ইউরোপ মহাদেশে আছে অনেক শহর। তবে এর মধ্যে কিছু শহরে রয়েছে ভিন্নতা-বৈচিত্র্যতা। এসব শহরে বর্ণিল রঙের ছোঁয়ায় প্রাচীনকালের ঘরবাড়ি তৈরি করা হয়েছিল। যার অস্তিত্ব এখনো অনেকটা রয়ে গিয়েছে। ইউরোপে প্রায় ২০টিরও বেশি বর্ণিল শহর রয়েছে, যার রাস্তাঘাঁট, দালান কোঠা নানা রঙে রাঙ্গানো। সেরকমই ১০টি বর্ণিল শহর সম্পর্কে আজকের এই ফিচার! আজকে আমরা ইউরোপের যে ১০টি বর্ণিল শহর সম্পর্কে জানবো তা হচ্ছে – বুরানো, বালাত, কোপেনহেগেন, প্রোসিডা, ব্রাইগেন, মেন্টন, জাজকার, পোর্টমেইরিওন, রোক্ল এবং সিঘিসোয়ারা।
বুরানো, ইতালি
ইতালির ভেনিসের অনেকগুলো শহরের মধ্যে একটি হচ্ছে বুরানো। এটি ইতালির রঙিন বাড়ির শহর হিসেবে পরিচিত। আসলে এখানে একটি নিয়ম রয়েছে যা স্থানীয় বাসিন্দারা বহু শতাব্দী ধরে কঠোরভাবে মেনে চলেন। তা হল প্রতিটি বাড়ির নিজস্ব রঙ রয়েছে এবং প্রশাসনের অনুমতি না নিয়ে কেউ এই রং পরিবর্তন করতে পারেনা। পানির উপর দাঁড়িয়ে উজ্জ্বল ঘরগুলি দেখতে ভীষণ প্রাণবন্ত লাগে।
ভেনিস শহর থেকে মাত্র সাত কিলোমিটার দূরে বুরানো দ্বীপটি অবস্থিত। এটি তিনটি চ্যানেল অতিক্রম করে চারটি ছোট দ্বীপ নিয়ে গঠিত; যা এটিকে একটি ক্ষুদ্র ভেনিসের মতো দেখায়। ১৯২৩ সাল পর্যন্ত এটি একটি স্বাধীন দ্বীপ ছিল যা পরবর্তীতে ভেনিসের সাথে সংযুক্ত হয়ে যায়।
বুরানোর উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে বুরানো বেল টাওয়ার, যা ৫৩ মিটার উঁচু। এছাড়াও রয়েছে জরি জাদুঘর যা পিয়াজা গিলাপ্পিতে অবস্থিত। আর এই শহরের রঙিন বাড়িঘরগুলো নিজেই একেকটি অনন্য নিদর্শনও বটে!
এখানে আসা পর্যটকদের কাছে খুবই জনপ্রিয় একটি শহর হল বুরানো। বিশেষ করে ভেনিস ঘুরতে আসলে সবাই কমপক্ষে একবার হলেও এই শহর এসে ঘুরে যায়। এটি খুব ছোট একটি দ্বীপ যা খুব কম সময় নিয়ে অনায়াসে ঘুরে ফেলা যায়।
বালাত, ইস্তাম্বুল
ইস্তাম্বুলের সবচেয়ে রঙিন শহর বালাত; যা ফাতিহ জেলায় এবং দেশটির ইউরোপিয়ান অংশে অবস্থিত। এটি একসময় জিউইশ কোয়ার্টার হিসেবে পরিচিত ছিল। কারণ, এখানে যারা ১৫শ শতাব্দীতে বসবাস করতো তার অধিকাংশই ইহুদি ছিল। এছাড়াও মুসলিম ও খ্রিস্টান ধর্মালম্বীরা বসবাস করতো বটে; কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এই শহর ছেড়ে অধিকাংশ মানুষ চলে যায়। যার ফলে অবহেলার মুখে পড়ে শহরটি।
তবে ইউনেস্কোর বদৌলতে শহরটি আবার জেগে উঠেছে। ভ্রমণপিপাসুদের মধ্যে যারা চিত্রশিল্পী তাদের আনাগোণা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর্ট গ্যালারি, বোহেমিয়ান ক্যাফে এবং রেস্টুরেন্টের আধিক্য এর অন্যতম কারণ।
বালাতে অসংখ্য মসজিদ ও চার্চ রয়েছে যা গুনে শেষ করা যাবে না। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য মসজিদ হচ্ছে – ইয়াভুজ সুলতান সেলিম মসজিদ, ফাতিহ মসজিদ, ইসমাইল আগা মসজিদ, তাহতা মিনার মসজিদ। এছাড়াও আছে টপকাপি প্যালেস মিউজিয়াম, ইস্তাম্বুল মিউজিয়াম অফ মডার্ণ আর্ট, গালাটা টাওয়ার, মেইডেনস টাওয়ার ইত্যাদি।
শহরটি বেশ ছোট ফলে আপনি যদি ঘুরতে যান তবে ঘুরাঘুরিতে খুব বেশি সময় লাগবেনা। বালাতের আকর্ষণীয় রঙিন স্থাপত্য আপনাকে মুগ্ধ না করে পারবেনা। মূলত রঙিন ঘরবাড়িগুলোই বালাতের প্রধান আকর্ষণ।
কোপেনহেগেন, নেদারল্যান্ড
নেদারল্যান্ডের রাজধানী কোপেনহেগেন বিশ্বের রঙিন শহরগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি শহর। ১৫শ শতাব্দীর শুরুর দিকে তৎকালীন ডেনমার্কের রাজধানী হিসেবে একে ঘোষণা করা হয়। ১৭শ শতাব্দীর দিকে সকল প্রকার প্রশাসনিক এবং অর্থনৈতিক কাজের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠে কোপেনহেগেন। নেদারল্যান্ডের অন্যান্য শহরের তুলনায় কোপেনহেগেন একটু ব্যতিক্রম। কারণ এখানে আছে ক্যানেল, সাইকেলিং কালচার, শক্তিশালী অর্থনীতি এবং আরেকটি বিষয় না বললেই নয় সেটি হল – এখানকার হাসিখুশি-সুখী মানুষজন।
কোপেনহেগেনে ঘুরে দেখার মতন অনেকগুলো জায়গা রয়েছে। এর মধ্যে টিভলি অন্যতম। ১৮৪৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যা কোপেনহেগেনের সম্পদ পাশাপাশি আন্তজার্তিক পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। কোপেনহেগেনের আরেকটি আকর্ষণ হচ্ছে এর ক্যানালগুলো। নৌকাযোগে অনায়াসে আপনি ক্যানালগুলো ঘুরে দেখতে পারবেন।
আপনি যদি কোপেনহেগেনের রঙিন ঘরবাড়ি দেখতে চান তবে অবশ্যই চলে যেতে হবে নিহামে। সানি সাইড হিসেবে পরিচিত এর উত্তরপাশের ক্যানালটি। ক্যানালের পাশে সারিবদ্ধ ভাবে পাব ও রেস্টুরেন্টের দেখা মিলবে।
এছাড়াও দক্ষিণপাশের ক্যানালে গেলে দেখা মিলবে হরেক রঙের ঘরবাড়ি। এছাড়াও আরও কিছু স্থান রয়েছে- দ্যা লিটল মারমেইড, ফ্রেডরিক্স চার্চ, কোপেনহেগেনের প্রধান কেনাকাটার রাস্তা- স্ট্রিট অফ স্ট্রজেট ইত্যাদি।
প্রোসিডা, ইতালি
ইতালির দক্ষিণ অংশে নেপলসের উপসাগরে অবস্থিত, প্রোসিডা দ্বীপ। এটি মূল ভূখণ্ডে ইসচিয়া দ্বীপ এবং কেপ মিসেনোর মধ্যে অবস্থিত। সর্বোচ্চ বিন্দু সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৫০ ফুট (৭৬ মিটার) উপরে অবস্থিত। এটির সংলগ্ন ভিভারা দ্বীপ, আগ্নেয়গিরির উত্স থেকে, চারটি বিলুপ্তপ্রায় গর্তের সমন্বয়ে গঠিত। দ্বীপের পূর্ব দিকে অর্ধচন্দ্রাকার আকৃতির উপসাগর বয়ে গিয়েছে। এই দ্বীপের একমাত্র শহর হল প্রোসিডা। দ্বীপের মাটি খুবই উর্বর এবং আঙ্গুর ও সাইট্রাস ফলের ফলন বেশি হয়; প্রচুর পরিমাণে মাছ ধরা যায়।
এই নান্দনিক দ্বীপ বিশ্বের সেই জায়গাগুলির মধ্যে একটি যা আক্ষরিক অর্থেই আপনার মন কেড়ে নিবে। আপনি এই দ্বীপে যেখানেই যাবেন, প্যাস্টেল এবং উজ্জ্বল রঙের বিভিন্ন শেডের সুন্দর মনোমুগ্ধকর রঙিন বাড়ি এবং ভবন দেখতে পাবেন।
এই দ্বীপে ঘুরাঘুরি করার মত অনেক স্থান রয়েছে। আপনি যদি উপকূল বরাবর গাড়ি চালান, তাহলে রঙিন ছোট্ট শহরের অপরূপ বায়বীয় দৃশ্য দেখতে পারবেন। যা এই জায়গাটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। বাড়িগুলি একটি আরেকটির উপর তৈরি করা যা শহরটিকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
রঙিন ঘর বাড়ি ছাড়াও এখানে আছে আইসো লা ভিভেরা যা একটি সংরক্ষিত অর্ধচন্দ্রাকৃতির দ্বীপ। এটি একটি দীর্ঘ সেতু দ্বারা প্রোসিডার সাথে যুক্ত। আইসো লা ভিভেরা ব্যক্তিগত মালিকানাধীন হলেও সপ্তাহে কয়েকবার দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকে।
ব্রাইগেন, নরওয়ে
ব্রাইগেন দক্ষিণ-পশ্চিম নরওয়েতে অবস্থিত একটি বন্দর নগরী। এই শহর নরওয়ের প্রধান বন্দর এবং ব্যবসায়িক অঞ্চল যা বাই ফজর্ডের দিকে, একটি উপদ্বীপে অবস্থিত। উত্তরে ভগেনের ইনলেট এবং পোতাশ্রয় (ছোট জাহাজের জন্য) এবং দক্ষিণে পুড্ডে বে (বড় জাহাজের জন্য) এবং স্টোর লুঙ্গেগার্ডস লেক দ্বারা আবদ্ধ।
ব্রাইগেন নরওয়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর যেখানে পাথর এবং কাঠের ঘরগুলি হরেক রঙে সজ্জিত। ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষিত ব্রাইগেনের হ্যানসেটিক ওয়ার্ফ এলাকা যেখানে ধনী ব্যবসায়ীরা তাদের বাসস্থান তৈরি করেছিল। আবাসিক বাড়িগুলি পাহাড়ের ধারে বিন্দু আকারে যুক্ত এবং মাঝে মাঝে অত্যন্ত সংকীর্ণ কব্লিড লেন, যেমন ওয়েসেনবার্গসমাউয়েট বা স্টেইনকজেলারগেটেনের মাধ্যমে জলপ্রান্তরের সাথে সংযুক্ত থাকে।
অপরূপ এই বন্দর শহরের সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করতে চাইলে, ক্যাবল কারের মাধ্যমে উলরিকেন পর্বতের উপরে যেতে হবে কিংবা ফানিকুলার হয়ে ফ্লোয়েন পর্বতে যেতে হবে যা একেবারেই উঁচু নয়।
ব্রাইগেনে আছে কয়েকটি মিউজিয়াম। হান্সিয়েটিক মিউজিয়াম, পুরাতন ব্রাইগেন মিউজিয়াম, কোড মিউজিয়াম। এছাড়াও পর্বতে হাইকিং করতে ভালোবাসলে হাইকিং করতে পারেন উল্কেরাইন পর্বতে। মাছ খাদক হলে চলে যেতে পারেন মার্কেট স্কয়ারে, যেখানে স্থানীয়রা মাছ বিক্রি করে।
মেন্টন, ফ্রান্স
দক্ষিণ-পূর্ব ফ্রান্সে অবস্থিত রঙিন শহর হচ্ছে মেন্টন। সড়কপথে মন্টে-কার্লো থেকে ৬ মাইল উত্তর-পূর্বে ইতালীয় সীমান্তের কাছে অবস্থিত। এটি ফরাসি রিভেরার কোট ডি আজুরের উষ্ণতম শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন অঞ্চল। শহরটি যেন একটি পাথুরে অ্যাম্ফিথিয়েটারের নীচে দাঁড়িয়ে আছে।
একটি প্রশস্ত অর্ধচন্দ্রাকার উপসাগর বরাবর যা একটি স্পার দ্বারা বিভক্ত এবং কেপ মার্টিন দ্বারা দক্ষিণ-পশ্চিমে আবদ্ধ শহর মেন্টন। উপকূল বরাবর পর্যটকদের কোয়ার্টার, গ্রীষ্মমন্ডলীয় বাগান, বিলাসবহুল হোটেল, প্রশস্ত প্রমোদ নাদ এবং মিউনিসিপ্যাল ক্যাসিনো রয়েছে।
একটি কৃত্রিম বালির সৈকত পুরানো বন্দর এবং গারাভান উপসাগরের নতুন ইয়ট মেরিনার মধ্যে অবস্থিত মেন্টন। মেন্টনের পুরানো ১৭শ শতাব্দী সরু খিলানযুক্ত রাস্তাগুলি গারাভান উপসাগরের উপরে একত্রে আবদ্ধ। ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, শহরটি একটি সম্ভ্রান্ত জেনোজ পরিবার, ১৪শ শতাব্দীতে মোনাকোর প্রভু গ্রিমাল্ডিস দ্বারা কেনা হয়েছিল। ১৮৬০ সালে মেন্টন ফ্রান্স কিনে নেয়।
মেন্টনের সমস্ত বিল্ডিং রৌদ্রের রঙে রাঙানো। হলুদ থেকে পোড়া কমলা এবং নরম লাল এবং গোলাপী রং এমন কোনও রং নেই যা ব্যবহার করা হয়েছে। এতে করে একটি ছবি তৈরি হয়েছে যা সমুদ্র থেকে দেখা গেলে বিশেষভাবে চিত্তাকর্ষক লাগে। ফেব্রুয়ারী মাসে বার্ষিক লেমন ফেস্টিভ্যাল উদযাপন করা হয়। তখন সারা শহরকে আরও বেশি হলুদ এবং কমলা রঙ দ্বারা সাজানো হয়।
জাজকার, স্পেন
স্পেনের আন্দালুসিয়ান অংশে অবস্থিত জাজকার গ্রাম, যা স্মারফ গ্রাম নামে পরিচিত। অবাক লাগলেও সত্য যে পুরো গ্রামটির সব ঘরবাড়ি নীল রঙের। কারন জানলে আরও অবাক হবেন সনি পিকচার্স তাদের একটি সিনেমা প্রচার করতে গ্রামটির সব ঘরবাড়ি উজ্জ্বল নীলে রঙ করেছে।
সিনেমা প্রচার করতে. যদিও এটি মূলত অস্থায়ী হওয়ার কথা ছিল কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের ঘরবাড়ি স্থায়ীভাবেই নীল রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারন তারা মনে করে এতে করে এই গ্রাম আরও বেশি সংখ্যক পর্যটকদের আকর্ষণ সৃষ্টি করেছে।
যদিও স্মারাফ নির্মাতাকে আয়ের রয়্যালটি হিসাবে গ্রামবাসীদের ১২% দিতে হয়েছিল। ২০১৭ সালে যা বেশ বিতর্কিত হয়েছিল। গ্রামটি এখন অফিসিয়ালভাবে ব্লু ভিলেজ নামে পরচিত। যদিও স্মারফ চিত্রগ্রহণের ভেস্টেজ এখনও দেখা যায়। এর মধ্যে রয়েছে একটি .৭ ফুটের প্লাস্টিকের স্মারফ, যা পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। সবাই এই গ্রামে এলে এখানে সেলফি তুলবেই। আপনিও যদি কোনদিন যান তবে সেলফি তুলতে ভুলবেন না।
শহরের প্রধান উৎসবগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে ভার্জেন দেল মোক্লোনের সম্মানে অনুষ্ঠান যা আগস্ট মাসে উদযাপিত হয়। সান জোসের দিন, খোলা আকাশে নাচ হয়ে। যা রাতে উদযাপিত হয়।
পোর্টমেইরিওন, ওয়েলস
পোর্টমেইরিওন উত্তর ওয়েলসের গুইনেডের একটি পর্যটন গ্রাম। ১৯২৫ থেকে ১৯৭৫ সালের মধ্যে স্যার ক্লাউ উইলিয়ামস-এলিস ইতালীয় গ্রামের আঙ্গিকে ডিজাইন এবং নির্মান করেছিলেন। বর্তমানে এটি একটি দাতব্য ট্রাস্টের মালিকানাধীন। ডোয়াইরিড নদীর মোহনায়, পোর্টমডোগ থেকে ২ মাইল দক্ষিণ পূর্বে এবং মিনফোর্ড রেলওয়ে স্টেশন থেকে ১ মাইল দূরে অবস্থিত।
পেনরাইন্ডেউড্রেথ সম্প্রদায়ের বসবাস ছিল এখানে। পোর্টমেইরিয়ন অসংখ্য চলচ্চিত্র এবং টেলিভিশন অনুষ্ঠানের লোকেশন হিসেবে কাজ করেছে, ৬০-এর দশকের টেলিভিশন শো দ্য প্রিজনার-এ “দ্য ভিলেজ” হিসেবে সবচেয়ে বেশি পরিচিতি লাভ করেছিল।
গ্রামে একটি হোটেল রয়েছে যেখানে নোয়েল কাওয়ার্ড বিখ্যাতভাবে ব্লিথ স্পিরিট লিখএছেন। এছাড়াও প্লাজা, গীর্জা, বাগান, প্যাস্টেল-পেইন্ট করা বাড়ি, দোকান ইত্যাদি আছে। মূলত একটি ইতালীয় গ্রামে যা যা থাকে তা এখানে আছে। যদিও উইলিয়ামস-এলিস পোর্টোফিনো দ্বারা অনুপ্রাণিত হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন, তবুও এতে কোন সন্দেহ নেই যে পোর্টমেইরিওন একটি ইতালীয় শহরের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে।
যা বহু লেখক এবং চলচ্চিত্র প্রযোজকদের অনুপ্রাণিত করেছে, অনেক চলচ্চিত্র এবং টিভি সিরিজ এখানে চিত্রায়িত হয়েছে। যেসকল স্থানে ঘুরতে পারেন- লেচয়েন, সেন্ট্রাল পিয়াজ্জা, কুয়ায়সাইড, ব্যাটারি স্কয়ার, পোর্টমেইরিওন পটারি ইত্যাদি।
রোক্ল, পোল্যান্ড
শহরটি পোল্যান্ডের পশ্চিমাঞ্চলের সবচেয়ে বড় শহর। ওদের নদীর তীরে অবস্থিত এই শহর প্রুশিয়া, পোল্যান্ড, জার্মানি ও বোহেমিয়ার দ্বারা কয়েক শতক ধরে শাসিত হয়েছে। ১৯১০ সাল নাগাদ এর অধিবাসীদের সংখ্যা ৫০০০০০ এরও বেশি ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসিরা শহরটিকে পুনরুদ্ধার করে মে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত দখল করে রেখেছিল, যখন সোভিয়েত সৈন্যরা অবশিষ্ট জার্মান বাহিনীকে পরাজিত করেছিল।
শহরের জার্মান বাসিন্দারা ১৯৪৪-১৯৪৫ সালের সময় পশ্চিমে পালিয়ে গিয়েছিল এবং পরবর্তীতে বাকিদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তারপর থেকেই সেখানে একচেটিয়াভাবে পোলিশ জনগণের বসবাস ছিল। ১৯৪৫ সালে এই শহর পোল্যান্ডের অন্তর্ভূক্ত হয়। এই শহরে ওল্ড টাউন হল, সেন্ট এলিজাবেথের গীর্জাসহ আরও অনেক আকর্ষণীয় দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এছাড়া এই শহরে রয়েছে চিড়িয়াখানা যেখানে দর্শনার্থীরা প্রায় ভ্রমণ করে থাকেন।
সেন্টেনিয়াল হল, রিইনফোর্সড-কংক্রিট স্থাপত্যের একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ যেটি ২০০৬ সালে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট মনোনীত করা হয়েছিল। এছাড়াও এই শহরে রয়েছে চিড়িয়াখানা যেখানে দর্শনার্থীরা প্রায় ভ্রমণ করে থাকেন।
পোল্যান্ডে প্রতিবছর কিছু সঙ্গীত উৎসবের আয়োজন করা হয়। ওডার উৎসবে জ্যাজ সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। ওয়ারাতিস্লাভিয়া ক্যান্টানস একধরনের ওরেটরিও ও ক্যান্টাটা উৎসব যা পোল্যান্ডের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সঙ্গীত উৎসবগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
সিঘিসোয়ারা, রোমানিয়া
ট্রান্সিলভেনিয়ার প্রাণকেন্দ্রে পাহাড় দ্বারা বেষ্টিত, সিঘিসোয়ারা একটি সুন্দর শহর। মধ্যযুগে স্যাক্সন ও জার্মান উপনিবেশবাদীদের দ্বারা শাসিত শহরটিতে বেশ কয়েকবার আক্রমণ হয়েছিল। সিবিউ শহরের উত্তর-পূর্বে ৪০ মাইল (৬৫ কিমি) এবং বুখারেস্ট থেকে ১১০ মাইল (১৭৫ কিমি) উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত। শহরটি একটি পাহাড়কে প্রদক্ষিণ করে, যার চূড়ায় একটি রিং সহ একটি প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত দুর্গ, ঘড়ির টাওয়ার সহ নয়টি টাওয়ার ও বেশ কয়েকটি মধ্যযুগীয় গীর্জা রয়েছে।
শহরটি ১৬ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত হয়। ১৬৭৬ সালে অগ্নিকাণ্ডে বিধ্বস্ত হওয়ার পর শহরের বেশিরভাগ অংশ পুনঃনির্মাণ করতে হয়েছিল। শহরটি ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান করে নিয়েছিল।
আপনি যদি সিঘিসোয়ারার দিকে যান, এই ইউনেস্কো সুরক্ষিত শহরে অনেকগুলি প্যাস্টেল রঙের বাড়িঘর দেখে বিস্মিত না হয়ে পারবেন না! ট্রান্সিলভেনিয়ার শীর্ষস্থানীয় দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে এই মধ্যযুগীয় শহরটিতে অবশ্যই ঘুরতে যাওয়া বাধ্যতামূলক।
ভ্লাদ টেপেস (ভ্লাদ দ্য ইম্পালার বা ড্রাকুলা) এর হোম শহর হিসাবে পরিচিত, এই স্থানটি পর্যটকদের জন্য একটি হটস্পট, বিশেষ করে গ্রীষ্মে পরিদর্শন করার মতো চমৎকার যায়গা এই শহর। এই শহরে গোলকধাঁধার মতো গলিপথে ঘুরে বেড়াতে পারবেন।
Feature Image: Canva.com
তথ্যসূত্র: