শুভ অনেক তো হলো! আমাকে দিয়ে আর হবে না আজ রাতে অফিস থেকে ফেরার পর দেখবে আমি আর নেই।
– গত ছয় বছর ধরে একই কথা বলে যাচ্ছো। কই প্রতিদিন অফিস থেকে ফেরার পর দেখি ঠিক তুমি খাবার নিয়ে অপেক্ষা করছো আমার জন্য।
– নাহ! এবার কিন্তু সত্যি চলে যাবো।
কথাটা বলার পর শুভ্রা উঠে চলে গেলো নাস্তার টেবিল থেকে। আজ আর ওর কপালে চুমু দেওয়া হবে না। প্রতিদিন অফিসে যাওয়ার সময় তার কপালে চুমু দেওয়াটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এ এক অদ্ভুত মায়া জন্মে গেছে।
হ্যা আমি একটা অদ্ভুদ রকমের মানুষ। কখনই নিজের স্ত্রী’কে খুশি করতে পারলাম না।
বিয়ের সময় তাকে একটা দামী শাড়ি দিয়েছিলাম এরপর কই আর তো একটা দামী শাড়ি দিতে পারলাম না।
শস্তায় রাস্তার পাশের দোকান থেকে শাড়ি এনে বলতাম গ্র্যান্ড হক মার্কেট থেকে এনেছি।
সে ও বুঝতে পারতো এবং দীর্ঘশ্বাস ফেলে আমার গলায় জড়িয়ে ধরতো।
এই গলায় জড়িয়ে ধরার পর মনে মনে আপসোস হতো যদি আরেকটু দামী একটা শাড়ি দিতে পারতাম?
কিন্তু, এই অভাগার দ্বারা কখনোই হবে না।
আমি এমন একটা স্বামী যে কখনোই তাকে মার্কেটে এনে বলতে পারিনি “ইটস ইউর ডেই” তোমার যা খুশি তা কিনতে পারো।
আমাদের পাশের বাসার আলম সাহেবের স্ত্রী এসে বলবে ভাবি জানো তোমার ভাই আজকে আমাকে ডোমিনোজ পিজ্জা খাইয়েছে। তারপর একটা রেডিমেট জামা কিনে দিয়েছে চার হাজার টাকা দিয়ে।
তখন শুভ্রার দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া কোনো উপায় ছিলো না। তার ও তো মন চায় এমনটা পেতে।
অফিস থেকে বাসায় ফিরলাম।আজ আমার সেলারি বেড়েছে শুভ্রা জানলে খুব খুশি হবে।
শুভ্রা?
শুভ্রা?
শুভ্রা তুমি কই মাই সুইট হার্ড?
– সাহেব উনি খুব সম্ভবত উনার বাপের বাড়িতে গিয়েছেন!
এতোটা অভাক হইনি। যাওয়ারই কথা। আর কতকাল আমার এই ছোট ঘরে পড়ে থাকবে তার ও তো ইচ্ছে হয় অনেক বড় ঘরে থাকার দামী শাড়ি, দামী খাবার খেতে।
আগের বারের কথা মনে পড়ছে। যখন সে একই কথা বলেছে। কিন্তু অফিস থেকে ফেরার পর তাকে দেখতে পেলাম খাবার টেবিলে।
– যাও নি কেনো।
– যাবো কিন্তু যাচ্ছি না একদিন ঠিক চলে যাবো একবারের মতো আর আসবো না।
– হা হা হা। তাহলে যাচ্ছো না কেনো?
– তোমার মায়ার জালে ফেসে গেছি আমি। তোমার প্রতি আমার এক অদ্ভুত মায়া জন্মেছে।
ভালোবাসার মায়া।
এই বলে আমার গলায় জড়িয়ে যেতো। খুব অদ্ভুদ একরকম অনুভুতি হয় যখন সে আমার গলায় জড়িয়ে থাকে। তার জড়ানোর মাঝে মায়া হয়ে যায়। কিন্তু এই মায়াবতী আজ নেই!
ফোনটা ও রেখে গেছে।
ঘুম আসছে না আমার তাকে ছাড়া।
শুভ্রাকে আমি অদ্ভুত রকমের ভালোবাসি। কিন্তু কখনই ঠিক করে কথাটা বলা হয়নি।
তাকে একটা চিঠি লিখলে কেমন হয়?
দরকার নেই ফোন দেওয়ার ফোন দিয়ে তার মায়ের হাজার প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।
কাল সকালেই পাঠিয়ে দিতে হবে চিঠিটা। নীল খামে চিঠি দিবো। যখন কলেজে তার সাথে প্রেমের আলাপ ছিলো তখন চিঠি লেখা হতো এই ছয় বছরে আমাদের মাঝে দুরত্ব ও সৃষ্টি হয়নি আর চিঠিও লেখার প্রয়োজন হয়নি।
তবুও মাঝে মাঝে অফিসের ব্যস্ততার মাঝে তাকে যখন মিস করি তখন চিঠি লিখতে ইচ্ছে করে।
চিঠি লেখা শুরু।
প্রিয় শুভ্রা,
নিশ্চয়ই এই বোরিং ঘরটা থেকে তোমার বাপের ঘরটায় অনেক ভালো লাগছে।
আমি তেমনটাই আছি যেমনটা রেখে গেছো।
তুমিহীনা এলোমেলো হয়ে গেছি। জানো কাল রাতে ঘুম আসেনি আমার।
কারণ তুমি যখন মাথার উপর হাত বুলিয়ে দিয়ে কপালে একটা চুমু দাও বিশ্বাস করো আমার ঘুম চলে আসে।
মিস করছি তোমায়। আমার গলায় জড়িয়ে থাকো যে এই গলায় জড়িয়ে থাকাকে মিস করছি। তুমি আমার অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছো। আমি হয়তো দামী শাড়ি দিতে পারবো না, দামী কোনো রেস্টুরেন্টে নিয়ে দামী খাবার খাওয়াতে পারবো না, বা পার্কে নিয়ে যেতে পারবো না।
কিন্তু, পড়ন্ত বিকেলে তোমায় নিয়ে ছাদে বসে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে গল্প বলে কাটিয়ে দিতে পারবো।
আমার শেষ নিশ্বাস টুকু তোমাকে নিয়ে কাটাতে চাই। যে মানুষটার সাথে জীবনের সব গুলো সূর্যাস্ত দেখার কথা ছিলো তাকে ছেড়ে তুমি থাকতে পারবে?
জানো আমাদের এনিভার্সারিতে তোমার সাথে একটা খেলা খেলতাম। তোমার সব প্রিয় জিনিষের নাম শুনতে চাইতাম। তোমার প্রিয় নাম গুলো শুনতে চাইতাম।
এই খেলাটা খেলতাম কেনো জানো?
তোমার সব প্রিয় জিনিষ গুলোর মাঝে আমি থাকতে চেয়েছি। তোমার প্রিয় নামের মাঝে আমি থাকতে চেয়েছি।
জানো শুভ্রা এই পাগলটা তোমায় অনেক ভালোবাসে।
চারদিন হলো শুভ্রার কোনো খোঁজ নেই! চিঠির কোনো উত্তর নেই! কোনো ফোন নেই। তবে কি শুভ্রা আমার জীবন থেকে হারিয়ে গেলো?
কলিং বেল বাজছে……..
– শুভ্রা তুমি?
– বাবা অসুস্থ ছিলো তাই চারদিন আসিনি। তোমাকে না জানিয়েই চলে গিয়েছে। ফোন রেখে গিয়েছি তাই তোমাকে কল দেইনি।
বাবার কথা তোমাকে বলিনি তুমি আবার ব্যস্ত হয়ে পড়বে। আর শুনো চিঠি লেখা ভালো হয়েছে।
চারদিনেই এতো এলোমেলো হয়ে গেছো? সারাজীবন না থাকলে কি করতে?
লিখেছেনঃ মেহেদী আহমেদ।