সার্ফিং: যেভাবে শুরু হলো জনপ্রিয় পানির খেলা

361
0

সার্ফিং সমুদ্র অঞ্চলের এক জনপ্রিয় পানির খেলা। যারা সার্ফিং খেলে তাদের বলা হয় সার্ফার। সার্ফিং খেলায় ছোট আকৃতির একটি পাতলা বোর্ডের উপর দাঁড়িয়ে কিংবা শুয়ে সার্ফাররা নানা কসরত করে সমুদ্রের তীরের দিকে ছুটে আসা বিশাল বিশাল ঢেউয়ের তালে তালে ভেসে বেড়ায়। প্রতি বছর জুন মাসের তৃতীয় শনিবার আন্তর্জাতিক সার্ফিং দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়। 

পানির খেলা সার্ফিং-এর রয়েছে শতবর্ষীয় ইতিহাস। যেই ইতিহাসে সার্ফিং শুধু বিনোদনের মাধ্যম বা খেলা হিসেবে নয়; বরং এটি জীবন যাত্রার একটি অন্যতম অংশ হিসেবে ছিল। এই সার্ফিং কীভাবে শুরু হলো, কীভাবে সার্ফিং বর্তমান পর্যায়ে বিকশিত হলো-তা নিয়েই আজকের আয়োজন। 

সার্ফিং শুরুর ইতিহাস

প্রাক-আধুনিক হাওয়াই এবং পলিনেশিয়া হলো সার্ফিং-এর উৎপত্তিস্থল। পলিনেশিয়ায় প্রথম সার্ফিং-এর উৎস খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে দ্বাদশ শতাব্দীর কিছু গুহাচিত্র থেকে মানুষ প্রথম জানতে পারে কীভাবে ঢেউয়ের উপর চড়ে বেড়ানো যায়। পরবর্তীতে সমুদ্র ভ্রমণের মাধ্যমে পলিনেশিয়ানরা হাওয়াইতে সার্ফিং নিয়ে আসে এবং পানির এই খেলাটি জনপ্রিয় হয়। 

বিশাল আকৃতির সার্ফ বোর্ড হাতে সৈকতের ধারে দাঁড়িয়ে থাকা পুরনো যুগের একজন সার্ফার। Image Source: reddit.com

হাওয়াইতে সার্ফিং কেবল একটি খেলাই ছিল না বরং ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশও ছিল। সার্ফিং বোর্ড তৈরিতে গাছ নির্বাচন যেমন অত্যাবশ্যকীয় ছিল তেমনই বোর্ডের আকার নির্ধারণের সময় কিছু ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের আয়োজন হতো। দেবতাদের সন্তুষ্টি লাভ এবং নিজেদের সুরক্ষিত রাখার লক্ষ্যে সেই সময় এই অনুষ্ঠানগুলোর আয়োজন হতো। 

তখনকার সময়ে রাজা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত সমস্ত সামাজিক স্তরের পুরুষ, মহিলা, শিশু সবাই সার্ফিং অনুশীলন করতো। তবে তখন একটি কঠোর নিয়ম ব্যবস্থা ছিল, যার মাধ্যমে সকলের নির্দিষ্ট স্থানে সার্ফ করার বিষয়টি নিয়ন্ত্রিত হতো।  

সার্ফিংয়ের ইতিহাস সম্পর্কে প্রথম লিখিত ঐতিহ্য পাওয়া যায় জেমস কুকের ডায়েরিতে। জেমস কুক ছিলেন একজন ইউরোপীয় নাবিক।  যিনি কেবল নতুন স্থানের আবিষ্কার করেননি বরং সার্ফিংয়েরও আবিষ্কারক। ইউরোপীয় অভিযাত্রী এবং ভ্রমণকারীরা হাওয়াইয়ান সার্ফারদের দক্ষতার প্রশংসা করতেন। এর অল্প সময়ের মধ্যেই খ্রিষ্টান মিশনারিদের মাধ্যমে হাওয়াইয়ের উপনিবেশ স্থাপন শুরু হয়। 

ইউরোপিয়ান নাবিক জেমস কুক। Image Source: pinterest.es

খ্রিষ্টান মিশনারিরা হাওয়াই দখল করার পরে, হাওয়াইয়ানদের জীবনযাত্রায় অনেক পরিবর্তন আসে। নগ্নতার কারণে সার্ফিং আর অনুমোদন পায়নি। হাওয়াইয়ানদের তখন পোশাক পরতে হতো, প্রায়শই গির্জায় যেতে হতো এবং বাচ্চাদের স্কুলে যেতে হতো। 

মিশনারিদের নানা নিষেধাজ্ঞার কারণে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে হাওয়াইতে সার্ফিং কেবল বিক্ষিপ্তভাবে অনুশীলন করা হতো। সার্ফিং সেই সময়ে তার শক্তিশালী প্রভাব খানিক হারিয়ে ফেলে, তবে পুরোপুরি অদৃশ্য হয়নি। 

হাওয়াইয়ান অঞ্চলের সার্ফারদের একাংশ | Image Source: hawaiimagazine.com

সার্ফিংয়ের বিশ্বব্যাপী বিস্তার

বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে পর্যটন গন্তব্য হিসাবে হাওয়াইয়ের বিকাশের সাথে সাথে সার্ফিং আবার পুনরুজ্জীবিত হতে থাকে এবং খেলাটি দ্রুত ক্যালিফোর্নিয়া ও অস্ট্রেলিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। এই বিস্তারের মূলে ছিল আমেরিকান লেখক জ্যাক লন্ডন, হাওয়াইয়ান সার্ফার জর্জ ফ্রিথ এবং ডিউক কাহানামোকু। 

হাওয়াইয়ান দ্বীপ ওয়াহুর ওয়াইকিকির বালিতে আধুনিক সার্ফিং এর জন্ম হয়। সময়ের সাথে সাথে, প্রথম সার্ফ ক্লাবগুলি তৈরি হওয়া শুরু করে এবং স্থানীয় সৈকত অঞ্চলের ছেলেরা পর্যটকদের ঢেউয়ের তালে চড়ে বেড়ানোর অভিজ্ঞতার জন্য সার্ফে নিয়ে যেতে শুরু করে। 

আধুনিক সার্ফিং এর জনক হিসেবে খ্যাত ডিউক কাহানামোকু  | Image source: blogspot.com

হাওয়াইয়ের ওয়াইকিকি অঞ্চল ঘুরে এসে জ্যাক, আমেরিকান ম্যাগাজিনে সার্ফিং নিয়ে বেশ কয়েকটা লেখা প্রকাশ করে। রিডন্ডো সৈকতে নতুন রেলপথের প্রচারে সহায়তা করার জন্য ১৯০৭ সালে আমেরিকান শিল্পপতি হেনরি হান্টিংটন সার্ফার ফ্রিথকে নিয়োগ করেন। এরই সূত্র ধরে ‘পানিতে হাঁটতে পারা ব্যক্তি’ শিরোনামে প্রদর্শনীর আয়োজন করেন। এভাবে ক্যালিফোর্নিয়ায় সার্ফিং শুরু হয়।

কয়েক বছর পরে, কাহানামোকু ১৯১২ সালের অলিম্পিক গেমসে ১০০ মিটার ফ্রিস্টাইল ইভেন্ট জয়ের পরে, নিউ সাউথ ওয়েলসের সাঁতার কর্মকর্তারা তাকে তার সাঁতার এবং সার্ফিং শৈলী প্রদর্শনের জন্য অস্ট্রেলিয়ায় আমন্ত্রণ জানায়। ১৯১৪ এবং ১৯১৫ সালে কাহানামোকু তার সার্ফিং দক্ষতা দিয়ে সিডনির দর্শকদের রোমাঞ্চিত করেন। আর এইভাবে অস্ট্রেলিয়াতেও খেলাটি প্রতিষ্ঠিত করতে কাহানামোকু সহায়তা করেন । 

সার্ফ বোর্ড ডিজাইন পরিবর্তনের সময়গুলো | Image Source: Pinterest

সার্ফিং সরঞ্জামের বিবর্তন 

শুধু সার্ফিং করার ধরনে নয়, সময়ের সাথে সাথে সার্ফিং এর সরঞ্জামগুলিও অনেক পরিবর্তিত হয়েছে।  শুরুর দিকে একটি দীর্ঘাকার বোর্ড যা প্রায় ২০০ পাউন্ড ছিল এবং এতে কোনও ফিন ছিল না। ফিন হলো সার্ফ বোর্ডের ডানা, যা দিয়ে বোর্ডকে নিয়ন্ত্রণ এবং পরিচালনা করা হয়। তবে সার্ফিং আরও বিস্তৃত হওয়ার সাথে সাথে মানুষ নতুন সার্ফ বোর্ড ডিজাইন উদ্ভাবন করতে শুরু করে। 

আমেরিকান সার্ফার টম ব্লেইক, ডিউক কাহানামোকু দ্বারা সার্ফিং খেলায় যোগদানে অনুপ্রাণিত হয় এবং একটি কম ওজনের সার্ফ বোর্ড ডিজাইন করেন যা ১৯৩০ সালে প্যাডলিং চ্যাম্পিয়নশিপে 8 টি নতুন রেকর্ড করে। 

বিখ্যাত আমেরিকান সার্ফার টম ব্লেইক  | Image Source: etsy.com

ব্লেইকের সার্ফ বোর্ডের ওজন ছিল ৬০ থেকে ৭০ পাউন্ড এর মধ্যে। এরপর পাঁচ বছর পরে, তিনি একটি পরিত্যক্ত স্পিডবোট থেকে নেওয়া একটি ধাতব ফিন তার সার্ফ বোর্ডের নিচে সংযুক্ত করেন।

ঐ ফিনগুলো এতটাই পরিবর্তন এনেছিল যে, দুই দশকের মধ্যে প্রায় সবাই সেগুলো ব্যবহার করে। বালসা কাঠ, ফাইবারগ্লাস এবং পলিউরথেইন এর মতো নতুন উপকরণগুলি ১৯৪০ এর দশকে সার্ফ বোর্ড ডিজাইন ও উৎপাদনে আরও বিপ্লব ঘটায়। সেই সাথে সহজে স্থানান্তরযোগ্য সার্ফ বোর্ড তৈরিতেও ভূমিকা রাখে। 

সার্ফ বোর্ডে মাছের ডানা সদৃশ্য ফিন | Image Source: surffcs.com.au

পরবর্তীতে ক্যালিফোর্নিয়ার সৈকতে ২০ পাউন্ডের সার্ফ বোর্ডের প্রচলন শুরু হয়। এই সার্ফ বোর্ডগুলোতে সার্ফাররা খুব সহজেই তাদের অবস্থান এবং দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে একই গতি দিয়ে ঢেউ অতিক্রম করতে পারতো, ঢেউ অতিক্রমের পরে গতি কমিয়ে ফেলতে পারতো ও ঢেউ অতিক্রমের সময় দিক পরিবর্তন করতে পারতো। এগুলোকে বলা হতো ম্যালিবাস। 

বর্তমানের সার্ফ বোর্ডগুলো এখনও পলিউরথেইন ও ফাইবারগ্লাস থেকে তৈরি হয়। তবে এই সার্ফ বোর্ডগুলোর ওজন মাত্র ৫ থেকে ৬ পাউন্ড হয় (২.৩ – ২. ৭ কেজি ) এবং লম্বায় ৬-৬.৫ ফুট, প্রশস্তে ১৭-১৯ ইঞ্চি ও পুরুত্ব ২ ইঞ্চির মতো হয়। 

সহজে স্থানান্তর যোগ্য কিছু সার্ফবোর্ড  | Image Source: Adina Lavinia Moldovan on Pexels

পঞ্চাশের দশকের গোড়ার দিকে জ্যাক ও’নিএল প্রথম ওয়েটস্যুট আবিষ্কার করেন যা সার্ফারদের ক্যালিফোর্নিয়ার ঠান্ডা পানি থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে। ৭০-এর দশকে অস্ট্রেলিয়ান সার্ফার সাইমন অ্যান্ডারসন ছোট সার্ফবোর্ডে আজকের থ্রি-ফিন-সিস্টেম উদ্ভাবন করেন।

আর এটি ছিল শেষ উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ যা আজকের দিনের ছোট সার্ফ বোর্ডের প্রচলন ঘটায়। ওয়েটস্যুট এবং ছোট সার্ফ বোর্ডগুলির কারণে এক দশক পরে সার্ফিং খেলাটির জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়।  

সার্ফিং সংস্কৃতির বিকাশ 

পরবর্তী দশকগুলিতে এন্ডলেস সামার, গিজেটের মতো চলচ্চিত্র এবং দ্য বিচ বয়েজের মতো ব্যান্ডগুলির মিডিয়া প্রচারের কারণে সার্ফিং জনপ্রিয়তায় শীর্ষে চলে আসে। ধীরে ধীরে সার্ফ ম্যাগাজিনগুলি প্রতিষ্ঠিত হওয়া শুরু করে, বিশ্বজুড়ে সার্ফ প্রতিযোগিতাগুলি অফার করা শুরু হয়। 

১৯৬৬ সালে তৈরি আমেরিকান সার্ফ ডকুমেন্টারি ফিল্ম The Endless Summer এর প্রচ্ছদ | Image Source: brucebrownfilms.com

আর ঐতিহ্যবাহী যেই সার্ফ খেলাটি এক সময় হারিয়ে যাচ্ছিলো, সেই খেলাটিই পরে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় পানির খেলা হিসেবে পরিচিতি লাভ শুরু করে। 

পেশাদার সার্ফিং এর যাত্রা 

১৯৫৩ সালে ওয়াইকিকি সার্ফ ক্লাব হাওয়াইয়ের মাকাহায় পুরুষ ও মহিলাদের জন্য প্রথম আন্তর্জাতিক সার্ফিং চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজন করে। এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমেই খেলা হিসেবে অফিশিয়াল ভাবে সার্ফিং এর জন্ম হয়। বিচারকরা রাইডের দৈর্ঘ্য, অতিক্রম করা ঢেউয়ের সংখ্যা, দক্ষতা, স্পোর্টসম্যানশিপ এবং সার্ফ বোর্ডে সাবলীল কৌশল প্রদর্শনের জন্য পয়েন্ট প্রদান করেন। 

ওয়াইকিকি সার্ফ ক্লাব  | Image Source: eos.surf

১৯৬৪ সালে সম্প্রতি গঠিত অস্ট্রেলিয়ান সার্ফাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন সিডনিতে প্রথম বিশ্ব সার্ফিং চ্যাম্পিয়নশিপের আয়োজন করে। সার্ফাররা ১৯৬৪ সালে প্রতিযোগিতার সময় আন্তর্জাতিক সার্ফিং ফেডারেশন গঠন করেন এবং ফেডারেশন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজনের দায়িত্ব গ্রহণ করে। 

ইন্টারন্যাশনাল সার্ফিং অ্যাসোসিয়েশন (আইএসএ) ১৯৭৬ সালে ফেডারেশনকে স্থগিত করে দেয়। ১৯৮২ সালে ইন্টারন্যাশনাল স্পোর্টস ফেডারেশনের জেনারেল অ্যাসোসিয়েশন আইএসএ-কে সার্ফিংয়ের বিশ্বের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসাবে স্বীকৃতি দেয়। 

তেরো বছর পর ১৯৯৫ সালে, আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি ( আইওসি) আইএসএ- কে অস্থায়ী স্বীকৃতি দেয়। আইওসি ১৯৯৭ সালে এই স্বীকৃতি নিশ্চিত করে এবং আইএসএ- কে অলিম্পিক মুভমেন্টে অন্তর্ভুক্ত করে। 

১৯৬৫ সালের আন্তর্জাতিক সার্ফিং প্রতিযোগীতায় অস্ট্রেলিয়ান অংশগ্রহণকারীরা মার্চ করে এগিয়ে যাওয়ার একটি দৃশ্য | Image Source: pinterest.es

বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ৩০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ সার্ফিং -কে অন্যতম একটি খেলা হিসেবে উপভোগ করে এবং আমাদের বৈশ্বিক সংস্কৃতির এতো বড় অংশ হয়ে উঠেছে যে, আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি সর্বসম্মতিক্রমে ২০২০ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক গেমসে সার্ফিং-কে একটি ইভেন্ট করার পক্ষে ভোট দেয়। পেশাদার সার্ফাররা বহু মিলিয়ন ডলার বেতন পায় এবং ক্যালিফোর্নিয়া ২০১৮ সালে সার্ফ পর্যটনে ১৪০ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করে। 

সাম্প্রতিক সময়ে সার্ফিং প্রবণতা

পেশাদার সার্ফিংয়ে নারীদের প্রতিযোগিতার শুরু তুলনামূলকভাবে নতুন। শুরুর দিকে এতো কম নারী সার্ফার ছিল যে প্রায়শই তারা পুরুষদের ইভেন্টগুলিতে প্রতিযোগিতা করতো এবং এটি ১৯৭০ এর দশক পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। 

১৯৭৭ থেকে পেশাদার সার্ফিংয়ে নারীদের এগিয়ে যাওয়া শুরু  | Image Source: Bradley Hook on Pexels

১৯৭৭ সালে প্রথম নারীদের পেশাদার সার্ফিং শুরু হয়, তবে ১৯৯০ এর দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত সার্ফিং খেলায় নারীদের তেমন অংশগ্রহণ ছিল না। মূলত ১৯৯৫ এর দিকে কয়েকটি কারণে সার্ফিং খেলায় নারীদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। 

প্রথম কারণ ছিল, মার্কিন নারী সার্ফার জগতে লিসা অ্যান্ডারসনের মতো গতিশীল এবং আক্রমণাত্মক একজন সার্ফারের আগমন। যিনি ১৯৯৫ থেকে টানা ৪ বার নারী বিশ্ব শিরোপা জিতে নিয়ে নারী সার্ফিং জগতে সারা ফেলে দেয়। 

নারী সার্ফারদের অন্যতম অনুপ্রেরক মার্কিন সার্ফার লিসা অ্যান্ডারসন | Image Source: roxytaiwan.com.tw

দ্বিতীয়ত, পেশাদার নারী সার্ফাররা অবশেষে নারীদের জন্য সেরা সার্ফিং স্টাইল নিয়ে দীর্ঘদিনের বিতর্কের সমাধান করে। নারীরাও সম্মত হয় যে তাদের পুরুষদের মতো আক্রমণাত্মকভাবে সার্ফ করতে হবে। আর অ্যান্ডারসন মূলত এই সম্মতিতে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে। 

তৃতীয়ত, বাজারজাতকরণ প্রসারে খেলার সরঞ্জাম উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান গুলো নারীদের উপযোগী সার্ফিং সরঞ্জাম বানানো শুরু করে এবং এর কারণে সার্ফিং খেলায় নারীদের উৎসাহ বাড়ে। 

চতুর্থত, মালিবু বোর্ডগুলো ফিরে আসতে থাকে এবং যার ফলে নতুনদের জন্য সার্ফিং শেখা সহজ হয়ে যায়। 

মালিবু সার্ফবোর্ড | Image Source: Pinterest

আন্তর্জাতিক সার্ফিং দিবস

আন্তর্জাতিক সার্ফিং দিবস আনুষ্ঠানিকভাবে ২০০৫ সালে সার্ফিং ম্যাগাজিন দ্বারা শুরু হয় এবং অলাভজনক সংস্থা সার্ফিং ফাউন্ডেশন, যা সাগরকে পরিষ্কার রাখতে এবং মানুষকে সার্ফ করতে উৎসাহিত করে। এই ছুটির দিনটি মানুষকে সমুদ্রে পরিবেশগত প্রভাব সম্পর্কে সচেতন হতে এবং সার্ফিং এর জন্য আবেগ তৈরি করে সমুদ্রের সুরক্ষা প্রচার করতে উৎসাহিত করে।

এই দিনে অনেক সার্ফিং অনুরাগীরা পরিবেশ রক্ষায় ও সমুদ্র অঞ্চলের মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে সৈকত পরিষ্কার, বাসস্থান পুনরুদ্ধার এবং বিনোদনমূলক অঞ্চলগুলি সংরক্ষণ করার জন্যে স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে কাজ করে। আর সার্ফরাইডার ফাউন্ডেশনের মতো সংস্থাগুলি এই দিনে অনুদান সংগ্রহ করে যা সার্ফ প্রতিযোগিতা আয়োজন করতে কাজে লাগে। 

ঢেউয়ের তালে তালে সার্ফিং করে বেড়াচ্ছেন এক দল সার্ফার | Image Source: cuellavicencio.blogspot.com

সার্ফিং খেলার প্রতি সার্ফারদের ভালবাসা ও ভক্তি মানুষকে অনুপ্রাণিত করতে বাধ্য। সার্ফিং কেবল মাত্র একটি জনপ্রিয় খেলা নয়, সার্ফিং ভিত্তিক জীবনযাত্রাও মানুষের অনুপ্রেরণা হিসেবে বিশাল ভূমিকা রাখে। তাই তো বিখ্যাত সার্ফার কেলি স্লেইটার একবার বলেছিলেন,

সার্ফিং আমার ধর্ম

 

 

Feature Image Source: Guy Kawasaki on Pexels 
References: 

01. Surf Day. 
02. History of Surfing. 
03. Surfing. 
04. History of Surfing. 
05. The History of Surfing.