প্রযুক্তিনির্ভর এই আধুনিক পৃথিবীতে সময়ের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে প্রচলিত খাদ্যাভ্যাসের ব্যপক পরিবর্তন হয়েছে সময়ের পরিক্রমায়। আর সেই পরিবর্তন থেকেই উৎপত্তি হয়েছে ফাস্ট ফুড বা দ্রুত তৈরি করা যায় এমন খাবারের। ফাস্ট ফুডের জগতে সারাবিশ্বের সর্বাধিক জনপ্রিয় ফাস্ট ফুড ব্র‍্যান্ডের অন্যতম হলো KFC (কেএফসি) বা Kentucky Fried Chicken.

যা ফ্রাইড চিকেন দিয়ে শুরু হয়ে সারা বিশ্বের ১৫০টি দেশে প্রতিনিয়ত মানুষের রুচি ও আস্থার প্রতিদান নিয়ে, এখন তিন শতাধিক এরও অধিক খাবারের ধরণ নিয়ে ফাস্টফুড জগতে একটি বিপ্লব তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। কেএফসির শুরু থেকে নাটকীয় উত্থান এবং অনেক পথ অতিক্রম করে বর্তমানে পৃথিবীর অন্যতম বিখ্যাত ফাস্টফুড কোম্পানি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার এই সম্পুর্ণ গল্পটা থাকছে আজকের নিবন্ধে। 

ইতিহাস

পৃথিবীর অন্যান্য ফাস্টফুড কোম্পানির তুলনায় কেএফসি’র ইতিহাস অনেক সমৃদ্ধ। ১৮৯০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা রাজ্যের হেনরিভিল শহরে জন্মগ্রহণ করা হারল্যান্ড স্যান্ডার্সের শৈশব মোটেই সুখকর ছিল না। মাত্র ৫ বছর বছরে বয়সে বাবা মারা যাওয়ার পর অভাবের তাড়নায় মা চাকরি করেন একটি ক্যানিং প্ল্যান্টে কাজ করতে বাধ্য হতে হয়। সাত বছর বয়সে হারল্যান্ডের মা তাকে রান্না শেখান এবং মাত্র ১৩ বছর বয়সেই পরিবার ছেড়ে সাফল্যের সন্ধানে বাহিরে পাড়ি জমান তিনি। 

শুরু থেকেই বিভিন্ন পেশার সাথে জড়িত ছিলেন স্যান্ডার্স। ১৯৩০ সালে অ্যাপালচিয়ান পর্বতমালার প্রান্তে কেনটাকি শহরের শেল ফিলিং স্টেশনের বাইরে ভ্রমণকারীদের জন্য ছোটবেলায় শেখা ফ্রাইড চিকেন ও কয়েকটি আইটেম বিক্রি করা শুরু করে স্যান্ডার্স। সেখান থেকেই শুরু, তারপর পুরোদমে ফ্রাইড চিকেন ব্যবসায় মনোনিবেশ করেন স্যান্ডার্স। 

মাত্র চার বছর পর, যে ফিলিং স্টেশনের বাইরে দাঁড়িয়ে স্যান্ডার্স ফ্রাইড চিকেন বিক্রি করতেন, সেই ফিলিং স্টেশনই তিনি কিনে ফেলেন এবং সেটাকে রেস্টুরেন্টে রূপায়িত করেন। ১৯৩৬ সালে কেনটাকি রাজ্যের গভর্নরের পক্ষ থেকে সম্মানসূচক পুরষ্কারও পান স্যান্ডার্স। ১৯৩৭ সালে স্যান্ডার্স রেস্টুরেন্ট আরও প্রসারিত করেন এবং স্যান্ডার্স কোর্ট অ্যান্ড ক্যাফে নামে নামকরণ করেন।  

স্যান্ডার্স। Image Source: LinkedIn.com

১৯৩৯ সালে স্যান্ডার্সের উত্তর ক্যারোলিনার রেস্টুরেন্টে অগ্নিকান্ড ঘটে এবং তার জীবনে আবারও সংগ্রামের গল্প ফিরে আসে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর স্যান্ডার্স রেস্টুরেন্টের ফ্র‍্যাঞ্চাইজ করার সিদ্ধান্ত নেন। তার আইডিয়া সবাই পছন্দ না করলেও স্যান্ডার্স হাল ছাড়েন না। ১০০০ বারেরও বেশিবার প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর ১৯৫২ সালে রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী পিট হারম্যান তার ফ্র‍্যাঞ্চাইজ নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং লাভবান হওয়া শুরু করেন। 

স্যান্ডার্স তার বিখ্যাত ১১টি ভেষজ মশলা সম্বলিত রেসিপি বিক্রি করে দেন এবং তার পরিবর্তে তিনি শর্ত জুড়ে দেন যে, প্রতিটি মুরগী থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দেওয়া হবে এবং তার নাম ব্যবহার করা হবে উপমা হিসেবে। ফ্র‍্যাঞ্চাইজ করার জন্য স্যান্ডার্স তার সব সম্পত্তি বিক্রি করে দেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান।

১৯৮০ সালে স্যান্ডার্স মৃত্যুবরণ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে অন্যতম বিশিষ্ট ব্যাক্তিত্ব হিসেবে তিনি আজো সমাদৃত। ডন এন্ডারসন নামক একজন পেইন্টার Kentucky Fried Chicken নামটি সর্বপ্রথম দেন এবং কাগজের বাকেটে চিকেনের এই আইকনিক আইডিয়াটি তিনিই তৈরি করেন। 

কেএফসির বিক্রয় ও সম্প্রসারণ 

১৯৬৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ৬০০টিরও অধিক রেস্টুরেন্ট হয়েছিল এবং কেএফসি’র ফ্রাইড চিকেন আইটেম যুক্তরাষ্ট্রে দারুণ জনপ্রিয় ছিল। ১৯৬৪ সালে কেএফসি নামের সফল ব্র‍্যান্ডকে স্যান্ডার্স বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেন। জ্যাক সি ম্যাসি ও ব্রাউন জুনিয়রের কাছে আজীবনের চুক্তিতে ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিময়ে কেএফসি বিক্রয় করেন স্যান্ডার্স। চুক্তি অনুযায়ী স্যান্ডার্স-ই হোন কোম্পানির মান নিয়ন্ত্রক ও ট্রেডমার্ক। এই চুক্তি কেএফসিকে আরও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সম্প্রসারিত করার দরজা খুলে দেয়। 

১৯৬৪ সালে কেএফসি’র একটি রেস্তোরাঁর সামনে। Image Source: Photograph by Patrick Mercy via flicker.com

১৯৭০ সালে আয়ারল্যান্ডে কেএফসি প্রবেশ করে এবং সেখানের রেস্টুরেন্টগুলোতে দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। এই সময় আরও ৪৮টি দেশের ৩০০টিরও অধিক রেস্টুরেন্টে কেএফসি ফাস্টফুড বিক্রি করে। ১৯৭১ সালে আবারও ২৮৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিময়ে হিউবেলিনের হাতে হাত বদল হয় কেএফসির। 

কিন্তু ১৯৮০ এর দশকে কেএফসির খরচ কমানো নিয়ে একটি মতবিরোধ হওয়ায় অনেকগুলো রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে যায়। তবে প্যাট গ্রেস কেএফসির অরিজিনাল রেসিপি দিয়ে তৈরি ফ্রাইড চিকেন তৈরি অব্যাহত রাখেন। ১৯৮৬ সালে আবারও পেপসিকো (Pepsico) এর নিকট ৮৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে বিক্রয় হয় কেএফসি। 

কেএফসিকে চীনা বাজারের ভিতরে প্রবেশ করায় পেপসিকো। ১৯৯৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ৫১৪৯ ও সারাবিশ্বের ৯৪০৭টি রেস্টুরেন্টে ১,০০,০০০ এরও অধিক কর্মী চাকরি করতো। কিন্তু পেপসিকো তাদের সাড়ে চার বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রেস্তোরাঁ বিভাগ বন্ধ করে দেয়।আবারও বিক্রি হয়ে হাত বদলে আসে ট্রিকন গ্লোবাল রেস্টুরেন্টের অধীনে। 

কেএফসি ২০১৫ সাল পর্যন্ত অনেক সংগ্রাম করে মার্কেটে টিকে ছিল। কিন্তু তারপর কোম্পানিটি তাদের প্যাকেজিং, ডেকোরেশন, মেন্যুসহ সবকিছুতে পুনরায় আবার নতুন করে ভিন্নতা আনার চেষ্টা করে। বিজ্ঞাপন করতে ২০১৫ সালে ড্যারেল হ্যামন্ডকে হারল্যান্ড স্যান্ডার্সের চরিত্রে এনে বিজ্ঞাপন সিরিজ আরম্ভ করে।  

কেএফসির আইটেম

কেএফসির প্রধান আইটেম ছিল হারল্যান্ড স্যান্ডার্সের ১১টি মশলা দিয়ে তৈরি করা অরিজিনাল রেসিপি। এই রেসিপি দিয়ে তৈরি ১৬ টুকরার ফ্রাইড চিকেনের বাকেট কেএফসির স্পেশাল ট্রেডমার্ক। তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৮-৯টি টুকরোও করা হয়ে থাকে একটি মুরগির ফ্রাইড চিকেন বানাতে। তারপর গমের আটার মিশ্রণের সাথে গরম তেলে ফ্রাই করে বিক্রয় করা হয়। 

স্যান্ডার্সের চরিত্রে ড্যারেল হ্যামল্ড। Image Source: thehollywoodreporter.com

৯০ মিনিটের বেশি সময় কেএফসির ফ্রাইড চিকেন কোনো রেস্টুরেন্টে ভাজা অবস্থায় অবিক্রিত থাকলে, তা বাতিল হিসেবে ঘোষণা করা হয়। অঞ্চলভেদে মুরগীর স্বাদের পাশাপাশি ফ্রাইড চিকেনের স্বাদের সামান্য পরিবর্তনের কথা শোনা যায়। কেএফসির বিশেষ মসলা পৃথিবীর অন্যতম বাণিজ্যিক রহস্যময় বিষয়গুলোর একটি। কেএফসির সদর দপ্তর লুইসভিলের ল্যাবরেটরির ১১টি বিশেষ পাত্রে সর্বোচ্চ গোপনীয়তায় আলাদাভাবে রাখা আছে কেএফসির এই বিশেষ রেসিপি। 

ফ্রাইড চিকেনের পাশাপাশি সারাবিশ্বে কেএফসির ৩০০টির অধিক মেন্যু রয়েছে। অঞ্চলভেদে কেএফসির মেন্যুর পরিবর্তনও লক্ষণীয়, যা তাদের ব্যবসার সব দুর্দান্ত পদক্ষেপের অন্যতম। যেমন চিকেন স্যান্ডউইচ, চিকেন স্ট্রিপ্স, হট উইংস, পপকর্ণ চিকেন, জিঙ্গার অন্যতম প্রধান আইটেম। 

কেএফসি ২০০৯ সালে ক্র্যাশার, শর্টকেক, ডেজার্ট, আইস্ক্রিম স্যান্ডিস, ট্রেস লেচেস কেক চালু করে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলভেদে। আবার ২০১২ সালে কেএফসি এএম নামক একটি সকালের নাস্তার মেন্যু চালু করে; যার অন্তর্ভুক্ত ছিল প্যানকেক, ওয়াফেলস, পোরিজ ও ফ্রাইড চিকেন। কেএফসি ২০১৯ সালে হাঁড়বিহীন মাংস ও নাগেট পরীক্ষা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়ায়। 

বার্লিনে হট উইংস, মালেয়শিয়ায় গরম চিকেন কর্নেল রাইস, কোলসেলা ও নাগেটস, ফিলিপাইনে স্প্যাগেটি ও গ্রেভি এবং চীনে সেঞ্চুরি ডিম ও শুকরের মাংস কেএফসির অন্যতম প্রধান আঞ্চলিক মেন্যু। 

কেএফসির বিজ্ঞাপন

হারল্যান্ড স্যান্ডার্সের জীবদ্দশায় কেএফসির সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন তিনি নিজেই ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে তিনি আতিথেয়তার আন্তর্জাতিক প্রতীক হিসেবে বিবেচিত ছিলেন। ১৯৫২ সালে স্যান্ডার্সের ছবি সম্বলিত লোগো এবং কেনটাকি ফ্রাইড চিকেন ছিল কেএফসির ট্রেডমার্ক। ১৯৬২ সালে সামান্য পরিবর্তনের মাধ্যমে চিকেনের বাকেট নিয়ে নতুন লোগো তৈরি করা হয়। এই বাকেটের চিহ্নটি আলাদা একটা ট্রেডমার্ক হিসেবে তখন আমেরিকার সকল রেস্টুরেন্টের সামনে ঘুরতে থাকে। 

১৯৬৬ সালে কেএফসির প্রথমবারের মতো বিজ্ঞাপন আসে টেলিভিশনে, যার বাজেট ছিল চার মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ১৯৬৯ সালে কেএফসি তাদের বিজ্ঞাপনের জন্য নিয়োগ দেয় লিও বার্নেটকে, তারই একটি বানানো বিজ্ঞাপনের ক্যাম্পেইনের স্লোগান ছিল জিঙ্গেল। ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত কেএফসি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞাপনদাতা প্রতিষ্ঠানের একটি। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে কেএফসির নতুন বিজ্ঞাপন ছিল চিকেন চেম্বারসহ গেমিং কন্সোল, যা খাবারকে উষ্ণ রাখতো। এটির নাম ছিল কেএফসি কনসোল

KFC এর ২০২০ সালে বানানো It’s finger lickin’ good স্লোগান দিয়ে বানানো বিজ্ঞাপন। Source : Ads of Brand

কেএফসির সমালোচনা ও বিতর্ক 

কেএফসি যেমন এতবড় ব্র‍্যান্ড হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে, তেমনই তার পিছনে কিছু বিতর্ক ও সমালোচনা বিদ্যমান। 

  • ২০০৩ সাল থেকে PETA ( People For The Ethical Treatment Of Aninmals) কেএফসির পোল্ট্রির ব্যবহার করা নিয়ে প্রতিবাদ করে। এক্ষেত্রে কেএফসি কানাডা শুধুমাত্র প্রাণিবান্ধব মুরগি সরবরাহের জন্য চুক্তি করেছে। কিন্তু কেএফসি সেই অভিযোগ অস্বীকার করে এবং নিজেদের শুধুই ক্রেতা বলে বিবেচনা করার আহবান জানায়। 
  • ২০০৬ সালে কার্গিল নামক কোম্পানির কাছ থেকে সয়াবিন কেনায় কেএফসির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে Green Peace নামের একটি পরিবেশবাদী সংগঠন। অভিযোগ ছিল কার্গিল আমাজন বন অবৈধভাবে ধ্বংস করে সয়াবিন উৎপাদন করেছিল। 
  • ২০১০ সালে গার্ডিয়ানের তথ্যানুসারে, কেএফসির একটি ৩০ সেকেন্ডের টিভি বিজ্ঞাপনে বর্ণবাদী আচারণের অভিযোগ পাওয়া যায়।
  • ২০১২ সালে Green Peace আবারও কেএফসি’র বিপক্ষে প্যাকেজিং এর জন্য ইন্দোনেশিয়ার রেইনফরেস্ট এর কাঠ থেকে কাগজের পাল্প সংগ্রহ করার অভিযোগ করে। ২০১২ সালে আবারও কেফসির বিপক্ষে পোল্ট্রিতে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করার অভিযোগ পাওয়া যায়। 
  • ২০১৭ সালে কেএফসির সাড়ে নয় লক্ষ পাউন্ড জরিমানা করা হয়েছিল কর্মীদের পর্যাপ্ত দেখাশোনায় অবহেলার কারণে। 
  • ২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের জন্য বেশ কয়েকটি বড় বড় কোম্পানি পদক্ষেপ নিয়েছে কিন্তু রাশিয়ায় কেএফসির ১০০০ এরও অধিক রেস্টুরেন্ট থাকার পরেও কেএফসি কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করে নাই। যা নিয়ে সমালোচনা হয়।
  • ২০২২ সালে কেফসির বিজ্ঞাপনে দেখানো একটি মুরগীর ফার্মে মুরগীর ত্বকে সংক্রামক রোগের উপস্থিতি নিয়ে অভিযোগ পাওয়া যায়।

একটি কোম্পানি তখনই সফল হয়, যখন সময়ের সাথে সাথে ভোক্তাদের চাহিদামতো নিজেদের পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়। ১৯৩০ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর কেএফসি এখনো পর্যন্ত সংগ্রাম করে, নিজেদের গুণগত মান সমুন্নত রেখে সফলতার সাথে পরিচালিত হওয়ার এই গল্প থেকে অনেকে অনুপ্রাণিত হয়েছে। 

 

 

 

Feature Image: startuptalky.com 
References: 

01. The Inspiring Life Story of KFC Colonel Sanders. 
02. The History of KFC. 
03. The Success Story of KFC.