সফল মানুষদের যত গুণ

148
0

প্রত্যেকেই নিজ নিজ পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির ঊর্ধ্বে উঠতে পারে এবং সাফল্য অর্জন করতে পারে যদি সে যা করছে তার প্রতি নিবেদিতপ্রাণ ও সত্যিকারের আন্তরিক হয়।

নেলসন ম্যান্ডেলা

সফলতার কোনো নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই। ব্যক্তি, স্পৃহা এমনকি নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির বিচারে সফলতার সংজ্ঞা হতে পারে আলাদা। তবে সংজ্ঞা যেটাই হোক পথ এক। এই কারণেই হয়ত পৃথিবীর খ্যাতিনামা সকল সফল ব্যক্তিদের নির্দিষ্ট কিছু গুণ বা বৈশিষ্ট্য ছিল। চলুন জেনে নেওয়া যাক, সফল যারা কেমন ছিলেন তারা-

১. লক্ষ্য নির্ধারণ: 

যেকোনো কাজ সম্পাদন করার জন্য অথবা কিছু প্রাপ্তির জন্য সবার আগে প্রয়োজন, ব্যক্তি নিজে কি চাচ্ছে সেই সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখা। এরপর সেই অনুযায়ী লক্ষ্য বা গোল (Goal) নির্ধারণ করা। আর সফল ব্যক্তিরা এই কাজটি করে খুবই গুরুত্বের সাথে। যা পরবর্তীতে নিজেদের পথপ্রদর্শক এবং প্রেরণা হিসেবে কাজ করে।

লক্ষ্য নির্ধারণ করা উচিত সবার আগে। Image Source: www.kison.com

একটি ইতিবাচক লক্ষ্য জীবনকে সফলতার দিকে ধাবিত করতে মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে। আর এই কারণেই সফল ব্যক্তিরা নিজেদের সময়, মেধা এবং শ্রম ব্যয় করে জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করতে। জীবনের একটি পর্যায়ে নিজেদের কোন অবস্থানে দেখতে চায় সেই সম্পর্কে তাদের ধারণা থাকে কাচের মতন স্বচ্ছ। ফলে এই লক্ষ্য অনেক বেশি অর্থবহ মনে হয়। 

২. সময় ব্যবস্থাপনা:

বলা হয়ে থাকে-‘Time is money’ অর্থাৎ, সময়ই অর্থ বা সম্পদ। সময় সফল ব্যক্তিদের কাছে খুবই মূল্যবান। অপ্রয়োজনীয় কোনো কাজে সময় নষ্ট থেকে সফল ব্যক্তিরা সর্বদা সচেতন থাকে। গুরুত্ব অনুসারে কাজগুলো সাজানো এবং সেই অনুযায়ী সময় বণ্টন, অতিরিক্ত সময় অপচয়কে রোধ করে। 

সময় অমূল্য। Image Source: coamplifi.com

সফল ব্যক্তিদের সাথে তুলনা করলে দেখা যাবে সাধারণ ব্যক্তিদের সাথে তাদের মূল পার্থক্য এখানেই। অনেক মানুষই জানে না কীভাবে সময়কে সর্বোচ্চ ব্যবহার করা যায়। প্রত্যেক মানুষ নির্দিষ্ট কিছু সময় নিয়ে পৃথিবীতে আসে। যে সময়ের অপচয় যত রোধ করে সর্বোচ্চ কাজে লাগাতে পারবে সেই সফল হবে। 

৩. নতুন কিছু শেখা:

একটি বয়সের পর অধিকাংশ মানুষ নতুন কিছু শেখার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। জ্ঞান অর্জন যে একটি চলমান প্রক্রিয়া সেটি অনেকে ভুলেই যান। কিন্তু জীবনে সফল হতে হলে শেখার কোনো বিকল্প নেই। আর এই কাজটিই সফল ব্যক্তিরা করে থাকেন অধ্যবসায়ের সাথে।

শিক্ষাগ্রহণ একটি চলমান প্রক্রিয়া। Image Source: res.cloudinary.com

‘জ্ঞানই শক্তি’ এই বাক্যটি সফল ব্যক্তিরা খুব ভালো করে জানে। ফলে নিত্যনতুন তথ্য এবং দক্ষতা অর্জনে তারা খুব আগ্রহী থাকে। এবং একটি সময় পুরো ব্যাপারটা একটি অভ্যাসে পরিণত হয়। যার কারণে ক্রমাগত পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে নিজেদের মানিয়ে নেওয়া খুব সহজতর হয়। 

৪. নিজস্ব জীবনধারা: 

 সফলতার জন্য জীবন নাকি জীবনের জন্য সফলতা এমন কোনো হিসাবেই যেন যেতে চান না সফল ব্যক্তিরা। জীবনকে কোনো ভাগ নয়, বরং জীবনকে পুরোদমে উপভোগ করতে চান সফল মানুষেরা। জীবনকে যে আমরা শুধুমাত্র একবার যাপন করতে পারবো তা তাদের কাছে জলের মতন পরিষ্কার। ফলে সৃষ্টিকর্তার দান এই সময়টুকু কোনোভাবেই হেলায় হারাতে চান না তারা।

জীবনের ভারসাম্য রক্ষা করা জরুরি। Image Source: img.freepik.com

যদিও সকলের ধারণা, সফল যারা তারা প্রচণ্ড রকমের পরিশ্রমী হয়ে থাকেন। এই ধারণা সত্য তবে পুরোপুরি নয়৷ যশ, ক্ষতি আর সম্পদের নেশায় সর্বদা বুঁদ থেকে বিরক্তিকর জীবনযাপন নয়। বরং এই সকল কিছু অর্জনের প্রত্যেকটা পথ, বাঁক, বাঁধা তারা উপভোগ করে।

৫. একাধিক আয়ের উৎস: 

একজন মানুষের জীবনের অর্থনৈতিক সফলতার হার দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পায় যখন সে একটি মাত্র আয়ের উৎসের উপর নির্ভর করে থাকে না। বলা হয়ে থাকে, ‘Passive income is the key to financial freedom.’ অর্থাৎ, আপনার সফলতার পেছনে প্রধান নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে, আপনার দ্বিতীয় বা তৃতীয় উৎস থেকে আয়।  

আয়ের একাধিক উৎস দ্রুত সফলতা আনে। Image Source: studycafe.in

গবেষণায় উঠে এসেছে, ধনকুবের প্রায় সকলেরই সর্বপ্রথম মিলিয়নিয়ার হওয়ার পেছনের কারণ ছিল তিন বা তিনের অধিক উৎস থেকে আয় করা। শুধু একটি আয়ের উৎসের উপর নির্ভর করে সম্পদশালী হওয়া প্রায় অসম্ভব। যা কখনোই অর্থনৈতিক মুক্তি দিতে পারে না। 

৬. বই পড়া:

একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর অনেকেই পড়াশোনাকে চিরবিদায় জানিয়ে দেয়। কিন্তু বিভিন্ন জরিপে উঠে এসেছে, সফল যারা তারা প্রচুর বই পড়েন। এটি তারা নিজেদের অভ্যাসে পরিণত করেছেন। ফলে প্রতিদিন নিত্যনতুন জ্ঞান আহরণের প্রক্রিয়া চলমান থাকে।

শেখার সেরা মাধ্যম বই। Image Source: dribbble.com

বিখ্যাত এবং সফল বলতে আমরা যাদের বুঝি, যেমন-ইলন মাস্ক, বিল গেটস, মার্ক জাকারবার্গ উনার প্রত্যেকেই দিনের বেশ কিছু সময় ব্যয় করেন বই পড়ার পেছনে। শুধু আনন্দলাভ নয়, কোনো কিছু শেখার শ্রেষ্ঠতম উপায় হচ্ছে পড়া। জীবনে যেকোনো বয়সে, যেকোনো ক্ষেত্রে সফল হওয়ার পেছনে বই পড়ার কোনো বিকল্প নেই। 

৭. শরীরচর্চা এবং স্বাস্থ্য সচেতনতা:

সফল মানুষেরা শুধু প্রচুর পরিশ্রম করেন না, সেই সাথে নিজের যত্ন নিতেও ভোলেন না। ভোরে ঘুম থেকে উঠা, শরীরচর্চা করা, স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ, পর্যাপ্ত ঘুম, শরীর এবং মন ভালো রাখার প্রধান নিয়ামক। এই সকল গুণ বা অভ্যাসগুলো একজন সফল এবং বিফল মানুষের মাঝে ব্যবধান গড়ে দেয়। 

স্বাস্থ্য সকল সুখের মূল। Image Source: news.harvard.edu

যত বেশি সময় কেউ সফলতা জন্য সময় ব্যয় করবে, তত দ্রুত সে জীবনে সফল হবে এটাই স্বাভাবিক। সময় অপচয় রোধে শারীরিক এবং মানসিকভাবে সুস্থ থাকা অতি জরুরি। বিখ্যাত মানুষের নিজেদের জীবনকে একটি রুটিনে পরিচালিত করতে পছন্দ করেন।

৮. অন্যের প্রতি কৃতজ্ঞতা বোধ:

জীবনের সকল ক্ষেত্রে অন্যের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা একটি দুর্লভ মানবীয় গুণ। যা কিনা সফল ব্যক্তিদের মাঝে লক্ষ্য করা যায়। তারা তাদের আশেপাশের সকল শুভাকাঙ্ক্ষী, সহকর্মী, কর্মচারী সকলের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকে। অপরের প্রতি সহানুভূতি, মমতা, কৃতজ্ঞতা ইত্যাদি মানবীয় গুণাবলির চর্চা একজন মানুষের সুদৃঢ় ব্যক্তিত্ব গঠন নিয়ামক হিসেবে কাজ করে।

জীবনে সফল হতে অন্যের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করুন। Image Sourse: hips.hearstapps.com

পৃথিবীর বুকে যারা সফল, বিখ্যাত এবং অনুকরণীয় তাদের জীবনের মূলমন্ত্র যেন আশেপাশের সকলকে এক সুরে বেধে ফেলা। যেকোনো বিপদে বা প্রয়োজনে যে মানুষগুলো তাদের পাশে ছিল তাদের প্রয়োজনে নিজেকে উৎসর্গ করা। এবং এই সকল মানবীয় গুণগুলো নিজেদের অভ্যাসে পরিণত করার চেষ্টা সফল ব্যক্তিদের মাঝে সর্বদা লক্ষণীয়।

 

 

 

Feature Image: vulcanpost.com 
References:

01. 7 Personal Habits of Successful People.  
02. 7 Habits of World's Most Successful People.