রোম: প্রাচীন এক শহরের ইতিকথা (প্রথম পর্ব)

2863
0

খিষ্ট্রপূর্ব অষ্টম শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে ইতালির তিবের নদীর কোলঘেষা এক ছোট্ট গ্রাম্য শহর থেকে রোমের যাত্রা শুরু হয়েছিল। সেই ছোট্ট গ্রাম্য শহরটাই একটা সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন করেছিল। যেই সাম্রাজ্যের প্রভাব ইউরোপ মহাদেশ ছাড়িয়ে পশ্চিম এশিয়া, উত্তর আফ্রিকা এবং ভূমধ্যসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ অবধি বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছিল। রোমান সাম্রাজ্য ভাষা, সংস্কৃতি, জ্ঞান-বিজ্ঞানসহ সমস্ত শাখায় যেভাবে নিজেকে মেলে ধরেছিল আর ইতিহাসে তাদের যা অবদান, তা এককথায় অনন্য। লাতিন ভাষা থেকে উদ্ভূত রোমান ভাষা (ইতালিয়ান, ফরাসী, স্পেনীয়, পর্তুগিজ এবং রোমানিয়ান) এর বিস্তৃত ব্যবহার, আধুনিক পাশ্চাত্য বর্ণমালা, ক্যালেন্ডার এবং সর্বোপরি বিশ্বের অন্যতম প্রধান ধর্ম খ্রিস্টান ধর্মের উত্থান – এসবকিছুই এসেছে এই সাম্রাজ্যের হাত ধরেই। 

প্রায় ৪৫০ বছর প্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্র হিসেবে পার করার পর, খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীতে জুলিয়াস সিজারের উত্থান এবং পতনের মধ্য দিয়ে রোম একটি সম্রাট শাসিত সাম্রাজ্যে পরিণত হয়েছিল। এই সাম্রাজ্যের আরেক প্রধান সম্রাট, অগাস্টাস এর দীর্ঘ আর বিজয়ী রাজত্ব ছিল রোমান সাম্রাজ্যের সুখ আর সমৃদ্ধির স্বর্ণযুগ। চার শতাব্দী ধরে নিজেদের প্রভাব আর প্রতিপত্তি বজায় রাখতে পারলেও পঞ্চম শতাব্দীতে রোমান সাম্রাজ্যের পতন হয়। রোম সাম্রাজ্যের পতনও হয়েছিল মানব ইতিহাসের অন্যতম এক নাটকীয় ঘটনা। এই সবকিছুর মূলেই ছিল বর্তমান ইতালির রাজধানী রোম শহর। এই শহর বিশ্ব ইতিহাসের অন্যতম এক প্রাচীন শহরও বটে। আজকের আয়োজনে থাকছে প্রাচীন এই শহরের ইতিকথা। তবে যেহেতু রোমের ইতিহাস সুপ্রাচীন তাই দুই পর্বে যথাসম্ভব বিস্তারিত তুলে ধরা হলো। 

রোমের জন্ম ইতিহাস 

কিংবদন্তি অনুসারে, প্রাচীন রোম ২১ এপ্রিল খ্রিষ্টপূর্ব ৭৫৩ সালে দুই ভাই রোমুলাস এবং রেমুস এর দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এরা দুজনই ডেমিগড বা উপদেবতা ছিল। অর্থাৎ তারা দেবতাও যেমন ছিলেন, তেমনি তারা মানবের মতো মরণশীলও ছিলেন বটে। যুদ্ধের দেবতা মারসের যমজ সন্তান ছিল এরা দুজন। সেন্ট্রাল ইতালির প্রাচীন লাতিন শহর আলবা লংঙ্গার এক রাজা, এই দুই ভাইকে শিশুকালে একটা ঝুড়িতে করে তিবের নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছিল যেন ডুবে মরে যায়। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে দুই ভাইকে উদ্ধার করে এক মায়া নেকড়ে। দুই ভাই রাজাকে পরাজিত করার লক্ষ্য নিয়ে জীবন ধারণ শুরু করে। খ্রিষ্টপূর্ব ৭৫৩ সালে তারা দুই ভাই নিজেদের শহরের গোড়াপত্তন করে তিবের নদীর কোলঘেষা এক ছোট্ট গ্রাম্য এলাকাতে। 

কে হবে রাজা আর কে করবে এই শহরকে শাসন? এই বিতর্কে এসে দুই ভাই ক্ষমতা লোভী হয়ে একে অপরকে হত্যা করতে উদ্বুদ্ধ হয়। আরেক জায়গায় এমন এসেছে যে, মূল শহর কোথায় হবে তা নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল। যে কারণেই হোক, রোমুলাস তার ভাই রেমুসকে হত্যা করে এবং শহরের গোড়াপত্তন করে নিজের নামে। রেমুলাস থেকেই রোম শব্দটি উদ্ভূত হয়েছে। আর তিনি রোমের প্রথম সম্রাট বা রাজা হিসেবে নিজেকে ঘোষণা করেন। 

খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০-৪৮০ সালে নির্মিত ব্রোঞ্জের এই ভাষ্কর্যে দেখা যাচ্ছে, রোমুলাস এবং রেমুস মায়া নেকড়ের দুগ্ধ পান করছে। Photos by irisphoto1/Fotolia

রোমের সাত কিংবদন্তি রাজার মধ্যে প্রথম রাজা ছিলেন এই রেমুলাস। রোমের সাত কিংবদন্তি রাজারা হচ্ছেন – রোমুলাস, নুমা পম্পিলিউয়াস, তুলুস হস্তিলিউয়াস, আঙ্কাস মারতিউস, লুসিয়াস তারকুইনাস প্রিসকাস (তারকুইন দ্য এল্ডার), সার্ভিয়াস টালিয়াস, এবং তারকুইনিউয়াস সুপারবাস, বা তারকুইন দ্য প্রাউড (খ্রিষ্টপূর্ব ৫৩৪-৫১০)। রোম প্রতিষ্ঠার এই গল্পটাই সর্বাধিক জনপ্রিয়। তবে এটিই একমাত্র গল্প বা কিংবদন্তি নয়। এরকম কিংবদন্তি আরো আছে। 

তেমনই একটা কিংবদন্তীর দাবি, রোম শহরটির নামকরণ হয়েছিল রোমা নামক এক নারীর নাম থেকেই। ট্রয় নগরী ধ্বংস হবার পর এনায়েস এবং বেঁচে থাকা অন্যান্য লোকেদের সঙ্গে ভ্রমণ করছিল সে। তিবের নদীর তীরে অবতরণ করার পরে পুরুষরা এগিয়ে যেতে চাইলেও রোমা এবং অন্যান্য নারীরা আপত্তি জানান। তারা সেখানেই সাময়িক বসতি গড়েছিল; পরবর্তীতে সেটাই রোমে পরিণত হয়েছে। ভার্জিলের বিখ্যাত কাব্য আইনিদে ট্রয়ের এনায়েসকেই বিখ্যাত কিংবদন্তি বলে গণ্য করা হয়েছে। আবার একইসঙ্গে, রোমুলাস ও রেমুসের পূর্বপুরুষ বলেও দাবী করা হয়েছে। আর এই কারণেই রোম এবং ট্রয়ের মধ্যে একটা সংযোগ ছিল বলে অনেকেই মনে করে। 

এছাড়াও, অন্যান্য তথ্য অনুসারে রোম নামটি তিবের নদীর প্রাচীন নাম রুমন থেকে এসেছে বলে জানা যায়। হতে পারে নদীর তীর ঘেষা ছোট্ট এই গ্রাম্য শহরটাকে ব্যবসায়িক লেনদেনের কেন্দ্রস্থল ভাবা হতো। কিংবা এট্রুস্কানদের কাছ থেকেই এই নামের সূত্রপাত। কেননা তারা নিজেদের স্থাপত্যেরও নামকরণ করে থাকতো। আরো জানা যায়, সাতটি পাহাড়ের সমন্বয়ে রোমের সৃষ্টি হয়েছিল। সেই সাতটি পাহাড় যা দ্য সেভেন হিলস অফ রোম নামে পরিচিত সেগুলো হচ্ছে – এস্কুইলিন হিল, পালাতিনে হিল, অ্যাভেন্তিনে হিল, ক্যাপিতোলিনে হিল, কুইরিনাল হিল, ভিমিনাল হিল এবং কায়েলিয়ান হিল। 

প্রাচীন রোমের সাতটি পাহাড়ের মানচিত্র। Photos by maps-rome.com

রোমের যাত্রা

তিবের নদীর কোলঘেষা সেই ছোট্ট শহর রোম, ব্যবসার মাধ্যমে ধীরে ধীরে প্রভাব-প্রতিপত্তি আর আকারে বৃদ্ধি পেতে থাকে। শহরের অবস্থানটি বণিকদের একটা সহজে চলাচলযোগ্য জলপথ দিয়েছিল; যার উপর দিয়ে তাদের পণ্য চলাচল করতে পারে। শক্তি আর আকার বৃদ্ধি পাওয়ায় সাতজন রাজাকে এই শহরের শাসক হতে হয়েছিল। রেমুলাস থেকে তারকুইন – এই সাতজন রাজা ছিল রোমের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের সময়কার রাজা। দক্ষিণের গ্রীক উপনিবেশ থেকে গ্রীক সংস্কৃতি আর সভ্যতার একটা প্রভাব পড়েছিল রোমের উপর। যার ফলশ্রুতিতে রোমানরা গ্রীকদের থেকে ধর্ম আর সাক্ষরতা এবং স্থাপত্যশৈলীর মৌলিক রীতি আর কৌশলগুলো আয়ত্ত করে নিয়েছিল। 

উত্তর দিকে ছিল এট্টুস্কানদের সভ্যতা যেখান থেকে রোমানরা বাণিজ্য এবং নগর বিলাসিতার মতো ব্যাপারগুলোকে সাদরে গ্রহণ করেছিল। শুধু ব্যবসায়িক দক্ষতাই নয় এমনকি যুদ্ধ কৌশল রীতিও শিখেছিল বলে ইতিহাসে কয়েক জায়গায় এসেছে। অবশ্য এ নিয়ে প্রচুর বিতর্ক আছে। তবে রোমান সমাজ ও সংস্কৃতি গড়তে এট্টুস্কানদের যে প্রভাব ছিল; তা তর্ক-বিতর্ক সত্ত্বেও প্রাথমিক পর্যায়ে যে প্রভাব ছিল তা অস্বীকার করার কোনো উপায়ই নেই। 

শুরু থেকেই রোমানরা অন্যান্য সংস্কৃতির দক্ষতা ও ধারণা ধার করা এবং সেগুলোকে আরো উন্নত করার বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছিল। খ্রিষ্টপূর্ব ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শতাব্দীর মধ্যে রোমান রাজ্য সাধারণ এক বাণিজ্য নগরী থেকে সমৃদ্ধশালী এক নগরীতে পরিণত হয়েছিল। খ্রিষ্টপূর্ব ৫০৯ সালে রোমের সাত রাজার সর্বশেষ রাজা তারকুইন দ্য প্রাউডকে পদচ্যুত করা হয়। সেই সময় তার প্রতিদ্বন্দ্বী লুসিয়াস জুনিয়াস ব্রুটুস সরকার ব্যবস্থা সংস্কার করে। রোমে প্রথমবারের মতো প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়। 

প্রাচীন রোমের একটি চিত্রকর্ম। Photos by Joseph Mallord William Turner

প্রজাতন্ত্রী রোম

প্রজাতন্ত্রী রোমের নিয়মানুসারে, রাষ্ট্রশাসকের ক্ষমতা পরপর দুবার নির্বাচিত ম্যাজিস্ট্রেট এর অধীনে থাকতো; যাকে কনসুল বলা হতো। তারা আবার সেনাবাহিনীর প্রধান বলেও স্বীকৃত হতো। ম্যাজিস্ট্রেটরা যদিও জনগণের নির্বাচিত ছিল। তবুও সিনেটের ব্যক্তিবর্গের কথার একটা মূল্য ছিল। সিনেটদের বংশধরদের একটা আধিপত্য ছিল সেই রোমুলাসের সময় থেকেই। শাসক শ্রেণী তাদেরকে অপ্টিমেট/পেট্রিশিয়ান (সম্ভ্রান্ত বা অভিজাত সম্প্রদায়) বলে গণ্য করতো। 

আর যারা তাদের করুণা আর সহানুভূতিতে বেঁচে থাকতো, মানে যারা তাদের নিচের শ্রেণীর ছিল তাদের সকলকে পপুলারস/প্লেবিয়ান্স (জনগণ) বলে অভিহিত করা হতো। তবে এই নামগুলো কেবল রাজনৈতিক মতাদর্শের জন্যই প্রয়োগ করা হতো। কেননা, অভিজাত বা সম্ভ্রান্ত সম্প্রদায়ের সবাইই রাজনৈতিক দল বা শাসক শ্রেণীর অন্তর্ভূক্ত ছিল না। আবার একইভাবে নিম্ন শ্রেণীর সকল মানুষই আবার জনগণ শ্রেণীভূক্ত ছিল না। 

সাধারণত, ঐতিহ্যবাহী রাজনীতি এবং সামাজিক মূল্যবোধের সঙ্গে রোমের সিনেটের ক্ষমতা ও শাসক মর্যাদা এবং তাদের শ্রেষ্ঠত্বের পক্ষে থাকা লোকেদেরকেই অপ্টিমেট বলা হতো। আবার, জনগণ বলতে তাদের বুঝানো হতো যারা রোমের প্রজাতন্ত্রের সংস্কার ও গণতন্ত্রকরণের পক্ষের সাফাই দিতো। ৪৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে প্রথম রোমান আইন ১২টি ব্রোঞ্জের ফলকে লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল; যেটা টুয়েলভ টেবলস নামেও পরিচিত। 

জনসম্মুখে রাখা টুয়েলভ টেবিলস খ্যাত রোমান আইন। Photos by factanddetails.com

সেটা রোমান ফোরামে প্রদর্শনের জন্য রেখে দেয়া হয়েছিল। এই ফলকে সমস্ত রকমের আইনী প্রক্রিয়া, নাগরিক অধিকার, সম্পত্তির অধিকারের বিষয়গুলো অন্তর্ভূক্ত ছিল। এছাড়াও, ভবিষ্যতের রোমান যত আইন তার সবকিছুর উৎপত্তিও হয়েছিল এখান থেকেই। ৩০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে রোমের রাজনৈতিক শক্তি পুরোটাই সিনেট কেন্দ্রিক ছিল এবং সেই সময়টাতে সিনেট বলতেই প্যাট্রেসিয়ান (অভিজাত) বা ধনী ব্যক্তিদের বুঝাতো। 

বিজয়ী পম্পে দ্য গ্রেট রোমে ফিরে আসার পর তিনি একটি অস্থায়ী জোট গঠন করেছিলেন যেটি প্রথম ট্রায়ামব্রাট নামে পরিচিত। মার্কাস লাইসেনিয়াস ক্রাসেস এবং তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী নিয়াস পম্পেয়াস ম্যাগনেস (পম্পে দ্য গ্রেট) এবং আরেকজন কনিষ্ঠ রাজনীতিবিদ গাইউস জুলিয়াস সিজারও যোগ দিয়েছিলেন এই জোটে। ক্রাসেস এবং পম্পে দুজনেই ছিলেন অপ্টিমেট আর সিজার ছিলেন পপুলারস শ্রেণীভুক্ত। এই তিনজনই বেশ উচ্চাভিলাষী ছিলেন এবং ক্ষমতার প্রত্যাশায় রোমকে সমৃদ্ধশালী করতে একে অপরকে তদারকি করতেও সাহায্য করেছিলেন। 

ক্রাসেস ছিলেন রোমের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। তিনি অন্যান্য অভিজাত ও সম্ভ্রান্ত নাগরিকদেরকে বাধ্য করতে চেয়েছিলেন তার কাছে “নিরাপত্তা” অর্থ গচ্ছিত রাখার জন্যে। নাগরিকরা যদি সেই অর্থ দিয়ে দিতো তাহলে তাদের বাড়িতে আগুন জ্বলতো না। আর যদি না দিতো তাহলে তাদের বাড়িতে আগুন জ্বালানো হতো এবং আগুন নিভানোর কাজে ক্রেসাসই লোক পাঠাতো। মজার বিষয় হচ্ছে, এই কাজ করে দেয়ার বিনিময়ে তাদেরকে আবার একটা নির্দিষ্ট অর্থ সম্মানীও দিতে হতো। ধারণা করা হয়, পরবর্তীতে তার এই চৌকস বুদ্ধি থেকেই দমকল বাহিনীর উৎপত্তি হয়েছিল।  

পম্পে এবং সিজার দুজনেই মহান সেনাপতি ছিলেন যারা নিজেদের বিজয় দিয়ে রোমকে সমৃদ্ধশালী এক শহরে পরিণত করেছিলেন। যদিও রোমের সবচাইতে ধনী ব্যক্তি ক্রাসেস (মতভেদে তাকে রোমান সাম্রাজ্যের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি বলে অভিহিত করা হয়) একই ধরণের সম্মান আর শ্রদ্ধা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিল। খ্রিস্টপূর্ব ৫৪ সালে পম্পের স্ত্রী জুলিয়া (সিজারের মেয়ে) মারা যান। আর খ্রিস্টপূর্ব ৫৩ সালে ক্রাসেস পার্থিয়ানদের (বর্তমান ইরান) বিরুদ্ধে এক বিশাল বাহিনীর নেতৃত্ব দেন। তবে আধুনিক তুরস্কের কারহয়ের যুদ্ধে পরাজিত হন তিনি। সেখানে যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পরে তিনি নিহত হন। 

বাম থেকে পম্পে, ক্রাসেস এবং জুলিয়াস সিজার। Photos by historycollection.com

ক্রাসেসের মৃত্যুতে প্রথম ট্রায়ামব্রাট বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং পম্পে আর সিজার একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। পম্পে আইনী আশ্রয়ে সিজারকে শহর থেকে বহিষ্কার করার বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করেন। সিনেটে সিজারের বিরুদ্ধে অনেক অপরাধের অভিযোগ উঠে। এই অভিযোগগুলোকে মাথা পেতে নিয়ে শহরে ফিরে না এসে, সিজার খ্রিষ্টপূর্ব ৪৯ সালে তার নিজস্ব সেনাবাহিনী নিয়ে রুবিকন নদী পার হয়ে রোমে প্রবেশ করে। 

সিজার সিনেটের করা অভিযোগের উত্তর দিতে অস্বীকার করেন এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বী পম্পেকে অপসারণ করতে উদ্বুদ্ধ হন। খ্রিষ্টপূর্ব ৪৮ সালে গ্রীসের কাছে ফার্সালেসের যুদ্ধে সিজারের অল্পসংখ্যক সৈন্যদলের কাছে পম্পের বিশাল সেনাবাহিনী পরাস্ত হয়। পম্পে মিশরে পালিয়ে গিয়ে অভয়ারণ্যের সন্ধান করতে থাকে। কিন্তু সেখানে গিয়েই তাকে হত্যা করা হয়। পম্পের এমন শক্তিশালী বাহিনীকে হারানোর খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং সিজারকে সকলেই দেবতার আশীর্বাদপ্রাপ্ত বলে ধরে নেয়। পম্পের পতন হয় এবং রোমে সিজারের উত্থান হয়। খ্রিষ্টপূর্ব ৪৫ সালে সিজার রোমান সম্রাট হিসেবে আবির্ভূত হয় রোমে। 

পরের পর্ব

Feature Image: Active Museum/Alamy Stock Photo
তথ্যসূত্রসমূহ:

01. A Brief History of Rome.
02. Ancient Rome.
03. History of Rome.
04. Ancient Rome.