Bullying at work. অর্থাৎ কর্মক্ষেত্রে বুলিং? এটা কী সত্য কোন টার্ম না কি কেবলই মিথ? শিক্ষিত মানুষ এইগুলো করতে পারে? উত্তর-হ্যাঁ পারে। কর্মক্ষেত্রে কিংবা অফিসে, বন্ধুমহলে অথবা পরিবারে এমন কিছু মানুষ থাকে যারা অন্যকে ছোট করতে, উপহাস করতে কিংবা অন্যকে নিয়ে হাসি-তামাশা করতে ব্যস্ত। ভুক্তভোগী মাত্র জানে, ছোট ছোট মজা বা তাচ্ছিল্য মানুষকে ডিপ্রেশন-এর রোগী বানিয়ে দিতে পারে। কর্মক্ষেত্রে বুলিং (Bullying at work) নিয়ে তাই আজকের আয়োজন।
কর্মক্ষেত্রে সবাই নিজের যোগ্যতা দিয়ে আসে। কিন্তু দেখা যায়, কেউ কেউ প্রতিনিয়ত বুলিং বা র্যাগিং-এর শিকার হচ্ছে। কর্মক্ষেত্র বুলিং হলো, অফিসে সহকর্মী কিংবা সিনিয়র কেউ যখন একজন মানুষকে মৌখিকভাবে/শারিরীকভাবে/সামাজিকভাবে এবং মানসিকভাবে অত্যাচার করে থাকে।
দুঃখজনক ব্যাপার হলো, স্থান-কাল-পাত্র দেখে না এই উপহাসকারীরা। তাদের কেবল দরকার ছোট্ট একটা সুযোগ। স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে এমন কোন সেক্টর নেই, যেখানে বুলিং বা র্যাগিং-এর অসুস্থ প্র্যাক্টিস নেই। কেউ অফিসে এসে কাজ বুঝে নিতে না পারলে যেমন তাকে টিটকারীর শিকার হতে হয়, অন্যদিকে শিক্ষাগত যোগ্যতা কম বা বেশিও হতে পারে বুলিং-এর কারন। চেহারা কিংবা পোশাক, অথবা চুলের ধরন, উচ্চতার কারণেও হতে পারে বুলিং।
কেউ যদি কোন মফস্বল থেকে আসে, সেক্ষেত্রে দেখা যায় বুলিং-এর মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। পোশাক বা কথা বলার ধরন, ইংলিশ উচ্চারণসহ অগণিত কারণ বুলিং-এর শিকার হয় মানুষ।
যারা বুলিং এর সাথে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত, তারা অন্যকে ছোট করে পৈশাচিক আনন্দ পায়। এটাও এক প্রকার মানসিক অসুস্থতা। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফলাফল অতি ভয়ানক হয়ে যায়, কর্মক্ষেত্রে বুলিং-এর শিকার বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অথবা পরিবারে এক পর্যায়ে গিয়ে ডিপ্রেশন-এর রোগী হয়ে যায়। কিছু ক্ষেত্রে সুইসাইডাল থট থেকে শুরু করে সুইসাইডও করে ফেলে অনেকে।
কর্মক্ষেত্রে বুলিং কী কী হতে পারে?
১. বারবার কারো কথা বলার ধরন বা শিক্ষাগত যোগ্যতা, গায়ের রঙ বা উচ্চতা, কাজ বা পদবী নিয়ে মজা করা।
২. কারো কোন ফোবিয়া থাকলে বারবার উসকে দেবার চেষ্টা করা। কোন কাজ নষ্ট করে দেয়া, বা নষ্ট করে দেয়ার চেষ্টা করা।
৩. কেউ কোন কাজ করতে না পারলে, অপারগতা নিয়ে বারবার সবার সামনে হেয় করা।
৪. কোন কাজে বিফল হলে, সবার সামনে অপমান করা। একই ভুলের কথা বারবার মনে করিয়ে দেয়া।
৫. দলীয় কাজে অংশ নেয়া বা যেকোনো অফিসের কাজ থেকে বিরত রাখা।
৬. মানসিকভাবে অত্যাচার করা, অস্ত্র কিংবা অন্য উপায়ে ভয় দেখানো।
৭. যে কাজে অপটু, সেই কাজ বারবার দেয়া, যাতে করে হাসির পাত্রে পরিণত হতে হয়।
৮. মতামতকে প্রাধান্য না দেয়া বা অগ্রাহ্য করা।
৯. অন্যের কাজ চাপিয়ে দেয়া। অতিরিক্ত কাজ চাপিয়ে দেয়া।
১০. কাজের জন্য প্রয়োজনমাফিক সাহায্য না করা।
তালিকা করতে বসলে বিশাল তালিকা হয়ে যাবে, কত উপায়ে একজন মানুষ বুলিং-এর শিকার হতে পারে, তার কোন ইয়াত্তা নেই। শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও কর্মক্ষেত্রে বুলিং-এর মতো পরিস্থিতি আসে।
কী হয় বুলিং-এর ফলে?
এবারে আসি, বুলিং কিভাবে ক্ষতি করে? বুলিং-এর শিকার মানুষ যে ক্ষেত্রেই হোক না কেন, কর্মক্ষেত্র বা শিক্ষাক্ষেত্রে ভেঙ্গে পড়ে, কাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। অজানা আশংকা বা ভীতি জেকে বসে তাদের। কাজ শুরু করার আগেই হেরে যাবার ভয় কাজ করে। বারবার কাজে বা পড়াশোনায় ভুল হয়। ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশন, অ্যানক্সাইটি বা স্কিজোফ্রেনিয়াসহ মানসিক রোগে আক্রান্ত হবার সমূহ সম্ভাবনা থাকে।
আত্নবিশ্বাস আর আত্মপ্রত্যয় হারিয়ে ফেলে ভুক্তভোগী, পারিবারিক এবং সামাজিক সম্পর্ক খারাপ হয়ে যেতে দেখা গেছে। বেশ কিছু শারিরীক অসুবিধা দেখা যায়। যেমন- ক্ষুধামন্দা, অতিরিক্ত ক্ষুধা, ঘুমের অসুবিধা, দুর্বলতা, মাথা-ব্যথা ইত্যাদি।
কী করা উচিত বুলিং-এর শিকার হলে?
ছেলে কিংবা মেয়ে, পারফেক্ট বা ইমপারফেক্ট, যে কেউই বুলিং-এর শিকার হতে। এর পেছনে যে ভারিক্কি কোন কারণ আছে তাও কিন্ত না। একজন মানুষ বা একদল মানুষ যেকোনো কারণে বুলিং-এর শিকার হতে পারে আবার বুলি করতেও পারে। যদি কেউ কর্মক্ষেত্রে বুলিং-এর শিকার হয়েই থাকে, কী করা উচিত? প্রতিবাদ করা, উপর মহলকে জানানো, বুলিকারীকে সরাসরি জিজ্ঞেস করা, এই সবই থাকে কী করা উচিত এর তালিকায়।
প্রথমত চুপচাপ সহ্য না করে, যারা বুলি করে চলেছে, তাদের কাছে জানতে চাওয়া উচিত, কেন তারা এমন করছে? আপোষে বিষয়টি সমাধান এর চেষ্টা করা। নিজের কোন ভুল আছে কিনা এতে, সেটাও খুঁজে বের করে সংশোধন করা। নিজেকে গুটিয়ে না রেখে, কারো সাথে সমস্ত বিষয় নিয়ে কথা বলা উচিত। দু-একজন এর পরামর্শে হয়তো বিষয় সহজ হতে পারে। প্রমাণ রাখা প্রয়োজন, লিখিত হতে পারে বা অডিও কিংবা ভিডিও কোন মাধ্যম। বা কোন বিশ্বস্ত সাক্ষী, যে ভুক্তভোগী কে প্রয়োজন অনুযায়ী সাহায্য করবে।
নিজে যা সেটা বদল করা অনুচিত, কারণ একটা মানুষ এর স্বকীয় পরিচয় বদলে গেলে আর কিছু থাকেনা। নিজের উপর বিশ্বাস রাখা অনেক বড় একটা প্লাস পয়েন্ট, নিজের কাজ আর বুদ্ধিকে এই অপরাধীদের উপহাস যেন প্রভাবিত করতে না পারে, সেটা মাথায় রাখা উচিত। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়গুলোকে প্রমাণসহ অবহিত করা প্রয়োজন।
সহকর্মীদের কেউ কিংবা সহপাঠীদের কেউ এরকম বুলিং-এর শিকার হলে তাদের মানসিক শক্তি যোগানো। আবার নিজের মানসিক শক্তি ঠিক রাখতে সংশ্লিষ্ট কাজগুলো করে যাওয়া। সর্বোপরি নিজেকে শক্ত রাখা, ভেঙ্গে পড়ার মতো পরিস্থিতি আসলেও ঘুরে দাঁড়ানো শিখতে হবে। সবাই প্রতিবাদ সমানভাবে করতে পারবে তা যেমন না, ঠিক তেমন ভাবে সবাই চুপ থাকেও না। হয়তো পরিস্থিতি আরো ভয়ানক হতে পারে, কিন্তু পিছিয়ে পড়া যাবে না। বুলিংকে যথাসম্ভব গুরুত্ব না দিয়ে, নিজের কাজে ফোকাস করতে হবে। যদি নিজের ভুল থাকে, বলা উচিৎ সবার সামনে না বলে, আলাদা করে বলা।
র্যাগিং বা বুলিং, বাসা-বাড়ি, অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজসহ সবখানে দেখা যায়। খুব অল্প মানুষ প্রতিবাদ বা প্রতিরোধ করতে পারে। নিজের ও অফিসের পরিবেশ এবং সব সম্পর্ক সুন্দর সমান্তরালে ভালো রাখার জন্য প্রতিবাদ করতে শেখা উচিত। এতে কেবল নিজের যে ভালো তা নয়, পরিবেশ-পরিবার-অফিস ভালো থাকে।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যারা বুলিং করে, এরা নিজেরাও কোন না কোন ভাবে বুলিং-এর শিকার। কিন্তু নিজের জীবন থেকে শিক্ষা না নিয়ে, অন্যের উপরে প্রয়োগ করাকে স্রেফ মজা বলেই মনে করে। অসুস্থ চিন্তা আর এই অসুস্থ বুলিং চর্চা বা র্যাগিং থেকে বাঁচার জন্য নিজেদের মধ্যে সচেতনা যেমন জরুরী, তেমন জরুরী প্রতিবাদ করতে শেখা। অন্যকে বুলিং এর কোন সুযোগ দেয়া কোন ভাবেই উচিৎ না। এমন পরিস্থিতি তে পড়লে ঘুরে দাঁড়ানো উচিৎ, কেউ বুলিং (Bullying at work) এর শিকার হলে তাকেও সাহায্য করা উচিৎ।
Feature Image: istock.com References: 01. workplace bullying violence harassment and bullying fact sheet. 02. how to handle bullying in the workplace. 03. how to deal with a bully at work.