ক্রিকেট বিশ্বে প্রচলিত ও ব্যতিক্রমী কিছু শব্দ

354
0

পুরো ক্রিকেট কিন্ত বল, আউট, ব্যাট এই শব্দগুলোর মাঝে বিভক্ত নয়। ক্রিকেট বিশ্বে এরকম আরও বেশ কিছু শব্দ রয়েছে যেগুলো কারো জন্য প্রচলিত। হ্যাঁ ক্রিকেটারদের জন্য তো এগুলো রুটি-রুজির ব্যাপার। আবার যাদের কাছে শব্দগুলো রুটি-রুজির মতো ব্যাপার সেটাই অনেকের কাছে ব্যতিক্রমী শব্দ। আজকের আয়োজনে থাকছে ক্রিকেট বিশ্বে প্রচলিত ও ব্যতিক্রমী কিছু শব্দ নিয়ে।

অ্যাশেজ

অ্যাশেজ শব্দটি শুনলে ক্রিকেটকে গভীরভাবে ধারণ করে না এমন যে কারো কাছে শব্দটি কেমন জানি মনে হয়। কিন্ত ক্রিকেটের ভাষায় এটি টেস্ট ক্রিকেটের এক মর্যাদার লড়াইয়ের নাম। অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ড দলের মাঝে এই খেলা হয়ে থাকে। একবার অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে, আরেকবার ইংল্যান্ড এর মাটিতে, এই নিয়ম করেই ৫ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলা হয়ে থাকে।

১৯৮২-৮৩ সালে প্রথম অ্যাশেজ ম্যাচ হয় অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে, যেখানে বিজয়ী হয় অস্ট্রেলিয়া। অতীত রেকর্ড অনুযায়ী কখনো একম্যাচ, কখনো দুই, কখনো তিন এমনকি উভয় দলের মধ্যে ৭ ম্যাচের সিরিজও হয়েছে। যদিও গত ২০-২২ বছর ধরে ৫ ম্যাচেই হয়ে আসছে সিরিজ। 

৭২টি অ্যাশেজ সিরিজের মধ্যে ৩৪ বার অস্ট্রেলিয়া এবং ৩২ বার সিরিজ জয়ী হয়েছে ইংল্যান্ড৷ মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই সিরিজের ট্রফি উচ্চতা মাত্র ১০.৬ সেন্টিমিটার।   

অ্যাশেজ এর ছোট্টো ট্রফি হাতে দুই অধিনায়ক এর ফটো সেশন। Image Source: ESPNCricinfo

সুপার ওভার

সাদা বলের ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হওয়ার জন্য সুপার ওভার খুবই আকর্ষণীয় এক মাধ্যম৷ ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট নির্দিষ্ট ওভার শেষে উভয় দলের দলীয় রান সমান হলেই ম্যাচে বিজয়ী নির্ধারণের জন্য হয় সুপার ওভার। যেখানে মাত্র ১ ওভারের খেলা হয়ে থাকে উভয় দলের মধ্যে, সেটিই সুপার ওভার নামে পরিচিত। 

২০০৮ সালে সর্বপ্রথম নিউজিল্যান্ড বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ এর ম্যাচই ছিল প্রথম সুপার ওভার। যেখানে বিজয়ী হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সর্বশেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণও হয়েছিল এই সুপার ওভারেই। 

বল টেম্পারিং

বল টেম্পারিং এতটা জনপ্রিয় শব্দ না হলেও বেশ ব্যতিক্রমী শব্দ। সহজ ভাষায় বললে, টেম্পারিং বলতে বুঝায় বলের অবস্থা পরিবর্তন করা। আইসিসির আইন অনুযায়ী, কৃত্রিম বস্তু ব্যবহার করে কিংবা অন্য কোনো উপায়ে অথবা শরীরের কোনো অঙ্গ দিয়ে বলকে বিকৃত, বলের অবস্থা, আকার পরিবর্তন করলে সেটাই হবে বল টেম্পারিং। 

এক কথায় ক্রিকেট খেলায় নতুন বল দিয়ে শুরু হওয়া ওভার দিয়ে বল নিজের নিয়ম অনুযায়ী ন্যাচারালি পরিবর্তন হবে এটাই নিয়ম, আর এটাই ক্রিকেটের সৌন্দর্য। আর ম্যাচ গড়ানোর সাথে বলের স্পিন (সিম লাইন) পরিবর্তন হতে থাকে। আর এর ফলে বোলার সুইং কম পেয়ে থাকে এবং বলের ওজনও কিছুটা কমে যায়। 

এই অসুবিধা এড়ানোর জন্য বোলাররা ট্রাউজার/রুমাল দিয়ে বলকে পোলিশ করে থাকে, সেখানেই যখন কোনো ক্রিকেটার কোনো অনিয়ম করে তখনই সেটা হয়ে যায় বল টেম্পারিং। সর্বশেষ বল টেম্পারিং এর জন্য আলোচনায় উঠে এসেছিলেন তিন অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার। 

প্রকাশ্যে এভাবেই শহীদ আফ্রিদিকে দেখা যায় বল টেম্পারিং। Image Source: ESPNCricinfo

লেগ বিফোর উইকেট

লেগ বিফোর উইকেট শব্দটির সাথে পরিচিত না হলেও সবাইই এটাকে এলবিডব্লিউ (LBW) নামে চিনে। লেগ বিফোর উইকেট হচ্ছে, উইকেট এর সামনে যখন ব্যাটসম্যান এর প্যাডে উইকেট বরাবর বল লাগে তখন সেটি এলবিডব্লিউ হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷ তবে, এর জন্য কিছু নিয়ম রয়েছে৷  

এমনকি কয়েক বছর আগেও, এলবিডব্লিউ সিদ্ধান্তগুলি মাঠের আম্পায়ারের ব্যক্তিগত ব্যাখ্যা, সিদ্ধান্ত এবং চাক্ষুষ পর্যবেক্ষণের উপর নির্ভরশীল ছিল। সাম্প্রতিক সময়গুলোতে জিনিসগুলি পরিবর্তিত হয়েছে। ভিডিও সহায়তা, বল ট্র্যাকিং এবং এখন ডিসিশন রিভিউ সিস্টেম (ডিআরএস) এর মতো প্রযুক্তিগত সহায়তার আবির্ভাব এলবিডব্লিউ সিদ্ধান্তগুলিকে আরও সঠিক, সহজ এবং নির্ভুল করেছে। 

২০০৮ সালে শ্রীলঙ্কা ভারত এর এক ম্যাচ দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ডিআরএস এর যাত্রা শুরু হয়। যার ফলে এলবিডব্লু এর সিদ্ধান্তগুলো বর্তমানে সঠিক, নির্ভুলভাবে নেয়া সম্ভব হচ্ছে। 

ক্রিকেটের ডিআরএস সিস্টেম। Image Source: foxsports.com

নো বল ও ফ্রি হিট

ক্রিকেটের রোমাঞ্চকর মুহূর্ত তৈরির জন্য এক মিনিট সময় লাগলে সেখানে একটি ফ্রি হিট কিংবা একটি নো বল এর জুড়ি মেলা ভার৷ ক্রিকেট খেলাটা আরও রোমাঞ্চকর করতেই ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি ফ্রি হিট চালু করে ২০০৭ সালে। ২০১৫ সালের পর থেকে নো বল হলেই হবে ফ্রি হিট অর্থাৎ বোলারকে আরও একটি বল বেশি করতে হবে। 

কিন্ত একটা সময়  পপিং ক্রিজে বোলারদের পা নিয়মের অতিরিক্ত গেলেই কেবল নো বলে ফ্রি হিট দেওয়া হতো। শুরুর দিকে ছোট ফরম্যাট এর ক্রিকেট টি-টোয়েন্টিতে সংযোজন থাকলেও পরবর্তীতে তা ওয়ানডে ক্রিকেটেও সংযোজিত করা হয়। 

ফ্রি হিট, নো বল এর সুবিধা পুরোটাই উপভোগ করে একজন ব্যাটসম্যান, একটি বোনাস বল পায় যে বলে রানআউট বাদে অন্য কোনো আউটে উক্ত ব্যাটসম্যান থাকবেন নটআউট। আর সেই বোনাস বলে বাউন্ডারি হাঁকালে তো একেবারেই ব্যাটসম্যান এর লাভ!  

গুড লেন্থ, ফুল টস, হাফ ভলি, বাউন্স, শর্ট এবং ইয়োর্কার বল

  • একজন বোলার এর জন্য সবচেয়ে আদর্শ লেন্থে বল ডেলিভারি করাটাই গুড লেন্থ এর বল৷ 
  • ফুল টস বল হচ্ছে বল পিচে সরাসরি ডেলিভারি না করে সরাসরি ব্যাটসম্যান এর ব্যাটে ডেলিভারি করাই ফুল টস বল। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই ফুল টস বল একজন বোলার এর জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। 
  • হাফ ভলি বল হচ্ছে ব্যাটসম্যান এর ব্যাটের সামনে বল দেয়া, এই বলে বোলার হাত, আঙ্গুল দিয়ে বলে সুইং দিলেও লাভ হয় না। কেননা বল যতটুকু সুইং করার দরকার এর আগেই ব্যাটসম্যান এর ব্যাটে যায় বল। 
  • সহজ ভাষায় ব্যাটসম্যান এর বুক বরাবর অথবা এর উপর দিয়ে বোলার বল করলেই সেই বল বাউন্সার বল৷ সাধারণত বাউন্সার বল একজন বোলার এর শক্তিও বটে৷ 
বাউন্স বল খেলতে গিয়ে প্রায়ই ব্যাটসম্যানকে এরকম পরিস্থিতির স্বীকার হতে হয়। Image Source: MYKhel
  • শর্ট বল হচ্ছে বোলারের দিক থেকে পিচের শুরুতে হল ডেলিভারি করে বল করা। 
  • ইয়োর্কার হচ্ছে ব্যাটসম্যান এর ব্যাট এর নিচে বল করাই ইয়োর্কার। একজন বোলার পারফেক্ট ইয়োর্কার দিলে ব্যাটসম্যান এর পক্ষে আউট হওয়ার সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি থাকে৷ 

পাওয়ার প্লে

পাওয়ারপ্লে ক্রিকেটে গুরুত্বপূর্ণ এক ভূমিকা পালন করে আসছে। একদিনের ওয়ানডে ম্যাচে প্রথম ১০ ওভার পাওয়ার প্লেতে ৩০ গজ বৃত্তের বাইরে মাত্র ২ জন ফিল্ডার থাকতে পারে৷ ১১ থেকে ৪০ ওভারের সময় ৩০ গজের বাইরে থাকতে পারবে ৪ জন ফিল্ডার। শেষ ১০ ওভারে ৩০ গজের বাইরে থাকতে পারবে সর্বাধিক ৫জন ফিল্ডার। 

পাওয়ার প্লে এর নিয়ম আবার ভিন্ন। প্রথম ৬ ওভার থাকে পাওয়ার প্লে, যেখানে ৩০ গজের বাইরে থাকতে পারে ২ জন ফিল্ডার৷ ৬-২০ তম ওভারের সময় ৩০ গজের বাইরে থাকতে পারে ৫ জন ফিল্ডার।  

 

 

Feature Image: espncricinfo.com 
References: 

01. A Glossary of Cricket Terms. 
02. Definition of Cricketing Terms from A Non Cricketer. 
03. Cricket Sport.