কর্মক্ষেত্রে গুছিয়ে কাজ করার অভ্যাস ক্যারিয়ারকে আরও এক ধাপ এগিয়ে দিতে পারে। কারণ এটি একজন কর্মজীবি ব্যক্তির নির্ধারিত লক্ষ্যসমূহ পূরণ করতে, সময়ানুবর্তী হতে, কর্ম-জীবনের ভারসাম্য বজায় রাখতে ও মানসিক স্ট্রেস কমাতে বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে৷
এছাড়াও, গুছিয়ে কাজ করার অভ্যাস ব্যক্তি জীবনকে করবে গোছালো ও প্রানবন্ত। আজকের আলোচনায় থাকছে কর্মক্ষেত্রে গুছিয়ে কাজ করার কৌশল সম্পর্কে বিস্তারিত।
১. লক্ষ্য অনুযায়ী একটা রুটিন বা টু-ডু লিস্ট তৈরি করা
যেকোনো কাজে সফলতা পাওয়ার প্রথম ধাপ হলো লক্ষ্য নির্ধারণ করা। অতএব সর্বপ্রথম দিনের কাজগুলো গুছিয়ে নিয়ে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাজগুলো সাজিয়ে নিতে হবে। সেক্ষেত্রে চাইলে কোনো অ্যাপ ইউজ করতে করা যেতে পারে। সেখানে প্রয়োজনীয় কাজগুলো ক্রম অনুযায়ী লিখে, তারপর প্রত্যেকটি কাজ শেষে পছন্দের কালার দিয়ে মার্ক করে রাখা যেতে পারে।
২. একসাথে অনেকগুলা কাজ করা থেকে বিরত থাকা
অনেক সময় দেখা যায়, মাল্টিটাস্ক বা বেশ কয়েকটা কাজ একসাথে হ্যান্ডেল করার চেষ্টা করে থাকে অনেকেই। প্রকৃতপক্ষে এতে একটি কাজও সঠিকভাবে সম্পন্ন হয় না। এমনকি বেশ কয়েকটি কাজ একসাথে করতে গেলে নির্ভুলতা ঠিক রাখাও প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। আবার দেখা যায় বড়সড় ভুল হয়ে গেলে পুনরায় কাজটি শুরু থেকে করতে হয়।
এতে যেমন শ্রম নষ্ট হয় তেমনই নষ্ট হয় মূল্যবান সময়। সেই সাথে একই কাজ আবার করতে হলে মানসিক স্ট্রেস ও কাজের প্রতি তিক্ততা বেড়ে যায়৷ তাই টু-ডু লিস্ট অনুযায়ী একটা কাজ ভালোভাবে শেষ করে আরেকটি কাজে মনোনিবেশ করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ।
৩. সাপ্তাহিক পরিকল্পনা করা
কর্মক্ষেত্রে যদিও সব কাজ পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী হয়ে থাকে তারপরও হুটহাট কিছু মিটিং বা অন্য কাজ পড়ে যেতে পারে। তাই যদি পুরো সপ্তাহের সব কাজের একটি সময়সূচী করে রাখা যায় তাহলে পেন্ডিং মিটিং কোন সময়টাতে দেওয়া যেতে পারে তা খুব সহজেই বোঝা যায়। তাই সম্ভব হলে প্রতি সপ্তাহের শুরুতে একটা সাপ্তাহিক পরিকল্পনা করে রাখা যেতে পারে। এতে পুরো সপ্তাহের কাজ মাথায় রাখা ও কাজগুলো গুছিয়ে করা সহজ হবে।
৪. ইনবক্স ও ইমেইলের জন্য নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করা
দিনের একটা নির্দিষ্ট সময় ইনবক্স ও ইমেইল চেক করার জন্য রাখতে হবে। কারণ একটু পর পর ইমেইল বা মেসেজ চেক করতে গেলে কাজের ফোকাস ও সময় দুটোই নষ্ট হয়।
৫. টাইমার ব্যবহার করা
কোন কাজ শুরু করার আগে সময় দেখে নেয়া জরুরি। এবং কোন টাস্ক বা কাজ শুরু করার আগে আনুমানিক একটি সময় নির্ধারণ করা তুললামূলক ভালো। এতে করে সেই সময়ের মধ্যে কাজটি শেষ করার একটা তাড়া থাকে। ফলে অযথা সময় নষ্ট হবে না। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখা জরুরি কাজটি যেন ঠিকঠাক ও নির্ভুলভাবে সম্পন্ন হয়।
অফিস ডেস্কে সার্বক্ষনিক একটি স্যান্ড টাইমার রাখা যেতে পারে। কারণ এটি প্রতিটি মুহুর্তে সময়ের মূল্য মনে করিয়ে দিতে বেশ গুরুত্ব বহন করে। এক্ষেত্রে পোমোডোরো টেকনিক ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি একটি টাইম ম্যানেজমেন্ট টেকনিক যা সাধারণত কাজে প্রোডাক্টিভ ও ফোকাসড থাকতে খুবই সাহায্য করে।
সাধারণত এটিতে ২৫ মিনিটের জন্য সময় সেট করা হয়ে থাকে, টাইমার বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত নির্ধারিত কাজটি চালিয়ে যেতে হয়। অত:পর সময় ২৫ মিনিটে পৌঁছালে কিছু সময় বিরতি নিয়ে আবার পুনরায় কাজে ফিরতে হয়ে। এটি কাজে মনোযোগী হতে ও সময় বাঁচাতে বেশ কার্যকর।
৬. নিয়মিত ব্রেক নেয়া
এক গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষের ব্রেইন একটানা কোন কাজ করলে ৪৫ মিনিট পর তার কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়। অর্থাৎ, ব্রেইন ধীর হতে থাকে। তাই কাজের ফাঁকে ৪৫ মিনিট পর অন্তত ৫ মিনিটের জন্য একটা ব্রেক নেয়া উচিত। এটি নতুন উদ্দ্যমে কাজ শুরু করতেও বেশ সাহায্য করে এবং মনও থাকবে ফ্রেশ।
৭. কাজের সময় যতটা সম্ভব মোবাইল ব্যবহার থেকে বিরত থাকা
যদিও দীর্ঘক্ষন ফোন থেকে দূরে থাকা খুব একটা সহজ নয়। তবে কাজের মধ্যে খানিক পর পর মোবাইল হাতে নিলে সেটা কাজের মনোযোগ নষ্ট করে। তাই কাজের সময় মোবাইল সাইলেন্ট করে ড্রয়ারে রেখে দেয়াই শ্রেয়। ব্রেকে বা একটা নির্দিষ্ট সময় পর ফোন চেক করে দেখা যেতে পারে।
৮. নিজের ডেস্ক গুছিয়ে রাখা
গোছানো পরিবেশ সব সময় সুন্দর, মাঝে মাঝে মন ভালো করতে একটি সুন্দর পরিবেশেই যথেষ্ট। তাই কাজে মন দিতে নিজের ডেস্ক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা বাঞ্চনীয়। কর্মক্ষেত্রে অর্গানাইজড হতে পারার অন্যতম আদর্শ উপায় হলো জিনিসপত্র ঠিকঠাক জায়গায় গুছিয়ে রাখা ও যথাসম্ভব ডেস্ক খালি রাখা।
অপ্রয়োজনীয় বা নিয়মিত ব্যবহৃত না হওয়া জিনিসপত্র টেবিল বা ডেস্ক থেকে সরিয়ে রাখতে হবে। শুধুমাত্র কাজে লাগবে এমন ফাইল, সরঞ্জাম বা জিনিসপত্র ডেস্কে রাখতে হবে। এমনকি চাইলে আলাদা সেক্টর করে ফাইল ও কাগজপত্র গুছিয়ে রাখা যেতে পারে। এছাড়াও সার্বক্ষনিক ডেস্ক গুছিয়ে রাখলে দরকারের সময় প্রয়োজনীয় ফাইল খুঁজে পেতেও খুব একটা বেগ পেতে হয় না।
তাছাড়াও কম্পিউটারে প্রতিটি কাজের জন্য আলাদা ফোল্ডার করে রাখা যেতে পারে। সময় ও গুরুত্বের ভিত্তিতে কাজগুলোকে অগ্রাধিকার দিতে হবে৷ পরের দিন নতুন করে শুরু করার জন্য কাজ শেষে ডেস্ক পরিষ্কার করে রাখা একটা সুন্দর অভ্যাস। এই অভ্যাসটি গড়ে তুললে পরবর্তী দিনের কাজ শুরু করতে সহজ ও ফ্রেশ ফিল হবে।
৯. অন্যদের সহায়তা নেয়া ও সহায়তা করা
সবসময় সব কাজ একা করার মনমানসিকতা না রেখে আশেপাশের সিনিয়র বা জুনিয়র কলিগদের সাহায্য নেয়ার অভ্যাস চাকরি জীবনকে আরও সহজ ও গোছালো করে দিবে। তাই নিজের খুঁটিনাটি কাজে অন্যের সহায়তা কামনা করা, মাঝে মাঝে অন্যকে সাহায্য করা যেমন সবার সাথে সম্পর্ক সুন্দর করতে কার্যকর তেমনই এর ফলে কাজ করার জন্য একটি বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশও তৈরি হবে খুব সহজেই।
১০. দিনশেষে নিজেকে পুরষ্কৃত করা
কাজের সাফল্য অনুযায়ী নিজেকে পুরষ্কৃত করা নিঃসন্দেহে একটি ইউনিক আইডিয়া। ইংরেজিতে যাকে বলে ‘সেলফ প্যাম্পারিং’। গোল অনুযায়ী প্রতিদিনকার রুটিন বা টাস্ক সম্পন্ন করতে পারলে নিজেকে উপহার দেওয়া যেতে পার । এটি পরবর্তী কাজসমূহ আরও নিখুঁতভাবে ও আগ্রহের সাথে করতে উৎসাহ দেবে।
মনে রাখা জরুরি, সময় ও শ্রম উভয়ই মূল্যবান যা একবার ক্ষয়ে বা ফুরিয়ে গেলে পুনরায় পাওয়া অসম্ভব। তাই কর্মজীবন হোক বা ব্যক্তিজীবন, কেবল গুছিয়ে কাজ করাই পারে এই দুটো মূল্যবান সম্পদের সঠিক মূল্যায়ন করতে৷
Feature Image: pexels.com References: 01. How to be Organized? 02. 11 Tips for Organization and Productivity. 03. How to Stay Organized at Work? 04. How to be Organized at Work?