শিল্পবিপ্লব এবং পৃথিবী: শিল্পের উত্থানে নতুন শ্রেণী ব্যবস্থার চিত্র

3112
3

অনেক বছর আগের কথা। আঠারো শতকের দিকে জন মেসন নামে ইংল্যান্ডের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাস করতো এক কৃষক। জন মেসন কৃষি বিপ্লবের সময় তার গ্রাম থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিল। নিজের জমিতে পুরোদস্তুর চাষ করে মেসনের দিন কেটে যায়। জমিতে চাষাবাদ ছাড়াও বাকি সব কাজ (জামাকাপড়, বাসন) মেসন নিজ হাতেই করে। মেসনের মনে সুপ্ত বাসনা ছিল এই কাজগুলোকে তার অঞ্চলে ছড়িয়ে দেওয়ার। ইশ! এমন কোনো চেরাগ যদি হাতে পেত। যেহেতু কৃষি থেকে শুরু করে প্রতিটি জিনিস মেসনের নিজের হাতেই গড়া, তাই ব্যাপারগুলোতে বেশ সময় লেগে যেত। এছাড়া, মেসনদের গ্রামে এমন কোনো প্রতিষ্ঠানও ছিল না যে সবাইকে একত্রিত করে কাজগুলো করা যাবে। 

অথচ, গ্রামে বেকারদের সংখ্যাও বাড়ছিল দিনে দিনে, পর্যাপ্ত ফসলি জমির অভাবে। অন্যদিকে, কৃষির পাশাপাশি ব্যক্তিগত উদ্যোগেই চলতো শিল্পকর্মের কাজগুলো। দেশের আয়ও ছিল সীমিত যেহেতু কর পাওয়া যেত নির্দিষ্ট গন্ডিতে রাখা এই কাজগুলোকে ঘিরেই। তো এমন এক সময়ে মেসনদের গ্রামে মারাত্মক টর্নেডো আঘাত হানে। কৃষি জমিগুলো ভয়ানক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দুর্ভিক্ষের করাল গ্রাস উপনিত হয় চারপাশে। মেসন উপলব্ধি করে এবার নতুন এক বিপ্লবের উত্থানের পর্ব। যে চেরাগের জন্য সে অপেক্ষা করছিল এতদিন, বিপ্লবের রূপে সে চেরাগ তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। শিল্প তার নবদুয়ার নিয়ে উপস্থিত হয়েছে আধুনিক মানুষের দুয়ারে! 

মূলত অধুনা পৃথিবী তার প্রতিটি স্তরে ভিন্ন ভিন্ন পর্যায়ে আদিমতা থেকে বিবর্তনের দিকে এগিয়ে গিয়েছে। এই নিয়ে বিভিন্ন সমাজতাত্ত্বিকরা নিজস্ব শ্রেণীবিন্যাসের মাধ্যমে পৃথিবীর এই পরিবর্তনের চিত্র অঙ্কন করেন। লুইস হেনরি মরগ্যান যেভাবে উল্লেখ করেছেন এনসিয়েন্ট সোসাইটি থেকে আধুনিক ক্যাপিটালিজম পর্যন্ত। এই শ্রেণীবিন্যাসগুলো হওয়ার অন্যতম প্রেক্ষাপট এক একটি সমাজ বিবর্তন। তেমনি এক বিবর্তনের নাম শিল্পবিপ্লব। এভাবেই, আমাদের পৃথিবী ধীরে ধীরে বড় হয়ে উঠে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, বড় হওয়ার এই প্রক্রিয়াকে কীভাবে চিহ্নিত করা যায় বা আদৌ কি মানব সমাজ এই পরিবর্তন মানিয়ে নিতে পারে! 

শিল্পবিপ্লবের সূচক। Image Source: eng-literature.com

মোটা দাগে বলতে গেলে, বিপ্লব হচ্ছে অর্থনৈতিক পরিবর্তনের দিকেই একনিষ্ঠভাবে ইঙ্গিত করে। হুট করেই এমন পরিবর্তন উপস্থিত হয় না। দীর্ঘ সময় ধরে পূর্ব ব্যবস্থার অসঙ্গতি মানুষকে নতুন পরিবর্তনের দিকে ধাবিত করে। ঠিক তেমনি ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার, যাতায়াত ব্যবস্থার পরিবর্তন, ব্যাংকিং সেক্টরের উদ্ভাবন, নতুন প্রযুক্তির আবির্ভাব এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির উত্থান শিল্পবিপ্লবকে ত্বরান্বিত করে। আগেই বলা হয়েছে, হুট করে শিল্প বিপ্লব আসেনি। চারটি ব্যাপক পরিবর্তন এই বিপ্লবকে ডেকে এনেছিল পৃথিবীর প্রান্তে। 

১. ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধি
২. কৃষি বিপ্লব
৩. বাণিজ্য সম্প্রসারণ
৪. পরিবহন বিপ্লব
৫. নতুন শ্রেণির ব্যাপ্তি 

প্রখ্যাত ফরাসী দার্শনিক আগুস্ট ব্লকির হাতে ধরে শিল্পবিপ্লব শব্দটি ১৮৩৭ সালে প্রথমবার ব্যবহার হলেও টার্মটিকে লোকমুখে এনে দিতে সক্ষম হয় ইতিহাসবিদ আর্নল্ড টয়েনবি। অষ্টাদশ শতকে শিল্পের বিকাশে যে পরিবর্তন আসে তাতেই বদলে যায় গোটা পৃথিবীর চিত্র। নতুন নতুন যন্ত্রের আবিষ্কার এই বিপ্লবকে সহজ করে দেয়; যেমন, ফ্লাইং শাটল বা উড়ন্ত মাকু। ১৭৩৩ সালে জন কে এটি আবিষ্কার করেন। উড়ন্ত মাকু বস্ত্র শিল্পের ব্যাপক প্রসারণ ঘটায়। এর মাধ্যমেই বস্ত্র শিল্পের প্রসারণ শুরু হয়। 

আরেকটি উল্লেখযোগ্য উদ্ভাবন হলো স্পিনিং জেনি। এই যন্ত্রের সাহায্যে একই সময়ে আটজন মানুষ কাপড় বোনার কাজ করতে পারতো একইসাথে। বস্ত্র কারখানাগুলো স্পিনিং জেনিকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠে। ১৭৬৫ সালে জেমস হারগ্রিভস এটি আবিষ্কার করেন। স্পিনিং জেনির আবিষ্কার আরো একধাপ এগিয়ে যায় ওয়াটার ফ্রেম আবিষ্কারের মাধ্যমে। এটি জলের স্রোতের সহায়তায় কাপড় বুনে দিত। স্যার রিচার্ড অর্করাইট ১৭৬৫ সালে আবিষ্কার করেন ওয়াটার ফ্রেম। উপরের প্রেক্ষাপটের সূত্র ধরে স্যামুয়েল ক্রম্পটন ১৭৯৯ সালে কাপড় বোনার আরো একটি যন্ত্র আবিষ্কার করে স্পিনিং মিউল শিরোনামে। বস্ত্রের উৎপাদন এবং আধুনিক পোশাক শিল্প বিকশিত হয় ১৮৪৬ সালে এলিয়াস হোর সেলাই মেশিন আবিষ্কারের মাধ্যমে। প্রত্যেকটি আবিষ্কার শিল্পের সাথে বিপ্লবের সম্ভাবনাকে জোরদার করে। 

শিল্পবিপ্লবের উদ্ভাবনী। Image Source: Pinterest.com

তবে শিল্পবিপ্লবের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার যেটি এখনো অবধি পৃথিবীর ইতিহাস স্মরণ করে, তা হলো স্টিম ইঞ্জিন। স্যার জেমস ওয়ার্টের অমর সৃষ্টি। তাপশক্তির মাধ্যমে জলীয় বাষ্প হতো এবং বাষ্পচাপ ব্যবহার করে ইঞ্জিন চলতো। কারখানার মেশিন থেকে শুরু করে জলের পাম্প, রেলগাড়ি সবখানে এই যন্ত্র ব্যবহার হতে শুরু করে। এটি এক নতুন যুগের সূচনা করে। 

তাও একটা কমতি থেকেই যায়। তখন কয়লার খনিগুলোতে অনেক শ্রমিক কাজ করতো। আর খনির ভেতরে ছিল ঘুটঘুটে অন্ধকার আর দাহ্য মিথেন গ্যাসে ভরা। শ্রমিকদের আলোর জন্য আগুনও নেওয়া সম্ভব ছিল না। কারণ, খনির মিথেন আগুনের স্পর্শে এলে বিস্ফোরণের আশংকা ছিল। ফলে, সেই মৃত্যুকুসুম অন্ধকারে অনেক শ্রমিক তিলতিলে মারা যেতো। অবস্থার পরিত্রানে এগিয়ে আসে হামফ্রে। তিনি ১৮১৫ সালে ডেভি ল্যাম্প বা নিরাপদ বাতি আবিষ্কার করেন। এই বাতি খনি থেকে কয়লা উত্তোলনের প্রক্রিয়াকে একদম সহজ করে দেয়। 

স্পেন্সার তার ‘দ্য মর্ডান সোশোলজিক্যাল থিউরি’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন মানব সমাজ প্রতিনিয়ত সহজ থেকে জটিল দিয়ে ক্রমবিকাশ লাভ করে। সহজ থেকে জটিলতার এই প্রক্রিয়া পরিবেশ বিবেচনায় আগে সংঘটিত হয়। এক্ষেত্রে, ইংল্যান্ডে ছিল শিল্প বিপ্লবের সবচে উপযুক্ত পরিবেশ। 

রেলের সম্প্রসারণের চিত্র। Image Source: eng-literature.com

ইংল্যান্ডে যে সময়টাতে শিল্প বিপ্লব শুরু হয়, সেই সময়ে রেনেসাঁ বা নবজাগরণের ফলে মধ্যবিত্ত শ্রেণির উত্থান ঘটে। রেনেসাঁর সূত্রে পাওয়া যায় স্যার আইজ্যাক নিউটনের মতো প্রতিথযশা বিজ্ঞানী, দার্শনিক জন লক, নিকোলো ম্যাকিয়াভেলি, থমাস হবস এবং অনেক বিচক্ষন মানুষকে। রেনেসাঁর প্রভাবে গোঁড়ামীও কমে যায়  ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর। যা বিকশিত করে শিল্প বিপ্লবের পথকে। অর্ধেক পৃথিবীর প্রশ্ন থাকে ইংল্যান্ডেই কেন প্রথম শিল্পবিপ্লব হয়? উত্তরে বলা যায় শিল্পবিপ্লব হওয়ার মৌলিক তিনটি উপাদান হলো –

১. কাঁচামাল
২. অবাধ বাজার ব্যবস্থা
৩. মূলধন

দীর্ঘকাল ধরে উপনিবেশ শাসনের ফলে এশিয়া, আফ্রিকা এবং আমেরিকা থেকে পর্যাপ্ত মূলধন, কাঁচামালের যোগান এবং বাজার প্রত্যেকটিই ইংল্যান্ডের হাতে ছিল। এছাড়া, নিজেদের বাজার ছাড়াও উপনিবেশ অঞ্চলের বাজার ছিল ইংল্যান্ডের হাতের মুঠোয়। মানে তাদের বাজার ছিল একদম তৈরি। এছাড়া, ইংল্যান্ডের সমাজ ছিল প্রগতিশীল। একমাত্র রেসিজম থাকলেও শ্রেণীবৈষম্য এখানে তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি। ব্রিটিশ জমিদাররা শুধুমাত্র কৃষিকাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে শিল্পে বিনিয়োগের কাজে এগিয়ে আসে। সরকার থেকেও পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া শুরু হয় ব্যবসায়ীদের। এছাড়া, ব্যাপক বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির ফলে ইংল্যান্ড এগিয়েও ছিল।

কলকারখানায় শ্রমিক। Image Source: historycrunch.com

এমনকি ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলো ইংল্যান্ড থেকে বিশেষজ্ঞ নিয়ে যেতো নিজের দেশের জন্য। তাই বলা হয়ে থাকে শিল্পবিপ্লবের শিক্ষক হচ্ছে ইংল্যান্ড। সবচেয়ে বৈপ্লবিক চিত্র দেখা যায় ব্যবসা বাণিজ্য আর শিপিংয়ে। যেহেতু জলপথে ব্রিটিশরা সবসময়ই অনূকূলে ছিল। ফলে, একস্থান থেকে অন্যস্থানে কাঁচামাল পরিবহনের কাজটিও ছিল সুবিধাজনক। 

ষোল শতকের দিকে ব্রিটিশ শিপিংয়ের পরিমাণ ছিল ৭,৬০০ টন। সতের শতকের কিনারার দিকে এটি গিয়ে দাঁড়ায় ৫,০০,০০ টনে এবং উনিশ শতকের শুরুতে এর পরিমাণ হয় ১২,০০,০০ টন! বলে রাখা ভালো, ইংল্যান্ডে যে সময়ে শিল্প বিপ্লব হয় ইউরোপের দেশগুলোতে তার থেকে আরো ত্রিশ-চল্লিশ বছর পরে শিল্পবিপ্লব সংগঠিত হয়। 

সমাজবিজ্ঞানী সি এন শঙ্কর রাওয়ের অভিমত, শিল্পবিপ্লবের আগে ছিল ভূ-স্বামীদের নিয়ন্ত্রত সমাজব্যবস্থা। অভিজাতবর্গরা শাসনে ছিল। সাধারণ মানুষ কৃষি এবং কুটির শিল্পের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতো। শিল্পবিপ্লবের ফলে যন্ত্র জায়গা দখল করে মানুষের। সমাজে উত্থান হয় পুজিপতি মালিক এবং শোষিত শ্রেণির। মুদ্রার চিত্র একই। আগের অভিজাত আর বণিকরা পুজিপতির স্থান দখল করে নেয়। ধীরে ধীরে শ্রেণীবৈষম্য প্রগাঢ় হতে থাকে। 

শিল্পবিপ্লবের চিত্র। Image Source: intriguing-history.com

পুজিপতি বা বুর্জোয়াদের হাতে দখল হতে থাকে মুনাফা আর আরেক শ্রেণী প্রলেতারিয়াত হিসেবে শোষিতের কাতারে এসে দাঁড়ায়। এছাড়া, আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো ব্যাপক শিল্পকারখানা প্রসারণের ফলে গ্রাম থেকে দলে দলে মানুষ শহরের দিকে অগ্রসর হয় কাজের জন্য। নগরায়নের দুয়ার খুলে দেয় শিল্পের এই বিপ্লব! একটি বিপ্লব এভাবেই আর্থ-সামাজিক অবস্থাকে বিপুল পরিবর্তন করে দেয়। 

যেহেতু শ্রমিকরা মুনাফার ভাগিদার ছিল না তাই শহরে তাদের জীবনমান ছিল খুবই নিম্নমানের। ছোট একটি ঘুপচিতে অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় তারা দিনযাপন করতো। বস্তির মতো এসব ঘুপচি ঘরকে ঘেটো বলা হয়। 

আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো- ফরাসী বিপ্লবের সময় যেসব বণিকশ্রেণী ক্ষুদ্ধ হয়েছিলেন সমান অর্থসম্পদ থাকার পরেও অভিজাতদের সাথে স্থান না পাওয়াতে, এখানে শিল্পবিপ্লব তাদের সেই অতৃপ্তি দূর করে দেয়। তারা উঠে যায় অভিজাতদের পাশে এক কাতারে। ধীরে ধীরে ক্ষুব্ধ শ্রমিকদের মাঝে জাতীয়তাবাদী আদর্শ বাড়তে শুরু করে। 

রক্ত, কালি এবং শ্রমঃ নরকের মাঝে সাম্রাজ্য তৈরি কারখানা। Image Source: Dailymail.co.uk

শ্রমিকশ্রেণী গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য সোচ্চার হতে থাকে। সর্বপ্রথম শ্রমিকরা ইংল্যান্ডে চার্চিস্ট আন্দোলন শুরু করে। আধুনিক ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। আজকের গণতন্ত্রের সুপ্ত বীজ বোণা হয়েছিল আসলে আঠারো শতকের সেই শিল্পবিপ্লবের উত্থানে! শিল্পোন্নত দেশ নিজের পণ্য বিস্তারের জন্য সাম্রাজ্যবাদ আর উপনিবেশের দিকে নজর দেয়। এরপরে, নতুন করে বাজার দখলের জন্য সাম্রাজ্যবাদের সূচনা হয়। এমনকি উপমহাদেশের নীলচাষের প্রেক্ষাপটও এই কারণেই সূচিত হয়। 

শুরুতে ইংরেজদের চাহিদা ছিল অধিক কর আদায় করা। কিন্তু, ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লবের ফলে বস্ত্র কারখানাগুলোতে রংয়ের চাহিদা তৈরি হয়, সেটাকে মাথায় রেখে ভারতীয় উপমহাদেশে শুরু হয় বাধ্যতামূলক নীল চাষ। নীলকরদের শোষণে বাংলার রূপ ধারণ করেছিল আফিমের মতোই বিষাক্ত। 

ধীরে ধীরে উপমহাদেশেও শিল্পবিপ্লবের প্রভাব দেখা যায়। জর্জ ব্লেইনের তথ্যমতে, ১৮৯১ সালে ভারতে খাদ্য উৎপাদন ছিল ২৭৯.৪০ মিলিয়ন। যেটি ১৯৪১ সালে দাঁড়ায় ৩৪৪ মিলিয়ন। ১৮৯৩-৯৪ দিকে খাদ্য উৎপাদন কমে ৭৩.৯ মিলিয়ন টনে, ১৯৪৫-৪৬ এর দিকে খাদ্য উৎপাদন কমে ৬৯.৩ মিলিয়ন টন। মূলত মানুষ কৃষির প্রতি অনীহা এবং কলকারখানাতে নিয়োজিত হওয়ার ফলেই খাদ্যে পার ক্যাপিটা কমতে থাকে।

উপমহাদেশে বিপ্লব। Image Source: britannica.com

শিল্পবিপ্লব মুলধনকে শিল্পের বিনিয়োগে উৎসাহিত করে। এর আগে মুলধন শুধুই বাণিজ্যিক খাতে বরাদ্দ হত। ফ্যাক্টরিগুলো সম্প্রসারণের ফলে এই খাত আরো এগিয়ে যায়। শিল্পবিপ্লবে ফ্যাক্টরি সম্প্রসারণের ফলে সবচেয়ে বেশি নারীরা প্রভাবিত হয়। 

কৃষিনির্ভর ব্যবস্থায় আগে নারীরা শুধু নিজগৃহ বা খামারেই কাজ করত, সেখানে বিপ্লবের পরে নারীরা দলে দলে কল-কারখানায় যোগ দিতে থাকে। যেহেতু, বুনন আর বস্ত্রশিল্পে তাদের চাহিদা ছিল সর্বাধিক! এবং এই সমাজে প্রসারণ ঘটে শিশুশ্রমের। 

এভাবে এগিয়ে যেতে থাকে আদিম কষ্টে লালিত এই অতুলা পৃথিবী তার স্বয়ংম্ভর নিয়ে। শিল্পবিপ্লব এমন এক নাম, যার ফলে ইউরোপের দেশগুলো অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠে। প্রত্যেকটি বিপ্লব ত্বরান্বিত করেছে বৈশ্বিক ব্যবস্থাকে আর শ্রেণীসংগ্রামকে। তাই বলা হয়, মানব সমাজের ইতিহাস শ্রেণী সংগ্রামের নামান্তর মাত্র। 

 

Feature Image: Karl Eduard Biermann, Public domain, via Wikimedia Commons
তথ্যসূত্র:

1) Industrial Revolution
2) THE INDUSTRIAL REVOLUTION IN EUROPE
3) Industrial Revolution
4) The Modern Sociological Theory by Meta Spencer
5) Classical Sociological Theory by George Ritzer
6) A History Of World Civilization by J.E Swain
7) The State, Industrialisation And Class Formation In India by Anupam Sen.

 

3 COMMENTS

  1. ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবের কারণ ও ফলাফল ইতিহাসে প্রায় ১৭৬০-১৮৪০ খ্রিষ্টাব্দ বলা যায়। এই সময়কালে কৃষি এবং বাণিজ্যিক ব্যবস্থা থেকে আধুনিক শিল্পায়নের দিকে গতি শুরু হওয়ায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যে বিস্ময়কর পরিবর্তন ঘটে সত্যিই প্রশংসনীয়। পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতাব্দীর সমুদ্র যাত্রা বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যের পথ খুলে দেয়। তবে এই শিল্পবিপ্লবের মাঝে বাংলার মানুষের প্রতি যে কঠিন শোষণ তারা করেছিলো তা অতি কষ্টদায়ক।
    লেখিকার প্রতি শুভকামনা। এভাবেই তার প্রতিটা অসাধারণ লেখনীর মাধ্যমে ইতিহাস পাঠকের মাঝে তুলে ধরুক।

  2. পূর্ণাঙ্গ একটা ফিচার। শিল্পবিপ্লব নিয়ে ফিচারগুলোতে বেশিরভাগ দেখা যায় পুর্ণ সবদিক দেখাতে পারেনা। একটা দিক ছেড়ে দেয়। এই লেখাতে প্রতিটি দিক উঠে এসেছে এটাই লেখাটার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লেগেছে।

    একজন পাবলিক এডমিস্ট্রেশনের স্টুডেন্ট হিসেবে এটায় আমার ভাল লেগেছে সবচে বেশি। কেউ ইনফো চাইলে প্রায় সব এখান থেকে জানতে পারবে। গোছানো এবং শৈল্পিক করে লেখা। অনেকদিন পরে লেখিকার লেখা পেলাম। ভাল লাগলো খুব।

    ধন্যবাদ আমাদেরপ্যারিসকে।