যেই মেয়েটা বিষণ্ণ খুব। যেই ছেলেটা একা—
পাহাড়, তুমি তাদের আবার করিয়ে দিয়ো দেখা …– বারিষওয়ালা
রুম নং ১৬১২। রোমের এক আদালতের কোর্টরুম। পুরো কোর্টরুম জুড়ে একটি কিশোরী মেয়ের আওয়াজ ভেসে আসছে। স্পষ্ট করে বললে চিৎকার! “আমি সত্যি বলছি, আমি সত্যি বলছি, আমি যা কিছু বলেছি সব সত্যি। বিশ্বাস করো।” কাঠগড়ায় সাক্ষ্যগ্রহণের জায়গাতে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে প্রতিটি অক্ষরে আর্তনাদ বেরিয়ে আসছে মেয়েটির মুখ থেকে। মেয়েটির হাত রশি দিয়ে বাঁধা। আঙ্গুলগুলো নড়াচড়া করার জায়গা পর্যন্ত নেই। তবুও সে তার প্রতিটি নিপীড়নের কথা অগ্নিবাণরূপী শব্দে নিক্ষেপ করছিল কোর্টরুমের প্রতিটি দেয়ালে।
নাহ! এটা কোনো প্রেমের গল্প নয়। এটা প্রতিদিনের পত্রিকার পাতায় সত্যিকার খবরগুলোরই একটি। একটি ধর্ষণ পরবর্তী আদালত রুমের বাস্তবচিত্র। ধর্ষিতার কাতর চিৎকারে ভেসে গিয়েছিল পুরো কোর্টরুম। আর সামনে অথর্ব বিচারব্যবস্থা দাঁড়িয়ে ছিল প্রহসন সেজে ধর্ষককে সুরক্ষা দিতে! কানুন হাতের রশির মতই শিকল হয়ে দাঁড়ায় মেয়েটির সামনে।
মেয়েটির নাম আর্তেমিশিয়া জিনতেলেস্কি। যে সেই কোর্টরুমে দাঁড়িয়ে ধর্ষকের নির্মমতার বর্ণনা দিয়েছিল প্রতিটি নিঃশ্বাস আর আর্তচিৎকারে। মেয়েটি বলতে থাকে,
“সেদিন বাসায় কেউ ছিলনা। যথারীতি ট্যাসি আমাকে পড়াতে আসে। রুমে ঢুকেই সে আমাকে বাজে ইঙ্গিত দিতে থাকে। হঠাৎ আমাকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দেয়। আমার স্তনের উপর ওর হাত চেপে বসে। ওর হাটুটা আমার দুই উরুর মধ্যখানে রেখে চেপে ধরে আমাকে। জোর করে আমার কাপড় তুলে আমার মুখে একটা রুমাল চেপে ধরে যাতে আমি চিৎকার করতে না পারি! একপর্যায়ে তার মুখে খামচে দেই আমি। হাত দিয়ে ট্যাসির চুল হিঁচকে টান দেই। এমনকি সে যখন তার যৌনাঙ্গটি বের করে আমার শরীরের ভেতরে এনেছিল আমি তার লিঙ্গটি এত শক্ত করে আঁকড়ে ধরেছিলাম যে আমি একখন্ড মাংসের টুকরো সরিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু তাকে দমাতে পারিনি। আমি তাকে একটা ছুরি ছুঁড়ে মেরেছিলাম, যদি পারতাম তখনি তাকে আমি খুন করতাম।”
সেদিন আদালতে ধর্ষিতার পক্ষে থাকেনি কেউ। বিচারক ধর্ষককে মুক্তি দেয়। নিজের বাবার বন্ধু ছিলেন ট্যাসি। ট্যাসিকে রোমের আদালত সম্মানিত করে নিপীড়িত আর্তেমিশিয়াকেই বরং আরেক সামাজিক প্রহসনরূপী বিচার নামক ধর্ষণের সম্মুখীন করে। এমনও গুঞ্জন ছিল ট্যাসি তার স্ত্রীকেও হত্যা করেছে। আর্তেমিশিয়া লাঞ্ছিত হলেও ট্যাসি পুরষ্কৃত হয়েছিল পোপ থেকে। কারণ, পোপের প্রিয়শিল্পীর তালিকায় ছিল ট্যাসির নাম, যে শিল্পীর শিল্প আজ মনে রাখেনি কেউ! পোপের কাছে ট্যাসি ছিল সেসব শিল্পীদের মধ্যে অন্যতম যে কখনো তাকে হতাশ করেনি।
আর্তেমিশিয়া জিনতেলেস্কি এই বিচার শেষে পুরোপুরি ভেঙে যায় মানসিকভাবে, যার কাছে আত্মসম্মান ছিল বাইবেলের মতো। কিন্তু আর্তেমিশিয়া হার মানেনি। সে তার ধর্ষককে শাস্তি দিয়েই ছাড়ে। তার অস্ত্র ছিল একটি পেইন্টব্রাশ! আর আর্তেমিশিয়া জিনতেলেস্কি হলো বোরোক যুগের সেই শক্তিমান বহুল নন্দিত শিল্পী। আর্তেমিশিয়া তার জীবনের নিদারুণ করুণ কাহিনি গল্পের মত লিখে না গেলেও ইতিহাসের পাতায় চিত্রিত করে যায় তার আঁকা এক চিত্রের মধ্য দিয়ে। যাকে আমরা জুডিথ আর হলোফার্নেসের প্রতীকি রূপে দেখতে পাই।
দুইজন মহিলা একজন পুরুষকে বিছানায় চেপে ধরে আছে। একজন মহিলা পুরুষটির মাথার মুঠি চেপে ধরে আছে। যেন সে গদি থেকে উঠতে না পারে। আর অন্য দিকে অপর মহিলাটি লোকটির মুণ্ডপাত করছে এক ধারালো অস্ত্র দিয়ে। তাদের কাছে আরো শক্তিশালী অস্ত্র থাকলেও ঝকঝকে এক ধারালো তলোয়ার দিয়েই পুরুষটির ধড় বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছিলো ছবিতে। গলা থেকে রক্ত ঝরছে। তার মাথা পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন না হওয়া পর্যন্ত মহিলাটি থামবে না। মহিলাটির চোখে এক অসীম মনোবল। লোকটির চোখ বড় বড় আর খোলা। ভয়ে আড়ষ্ট। সে জানে তার সাথে কি ঘটছে!
মৃত ব্যক্তিটি হল হলোফার্নেস, ওল্ড টেস্টামেন্টে ইসরায়েলীদের একজন শত্রু এবং তার শিরশ্ছেদকারী যুবতী হল জুডিথ। তার ঐশ্বরিক নিযুক্ত হত্যাকারী। আর বাস্তবে লোকটি অ্যাগোস্টিনো টাসি নামে একজন ইতালীয় চিত্রশিল্পী। অন্যদিকে তরোয়ালধারী মহিলা আর্তেমিশিয়া জিনতেলেস্কি, যিনি এ ছবিটি এঁকেছিলেন নিজের জীবনের ঘটে যাওয়া ট্রাজেডির ভিলেনের দণ্ড দিয়ে। তাই প্রকৃতপক্ষে এটি একটি স্ব-প্রতিকৃতি।
আর্তেমিশিয়া জিনতেলেস্কির হাতেখড়িটা একদম ছোটবেলায়। তার বাবা ওরাজিও জিনতেলেস্কি। যিনি চিত্রশিল্পী হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন বিশেষ করে পৌরাণিক ও প্রচলিত ইতিহাস অঙ্কনে তার দক্ষতা সুদূরপ্রসারী ছিল। তিনি বিপ্লবী বারোক চিত্রশিল্পী ক্যারাভ্যাজিওর অন্যতম প্রধান অনুসারী ছিলেন। আর্তেমিশিয়ার মধ্যেও তার প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।
আর্তেমিশিয়া ক্যারাভ্যাজিওর নাটকীয় বাস্তববাদের দ্বিতীয় প্রজন্মের একজন গুরুত্বপূর্ণ প্রবক্তা ছিলেন। তার অঙ্কনের মধ্যেও তাই ক্যারাভ্যাজিওর মতের ছাপ পরিলক্ষিত হয়। তার প্রথম আলোচিত কাজ হল সুজানা অ্যান্ড দ্য এল্ডার্স (১৬১০)। এই নিখুঁত কাজটি অনেকদিন ধরে তার বাবার চিন্তার প্রতিফলনের ছবি হিসেবেই ভাবা হতো।
আদালতের নিদারুণ সেই অপমানের পরে আর্তেমিশিয়া রোম ছেড়ে চলে যায় ফ্লোরেন্সে। সেখানে তিনি একজন ফ্লোরেনটাইনকে বিয়ে করেন। ১৬১৬ সালে আর্তেমিশিয়া প্রথম নারী হিসেবে ফ্লোরেন্স একাডেমি অফ ডিজাইনে যোগদান করেন। ফ্লোরেন্সে থাকাকালীন তিনি তার নিজস্ব এক স্বতন্ত্র স্টাইল তৈরি করতে শুরু করেন। সতের শতকের অন্যান্য অনেক নারী শিল্পীর বিপরীতে আর্তেমিশিয়া জীবনপ্রকৃতি এবং প্রতিকৃতির চেয়ে ইতিহাস চিত্রকলায় বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেন।
ফ্লোরেন্সে তিনি মেডিসি কোর্টের সাথে যুক্ত হন এবং কাসা বুওনারোত্তিতে মাইকেল অ্যাঞ্জেলোকে সম্মান প্রদর্শন করে দেয়ালচিত্র সিরিজের জন্য একটি অলিগরি অফ ইনক্লিনেশ আঁকেন। যেটা তাকে তার বাবার চেয়ে অনেক বেশি উজ্জ্বল এবং সপ্রতিভ হয়ে উঠে। আর্তেমিশিয়া কারাভাজিওর জনপ্রিয় করা টেনেব্রিজম স্টাইলটি ব্যবহার করতে শুরু করেন যেটি একদা তার বাবা ব্যবহার করত।
আর্তেমিশিয়া জিনতেলেস্কি শেষ জীবনে কিছু সময়ের জন্য রোমে এবং ভেনিসে যায়। ১৬৩০ সালের দিকে তিনি নেপলসে চলে আসেন এবং ১৬৩৮ সালে তিনি লন্ডনে আসেন। যেখানে তিনি রাজা প্রথম চার্লস এর কাছে নিজের শিল্পপ্রতিভা প্রদশর্নে করেন বাবার সাথে। তারা গ্রিনউইচের কুইন্স হাউসের গ্রেট হলের সিলিং পেইন্টিংগুলিতে সহযোগিতা করেন। ১৬৩৯ সালে আর্তেমিশিয়ার বাবা ওরাজিওর মৃত্যু হয়। এরপর আর্তেমিশিয়া আরও বেশ কিছু বছর লন্ডনে থাকেন। তার জীবনী বালডিনুচ্চিতে পাওয়া তথ্য মতে, তিনি অনেক প্রতিকৃতি এঁকেছিলেন এবং দ্রুত তার বাবার খ্যাতিকে ছাড়িয়ে যেতে সক্ষম হন। পরে সম্ভবত ১৬৪০ বা ৪১ দিকে তিনি নেপলসে স্থায়ীভাবে বাস করেন যেখানে তিনি ডেভিড এবং বাথশেবার গল্পের বিভিন্ন সংস্করণ এঁকেছিলেন। কিন্তু ইতিহাস থেকে তার জীবনের শেষ বছরগুলি সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়!
আর্তেমিশিয়া জিনতেলেস্কির চিত্রের নারী প্রতিচিত্রগুলো একদম যেন আমাদের চারপাশের দেখা চিরায়িত নারীদের মতোই। রূপকথার রাজকন্যা বা মিথের দেবীর মতো রূপ লাবণ্য নয়, বরং সুগঠিত বাহুর হাতে ভরাট শরীর আর চোখে এক তীব্র লক্ষ্য ভর করা। বাস্তবের এক নিগুঢ় প্রতিফলন যেন। যে নারী প্রতিদিন লাঞ্ছিত, নিগৃহীত হয় সমাজে প্রতিটি চলনে। এই প্রসঙ্গে ন্যাশনাল গ্যালারির লেটিজিয়া ট্রেভস জানায়, আর্তেমিশিয়ার চিত্রের প্রতিটি নারীর দিকে তাকালেই রিড করা যায়। তার অঙ্কিত নারীর অবয়বগুলোর মধ্যে এক অদ্ভুত শক্তি প্রকাশ পায়। যা একজন নারী হওয়ার উপলব্ধিকে আরো মজবুতভাবে দেখায়। আর্তেমিশিয়া তার বাবার চাইতেও নারী অবয়ব অপূর্ব দক্ষতায় এঁকেছেন। তিনি সত্যিকারভাবেই একজন মহিলার স্তনের ঝুলতা বা আবরণ নিখুঁতভাবে দেখিয়েছে পৃথিবীকে। আর্তেমিশিয়া একজন মহিলার শরীর কোন পরিস্থিতিতে কীভাবে আচরণ করে তা সম্পর্কে প্রকৃত জ্ঞান রাখেন। ট্রেভস বিশেষভাবে আর্টেমিসিয়ার উম্মুক্ত নারীদেহের উপস্থাপনার প্রশংসা করেন স্থিরচিত্র “ডানা”, যা এখন সেন্ট লুইস আর্ট মিউজিয়ামে রয়েছে।
যে বছর তার জীবনে ট্রাজেডি ঘটে এরপরেই মাত্র সতের বছর বয়সে আর্তেমিশিয়া জিনতেলেস্কি সুজানা চিত্রটি আঁকে। এই চিত্রের প্রেক্ষাপটটি সুজানে এন্ড দ্য এল্ডার যেটি ড্যানিয়েলের বই থেকে নেওয়া। সুজানা, একজন গুণবতী ও সুন্দরী যুবতী। তার বাগানে স্নান করা অবস্থায় দুই বয়স্ক পুরুষ তাকে উঁকি মেরে দেখতে থাকে। কিন্তু এই দুই পুরুষ হঠাৎ তাকে ঘিরে ধরে, ধর্ষণের জন্য চেষ্টা করে। তাকে হুমকী দেয় যদি সে প্রতিরোধ করে, তাহলে সবাইকে এই বলে কুৎসা রটাবে যে তারা তাকে প্রেমিকের সাথে ধরেছে।
গল্পটি চিত্রশিল্পীদের মাঝে সমাজব্যবস্থা দেখানোর এক অপ্রতিরোধ্য সুযোগ এনে দেয়। টিনটোরেট্টো দৃশ্যটি বেশ কয়েকবার চিত্রিত করেছেন; যা ভিয়েনার কুন্সথিস্টোরিচেস মিউজিয়ামে ঝুলছে, তিনি সুজানাকে নির্মল এবং বিমূর্ত হিসাবে উপস্থাপন করেন। কিন্তু সুজানাকে সবচেয়ে চমৎকার করে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয় আর্তেমিশিয়া জিনতেলেস্কি। তখন তার বয়স ছিল সতের।
আর্তেমিশিয়ার চিত্রে দেখা যায় একটি সিড়িঘরের আড়াল থেকে দু’জন পুরুষ সুজানার স্নানে বাধা দেয়। ছবিতে সুজানার মাথা এবং তার শরীরের উম্মুক্ত অগ্রভাগ। একদিকে প্রতিহতের জন্য সে পুরুষ দুজনের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয় ঢালের মতো করে। আশ্চর্যজনকভাবে, তার অন্য হাতটি দিয়ে মুখ ঢেকে রাখে। সম্ভবত এখানে সুজানা চায় না যে পুরুষরা তাকে চিনতে পারুক বা তার যন্ত্রণা দেখুক; অর্থাৎ এটাও বলা যায় যে এখানে সুজানা নিপীড়কের মুখ দেখতে চায়না। যার জন্য এই পেইন্টিংটি রচনা, সম্পাদনা এবং মনস্তাত্ত্বিক অন্তর্দৃষ্টিতে কিশোর বয়সে একটি মেয়ের জন্য অসাধারণ উপলব্ধির বিষয়। এইজন্য ১৯৮৯ সালে মেরি গ্যারাট আর্তেমিশিয়াকে “আর্তেমিশিয়াঃ দ্য ইমেজ অফ ফিমেল হিরো ইন ইতালিয় বোরোক আর্ট” নামে উপাধি দেন।
১৬১৩ থেকে ১৬১৮ সালের মধ্যে আর্তেমিশিয়া পাঁচ সন্তানের জননী হয়। তার সন্তানদের মধ্যে তিনজন শিশু অবস্থায় মারা যায়। চতুর্থ জন ক্রিস্টোফেন বয়স পাঁচ হলে মারা যায়। একটামাত্র মেয়ে বেঁচে থাকে শেষে, যার নাম আর্তেমিশিয়ার মায়ের নামে রাখা হয়। এমন পরপর সন্তান প্রসবের পরে হারানোর নজিল ইতিহাসে বিরল। তার সন্তানদের জন্মের বিশ বছর পরে “দ্য বার্থ অফ সেইন্ট ব্যাপ্টিস” ছবিটি আর্তেমিশিয়াকে আঁকার জন্য স্পেনের চতুর্থ ফিলিপের কাছ থেকে অনুরোধ করা হয়।
অনেক শিল্পী এই দৃশ্যটি এঁকেছিলেন, কিন্তু আর্তেমিশিয়ার অঙ্কনটি আঁতুরঘরের দৃশ্য এমনভাবে দেখানো হয়, যেখানে ধাত্রীদের দারুণ শৈল্পিক ভাবে দেখাতে সক্ষম হয়। নিজের জীবনের চিত্রায়ণ যেন ভেসে আসে ছবিতে। হাত উপরে ঠেলে, শিশুর প্রতি যত্নশীল যখন তার মা। চিত্রে দেখা যায় এলিজাবেথ শুয়ে আছে। ক্লান্ত, আবছা পটভূমিতে এক অপূর্ব দৃশ্যয়ান।
আর্তেমিশিয়ার আরেকটি কাজ যা কিছুদিন আগে ফ্রান্সে ব্যক্তিগত সংগ্রাহক একজন থেকে পাওয়া যায় “মেরি ম্যাগডালিন ইন এক্সট্যাসি”। ছবিতে দেখা যায় স্বেচ্ছায় হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ অবস্থায় আলোর দিকে উন্নীত এক নারী মুখ। পরনে একটা সিল্কি সাদা কামিজ প্রশস্ত কাঁধ থেকে অসতর্কভাবে পরে যাচ্ছে। এই পেইন্টিংটি মেরি ম্যাগডালিনকে এমনভাবে চিত্রিত করে যেখানে নারীর কামউত্তেজনা অদ্ভুত ভাববাদের মধ্য দিয়ে দেখানো হয়। আর্তেমিশিয়ার আঁকা বেশ কিছু কাজ রাজকীয় সংগ্রহশালাতে রয়েছে। তার মধ্যে “লা পিতুরা” উল্লেখযোগ্য। এই জাতীয় কাজগুলি ঐতিহ্যগতভাবে রূপক চিত্রকলাকে একজন মহিলার অবয়বে চিত্রিত হয়।
এখানেই আর্তেমিশিয়ার বিজয়। যে নিজেকে, তার কষ্টকে, তার জীবনকে চিত্রিত করেছে মিথের অন্তরালে বাস্তবতার ভিত্তিতে। সম্পূর্ণ দু’টো ভিন্ন উপাদানকে এক করেছে জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে। আজো প্রতিটি নারী জুডিথ হয়ে উঠে এমনি হলোফার্নেস দেখে। আর্তেমিশিয়া জিনতেলেস্কি আধুনিক যুগে এসে এতটাই স্পষ্ট আয়না প্রতিটি নারীর কাছে। নারী হওয়ার সমস্ত কষ্ট শক্তি হয়ে উঠে রূপকের মতো আর্তেমিশিয়ার চিত্রে। যেখানে এখনো প্রতিটি দামিনী হারিয়ে যায় প্রেম আর ভালবাসাহীন এই নগরীর প্রতিটি বর্বরতায়, সেখানে বোরোক যুগের শিল্পী আর্তেমিশিয়া জিনতেলেস্কি এখনো আলোর মতোই দীপ্তিময়।
ফিচার ইমেজঃ Financial Times
তথ্যসূত্রঃ
১) Artemisia-Gentileschi
২) Artemisa-gentileschi-painter-beyond-caravaggio
৩) A fuller picture of artemisa gentileschi
৪) Artemisia gentileschi
অসাধারণ, অসাধারণ এবং অসাধারণ। এই প্রথম এই বিষয়ে আর্টিকেল পড়লাম। গল্পের মতোই এগোলো প্রতিটি ঘটনা। লেখিকার আবেগ লেখার মধ্যে ভেসে উঠছে চমৎকার ভাবে। শুভকামনা এবং দোয়া রইলো।
পাহাড়, দেখা করিয়ে দিক বিষণ্ণ আর একাকিত্বকে। চমৎকার পরিবেশনা।
বিবেক নাড়িয়ে দিল লেখাটায়। চমৎকার একটা টপিক্সে অনবদ্য আলোচনা। বিশেষ করে বোরোক যুগের শিল্পীর এ চিত্রায়ণ! অসম্ভব ভাল লাগলো।
ভীষণ রকমের ভাল লাগলো। এই প্রথম পড়লাম এটা নিয়ে। অনেক কিছু জানলাম। আমাদের প্যারিসকে ধন্যবাদ এমন টপিক্সে লেখা পড়ার সুযোগ দানের জন্য পাঠককে।
লেখাটা পড়ে স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। আর্তেমিশিয়া জিনতেলেস্কি ❤️
ধারালো একটি লেখা যা অজানা ই ছিল এতকাল l লেখিকাকে ধন্যবাদ লেখার জন্য একটি উল্ল্যেখ যোগ্য বিষয়কে প্রাধান্য দেবার জন্য l