন, ঘরের কোন কাজ করে সেই শান্তি নষ্ট করার প্রয়োজন নেই। 

৬. ব্রিটিশ জাদুঘরে কত লক্ষ বস্তু সংরক্ষিত আছে? 

ব্রিটিশ জাদুঘর হলো পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। এই জাদুঘরে কত কিছু সংরক্ষিত আছে তা কী কেউ জানেন? প্রতি বছর ৬ থেকে ৭ লক্ষ মানুষ ঘুরতে আসে। শোনা যায়, মাত্র ৮ লক্ষ ছবি, চিত্র, ভাষ্কর্য, এন্টিক বস্তু প্রদর্শনীর জন্য রাখা আছে। 

ব্রিটিশ জাদুঘর। Image Source: encyclopediabrittanica.com

আর এটা মূল সংগ্রহের মাত্র ১ শতাংশ এটি। ভেবে দেখুন সমগ্র জাদুঘর জুড়ে তাহলে কী পরিমান বস্তু সংরক্ষিত রয়েছে? তবে যা আছে সেটা একবারে দেখে শেষ করার মতো নয়। 

৭. পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট শহর আছে ক্রোয়েশিয়াতে

ইউরোপ নানান বৈচিত্র্যতায় পূর্ণ। তার মধ্যে একটি হচ্ছে পৃথিবীর সবচাইতে ছোট্ট শহরের দেখাও পাওয়া যায় এই ইউরোপেই। হাম নামের এই শহরের জনসংখ্যা মাত্র ৩০।  

 

ক্রোয়েশিয়ার এই শহর অল্প জনসংখ্যার সাথে আরো অনেক কারণে বিখ্যাত। যেমন বিখ্যাত ব্রান্ডি,  শহরটি ২০০০ বছরের বেশি পুরানো। এখান কার মানুষেরা ইটালিয়ান ভাষায় কথা বলে, এর কারণ অবস্থানগত। 

 

৮. লা সাগ্রাদা ফামিলিয়া তৈরিতে সময় লাগবে প্রায় ১৪০ বছর 

কোন কোন পিরামিড নির্মাণে সময় লেগেছিল ২০ বছর, ৩০ বছর বা ৫০ বছর। সর্বোচ্চ সময় লেগেছিল ৮৫ বছর মিশরের পিরামিড তৈরিতে। কিন্তু ইউরোপে এমন এক স্থাপত্য নির্মাণ চলছে যা ১৮৮২ সালে শুরু হয়ে নির্মাণ কাজ এখনও চলমান। এটি হলো সবচাইতে বড় ক্যাথেলিক চার্চ। অবস্থান বার্সেলনায়। এটির ডিজাইন করেন স্থপতি গৌডি। প্রথমে অন্য এক ডিজাইন থাকলেও হাতে কাজ নেবার পর গৌডি ৮৩ সালে পুরো বদলে দেন নকশা। মাত্র ২৫ % কাজ শেষ হয় ১৯২৬ সাল নাগাদ যখন গৌডি মারা যান। 

Europe
La Sagrada Famikia Source: https://www.lonelyplanet.com/

কাজ অত্যন্ত ধীরগতিতে চলছিল কারণ ব্যক্তিগত অনুদান। স্পেনের গৃহযুদ্ধ নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়। অনেক অংশ ধ্বংস হয়ে যায়। পরবর্তীতে ১৯৪০ সালে আবার পুনঃনির্মাণ শুরু করা হয়। ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ এর মর্যাদাও দেয় এটি। আশা করা হচ্ছে, ২০২৬ নাগাদ এটির কাজ শেষ হবে। গৌডি এর ১০০তম মৃত্যুবার্ষিকীতে উৎসর্গ করা হবে এই বিশ্ববিখ্যাত বিশালাকার রোমানিয়ান চার্চ।  

৯. টুং-টাং শব্দ করা নিষেধ

বন্ধুদের দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য, ড্রিংকস করার আগে চিয়ার্স বলার আগেও গ্লাসে গ্লাসে বাড়ি দিয়ে মৃদু টুং-টাং শব্দ করা হয়। কিন্তু হাঙ্গেরিতে ভুলেও এই কাজ করা যাবে না। 

১৮৪৮ সালে অস্ট্রিয়া যখন হাঙ্গেরিকে পরাজিত করে গ্লাসে টুং-টাং শব্দ করে বিজয় উৎসব পালন করেছিল। সেদিনের পর থেকে হাঙ্গেরিতে এই শব্দ করা একেবারেই নিষেধ। ‘Egészségedre’ শব্দে এখানকার লোকেরা চিয়ার্স বলে আর একে অপরের দিকে তাকায়। 

১০. ২০০ ভাষার মহাদেশ  

ইউরোপে প্রায় ২০০টির বেশি ভাষা প্রচলিত আছে। ইউরোপে যেমন ডজন খানেক সংস্কৃতি প্রচলিত আছে, দেশের কালচার আছে হরেক রকম, সেরকম ভাষা আছে ২০০টিরও বেশি।  

 

ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের স্বীকৃতি পেয়েছে ২৪টি ভাষা। এর মধ্যে আছে ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ, জার্মান এবং আরো কিছু। যদিও অধিকাংশ মানুষ ইংরেজি ভাষায় কথা বলে থাকেন। 

 

Feature Image: Wikimedia.commons 
References: 

01. 21 facts Europe never knew.  
02. Mosquitoes in Iceland. 
03. Longest and Shortest Geographical Names in the World. 
04. Hum – The Smallest Town in the World. 
05. La Sagrada Família