কমেন্ট

6172
0

সকালে শুয়ে শুয়ে ফেসবুকে বিচরণ করছি এমন সময় বাড়িওয়ালার সদ্য পাল্টানো প্রোফাইল ছবি সামনে এলো। ছবির ক্যাপশনে দেয়া আছে, “আজ অনেক দিন পর একান্তে কাটানো কিছু মুহূর্ত। কেমন লাগছে আমাকে বন্ধুরা?

বাহ্ চমৎকার ক্যাপশন। এই ছবি এবং এই ক্যাপশনে লাইক এসেছে একশ বিশ টা কিন্তু কোন কমেন্ট নাই। কমেন্ট সেকশন ফাঁকা দেখে খুব মায়া লাগলো ভাবলাম সুন্দর একখানা কমেন্ট করবো। তাই প্রথমে ছবিতে লাভ রিয়্যাক্ট দিলাম তারপর ভাবলাম নাইস পিক লিখবো। কিন্তু ভেবে দেখলাম আজ মাসের ১০ তারিখ এখনো বেতন পাইনি ঐ দিকে বাড়িভাড়া চেয়ে প্রতিদিন খবর পাঠায়। এই সুযোগ সুন্দর একটা কমেন্ট করে কিছু দিন সময় চেয়ে নেয়া যাবে। কিন্তু বাড়িওয়ালা বুড়োটাকে পটিয়ে লাভ নাই বাড়িওয়ালি আন্টিকে পটাতে হবে।যেমন ভাবনা তেমন কাজ বাড়িওয়ালি আন্টিকে মেনশন করে কমেন্ট করলাম, “আমি জানি আংকেল এর পিকটা আপনিই তুলে দিয়েছেন আন্টি। ছবিতে এমন শৈল্পিক ছোয়া শুধু আপনিই দিতে পারেন আন্টি। আপনি আর আংকেল অনেক সুখি হন। আপনাদের মতো কাপল এই পাড়ায় আর নাই।

ব্যাস কমেন্ট টা করে নিজেকে খুব বুদ্ধিমান বুদ্ধিমান লাগছিলো। মোবাইল হাতে নিয়ে বসে আছি কখন আন্টি কমেন্ট এর রিপ্লাই দিয়ে লিখবে, ” বাবা, রাকিব তুমি মাসের ভাড়াটা একটু দেরি করে দিও সম্যসা নাই। বা এমনো হতে পারে “বাবা, রাকিব এই মাসে তোমার বাড়ি ভাড়া দেয়া লাগবে না। বাড়িওয়ালার একটা মেয়েও আছে কমেন্ট টায়,খুশি হয়ে হতেও তো পারে মেয়েটার সাথে আমাকে বিয়ে দিল সাথে বাড়িটাও দিয়ে দিল। তখন কিন্তু আমি আমার ভাড়াটিয়া দের মোটেও কস্ট দিবো না, আমার মতো ব্যাচেলারদের জন্য ভাড়া মাফ করে দিবো। উফফফ! ভাবতেও আমার মজা লাগছে।

এমন সময় ফোনটা টুং করে বেজে উঠলো। নোটিফিকেশন এসেছে রাহেলা বেগম অর্থাৎ বাড়িওয়ালি আন্টি কমেন্ট করছেন।
-” এই তোমাকে না আমি সকালে বাজারে পাঠিয়েছিলাম। তুমি ছাদে কি করো?
কমেন্ট টা দেখে আমি ধপ করে পড়লাম। ২ সেকেন্ডের মধ্যে আবার কমেন্ট এবার বাড়িওয়ালা আংকেলকে মেনশন দিয়ে,

-“এই তুমি কার ছাদে উঠে পিক তুলছো? কে পিক তুলে দিছে? রিপ্লাই দেও না কেন?

এবারও কোন রিপ্লাই নেই। হঠাৎ দেখি আমার রুমমেট সোহেল কমেন্ট করছে,

-“আন্টি পানি উঠান প্লিজ। পানি নাই ইমার্জেন্সি প্লিজ।
আংকেল এবার কমেন্ট করছে আন্টিকে মেনশন দিয়ে,
-“আমার কোকিল ছানা আমি ত সকালে মর্নিং ওয়ার্ক করতে ছাদে উঠছিলাম। এখন বাজারে আমি তাই রিপ্লাই দিতে দেরি হচ্ছিল পাখিটা।

২ সেকেন্ড এর মধ্যে আন্টির রিপ্লাই,

-“তোমার কি মনে হয় আমি ঘাসে মুখ দিয়া চলি আমি কিছু বুঝি না। তুমি যে পানির ট্যাংকির পাশে দাড়ায়ে ছবি তুলছো সেই ট্যাংকির রং কালা। আমাগো বাড়ির ট্যাংকির রং সাদা। ও এবার বুঝছি তুমি পাশের বাড়ির ছাদে উঠে ছবি তুলছো। ছবিটা নিশ্চয়ই ঐ বাড়ির বাড়িওয়ালি ময়না তুলে দিছে।

২ সেকেন্ডের মধ্যে ময়না আন্টির কমেন্ট বাড়িওয়ালা আংকেল কে মেনশন দিয়ে,
-“আরে আমার বাড়ির ট্যাংকির রং ও তো সাদা। আর আমি ত আজকে বাড়ি ছিলাম না। তাহলে তুমি কই ছিলা সালাম?

ময়না আন্টির কমেন্ট এর সাথে সাথে বাড়িওয়ালা আন্টির কমেন্ট,
-“ও তাহলে এই ব্যাপার। এক সাথে কতোজন এর মনের রাজকুমার তুই৷ বুড়ো বয়েসে এখনো ভাল হইলি না। কার বাড়ির কালো রংয়ের ট্যাংকির পাশে দাড়িয়ে নিজের মুখটা কালো করিয়েছিস। আর এখন রিপ্লাই দিস না কেন?

ময়না আন্টি আর বাড়িওয়ালি আন্টির এই গরমা গরম কমেন্টের রিপ্লাই দিলো সোহেল,

-” পানি নাই। প্লিজ পানি ছাড়েন কেউ। ইমারজেন্সি প্লিজ।

এতোক্ষণ পর বাড়িওয়ালা আংকেল রিপ্লাই দিলো,

-“আমার কোকিল পাখিরা বিশ্বাস করো আমি শুধু তোমাদের আর কারও নই৷

এবার ময়না আর বাড়িওয়ালা আন্টি একই সাথে দুজন কমেন্ট এর রিপ্লাই দিলো,

-“কোকিল পাখিরা কে? ও তোমার বৌ তাই না। যা ব্যাটা তর সাথে ব্রেক আপ। যে আইফোন টা গিফট করছিলাম তা কালকে ফেরত দিবি তা না হলে তর একদিন কি আমার একদিন। যা ব্লক দিলাম।

-“কোকিল পাখিরা? এই ব্যাটা এই তুই কোকিল পাকি কাকে বললি। বেদ্দপ ব্যাটা। বুড়ো বয়সে ভীমরতি। তকে তালাক দিলাম যা ব্যাটা। বাড়ি এসে তর জামা কাপড় নিয়ে বিদায় হবি। ব্লক দিলাম যা। আর হ্যা রাকিব বাবা তুমি সত্যই অনেক ভাল। তোমার জন্য ই আজ আমি বুড়োটার আসল রুপ দেখতে পেলাম। এই মাসে তোমার বাড়ি ভাড়া দেয়া লাগবে না। সাথে এই শুক্রবার তোমার দাওয়াত।

বাহ্ চমৎকার এতোক্ষণ এই কমেন্ট টার অপেক্ষা করছিলাম। আজ দিন টা খুব ভাল আন্টি র চোখে ভাল হলাম সাথে ভাড়ি ভাড়া মাফ আর দাওয়াতো ফ্রী পেলাম। বাহ! কমেন্ট থেকে যদি ভাল কিছু হয় তাহলে কমেন্ট ই ভাল। আন্টিকে মেনশন করে কমেন্ট করলাম,
“আমাকে নিজের জামাই থুক্কু ছেলে মনে করতে পারেন। আপনার সুখ দুঃখে পাশে পাবেন।
কমেন্ট টা করে মনের সুখে যেই না ফেসবুক থেকে বেরিয়ে আসলাম হঠাৎ দেখি ম্যাসেন্জারে ম্যাসেজ তাও বাড়িওয়ালা আংকেল এর। ম্যাসেজ সিন করেই সব আনন্দ ফিকে হয়ে গেল,

-“আমার সাজানো বাগান নস্ট করে দিছিস বজ্জাত রাকিব। ফেসবুক থেকে আর এলাকা থেকেও সাত দিনের মধ্যে ভেগে যাবি নাহলে হাত পা আস্তো থাকবো না বিয়ে করার জন্য।

ম্যাসেজটা পড়েই ভয় লাগছে। ভাবলাম আজ রাতেই এই বাড়ি ছেড়ে দিবো। আর ফেসবুক আইডি ডিএক্টিভ করে দিমু এখুনি। আইডি ডিএক্টিভ করার উদ্দেশ্য ফেসবুকে ঢুকে দেখি লাস্ট একটা কমেন্ট সেটাও আবার সোহেলের। বেচারা ভাঙা হৃদয় নিয়ে কমেন্ট করছে,

-“প্লিজ কেউ পানি ছাড়ুন। প্লিজ ইমারজেন্সি। প্লিজ।

লেখাঃ Muntaha Alam Proma