পৃথিবীর একটি ছোট দেশ অদ্ভুত সুন্দর দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলংকা। দেশটি ভারতের ঠিক দক্ষিণে ভারত মহাসাগরে অবস্থিত। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সমুদ্র সৈকত, ভূদৃশ্য সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য দেশটিকে দিয়েছে স্বতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য। আয়তনে ছোট হলেও জঙ্গলঘেরা পাহাড়, সোনালী বালুকাময় সৈকত, বন্যপ্রাণী ও এদের আবাসস্থল এবং মজার মজার খাবারের জন্য দ্বীপ দেশটি পর্যটকদের কাছে খুবই আকর্ষণীয় এক স্থান।
শ্রীলংকা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর হলেও একসময় এই সৌন্দর্য অনেকটা লোকচক্ষুর আড়ালে ছিল। পর্যটকরা অন্যদেশ ভ্রমণের পথে হয়ত দেশটিকে দেখত। কখনও আগ্রহী হলে ভ্রমণ করত। কিন্তু সময় বদলেছে, শ্রীলংকা তার সৌন্দর্যকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরেছে। পরিচিত করাচ্ছে ধীরে ধীরে।
শ্রীলংকায় রয়েছে পৃথিবী বিখ্যাত চা বাগান,দারুচিনি দ্বীপ, বৌদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ, আদম পাহাড়, মনোমুগ্ধকর ঔপনিবেশিক শহর, সমুদ্র সৈকত ইত্যাদি। এত সুন্দর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি এদেশের মানুষের অমায়িক ব্যবহার, সুস্বাদু খাবার, সমৃদ্ধ সংস্কৃতি, গৌরবময় ইতিহাস ও ঐতিহ্যও শ্রীলংকার সম্পদ।
দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলংকার পরিচয়
এশিয়া মহাদেশের সার্কভুক্ত একটি ছোট দেশ এই শ্রীলংকা। মাত্র ২ কোটির মত জনসংখ্যার এদেশে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীর সংখ্যাই বেশি। এছাড়াও হিন্দু, মুসলিম, খ্রিষ্টান ও অন্যান্য ধর্মের অধিবাসীরাও আছে। বৌদ্ধ সভ্যতার সাথে শ্রীলংকার গভীর সম্পর্ক আছে. তাই এদেশের বিভিন্ন স্থানে গৌতম বুদ্ধের অসংখ্য মূর্তি দেখতে পাওয়া যায়।
মধ্যযুগে পর্তুগীজরা সর্বপ্রথম শ্রীলংকায় আসে। এরপর একে একে ডাচ ও ব্রিটিশরা এদেশে তাদের বসতি ও ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠা করে। ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ শাসন হতে মুক্ত হয়ে স্বাধীনতা লাভ করে দেশটি। এসব দেশের গড়ে তোলা বিভিন্ন সুন্দর সুন্দর নিদর্শন আজও শ্রীলংকায় বিদ্যমান। রাজধানী শ্রী জয়াবর্ধেনেপুরা কোট্টে ও বানিজ্যিক রাজধানী কলম্বো ছাড়াও আরও উল্লেখযোগ্য শহর হলো অনুরাধাপুরা, গল, ক্যান্ডি ইত্যাদি।
অবস্থান ও মুদ্রা
অদ্ভুত সুন্দর দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলংকা নিরক্ষরেখার কয়েক ডিগ্রি উত্তরে ভারত মহাসাগরের উপর ও বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত। এদেশটিকে ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে পৃথক করেছে মান্নার উপসাগরীয় অঞ্চল। ৬৫,৬১০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই দেশটি দক্ষিণ এশিয়ায় অবস্থিত। শ্রীলংকার মুদ্রাকে বলে শ্রীলংকান রুপি (LKR)।
রাজনীতি:
শ্রীলংকা ১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে এবং ১৯৭২ সালে তার ঔপনিবেশিক নাম সিলন পরিবর্তন করে শ্রীলংকা রাখা হয়। স্বাধীনতার পর থেকে দেশটিতে একটি কার্যকরী গণতন্ত্র ব্যবস্থা চালু রয়েছে। রাষ্ট্রপতি হলেন একই সাথে রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধান। রাষ্ট্রের নির্বাহী ক্ষমতা সরকারের উপর ন্যস্ত। আইন প্রণয়নের ক্ষমতা সরকার এবং আইনসভা উভয়ের উপর ন্যস্ত।
ধর্ম, ভাষা ও অন্যান্য
শ্রীলংকার জনসংখ্যা বিভিন্ন জাতি ও ধর্মীয় গোষ্ঠী নিয়ে গঠিত। এদের মধ্যে বৃহত্তম ধর্মীয় গোষ্ঠী হল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা; এরপর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা; তারপর আছে ইসলাম, খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মের অনুসারী। শ্রীলংকায় সিংহলী, তামিল এবং ইংরেজি সরকারীভাবে স্বীকৃত ভাষা। শ্রীলংকানরা ৭৭ বছর গড় আয়ু পেলেও এখানে আত্মহত্যার হার বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ। আর সাপের কামড়েও অনেক মানুষের মৃত্যু হয়। শ্রীলংকায় সাক্ষরতার হার প্রায় ৯৩ শতাংশ যা সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। এদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য পোশাক ও চা। এছাড়া রাবার, নারকেল এবং মূল্যবান রত্নও রপ্তানি হয়।
শ্রীলংকার ইতিহাস
শ্রীলংকার ইতিহাস আর বৌদ্ধ ধর্ম যেন এক সুতোয় গাঁথা। বৌদ্ধ ধর্মের গ্রন্থে শ্রীলংকার নাম উল্লেখ আছে। তাছাড়া গৌতম বুদ্ধ অদ্ভুত সুন্দর দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলংকায় এসেছিলেন; যার প্রমান এই দেশের দ্বীপজুড়ে এখনো বিরাজমান।
দক্ষিণ ভারতীয় শাক্যজাতির বিজয়বাহু তার হাজার সৈন্য নিয়ে প্রথম শ্রীলংকায় এসে বসতি স্থাপন করেন। যে কারণে শ্রীলংকায় ভারতীয় সংস্কৃতির ধারা কিছুটা পরিলক্ষিত হয় এবং হিন্দু ধর্মের ব্যাপক প্রসার ঘটে।
মহাসাগরের তীরবর্তী হওয়ায় শ্রীলংকা একটি গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক সৈকত ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে সুপ্রাচীন কাল থেকেই বণিকদের কাছে পরিচিত। মধ্যপ্রাচ্য, পারস্য, বার্মা, থাইল্যান্ড, মালয়শিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশ এখানে বানিজ্য করতে আসত। ১৫০৫ সালে পর্তুগীজরা কিন্তু সর্বপ্রথম শ্রীলংকায়ই পৌঁছায়। এরপর ডাচরা ও ব্রিটিশরা আসে।তবে ১৮ শতকে ব্রিটিশরা এদেশটিকে নিজেদের অধীনে নিয়ে নেয়।
ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকরা প্রথম এখানে চা, রাবার, চিনি, কফি এবং নীলের চাষ শুরু করে। যার অনেক কিছু এখনও এখানে চাষ হচ্ছে। কলম্বো ছিল প্রশাসনিক কেন্দ্র। ব্রিটিশরা এখানে আধুনিক বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়, রাস্তাঘাট এবং চার্চ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পশ্চিমা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য গড়ে তুলেছিল।
তবে তাদের অত্যাচারের কথাও কিন্তু অজানা নয়। যার ফলশ্রুতিতে ১৯৩০ সালের দিকে স্থানীয়রা ব্রিটিশদের নির্যাতন-অত্যাচারের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার আন্দোলন শুরু করে। ১৯৪৮ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি সিলন নামের দেশটি স্বাধীনতা পায়। ১৯৬০ সালে সারা পৃথিবীর প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী শ্রীমাভো বন্দেরনায়েক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালে সুন্দর এই দ্বীপরাষ্ট্রের নাম সিলন থেকে শ্রীলংকা রাখা হয়।
দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলংকার দর্শনীয় স্থান
সমুদ্র সৈকতে তিমির দর্শন বা রেইনফরেস্টে চিতাবাঘের পদচিহ্নের খোঁজ কিংবা পার্বত্য এলাকার সবুজ চা বাগানে ভ্রমণ এসবই পাবেন শ্রীলংকায়। বৌদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ অন্বেষণ, ঔপনিবেশিক দুর্গগুলোয় ঘুরে এবং এখানকার সুস্বাদ খাবারের স্বাদ নিলে এই সুন্দর লংকাদ্বীপের সংস্কৃতি সম্পর্কে আপনি একটি সুস্পষ্ট ধারণা পাবেন। এজন্য অদ্ভুত সুন্দর দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলংকার বিভিন্ন শহর ও অঞ্চলসমূহের বিষয়ে আগেই জেনে রাখা ভালো।
শ্রীলংকার পশ্চিম উপকূল
শ্রীলংকার পশ্চিম উপকূলে পর্যটকদের জন্য রয়েছে অসংখ্য রিসোর্ট ও হোটেল; যা দেশটির পর্যটন শিল্পের মুল শক্তি। এখানে রয়েছে নেগম্বো এবং বেরুওয়ালার প্যাকেজ হলিডে রিসোর্ট, স্টাইলিশ বেনটোটা এবং হিক্কাদুয়ার পুরনো হিপি হ্যাংআউট।
বানিজ্যিক রাজধানী কলম্বোর উত্তরের কালপিটিয়া উপদ্বীপে এবং বিস্তীর্ণ উইলপাট্টু ন্যাশনাল পার্কের কাছাকাছি যেখানে চিতাবাঘ, হাতি এবং শ্লথ ভাল্লুকের আবাসস্থল রয়েছে; সেখানে আছে অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন ও নির্মল বায়ু সম্বলিত গ্রামাঞ্চল। এসব গ্রামও পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।
শ্রীলংকার দক্ষিণ উপকূল
শ্রীলংকার দক্ষিণ উপকূলের প্রবেশদ্বার হল প্রাচীন ঔপনিবেশিক শহর গল। পুরনো এই শহরটি ডাচদের বিভিন্ন স্মৃতিতে পরিপূর্ণ।এখানকার উনাওয়াতুনা, ওয়েলিগামা, মিরিসা এবং টাঙ্গাল্লার উপকূলের গ্রামগুলো নির্মল বায়ু ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক ভাণ্ডার। এছাড়া এই অঞ্চলের তিসামহারাম শহরের ইয়ালা এবং বুন্ডলার জাতীয় উদ্যান এবং কাটারাগামায় আছে মনোমুগ্ধকর মন্দির।
শ্রীলংকার পার্বত্য অঞ্চল
সবুজ চা বাগানে ঢাকা দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলংকার পাহাড়ি অঞ্চলগুলো। এই পাহাড়ি অঞ্চলেই শ্রীলংকার দ্বিতীয় শহর ক্যান্ডি অবস্থিত। শহরটি সিংহলিদের সাংস্কৃতিক রাজধানী। এখানে আছে বিখ্যাত হাতির দাঁতের মন্দির এবং সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ উৎসব এসালা পেরাহেরা এখানেই হয়ে থাকে।
এই দ্বীপের দক্ষিণে সর্বোচ্চ বিন্দুর কাছাকাছি প্রাচীন ব্রিটিশ শহর নুওয়ারা এলিয়া অবস্থিত যা চা শিল্পের প্রাণকেন্দ্র।এখানে প্রকৃতিপ্রেমিদের জন্য আছে বিখ্যাত হর্টন প্লেইনস ন্যাশনাল পার্ক। এই পার্বত্য অঞ্চলের কিনার ঘেঁষে গড়ে ওঠা এলাকা এলা, হাপুটালে এবং বান্দারওয়েলা ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলের নিদর্শন বহন করছে; যেখানে আছে পাহাড়ি ঝর্ণা, পার্ক, চা বাগান মিউজিয়াম ইত্যাদি।
এই এলাকার দক্ষিণ- পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত আদম পাহাড় আরেকটি আকর্ষণীয় স্থান যা সব ধর্মের তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত। এই পাহাড়টির চূড়ায় আদিকাল থেকেই মানুষ্য পায়ের একটি ছাপ অবিকল অবস্থায় বিরাজমান। আর রয়েছে ধাতব সিঁড়ি যা দেখতে রহস্যময়। তাই এই পাহাড়ে দর্শনার্থীদের ভিড় লেগেই থাকে। দ্বীপের দক্ষিণে আরও আছে বিখ্যাত রত্নপুরার রত্ন-খনি কেন্দ্র, উদা ওয়ালাওয়ে ন্যাশনাল পার্কের হাতি এবং সিংহরাজের বিরল গ্রীষ্মমন্ডলীয় রেইনফরেস্ট।
শ্রীলংকার কালচারাল ট্রায়াঙ্গল
অনুরাধাপুরার দক্ষিণাংশ, পোলোনারুয়ার পশ্চিমাংশ এবং ক্যান্ডির উত্তরের কিয়দংশের সমন্বয়ে শ্রীলংকার কালচারাল ট্রায়াঙ্গল গঠিত হয়েছে। এই ট্রায়াঙ্গলেই শ্রীলঙ্কার আদি সভ্যতার অবস্থান যা সোনালী অতীতের স্মৃতি বহন করছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে অনুরাধাপুরা এবং পোলোনারুয়ার ধ্বংসপ্রাপ্ত শহর, ডাম্বুলার অপূর্ব গুহা মন্দির, মিহিনতালের পাহাড়ের চূড়া ও দাগোবা এবং সিগিরিয়ার অসাধারণ শিলা দুর্গ।
অদ্ভুত সুন্দর দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলংকার সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং আকর্ষণীয় প্রাকৃতিক অভয়ারণ্য মিনেরিয়া ন্যাশনাল পার্কও এই অঞ্চলে অবস্থিত।
শ্রীলংকার খাবার ও পানীয়
শ্রীলংকান রান্নায় এর ভৌগলিক অবস্থান, স্থানীয় ঐতিহ্য, ঔপনিবেশিক প্রভাব প্রতিফলিত হয়। সমুদ্র তীরবর্তী ও গ্রীষ্মমন্ডলীয় দেশ হওয়ায় এখানে ফল এবং তাজা সামুদ্রিক খাবার ব্যাপকহারে পাওয়া যায়। নারকেল ও মশলার ফলনও এখানে প্রচুর তাই প্রায় খাবার রান্নায় এগুলোর ব্যবহার হয়ে থাকে।
শ্রীলংকার সাতটি ঐতিহ্যবাহী খাবার
১. ভাত এবং তরকারি শ্রীলংকার প্রধান খাদ্য। তবে ভাত-তরকারির সাথে টুনা মাছের শুটকি, মাংস, ডাল বা মাছের তরকারিও এদের প্রিয় খাবার। সাইড ডিশের মধ্যে রয়েছে আনারসের তরকারি, মিষ্টি আলুর তরকারি, নারকেল সাম্বোল।
২. কোট্টু রোটি এই দ্বীপের সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি স্ট্রিট ফুড। মূলত কাটা রুটি, শাকসবজি, মাংস বা ডিমের কিমার মিশ্রণে ভাজা একটি খাবার হচ্ছে কোট্টু রোটি।
৩. ছোট হপার বা অপ্পা হল বাটি-আকৃতির প্যানকেক যা নারকেল দুধ ও পাম গাছের রস থেকে তৈরি হয়। এর মাঝখানে থাকে ভাজা ডিম। এখানে সকালের নাস্তায় ডাল বা তরকারি দিয়ে এই প্যানকেক খাওয়া হয়।
৪. স্ট্রিং হপার বা ইদিয়াপ্পা হল শ্রীলঙ্কার আরেকটি ঐতিহ্যবাহী খাবার। এটি চালের গুঁড়ির নুডলস যা সাধারণত ডাল বা তরকারির সাথে সকালের নাশতায় খাওয়া হয়।
৫. ময়দা এবং গ্রেট করা নারকেলের সংমিশ্রণে নলাকার বাঁশের ছাঁচে ভাপে সেদ্ধ একটি খাবার হল পিট্টু। যা মিষ্টি বা নোনতা দুটি স্বাদেরই হতে পারে।
৬. ল্যামপ্রেইস হল জনপ্রিয় শ্রীলংকান খাবার যা চাল, সিদ্ধ ডিম, মাংস, সবজি, আচারের মিশ্রণে কলা পাতায় সেঁকে রান্না করা হয়।
৭. ভাদাই (ওয়াদাই) একটি জনপ্রিয় স্ট্রিট ফুড যা ভাজা মসুর ডাল দিয়ে বড়া আকৃতির বানানো হয়। এখানকার ট্রেন এবং বাসে হকাররা এই খাবারটি বিক্রি করে থাকে।
শ্রীলংকার পানীয়ের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে চা ও কফি। এগুলো এদেশের জাতীয় পানীয়। এছাড়া কোকা-কোলার মত কোমল পানীয় ছাড়াও ডাব ও নারকেলের পানি, আদা থেকে তৈরি বিয়ার, নারকেল ফুলের রস থেকে তৈরি পানীয় ও ক্রিম সোডার চাহিদাও এখানে প্রচুর।
শ্রীলংকার সংস্কৃতি
শ্রীলংকার সংস্কৃতিতে মুলত বৌদ্ধধর্মের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। এছাড়া দক্ষিণ ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও ঔপনিবেশিক প্রভাবও রয়েছে। শ্রীলংকারা জাতি হিসেবে যথেষ্ট ভদ্র এবং মার্জিত। তারা জনসমক্ষে সাধারণত বিবাদে জড়ায় না বা কারও সমালোচনা করে না।
শ্রীলংকার কোনো সমুদ্র সৈকতে নারীদের নগ্ন এবং টপলেস থাকা অনুমোদিত নয়। প্রকাশ্যে আদর বা স্নেহ প্রকাশ করতে আলিঙ্গন করাকেও ভালো চোখে দেখা হয় না। এমনকি প্রেমিক জুটিরা পার্ক বা বোটানিক্যাল গার্ডেনের কোণে বিশাল ছাতার আড়ালে লুকিয়ে তাদের আলাপন করে।
বাড়িতে পুরুষ সদস্যরাই মূলত পরিবারের নেতা হিসাবে বিবেচিত হয়। এখানে বয়সভেদে নানাভাবে অভিবাদন জানানো হয়।বয়স্করা দুহাত একত্র করে নমস্তে জানায়, অল্প বয়সীরা ডান হাত এগিয়ে হ্যান্ডশেক করে অভিবাদন জানায়। তবে মহিলারা সাধারণত ঘরের বাইরের লোকদের সাথে এরকম হ্যান্ডশেক বা আলিঙ্গন করে না। আপনি শুনে খুশি হবেন যে শ্রীলংকারা খুব অতিথিপরায়ণ জাতি। তারা অতিথির সাথে খুব ভাল ব্যবহার করে এবং তাদের প্রয়োজন পূরনে তৎপর থাকে।
যেহেতু অদ্ভুত সুন্দর এই দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলংকায় প্রচুর মন্দির আছে তাই মন্দিরে প্রার্থনা বা পরিদর্শনে গেলে কিছু নিয়ম আপনাকে মানতেই হবে। যেমন মন্দিরে প্রবেশের আগে শরীর কোন চাদর দিয়ে ঢেকে যেতে হবে, জুতা খুলে খালি পায়ে এবং মাথায়ও টুপি বা অন্যকোন কাপড় থাকলে তা খুলে রাখতে হবে। অবশ্য সব জায়গায় এক নিয়ম নেই। আবার ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর বাইরে ভিক্ষুক থাকতে পারে যাদেরকে খুচরো টাকা পয়সা দিলে খুশি হবে।
শ্রীলংকারা হাত দিয়েই খাবার খায়। তারা খাওয়া শেষে যদি কিছু খাবার থালায় রেখে দেয় তো বুঝতে হবে ক্ষিদে মিটেছে আর যদি থালায় খাবার না থাকে তো মনে করা হবে যে আপনি আরও খেতে চাইছেন।
শ্রীলংকার উৎসব
শ্রীলংকায় প্রধান প্রধান ধর্মীয় উৎসবের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক উৎসবও পালিত হয়। সরকারী ছুটি দেওয়া হয় এই সময়।
সিংহলি এবং তামিল নববর্ষ শ্রীলংকার জনপ্রিয় উৎসব যা সাধারণত এপ্রিল মাসে পালিত হয়। এই উৎসবে লোকজন খেলাধুলায় মেতে ওঠে, ঘুরতে যায়, নানা ধরণের খাবার খায়, নতুন বা পরিষ্কার কাপড় পরিধান করে।
এছাড়া, আরও অনেক উৎসব শ্রীলংকারা পালন করে। এগুলোর মধ্যে বুদ্ধের জন্ম, মৃত্যু ও জ্ঞানার্জন উপলক্ষে মে মাসে ভেসাক পোয়া নামের উৎসবটি গুরুত্বপূর্ণ। আরও হয় জুলাই বা আগস্টের শেষে দশদিন্যাপী এসালা পোয়া পেরাহেরা যা মুলত অনুষ্ঠিত হয় ক্যান্ডিতে। সারা ক্যান্ডি তখন রঙিন সাজে সেজে ওঠে হাতি, বাদ্য যন্ত্রের বাজনা, নৃত্যশিল্পী ও এক্রোব্যাটদের পরিবেশনায়।
শ্রীলংকার আবহাওয়া
শ্রীলংকায় গ্রীষ্মমন্ডলীয় ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ু বিরাজমান। গড় তাপমাত্রা ২৬°-৩০° সেলসিয়াস। তবে পাহাড়ি এলাকায় এই তাপমাত্রা আরও কমে যেতে পারে। গ্রীষ্মকাল বেশি সময় স্থায়ী হয়। মে থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত সুন্দর আবহাওয়া বিরাজ করে। বছরের অন্যান্য মাসগুলো তুলনামূলক শুষ্ক হয়। তবে মাঝে মাঝে বৃষ্টিপাতও হতে পারে। শীতকালের তাপমাত্রা গড়ে ১২°-১৬° সেলসিয়াসের মধ্যেই থাকে।
Feature Image: Tuul & Bruno Morandi/Getty Images
তথ্যসূত্র
01.The top 18 things to do in Sri Lanka
03.12 Foods you should try in Sri Lanka
04.Must visit places in Sri Lanka
05.The C&TH Guide to Sri Lanka
শ্রীলংকা আসলেই সুন্দর।