রোয়ান অ্যাটকিনসন নাকি মি. বিন: প্রকৌশলী নাকি কমেডিয়ান?

518
0
mr Bean
The historical poster of Mr Bean . Image source: Imdb

আমরা যারা ৯০ দশকের মানুষ, তাদেরকে মি. বিন (Mr. Bean) নতুন করে চিনিয়ে দেবার কিছু নেই। ছেলে থেকে বুড়ো সবাই এই মানুষের কাজে হেসে গড়াগড়ি খেতাম। আজো আমাদের মন ভালো করতে এই মানুষটির জুড়ি নেই। কিন্তু এই কমেডিয়ান বা কৌতুক শিল্পী বাস্তবে ছিলেন একজন প্রকৌশলী। এটা জানতেন তো? পরীক্ষায় নিজের প্রশ্নের বদলে অন্যের প্রশ্নে পরীক্ষা দেয়া ব্যক্তি যে কিনা বাস্তবে প্রখর বুদ্ধিমত্তার সাথে নিজের গ্রাজুয়েশন শেষ করেছেন, তাকে মেলানো সহজ কী?  ইঞ্জিয়িরানিং বুদ্ধির বলেই কি পটকা ফাটিয়ে পুরো ঘর একবারে রঙ করে ফেলেছিলেন? কে জানে? 

মনে আছে নিশ্চয়! সেই যে বছরের শেষ বা প্রথম সেল এর সময়ে সব জিনিসপত্র দিয়ে গাড়ি ভর্তি করে, গাড়ির ছাদে বসে গাড়ি কিভাবে কন্ট্রোল করেছিল ধুসর কোট আর ছটফটে ব্যক্তিটি? বোধকরি পকেটে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রী থাকার ফলে সম্ভবত এটি সম্ভব হয়েছে। নির্বাক চলচ্চিত্র অভিনয় করা এই মানুষ তার সিরিজের সকল পর্বের কোনো না কোনোভাবে ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়টাকে এনেছিলেন, একটু খেয়াল করলেই বুঝতে পারবেন। 

শুরুর গল্প 

জন্ম এবং পড়াশোনা

সম্ভ্রান্ত আরম সমৃদ্ধ এক কৃষক পরিবারে জন্ম তার। এই গ্রামের এলা মে এবং এরিক অ্যাটকিনসন ছেলে-মেয়ের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ছিলেন রোয়ান। ১৯৫৫ সালে ৬ জানুয়ারি তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পর্দায় তাকে যতই অদ্ভুত কাজ করতে দেখেন না কেন, পর্দার পেছনের মানুষ পুরো আলদা। থিয়েটারে কাজ করতেন শিক্ষা জীবন থেকেই। মেধাবী রোয়ান এ লেভেলে অসাধারণ ফলাফলের পর তড়িৎ প্রকৌশল বিষয়ে শিক্ষা লাভ করেন ইউনিভার্সিটি নিউক্যাসেল থেকে পরবর্তীতে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। 

অভিনয় 

পড়াশোনা চলাকালীন তার অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পায়, চেহারার অভিব্যক্তি হাঁটাচলা সবকিছুতে নিজের প্রতিভা ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করেন। তার মুখের সেই বিখ্যাত এক্সপ্রেশন বারে বারে বদলে আনতে কম খাটুনি করতে হয়নি তাকে। প্রতিনিয়ত নিজেকে উন্নত করার চেষ্টা করে গেছেন। শোনা যায়, কথা বলায় কিছুটা জড়তা থাকার কারনে তাকে বেশ কবার পিছিয়ে পড়তে হয়। কিন্তু বিন কি হার মানা লোক? যেভাবেই হোক সে সমাধান করবেই। 

Mr Bean
মি. বিন সিরিজের একটি পর্ব। Image source: Wikimedia commons

রোয়ান অ্যাটকিনসন (Mr. Bean) নামের এই ব্যক্তিকে তার কাজের জন্য আমরা মি. বিন নামে চিনলেও, তার অভিনীত অসংখ্য মুভির, স্যাটায়ার শো রয়েছে। ১৯৭৮ সাল থেকে বিবিসি ৩ এর ২-৩ টি শোতে অংশ গ্রহন করেন । প্রথম বছরে ছিল,   ‘The Atkinson People’, পরের বছর করেন একটি সিটকম শো, ‘Canned Laughter’.

১৯৭৯ সালে আরো একটি শোতে অংশ নেন তিনি, নাম ছিল Not the Nine O’ Clock News.’ এই শোগুলোতে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভের পরে তিনি ‘The Black Adder’ নামে একটি শো করেন। ১৯৮৩ সাল থেকে বেশ দীর্ঘ সময় ধরে চলা এই শো সেই সময়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। একই বছর জেমস বন্ডের একটি মুভিতে অভিনয় করেন। এরপর একের পর এক শো তার ঝুলিতে জমা হতে থাকে।  

mr Bean
The historical poster of Mr Bean . Image source: Imdb

১৯৯০ সাল থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত মোট ১৪টি পর্ব প্রচারিত হয়েছিল। কিন্তু আমাদের মনে হয় কত শত পর্ব আমরা দেখে গেছি। আজো যতবার দেখি মনে হবে নতুন করে দেখছি। একদিকে যেমন অভিনয় করেছিলেন, জেমস বন্ড ফিল্মে সাপোর্টিং রোল হিসেবে, অন্যদিকে নিজেই আবার বন্ডের স্যাটায়ার মুভি জনি ইংলিশে অভিনয় করে ব্যাপক সাড়া ফেলে দেন।

এছাড়াও অনেকগুলো মুভিতে তিনি অভিনয় করেছেন, অনেকগুলো এনিমেশন মুভিতে দিয়েছেন কন্ঠ। রোয়ান অ্যাটকিনসন অভিনীত জনপ্রিয় মুভির মধ্যে সেরা কিছু মুভির নাম দেয়া হল, ডেড অন টাইম, নেভার সে নেভার এগেইন, জনি ইংলিশ, মি. বিন’স হলিডে। তার কন্ঠ দেয়া এনিমেশনের মধ্যে আছে দ্য লায়ন কিং এবং স্কুবি ডো।

বিনের নাম বিন না হয়ে কলিফ্লায়ার হবার কথা ছিল, শো শুরুর আগে পর্যন্ত এই বিন নামের কোন নাম গন্ধ ছিল না। তারা খুজছিলেন এমন কোন নাম যা কিনা হবে সবজির নাম। কলিফ্লাওার নামে কি আমাদের পাগলাটে এই প্রকৌশলী এত জনপ্রিয় হতেন? 

Mr Bean
Mr Bean and his bear Image source: DNA India

মি বিন (Mr. Bean) এর ঐতিহাসিক সেই লক্কর ঝক্কর গাড়ির কথা মনে আছে? যে গাড়ির মেইন্টেইন্স করতে বিনের ঘাম ছুটে যেত। বাস্তব জীবনে কিন্তু বিনের গাড়ির সংখ্যা অসংখ্য। বাইক থেকে শুরু করে লরি পর্যন্ত আছে তার গ্যারেজে। একই সাথে সে রেসার হিসেবেই কম জনপ্রিয় নন। গাড়ি সম্পর্কিত শো ‘Top Gear’ and ‘Full Throttle’ তে তাকে দেখা গেছে, কার ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে তার একাধিক লেখা।

তার নিজের কিছু গাড়ির মধ্যে আছে McLaren F1, a Honda NSX, Audi A8, এবং Honda Civic Hybrid এবং  Aston Martin. যারা জনি ইংলিশ মুভি দেখেছেন, মনে থাকবে হয়তো, সেই মুভিতে ব্যবহৃত হয়েছিল Aston Martin DB7 কার। এই গাড়ির মালিক স্বয়ং মি বিন অথবা বলা চলে রোয়ান অ্যাটকিনসন। বিনের ওই সবুজ গাড়ি নিয়ে চললে আর জনি ইংলিশের কাজ সমাধা হত না, কি বলেন? 

Mr Bean
Mr Bean now 
Image source : Inside hook

২০১২ সালের দিকে ডেইলি টেলিগ্রাফকে রোয়ান জানান, মি বিন (Mr. Bean) তাকে ক্রমশ শিশুতে পরিবর্তন করেছে, আর ধীরে ধীরে তিনি শারীরিকভাবে দূর্বল হয়ে পড়ছেন। আর বিন চরিত্র করতে অবশ্যই শারীরিকভাবে সক্ষম একজন মানুষের প্রয়োজন। তার মতে তার বয়স অনুসারে বিন চরিত্র একটু বেমানান। 

তাই, তিনি সিরিয়াস চরিত্রে অভিনয়ের দিকে কিছুটা মন দিতে চান। কিন্তু বিনের প্রতি ভালোবাসা বা দর্শকের প্রতি কৃতজ্ঞতা থেকেই হোক, বিন আবার পর্দায় ফিরে আসেন Huan Le Xi Ju Ren মুভি দিয়ে। মুভিতে বেশ বয়স্ক বিনকে আমরা দেখতে পাই। কিন্তু এখানে সে কি সে তার শিশুসুলভ চরিত্র করেছিলেন নাকি পরিপক্ক? প্রশ্ন নাহয় পাঠকদের জন্য তুলে রাখি। 

ব্যক্তিগত জীবন

ব্যক্তিগত জীবনে তিনি তিন সন্তানের পিতা। ১৯৯০ সালে প্রথম বিয়ে করেন সুনেত্রা শাস্ত্রী নামের এক রমনীকে। তাদের দুই সন্তান বেঞ্জামিন এবং লিলি। ২০১৫ সালে তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। এর কিছুদিন পরে লুইস ফোর্ড নামে আর একজনকে বিয়ে করেন ২০১৭ সালে জন্ম নেয় তাদের সন্তান। 

রোয়ান (Rowan Atkinson) একজন প্রকৌশলী হয়েও অভিনয়ের প্রতি দূর্বলতা থেকেই অভিনয় জগতে এসেছেন। আমাদের দিয়ে গেছেন মি. বিনের মত এক নশ্বর চরিত্র। ৯০ দশকের মানুষ হোক কিংবা এ দশকের, বিন কে যারা চিনি, আমাদের অস্তিত্বে অংশ।

কেবল সিরিজ, মুভি না, মি বিনকে অনুকরন করেই বানানো হয়েছে কার্টুন সিরিজও। সদা হাস্যমুখে, বাদামী রঙ এর ভাল্লুক হাতের এই মানুষ আমাদের আনন্দ নিয়ে যাক আরো বহুকাল। আশা রাখি কোন এক দিন বিন কে আবারো ফিরে পাব দূর্দান্ত অভিনয়ে। রোয়ান হিসেবে নয়, বিন হিসেবেই। কারণ বিন চরিত্রেরা পুরানো হবে না। 

 

Feature Image: imdb.com
Source:

01. https://www.thefamouspeople.com/profiles/rowan-sebastian-atkinson-2763.php
02. https://bangla-archive.dhakatribune.com/entertainment/2020/02/05/19848
03. https://goodyfeed.com/history-of-mr-bean-is-amazing-it-could-have-been-mr-cauliflower/