ইংল্যান্ডের রাজশিশুরা যেসব অদ্ভুত নিয়মের মাঝে বড় হয়!

760
0

ব্রিটিশ রাজ পরিবার নিয়ে সাধারণ মানুষের জানার আগ্রহের শেষ নেই। রাজ পরিবারটির প্রতিটি সদস্যের আচরণে ছোট থেকেই প্রকাশ পায় ব্যক্তিত্বের পরিচয়। এজন্য কিন্তু খুব ছোট থেকেই রাজ পরিবারের শিশুদের বিভিন্ন নিয়মের মাঝে বড় হতে হয়। এমনকি নবজাতক শিশুর জন্যেও রয়েছে বিভিন্ন নিয়ম। ইংল্যান্ডের রাজ শিশুরা যেসব অদ্ভুত নিয়মের মাঝে বেড়ে উঠে তাই নিয়ে সাজানো হয়েছে আজকের আয়োজন।  

জম্মের পর জনসাধারণের উদ্দেশ্যে ঘোষণাপত্র  

রাজ সন্তানদের জন্মের দিন থেকেই বিভিন্ন নিয়মের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। ঐতিহ্য অনুসারে, রাজ পরিবারে নতুন শিশু জন্মের পর সবার আগে রাণীকে জানানো হয়। এরপরই চিকিৎসকদের স্বাক্ষরিত একটি রাজকীয় ঘোষণাপত্র বাকিংহাম প্যালেসের মূল ফটকের বাইরে ঝুলিয়ে দেয়া হয়। যেন জনসাধারণ রাজপরিবারের নতুন সদস্যের আগম বার্তা জানতে পারে। 

তোপধ্বনি ও আলোকসজ্জায় পরিবর্তন 

রাজ পরিবারের নতুন সদস্যকে সম্মান জানাতে ৬২ বার লন্ডন টাওয়ার থেকে তোপধ্বনি করা হয়। এছাড়াও, আলোকসজ্জায় আনা হয় ব্যাপক পরিবর্তন। রাতের শহর সেজে উঠে নতুন রঙে আর ঢঙে। বাকিংহাম প্যালেসের কাছেই অবস্থিত গ্রিন পার্ক থেকে ৪১ বার তোপধনি দেওয়া হয় রাজ পরিবারের নতুন সদস্যের আগমনীকে কেন্দ্র করে। 

খ্রিস্টীয়করণ অনুষ্ঠান

রাজ শিশুর জম্মের কয়েক সপ্তাহ পর তার খ্রিস্টীয়করণ অনুষ্ঠান পালন করা হয়। যার মূল দায়িত্ব পালন করেন ইংল্যান্ডের প্রধান চার্চ। ক্যান্টাবেরির আর্চবিশপ জাস্টিন ওয়েলবি জর্জ ও শার্লটকে করেছেন খ্রিস্টীয়করণ। 

Image source: Etonline.com

নামকরণ অনুষ্ঠানে হ্যানিটন গাউন পরিধান 

রাণী ভিক্টোরিয়া তার প্রথম সন্তানের নামকরণের জন্য হ্যানিটন গাউনটি ব্যবহার করেছিলেন। এরপর থেকেই মূলত এটি ঐতিহ্যের একটি অংশতে পরিণত হয়। তাই, রাজপরিবারের প্রতিটি নতুন সদস্যকে এই গাউন পরে নামকরণ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে হয়। তবে আর্চি হ্যারিসন মাউন্টব্যাটেন-উইন্ডসর, প্রতিরূপ গাউন পরে ছিলেন। কারণ, পূর্বের হ্যানিটন গাউনের অবস্থা  এখন শোচনীয়। 

অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ

প্রতিটি বিশেষ অনুষ্ঠানে রাজ পরিবারের শিশুদের অংশ নিতে হবে। তারা যদি অসুস্থ থাকে কিংবা যেতে আগ্রহী না থাকে তারপরেও তাকে উপস্থিত থাকতেই হবে সব রাজকীয় আয়োজনে। এই নিয়মের মাধ্যমে ছোট থেকেই শিশুদের শেখানো হয় জনসম্মুখে তারা কেমন আচরণ করবে। সারা বছর জুড়েই বিয়ে, বাগদান, রাণীর জম্মদিনের মতো বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে থাকে রাজ পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্যরা। 

গ্রানমা ডাকা যাবে না

রাজ পরিবারের নিয়ম অনুযায়ী রানীকে তার নাতি-নাতনিরা গ্রানমা বা বাংলায় দাদী বলে ডাকতে পারবে না। তারা রানীকে ‘গ্র্যানি’ বা ‘গ্যান-গান’ বলে সম্বোধন করে থাকে। ব্রিটিশ প্রত্রিকা ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রিন্স উইলিয়াম রাণীকে ‘গ্যারি’ বলে ডাকতেন। 

শিশুদের পাসপোর্ট 

রাজ শিশু বলে তারা পাসপোর্ট ছাড়া বাবা-মায়ের সাথে ঘুরতে পারবে এটি যদি ভেবে থাকেন, তাহলে একেবারেই ভুল ভাবছেন। জম্মের পরই রাজ পরিবারের শিশুদের পাসপোর্ট করা হয়। কারণ, যে কোন মুহূর্তে আন্তর্জাতিকভাবে ভ্রমণের অংশ নিতে হয়  শিশুদের। তাই ছোট থেকেই এই ব্যবস্থা। 

ড্রাইভিং লাইসেন্স

ইংল্যান্ডে রাণী একমাত্র ব্যক্তি যিনি ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানোর অনুমতি পান। এছাড়া, রাজ পরিবারের বাকি সব সদস্যদের ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হয়। ড্রাইভিং টেস্ট দিতে হয় এবং পাস করার পরই তাকে লাইসেন্স দেওয়া হয়। 

Image source: Marieclaire.com

রাজকীয় সফরে পিতামাতার সাথে যোগ দিতে হবে

এই নিয়মের ক্ষেত্রে শিশুর বয়সের কোন হিসেব নেই। যখন শিশুদের বাবা -মা রাজকীয় সফরে যাবেন, বাচ্চাদের সাথে যেতে হবে। মেগান এবং হ্যারির একমাত্র পুত্র অর্চি মাত্র চার মাস বয়সেই দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যোগ দিয়েছিল।   

দুই সহোদর একসাথে ভ্রমণ করতে পারে না 

শুনতে অবাক লাগলেও রাজ পরিবারের উত্তরাধিকারদের সুরক্ষার জন্যই দুইজন উত্তরাধিকারী একসঙ্গে বিমানে ভ্রমণ করতে পারে না। তবে যদি রাণী অনুমতি দেন সেক্ষেত্রে একসাথে তারা যেতে পারবে। অনেক সময় দেখা যায়, রাজ পরিবারের অনেক সদস্য তাদের সন্তানদের নিয়ে সফরে যায়, এক্ষেত্রে তারা রাণীর অনুমতি নিয়েই গিয়েছেন। 

ভিন্ন ভাষায় দক্ষতা 

রাজপরিবারের নিয়ম অনুযায়ী, ছোট থেকেই শিশুদের মাতৃভাষার পাশাপাশি অন্য ভাষাও শেখানো হয়। এরই ধারাবাহিকতা থেকেই রাণী এলিজাবেথ, প্রিন্স চার্লস এবং প্রিন্স উইলিয়াম সবাই ফরাসি ভাষায় সাবলীল। এবং এই নিয়ম এখনো বিরাজমান। ইতিমধ্যেই, ডাচেস অফ ক্যামব্রিজ তার সন্তানদের স্প্যানিশ শেখানো শুরু করেছিলেন যখন প্রিন্স জর্জের বয়স ছিল মাত্র দুই বছর। তখন থেকেই তার ভাষা শিক্ষা চালু হয়।

পোশাক 

হাল ফ্যাশনের কত ধরণের পোশাক পাওয়া যায় এখন। কিন্তু রাজ পরিবারের মেয়ে বাচ্চারা সব পোশাক পরতে পারে না। সাধারণত গাউন, ফ্রক জাতীয় পোশাক পরতে হয়। একারণেই টপস জাতীয় কোন পোশাক রাজকীয় সদস্যরা পরে না। তবে মজার ব্যাপার হলেও সত্যি, রাজ পরিবারের ছেলে শিশুরা জনসম্মুখে শর্টস পরতে পারে।

প্রাসেদের বাইরেও খেলাধুলা

মুক্ত পরিবেশেই শিশুদের বিকাশ হয়। এই কথা ভেবেই শিশুরা যাতে বাইরে খেলাধুলা করতে পারে সেই বিষয়টিতে বিশেষভাবে জোর দেওয়া হয়েছে। শিশুরা বাইরের প্রকৃতির সাথে সহজেই মানিয়ে নিতে পারে। প্রায়ই দেখা যায়, রাজ পরিবারের শিশুরা প্রাসাদের বাইরেও খেলছে।

নিজেস্ব শেফের তৈরি খাবার 

রাজকীয় শিশুরা কখনোই টিনজাত শিশু খাদ্য খায় না। তাদের সবার জন্যই, ব্যক্তিগত শেফ রয়েছে। শিশুদের উপযোগী  পুষ্টিকর মজাদার খাবার তৈরি করেন রাজকীয় শেফরা। প্রাক্তন রাজকীয় শেফ ড্যারেন ম্যাকগ্র্যাডি প্রিন্স উইলিয়াম এবং হ্যারির শেফ হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। 

ঝিনুক নিষিদ্ধ  

শুধু শিশু নয়, রাজ পরিবারের কোন সদস্যই ঝিনুক খেতে পারবে না। এটা বলতে গেলে নিষিদ্ধ তাদের জন্য। কারণ ঝিনুকে অনেক সময় বিষক্রিয়া হয়।  রাজ পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্যের কথা ভেবেই এই নিয়ম চালু আছে। 

Image source: Mylondon.news

শিক্ষা ব্যবস্থা 

অতীতে রাজ শিশুরা ব্যক্তিগতভাবে গৃহশিক্ষকদের মাধ্যমে ঘরে বসেই শিক্ষা গ্রহন করেছে। এই নিয়মের  ভেতরে থেকেই শিক্ষা গ্রহণ করেছেন রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। কিন্তু, প্রিন্স চার্লস থেকে নিয়মের পরিবর্তন আসে। তার সময় থেকেই রাজ শিশুরা স্কুলে গিয়ে পড়াশুনা করেছে। জর্জ ও শার্লট ইতিমধ্যেই স্কুলে যোগ দিয়েছে।  

মনোপলি  খেলার অনুমতি নেই

রাজ পরিবারের কোন সদস্যই মনোপলি গেমটি খেলতে পারে না। এই গেমটি ব্রিটেন রাজ পরিবারে খেলা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কারণ অতীতে এই গেম খেলার সম্য সদস্যদের মাঝে প্রতিযোগিতা দেখা গিয়েছে। তাই কোন শিশুকেই আপনি এই খেলা করতে দেখবেন না। 

রাজকীয় বিয়ের অনুষ্ঠানে যুক্ত থাকা  

রাজ পরিবারের নিয়ম অনুযায়ী রাজকীয় বিয়ের অনুষ্ঠানে রাজ পরিবারের শিশু সদস্য হিসেবে শিশুদের পেজ বয় অথবা ফ্লাউয়ার গার্লের দায়িত্ব পালন করতে হয়। সম্প্রতি, প্রিন্স জর্জ এবং প্রিন্সেস শার্লট প্রিন্স হ্যারি এবং মেগান মার্কেল বিয়েতে অংশ নিয়েছিল।  

Image source: Mylondon.news

আয়া নিযুক্ত 

রাজ পরিবারের সব সদস্যই অনেক ব্যস্ত সময় পার করেন। শিশুদের বাবা-মায়েরা বিভিন্ন কাজের সাথে যুক্ত থাকায় তারা সবসময় শিশুদের দেখাশোনা করতে পারেন না। রাজকীয় শিশুদের যত্নের যাতে কোন সমস্যা না হয় তাই রাজকীয় ন্যানি বা আয়া নিযুক্ত করা হয়। তাদেরকে অনেক বেশি দক্ষ হতে হয় শিশু লালন পালন করার বিষয়ে।

কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা 

রাজপরিবারের কনিষ্ঠ সদস্যদের জন্য কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। শিশুদের সুরক্ষার জন্য প্রাসাদে অতিরিক্ত নিরাপদ রাখতে প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেন নিরাপত্তা কর্মীরা। কোনভাবেই যাতে রাজকীয় শিশুরা অনিরাপত্তায় না পরে তা নিয়ে কঠোর নজরদারি চলতে থাকে।  

শুভেচ্ছা উপহার গ্রহণ 

রাজপরিবারের কনিষ্ঠ সদস্যরা মধ্যমনি সবার কাছে। সবাই তাদের ভালোবাসে তাই তারা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন শুভেচ্ছা উপহার পান। রয়াল পরিবারের নিয়ম অনুযায়ী, শিশু সদস্যদের শুভেচ্ছা উপহার সামগ্রী গ্রহণ করতে হবে। এর মাধ্যমে তারা সম্মান জানিয়ে থাকেন যিনি শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন তাকে। 

উপহার বিষয়ে রানীর সিদ্ধান্ত

যেহেতু রাজকীয় সদস্যরা তাদের বাবা-মায়ের সাথে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে থাকেন এবং তারা সাধারণ মানুষ থেকে ক্ষমতাশীল সব শ্রেণীর মানুষের কাছ থেকেই উপহার পায়। তবুও রাজকীয় প্রটকল অনুসারে, রানী সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন শিশুরা কোন উপহার তাদের কাছে রাখতে পারবে। এই বিষয়ে রানীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।  

Image source: Rd.com

দিনের বেলা কালো পোশাক নয়

রাজপরিবারের নিয়ম অনুযায়ী, দিনের বেলায় কালো পোশাক পরিধান করা যাবে না। কারণ কালো রঙ শোক প্রকাশ করে। এই নিয়ম মেনে চলতে হয় খুদে সদস্যদের সবাইকেই। তবে রাতে তারা কালো রঙ পরতে পারে।  

ভ্রমণে কালো পোশাক

ব্রিটিশ রাজ পরিবারের সকল সদস্যদের কালো পোশাক পরে ভ্রমণ করতে হয়। এর কারন যদি পরিবারের অথবা কোন সম্মানিত ব্যক্তি অপ্রত্যাশিতভাবে মারা যান তারা দূরে থাকা অবস্থায় তাই। মৃত ব্যক্তির প্রতি শোক প্রদর্শন করতেই এই নিয়ম। রাণী  এলিজাবেথ এই নিয়মটি চালু করেছিলেন যখন তিনি আফ্রিকা ভ্রমণে ছিলেন আর তার বাবা মারা যান। 

সামরিক বাহিনীতে যুক্ত

ঐতিহ্য অনুসারে, রাজপরিবারের ছেলে সদস্যরা ভবিষ্যতে সামরিক বাহিনীর কাজে যুক্ত হবে বলে মনে করা হয়। প্রিন্স চার্লস তার বাবার মতো নৌবাহিনীতে যোগ দিয়েছে। প্রিন্স উইলিয়াম বিমান বাহিনী আর প্রিন্স হ্যারি সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। 

 

Feature Image: Goodto.com
তথ্যসূত্র:
01. 40 Rules You Probably Didn’t Know Royal Children Have to Follow.
02. 40 Strict Rules The Royal Children Have To Follow