কারো হাতে একটি বই থাকলে, সে এর বিভিন্ন ধরন চিন্তা করতে পারে। কিন্তু এমন একটি বিশ্বে কীভাবে বই কল্পনা করা যায় যেখানে ‘বই’-এর ধারণাও নেই? অথবা ভাবুন সময় ছাড়া একটি দিন। সময়ের ধারণা না থাকলেও এর অস্তিত্ব বিদ্যমান ছিল। কিন্তু এই ধারণাটা আসল কীভাবে?
সময় এবং লেখা উভয়ই, প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার সুমেরিয়ানরা ৫,০০০ বছর আগে আবিষ্কার করেছিলেন। সুমেরীয়দের আগে, একটি দিন সূর্যোদয়ের সাথে শুরু হয়ে সূর্যাস্তের সাথে শেষ হতো। সুমেরিয়ানরাই সেকেন্ড, মিনিট এবং ঘণ্টার ভিত্তিতে রাত থেকে দিনকে সময়ের ভিত্তিতে ভাগ করেছিলেন।
সুমের টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর মধ্যবর্তী মেসোপটেমিয়া অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত একটি প্রাচীন সভ্যতা। ভাষা, সংস্কৃতি, শাসনব্যবস্থা, স্থাপত্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উদ্ভাবনের জন্য তারা পরিচিত। ২০০৪ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে ব্যাবিলনীয়রা দায়িত্ব নেওয়া পর্যন্ত, ২০০০ বছর এই অঞ্চলে তাদের নিয়ন্ত্রণ ছিল।
শুরুর গল্প
৪৫০০-৪০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে মানুষের বসতি স্থাপনের মধ্য দিয়ে সুমের সভ্যতার শুরু। সম্ভবত কিছু বসতি স্থাপনকারীরা অনেক আগে এসেছিলেন। এই প্রারম্ভিক জনসংখ্যা ‘উবাইদ’ নামে পরিচিত। তারা কৃষিকাজ, গবাদি পশুপালন, কাপড় তৈরি, কাঠ ও মৃৎশিল্প ইত্যাদির জন্য পরিচিত। এই সম্প্রদায়ের চারপাশে গ্রাম ও শহর গড়ে উঠেছিল।
৩০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে সুমেরীয়রা এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণে আসে। তাদের এরিদু, নিপপুর, লাগাশ, কিশ, উর এবং প্রথম সত্যিকারের শহর উরুকসহ নগর রাজ্যের একটি গোষ্ঠী ছিল। ২৮০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের কাছাকাছি সময়ে, শহরের জনসংখ্যা ছিল ৪০,০০০-৮০,০০০, যা এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম শহরে পরিণত করে তুলেছিল। সুমেরের প্রতিটি শহর-রাজ্য একটি প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত ছিল, যার ঠিক বাইরে গ্রামগুলো বসতি স্থাপন করেছিল এবং স্থানীয় দেবদেবীর উপাসনা দ্বারা আলাদা ছিল।
ভাষা ও সাহিত্য
সুমেরীয় ভাষা প্রাচীনতম ভাষাগত রেকর্ড। এটি প্রথম প্রত্নতাত্ত্বিক রেকর্ডে যুক্ত হয়েছিল ৩১০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের কাছাকাছি। এটি প্রায় ২০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে আক্কাদিয়ান দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। কিন্তু কিউনিফর্মে লিখিত ভাষা হিসাবে আরও ২০০০ বছর একে ধরে রাখা হয়েছিল।
কিউনিফর্ম খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০০ এর আগে আবির্ভূত হয়েছিল। এটি পিকটোগ্রাফিক ট্যাবলেটে ব্যবহৃত হয়। এটিও পরে আক্কাদিয়ানে রূপান্তরিত হয়ে, ৩০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে মেসোপটেমিয়ার বাইরে বিস্তৃত হয়েছিল। লেখালেখি সুমেরীয়দের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক কৃতিত্বের মধ্যে একটি, যা শাসক থেকে শুরু করে কৃষক এবং পশুপালক পর্যন্ত সবার রেকর্ড রাখার সুযোগ দেয়।
তারা তাদের মহাকাব্যের জন্যও বিখ্যাত, যা পরবর্তীকালে গ্রিস ও রোমে এবং বাইবেলের কিছু অংশকে প্রভাবিত করেছিল। বিশেষ করে মহাপ্রলয়ের গল্প, ইডেন গার্ডেন এবং বাবেল টাওয়ার। সুমেরীয়দের সঙ্গীতের প্রতি আগ্রহ ছিল এবং একটি সুমেরীয় স্তবক, ‘হুরিয়ান স্তবক নং-৬’ বিশ্বের প্রাচীনতম স্বীকৃত গান হিসাবে বিবেচিত হয়।
শিল্প ও স্থাপত্য
স্থাপত্যশিল্প একটি বিস্তৃত পরিসরে শুরু করার জন্য সুমেরীয়দের কৃতিত্ব দেওয়া হয়। এর ধর্মীয় কাঠামোগুলো ৩৪০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের। যদিও কাঠামোগুলোর মূল ভিত্তি উবাইদ যুগে ৫২০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে শুরু হয়েছিল। মাটির ইট বা নলখাগড়া দিয়ে বাড়ি তৈরি হতো। ভবনগুলো তাদের খিলানযুক্ত দরজা এবং সমতল ছাদের জন্য সুপরিচিত।
তাছাড়া, ব্রোঞ্জসহ টেরাকোটা নকশা, জটিল মোজাইক, ইটের কলাম এবং অত্যাধুনিক ম্যুরাল পেইন্টিংগুলো তাদের প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ প্রকাশ করে। ১৭৭৯ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে মারিতে একটি উচ্চাভিলাষী ২০০ কক্ষ বিশিষ্ট প্রাসাদ নির্মিত হয়েছিল।
মন্দিরগুলোকে সজ্জিত করার জন্য ভাস্কর্য ব্যবহৃত হতো। আক্কাদিয়ান রাজবংশের অধীনে, ভাস্কর্যশিল্প নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছিল। ২১০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ ডায়োরাইটে জটিল শৈলীর কাজের মধ্য দিয়ে এর পরিচয় পাওয়া যায়। পিরামিড-সদৃশ, সোপানযুক্ত মন্দির জিগুরাত প্রায় ২২০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে উপস্থিত হতে শুরু করে। এই বর্গাকার বা আয়তক্ষেত্রাকার মন্দিরগুলো প্রায় ১৭০ ফুট উঁচু ছিল।
ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যান ছিল এর মধ্যে একটি। অন্যান্য প্রাচীন লোকেরা হাতে মৃৎপাত্র তৈরি করেছিল, কিন্তু সুমেরীয়রা প্রথম ছাঁচ তৈরির চাকা তৈরি করেছিল, যা তাদের মৃৎপাত্র বেশি পরিমাণে উৎপাদনে সাহায্য করে।
ধর্ম
সুমেরীয়রা নৃতাত্ত্বিক বহুদেবতাবাদে বিশ্বাস করতো, যা প্রতিটি নগর-রাষ্ট্রের জন্য নির্দিষ্ট ছিল। মূল প্যান্থিয়নের মধ্যে রয়েছে আন (স্বর্গ), এনকি (নিরাময়কারী এবং মানুষের বন্ধু), এনলিল (বাতাসের দেবতা), ইনানা (প্রেম এবং যুদ্ধ), উটু (সূর্য-দেবতা) এবং সিন (চন্দ্র-দেবতা)।
বিজ্ঞান
সুমেরীয়দের ওষুধের ব্যবস্থা ছিল জাদু এবং ভেষজবাদের উপর ভিত্তি করে। তারা প্রাকৃতিক পদার্থ থেকে রাসায়নিক অংশ অপসারণের প্রক্রিয়াগুলোর সাথেও পরিচিত ছিল। তাদের অ্যানাটমি সম্পর্কেও ধারণা ছিল বলে মনে করা হয়, কেননা প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলোতে অস্ত্রোপচারের যন্ত্রপাতি পাওয়া গেছে।
সুমেরীয়দের সবচেয়ে বড় অগ্রগতি ছিল হাইড্রোলিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ক্ষেত্রে। তারা বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য খাদের ব্যবস্থা তৈরি করেছিল এবং কৃষিকাজের জন্য টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিসের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সেচের উদ্ভাবন করেছিল।
সুমেরীয় সংস্কৃতিতে স্কুল খুব সাধারণ ব্যাপার ছিল। এটি একটি সমাজকে সচল রাখতে এবং নিজেকে গড়ে তোলার জন্য জ্ঞান অর্জনের জন্য বিশ্বের প্রথম প্রচেষ্টাকে নির্দেশ করে।
গিলগামেশ
সুমেরের প্রথম শাসক সংস্থা যার ঐতিহাসিক সত্যতা রয়েছে তা হল কিশের প্রথম রাজবংশ। উল্লিখিত প্রাচীনতম শাসক হলেন কিশের ইটানা, যিনি সেই সময়ের একটি নথিতে ‘সমস্ত জমিকে স্থিতিশীল’ হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
প্রাথমিক সুমেরীয় শাসকদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হলেন, ২৭০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে উরুকের রাজা গিলগামেশ। এখনও গিলগামেশের মহাকাব্যে তার কাল্পনিক দুঃসাহসিক কাজ স্মরণ করা হয়, যা ইতিহাসের প্রথম মহাকাব্য এবং পরবর্তী রোমান এবং গ্রিক মিথ এবং বাইবেলের গল্পগুলোর জন্য অনুপ্রেরণা।
ক্ষমতার লড়াই
২৬০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের কাছাকাছি সময়ে, কিশ, এরেচ এবং উর নেতাদের মধ্যে ক্ষমতার লড়াই শুরু হয়েছিল, যা পরবর্তী ৪০০ বছর বিদ্যমান ছিল। প্রথম সংঘাতের ফলে আওয়ান সাম্রাজ্য এই স্থান দখল করে শাসক সংস্থাকে সুমেরের বাইরে স্থানান্তরিত করে।
উরুক রাজা এনশাকুশন্নার উত্থানের আগ পর্যন্ত কিশ সংক্ষিপ্তভাবে নিয়ন্ত্রণ রেখেছিল। এরপর আদাবিয়ান বিজয়ী লুগালানেমুন্ডু ৯০ বছর ক্ষমতায় ছিলেন এবং ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত তার রাজ্য সম্প্রসারিত করেছিলেন বলে কথিত আছে। তিনি পরবর্তীতে পূর্ব ইরাকের পাহাড়ে বসবাস করা গুতিয়ান জয় করেন, যারা পরে সুমের শাসন করতে আসে।
২৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে একমাত্র নারী শাসক কুবাবা সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন। শেষ কিশ রাজবংশ এক শতাব্দী ধরে শাসন করেছিল। ২২৩৪ সালে সারগন এর নিয়ন্ত্রণ নেয়।
সারগন
আক্কাদিয়ান শাসক সারগনের অতীত কিংবদন্তিতে আবৃত। সারগন দাবি করেছিলেন, তিনি একজন মহাযাজকের গোপন সন্তান যিনি তাকে একটি ঝুড়িতে রেখে নদীতে ফেলে দিয়েছিলেন। যা পরে ওল্ড টেস্টামেন্টে মোজেসের জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল।
সুমেরীয় ঐতিহ্য বলে যে, সারগন ছিলেন একজন মালীর পুত্র যিনি কিশের রাজা উর-জাবাবার সময়ে একটি উচ্চ পদে উন্নীত হন। উর-জাবাবা উরুকের রাজার কাছে পরাজিত হন এবং উরুকের রাজা সারগনের কাছে পরাজিত হন। সারগন উর, উম্মা এবং লাগাশ শহর দখল করে এবং নিজেকে শাসক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে। তার সামরিক শাসন পারস্য উপসাগর পর্যন্ত পৌঁছেছিল।
সারগন কিশের দক্ষিণে তার ঘাঁটি হিসাবে আগাদে শহর তৈরি করেছিলেন, যা প্রাচীন বিশ্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র এবং বিশিষ্ট বন্দর হয়ে উঠেছিল। এটি সেনাবাহিনীর আবাসস্থলও ছিল, যাকে ইতিহাসের প্রথম সংগঠিত স্থায়ী সেনাবাহিনী এবং যুদ্ধে প্রথম রথ ব্যবহার করার জন্য বিবেচনা করা হয়।
সারগন আক্কাদিয়ান এবং সুমেরীয়দের ধর্মীয় সংস্কৃতির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিলেন। তিনি তার কন্যা এনহেদু-আন্নাকে উরের চাঁদ দেবতার প্রধান পুরোহিত বানিয়েছিলেন। এনহেদু-আন্না মন্দিরের স্তোত্রগুলোর প্রতিলিপির জন্য স্মরণীয়।
শেষ আক্কাদিয়ান রাজা শারকালিশারির রাজত্বের পর, গুতিয়ানরা ২১৯৩ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে আক্রমণ করে। তাদের যুগ ছিল বিশৃঙ্খলা ও অবহেলার। তাদের রাজত্বের সময় আগাদে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়ে ইতিহাস থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়।
উর-নাম্মু
২১০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে উর রাজা উতুহেগাল গুতিয়ানদের উৎখাত করেন। উরের প্রাক্তন গভর্নর, উর-নাম্মু সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হয়ে প্রায় এক শতাব্দী ধরে শাসন করেন। উর-নাম্মু ২৪০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে ইবলা শহরে, একটি সংগঠিত এবং জটিল আইনি কোড নির্মাণের উল্লেখযোগ্য কাজও করেছিলেন যা ইতিহাসে প্রথম বলে বিবেচিত হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল, স্বতন্ত্র গভর্নরদের ইচ্ছার উপর নির্ভর না করে রাজ্যের প্রত্যেকে যেন একই ন্যায়বিচার এবং শাস্তি পায় তা নিশ্চিত করা।
উর-নাম্মু একজন নির্মাতা হিসাবে পরিচিত ছিলেন। তার রাজত্বকালে, তিনি রাজধানী শহরের চারপাশে প্রাচীর নির্মাণ, সেচ খাল তৈরি, নতুন মন্দির নির্মাণ এবং পুরানোগুলো পুনর্নির্মাণের জন্য বিশাল প্রকল্প শুরু করেছিলেন। উর-নাম্মু রাজ্য প্রশাসকদের জন্য এডুব্বা নামে একটি সংগঠিত স্কুল ব্যবস্থাও তৈরি করেছিলেন।
সুমের সভ্যতার সমাপ্তি
২০০৪ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে, এলামাইটরা উর আক্রমণ করে এর নিয়ন্ত্রণ নেয়। একই সময়ে, আমোরীরা সুমেরীয় জনসংখ্যাকে ছাড়িয়ে যেতে শুরু করে। শাসক এলামাইটরা শেষ পর্যন্ত অ্যামোরিট সংস্কৃতিতে মিশে ব্যাবিলনীয় হয়ে ওঠে। মেসোপটেমিয়ার বাকি অংশ থেকে সুমেরীয়দের আলাদা করে এর সমাপ্তি নির্দেশ করে।
সুমেরীয় সভ্যতার অনেক কিছুই আমরা প্রতিদিন ব্যবহার করছি, কিন্তু হয়ত কখনোই জানা হতো না এর পেছনের গল্প। সুমেরের আবিষ্কারটি ছিল কমবেশি একটি দুর্ঘটনা। প্রত্নতাত্ত্বিক এবং পণ্ডিত ক্রেমার উল্লেখ করেছেন, গবেষকরা বাইবেলের পারস্পরিক সম্পর্ক অনুসন্ধানে মেসোপটেমিয়ায় আকৃষ্ট হয়ে তাদের খনন কাজ শুরু করে।
বাইবেলে সুমেরের একমাত্র উল্লেখ হল ‘শিনারের দেশ’ (জেনেসিস ১০:১০ এবং অন্যত্র), যার ব্যাখ্যা ব্যাবিলনের আশেপাশের ভূমি। অ্যাসিরিওলজিস্ট জুলস ওপার্ট (১৮২৫-১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে) সুমের নামে পরিচিত দক্ষিণ মেসোপটেমিয়ার অঞ্চলের সাথে বাইবেলের সম্পর্ক শনাক্ত করেন। আর এর মধ্য দিয়েই অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই সভ্যতার কথা জানা যায়।
Featured Image: Wikipedia by Ancient-Middle-East/Sumer. 02. Sumerians/Religion. 03. Sumerian-Civilization-Inventing-the-Future.References: 01.